এই মূহুর্তে Wuhan Virus পুরো বিশ্বে এক আতঙ্কের নাম। চায়নার হুবেই প্রদেশের উহান শহরে এই ভাইরাসের উৎপত্তি। সেখান থেকেই অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস।
[lwptoc min=”7″ depth=”6″ numeration=”none” title=”এ লেখাতে যা জানবেন”]
কী এই উহান ভাইরাস?
উহান ভাইরাসটি করোনাভাইরাস পরিবারের সদস্য। সাধারণত এরা ছোটখাটো স্তন্যপায়ী প্রাণী কিংবা পাখিদের সংক্রমিত করে থাকে। কিন্তু এরা খুব সহজেই পশুপাখি থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়ে যেতে পারে। মানুষের শ্বাসতন্ত্রে এরা আক্রমণ করে। এই ভাইরাস পরিবারের সদস্যরাই সাধারণ সর্দিকাশি থেকে শুরু করে Severe Acute Respiratory Syndrome (SARS) এর মতো গুরুতর অসুখের জন্য দায়ী। বিগত কয়েকবছরে এরা ইনফেকশাস ডিজিস আউটব্রেকে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। চায়নায় দুটি গবেষণায় পাওয়া গেছে সম্ভবত বাদুড় কিংবা সাপের মাধ্যমে ছড়িয়েছে এই ভাইরাস। যদিও অফিশিয়ালি তা ঘোষণা করা হয়নি।
ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লো কখন?
ধারণা করা হচ্ছে ডিসেম্বর ২০১৯ থেকেই এই ভাইরাসের ছড়িয়ে পরা। উহান শহরের সি-ফুড এবং মিট মার্কেট থেকেই ছড়িয়ে পরেছে এই ভাইরাস। এরপর কর্তৃপক্ষ মার্কেট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। এই মার্কেটে জীবন্ত কুমির, স্যালিম্যান্ডার, সাপ, শজারু, ময়ূর, ইঁদুর, উটের মাংস সহ আরো অনেককিছুই বিক্রি করা হতো।
এখন পুরো চায়নাময় ছড়িয়ে এখন এশিয়ার আশেপাশের দেশগুলো সংক্রমিত করছে। এমনকি এক টুরিস্টের মাধ্যমে উহান ভাইরাস পারি জমিয়েছে আমেরিকায়। অথচ এই গত বৃহস্পতিবারেও World Health Organization (WHO) এই মহামারীকে গ্লোবাল পাব্লিক হেলদ ইমার্জেন্সি বলে মানতে অস্বীকার করেছে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে চায়না, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, নেপালসহ সারা বিশ্বে আক্রান্ত হয়েছে ১৩০০+ মানুষ।
এই পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী চায়নার বাইরে যেসব দেশে সংক্রমিত হয়েছেঃ
অস্ট্রেলিয়া – ৪ জন
আমেরিকা – ২ জন
হংকং – ৫ জন
ফ্রান্স – ৩ জন
থাইল্যান্ড – ৫ জন
সিঙ্গাপুর – ৩ জন
তাইওয়ান – ৩ জন
ম্যাকাও – ২ জন
মালয়েশিয়া – ৩ জন
নেপাল – ১ জন
জাপান – ৩ জন
ভিয়েতনাম – ২ জন
সাউথ কোরিয়া – ২ জন
যেভাবে ছড়ায় এই ভাইরাস:
আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকে ভাইরাস বাতাসের সংস্পর্শে আসে এবং সেখান থেকে ছড়ায়। এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তিকে ছুঁলেও সেখান থেকে ছড়াতে পারে। এমনকি মলমূত্র থেকেও এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়।
উহান ভাইরাসের লক্ষণ
এই অসুখের কিছু লক্ষণ সাধারণ সর্দিজ্বরের সাথে মিলে যায়। যেমন, জ্বর, কাশি, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া। তবে নাক দিয়ে পানি পরা কিংবা ক্রমাগত হাঁচি দেয়া এই ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ নয়।
প্রতিকার
আশঙ্কার ব্যাপার হচ্ছে যে, এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের কোন প্রতিষেধক পাওয়া যায়নি। তবে চায়নাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গবেষণা চলছে।
প্রতিরোধ
বর্তমানে চীনের অবস্থা
চায়নার অন্যতম প্রধান উৎসবের মধ্যে লুনার নিউইয়ার একটি। সমগ্র চায়নাজুড়ে সকল উৎসব বাতিল করা হয়েছে। উহান শহরের সীমানায় ১০০০ শয্যার হাসপাতাল তৈরী করা হচ্ছে শুধুমাত্র এই রোগের চিকিৎসা করার জন্য। ৩ ফেব্রুয়ারীর মধ্যেই হাসপাতালের নির্মাণ শেষ হয়ে যাবে। তবে এই রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে কিছু ডাক্তার এবং নার্স ও এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। হংকং এর ম্যারাথন বাতিল করা হয়েছে। পুরো শহর কোয়ারেন্টাইন করে দেয়া হয়েছে।
হুবেই প্রভিন্সের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও প্রচুর পরিমাণে বাংলাদেশি, ভারতীয়, শ্রীলঙ্কার ছাত্রছাত্রী রয়েছে। তারাও নিজ নিজ দেশের সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছে৷
ফ্রান্স এবং আমেরিকা এর মধ্যেই বিশেষ চার্টার্ড প্লেনের ব্যবস্থা করেছে হুবেই প্রভিন্স থেকে তাদের নাগরিকদের নিয়ে আসার জন্য। বিভিন্ন দেশের এয়ারপোর্টে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি করা হয়েছে।
হুবেই প্রভিন্সে মোট ১৫ টি শহর রয়েছে যার সম্মিলিত জনসংখ্যা ৫৭ মিলিয়নের বেশি। পুরো প্রভিন্স জুড়েই সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উহান শহরের ট্রেন/বাস দোকান, মার্কেট সবকিছু বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
Source:
2. The NY Times
photo: www.wired.com