নরকে স্বাগতম!- ১০ সিরিয়াল কিলার ও তাদের নৃশংসতা

image source-www.noozsaurus.com
image source-www.noozsaurus.com

খুন কোনো  কোনো  মানুষের নেশা হতে পারে তা কি ভাবতে পারা যায় ! ঠান্ডা মাথায়, পরিকল্পনা করে কোন ব্যক্তিকে খুন করা আমরা গল্প-উপন্যাসে হরহামেশাই পড়ি । কিন্তু বাস্তবে ? বাস্তবেও যে আমরা এমন কয়েকজন সিরিয়াল কিলারদের অজানা তথ্য খুঁজব যারা ছিল ঠান্ডা মাথার খুনি । তাদের নৃশংসতার কথা শুনলে  আতঙ্ক জাগবে মনে, ভয়ে হয়ে পড়বেন শিহরিত । আসুন জানি বিশ্বের ইতিহাসে এমন কিছু নৃশংসতম সিরিয়াল কিলারদের আত্মকাহিনী ।

১। জ্যাক দ্য রিপার

সালটা ১৯৮৮। পূর্ব লন্ডনের এক ঘিঞ্জি বস্তির পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন যৌনকর্মী ক্যাথরিন এডোওয়ে। হঠাৎ তার তীব্র চিৎকারে ছুটে আসে পাড়া পড়শীরা । তারা ক্যাথরিনের দেহটি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন । সেবছরই পূর্ব লন্ডনে আরো চার যৌনকর্মী একইভাবে খুন হতে দেখা যায় । স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড অনেক চেষ্টায়ও খুনির কোন হদিস পায় নি । তবে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে, একজন ব্যক্তিই এ খুন গুলোর সাথে জড়িত । পুলিশের পক্ষ হতে তার নাম দেয়া হয় জ্যাক দ্য রিপার । শিকারদের প্রত্যেককেই গলার নলি কেটে ফেলত খুনী। কিন্তু কি কারণে সে এ কাজ করত তা আজও রহস্য। সে সময় এই সিরিয়াল কিলারের ভয়ে পূর্ব লন্ডনের আশেপাশের অঞ্চলের বাসিন্দারা সবসময় আতঙ্কিত ছিল । আজ পর্যন্ত লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড  এই খুনির কোন নাগাল পায়নি । তবে ১২৬ বছর পর ২০০৭ সালে খুনির ফেলে যাওয়া একটি চাদরে শুকিয়ে যাওয়া রক্তের ডিএনএ পরীক্ষা করে পুলিশ এই কুখ্যাত খুনি কে তা জানতে পেরেছে বলে দাবি করেছে । তাদের অনুমান এই খুনি হল অ্যারন কসমিনস্কি।  এই ইহুদি ছিলেন পোলেন্ডের অধিবাসী । পেশায় হেয়ার ড্রেসার । ‘প্যারানয়েড স্কিজোফ্রেনিয়ায়’ আক্রান্ত ছিল বলেই একধরনের বিকৃত মানসিকতায় ভুগত এবং তার কারণেই এই খুনগুলো সে করেছিল বলে পুলিশের পক্ষ হতে বর্তমানে দাবি করা হচ্ছে ।

২। পেড্রো অ্যালানসো লোপেজ

“Monster of the Andes” নামে পরিচিত এই কলম্বিয়ান সিরিয়াল কিলার ষাটের দশকে  গোটা দক্ষিণ আমেরিকার মানুষদের মনে আতঙ্ক তৈরি করেছিল। ১৯৪৮ সালে সান্টা ইসাবেলে জন্ম এই ব্যক্তি অন্তত ৩০০ জন কিশোরীকে ধর্ষণ করার পর নৃশংসভাবে খুন  করে । তার মধ্যে ১০০ জন ছিল উপজাতীয় নারী। ১৯৮৩ সালে সে ইকয়েডর পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এবং তাকে দোষী হিসেবে সাব্যস্ত করে ১৬ বছরের কারা দন্ড দেয়া হয় । ১৯৯৮ সালে সে উন্মাদ হয়ে যায় । বোগতা হাসপাতালে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় । কিন্তু তার মৃত্যু কিভাবে হয়েছে তা এখনও অজানা ।

৩। জাভেদ ইকবাল

১৯৫৬ সালে জন্ম  নেয়া এই সিরিয়াল কিলারের  জন্মস্থান পাকিস্তানের  লাহোরে । মাত্র ১৮  মাসে সে প্রায় একশ বালককে হত্যা করে । রাস্তায় ঘুরতে থাকা ছেলেশিশুদের ভুলিয়ে ভালিয়ে তাদের তুলে নিয়ে এসে  ধর্ষণ করতো এবং তারপর  তাদের হত্যা করতো । মৃতদেহের শরীর টুকরো টুকরো করে হাইড্রোলিক এসিড ভর্তি ড্রামে ডুবিয়ে রাখতো । এতে  অল্প সময়ইে দেহের খণ্ডাংশগুলো গলে যেতো । সেই গলিত দেহাবশেষ তরল  স্যুয়ারেজ লাইন কিংবা নদীতে ফেলে দেয়া হতো ।   ভিক্টিমদের কাপড় কিংবা জুতা সুভেনিউর  হিসেবে সে জমিয়ে রাখতো । শিকার সংখ্যা পনের ছাড়ানোর পর সে ভিক্টিমদের ছবি তুলে রাখতে শুরু করে । পুরিশের হাতে ধরা পড়ার পর সে দম্ভভরে এই  স্বীকারোক্তি দেয় , ” I am Javed Iqbal, killer of 100 children … I hate this world, I am not ashamed of my action and I am ready to die. I have no regrets. I killed 100 children.  ” ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর ফাঁসি কার্যকরের পূর্বেই প্রিজন সেলে তাকে ছুরিকাহত হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় । কর্তৃপক্ষ জানায়, জাভেদ প্রিজন সেলে আত্মহত্যা করেছে ।

৪। রিন সেচচার্ড ট্রেনট

তিনি একজন আমেরিকান । জন্ম ১৯৫০ সালে । সে এত নৃশংস ছিল যে তার নাম হয়ে যায় ‘ভ্যাম্পায়ার অব স্ক্রেরামেন্টো’। এমব্রোস গ্রিফিন নামক একজন ইঞ্জিনিয়ার ছিল তার প্রথম শিকার । তার দ্বিতীয় শিকার অন্তঃসত্ত্বা একজন নারী । এই নারীকে হত্যা করে ট্রেনট তার  রক্ত দিয়ে গোসল করে । ১৯৮০ সালের ৮ মে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে  গ্যাস চেম্বারে মৃত্যুদন্ডের রায় দেয়া হয় । ১৯৮০ সালের ২৬ ডিসেম্বর কারাগারে থাকাকালীন অবস্থায় তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।  ধারণা করা হয়, অতিরিক্ত পরিমাণ  ঔষধ খেয়ে সে আত্মহত্যা করে ।

৫। হ্যারল্ড ফ্রেডরিক শিপম্যান

পেশায় তিনি চিকিৎসক । দেখতে দাড়ি চশমা মিলিয়ে দার্শনিকের মতো ৷ কিন্তু কে বলবে এ্ লোকাটি ইতিহাসের অন্যতম কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার । যুদ্ধবিধ্বস্ত এক শ্রমজীবী পরিবারে জন্ম। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তার মা ফুসফুসের ক্যান্সারে মারা যান । জীবনের শেষ দিকে তিনি ব্যথা কমানোর জন্য মরফিন ইঞ্জেকশন নিতেন যা হ্যারল্ড শিপম্যানের জীবনে পুরোপুরি দাগ কেটে যায়। বিষ ইনজেক্ট বা শিকারের দেহে প্রবেশ করিয়ে খুন করা তার নেশা ছিল । ১৯৭০ সালে ডাক্তারি পাস করে হাইড শহরে চেম্বার দিয়ে জাঁকিয়ে বসেন । পেশার আড়ালে  একের পর এক রোগীকে খুন করেন । অন্তত ২৫০ জন তার নৃশংসতার শিকার । রোগীদের অধিকাংশই ছিল বয়স্ক । জানা যায়, শিপম্যান এসব রোগীদের শরীরে বেশী মাত্রার ডায়ামর্ফিন প্রবেশ করিয়ে খুন করতেন এবং দলিল জাল করে তাদের অর্থ সম্পত্তি হাতিয়ে নিতেন । পরে মেডিক্যাল রিপোর্ট জাল করে নানা ধরনের অসুখের কারণ দেখিয়ে তাদের ডেথ সার্টিফিকেট দিতেন । ৫ অক্টোবর, ১৯৯৯ হ্যারল্ড শিপম্যানের বিচার শুরু হয় ৷ পনেরো জনকে হত্যাi দায়ে ২০০০ সালের ৩১ জানুয়ারি তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে আজীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত কiv nq| ২০০৪ সালের ১৩ জানুয়ারি জেলখানায় তিনি আত্মহত্যা করেন ৷

৬। পেড্রো রডরিগেজ ফিলহো

একজন ব্রাজিলিয়ন । জন্ম ১৭ জুন ১৯৫৪ । তার খুনের ব্যপকতা দেখে তাকে ‘Killer Pity’ এই নামে অভিহিত করা হতো । তার বয়স ১৮ হওয়ার আগেই সে ১০ জনকে খুন করে । তার নিজ শহরের সহকারী মেয়র ছিল তার প্রথম শিকার । সে ১৯৭৩ সালে ধরা পড়ে । ৭১ জনকে খুন করার অপরাধে  তাকে ৪০০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয় ।

৭। জন ওয়ানে গ্যাসি

যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে এই হত্যাকারীর জন্ম। পেশায় ছিল ক্লাউন । মানুষকে নিটোল আনন্দ দেয়া তার মূল পেশা হলেও তার মাঝে লুকায়িত রয়েছে অদ্ভুত ও বীভৎস সব খুনের কাহিনী । কাজের লোভ দেখিয়ে গরীব ছেলেমেয়েদের তুলে নিয়ে আসতো। তারপর তাদেরকে ধর্ষণ করে নৃশংস ভাবে খুন করত । পরবর্তীতে মৃতদেহগুলো সে তার নিজের বাড়ির সীমানায় পুঁতে রাখত । ১৯৯৪ সালে ৩৩জন কে খুনের অপরাধে তার ফাঁসি হয় ।

৮। আন্দ্রেই চিকাতিলো

আন্দ্রেই চিকাতিলো   শুধু  যে খুনি  ছিল তা নয়, সে আসলে নরখাদক ছিল ।  ইউক্রেনে জন্মগ্রহণকারী এই ব্যক্তি পারবর্তীতে রাশিয়ার নাগরিক হন । ১৯৯৪ সালে ফায়ারিং স্কোয়াডে তাকে গুলি করে মারা হয়। তাকে দ্যা রেড রিপার নামেও ডাকা হতো । ১৯৭৮ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে ৫২ জন শিশু ও মহিলাকে খুন করার অপরাধে তাকে অভিযুক্ত করা হয় ।  সে অত্যন্ত নৃংশস কায়দায় এই হত্যাকান্ডগুলো  ঘটাতো ।  চিকাতিলো তার প্রথম হত্যাকান্ড ঘটায় ১৯৭৮ সালের ২২ ডিসেম্বর ।   সে ৯ বছর বয়সী একটি  মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করতে  চাইলে মেয়েটি চিৎকার করে উঠে । ঐ অবস্থায় মেয়েটিকে সে  ছুরি দিয়ে হত্যা করে ।  এভাবে সে তার নৃশংস খুনগুলো ঘটাতে থাকে ।

৯। টেড বান্ডি, গ্রিন রিভার কিলার

টেড বান্ডি সুপুরুষ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিল। অল্প বয়সী কিশোরী ও যুবতীদের প্রেমের ফাঁদ পেতে তাদের ধর্ষণ করত এবং ধর্ষণ উত্তর তাদের অঙ্গচ্ছেদ করে তাদের খুন করা হতো । জানুয়ারী ১৯৭৪ এবং ফেব্রুয়ারি ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত এই সময়ের মধ্যে সে মোট ৩০টি খুন করে । দুবার সে বুদ্ধমিত্তা ও নিখুঁত প্ল্যানিং করে পুলিশের হাত থেকে পালাতে সক্ষম হয় । ২৪ জানুয়ারী ১৯৮৯ সালে তাঁর মৃত্যুদন্ড হয় ।

১০। জেফরি ডাহমের

ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস খুনীদের আরেকজন হলো এই জেফবি ডাহমের । ‘Milwaukee Cannibal’ নামেও তাকে ডাকা হয় ।  কমপক্ষে ১৭ জন নৃশংসতার শিকার । সে শিকারকে জোরপূর্বক সমকামিতায় বাধ্য করত এবং তাদের হত্যা করে সেই মাংস খেত । মাত্র ১৮ বছর বয়সে ডাহমের প্রথম হত্যাকান্ড ঘটায় ।  ১৯৮৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ১৩ বছর বয়সী এক বালককে  যৌন হয়রানির অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয় । বিচারে তার ৫ বছর সাজা হয় । সন্তোষজনক ব্যবহারের কারণে তার আগেই তাকে মুক্তি দেয়া হয় । মুক্তির পরপরই সে আবার হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে । ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে ডাহমের পুনরায় পুলিশের কাছে ধরা পড়লে তার সব কুর্কীতি সকলের নিকট উন্মোচিত হতে থাকে । ১৭টি হত্যাকান্ড সন্দেহাতীত প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ৯৩৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়। ১৯৯৪ সালের ২৮ নভেম্বর কারাগারে কর্মরত অবস্থায় আরেক কয়েদীর আঘাতে মৃত্যু ঘটে কুখ্যাত এই হত্যাকারীর ।

লেখকঃ প্রকাশ কুমার নাথ। পেশায় কম্পিউটার প্রোগ্রামার । ভালো লাগে বই পড়তে আর নানান দেশের খবর সংগ্রহ করতে। এছাড়া গান শুনার নেশা তো রয়েছেই । ইচ্ছে আছে বই লেখার । কালি, কলম আর মগজাস্ত্র এক সুরে বাঁধার অপেক্ষায় আছি ।