ANCIENT MEGA STRUCTURE- পিরামিড তৈরি হয়েছিল কিভাবে?

পিরামিড নিয়ে সাধারণ জনগণতো বটেই বিশেষজ্ঞদের মনেও প্রশ্নের অন্ত নেই। চার-সাড়ে চার হাজার বছর আগে কিভাবে এই বিশাল পিরামিডগুলো বানানো হয়েছিল? জন-মানবহীন বিরান মরুভূমিতেই কেন পিরামিডগুলো বানান হল? প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ছাড়াই কিভাবে এত বিশাল বিশাল পাথর-খণ্ড পাওয়া গেল? কোথা থেকে আনা হল এসব পাথর? কিভাবেই বা এত নিখুঁত আকৃতি দেয়া হল?

প্রশ্নের যেন শেষ নেই। বহুদিন থেকেই বিশ্বের বাঘা বাঘা পুরাতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ, গবেষকরা এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছেন। সাম্প্রতিক কিছু আবিষ্কারের ফলে অন্তত কিছু প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

২০১১ সালের কথা। ৪৯ বছর বয়সী ফরাসী নাগরিক পিয়েরে ট্যালেট অন্যদিনের মতই তার মিশরীয় ও ফরাসী সহকর্মীদের নিয়ে লোহিত সাগর থেকে কয়েক মাইল ভিতরে গভীর মরুভূমিতে কাজ করছিলেন। হঠাৎ করেই পাশের চুনাপাথরের পাহাড়ে মৌমাছির চাকের মত একসাথে ৩০ টি গুহা আবিষ্কার করেন। বাইরে থেকে দেখে কিছুই বোঝার উপায় নেই। পরীক্ষা করার পর তিনি বুঝতে পারেন এই গুহাগুলো প্রাচীন মিশরীয়রা তাদের নৌকা রাখার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করত। প্রায় ৪,৬০০ বছর আগে চতুর্থ ফারাও রাজবংশের আমলে এই গুহাগুলো বানানো হয়েছিল।

ট্যালেট ২০১৩ সালে তৃতীয়বারের মত যখন খনন কাজ শুরু করেন তখন অভাবনীয় এক ঘটনা ঘটে। একআঁটি প্যাপিরাস বা নলখাগড়ার কাগজ তিনি পেয়ে যান। কয়েক ফুটি কাগজগুলো মিশরীয়রা তাদের দৈনন্দিন যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করত। ট্যালেট বুঝতে পারেন এই কাগজগুলো এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে পুরনো কাগজ। এগুলোর মধ্যে একটি ডায়রিও রয়েছে।

পরীক্ষানিরীক্ষার পর মিশর সরকার এগুলো প্রদর্শনে রাজি হয়।মিশরের রাজধানী কায়রোতে অবস্থিত যাদুঘরে এই ডায়রিটা প্রদর্শনীর জন্য রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রদর্শনী উদ্বোধনকালে মিশরের প্রাচীন ও প্রাচীন মিশরীয় পুরাকীর্তি সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী খালেদ এল আনানী বলেন,

এই ডায়রিটা ২০১৩ সালে আমরা পাই। তখন মিশর সরকার এবং ফ্রান্সের সরকারের যৌথ উদ্যোগে ওয়াদি এল জার্ফ বন্দরের নিকটস্থ গুহাগুলোতে অনুসন্ধান কাজ চলছিল।। এই বন্দরটি সাড়ে চার হাজার বছর আগে খুবই কর্মচঞ্চল ছিল। বন্দরটি সুয়েজ শহর থেকে মাত্র ৭৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং মিশরের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান। আনানী আরো বলেন, বর্তমানে আবিষ্কৃত পুরাকীর্তিগুলো এখন পর্যন্ত পাওয়া পুরাকীর্তিগুলোর মধ্যে সবচে’ পুরনো।

ধারণা করা হচ্ছে ডায়রিটা একজন পিরামিড নির্মাতার যিনি ফারাও খুফুর পিরামিড বা সমাধি নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন। তার নাম হল মেরের। প্রাচীন যুগের মিশরীয়রা প্যাপিরাস বা নলখাগড়া থেকে তৈরি কাগজ ব্যবহার করত। এই ডায়রিটাও প্যাপিরাস থেকেই তৈরি। যেসব শ্রমিকেরা বিশালাকার এসব পিরামিড নির্মাণে নিজের রক্ত পানি করেছেন তাদের সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য এই ডায়রি থেকে পাওয়া যায়।

প্রাপ্ত কাগজের অংশ

শ্রমিকদের কেমন খাবার দেয়া হত? তাদের কতটুকু গোশত খেতে দেয়া হত?- এসব কথা আমরা এই ডায়রি থেকে জানতে পারি। শ্রমিকদের সম্পর্কে পাওয়া এসব তথ্য রহস্যময় গিজার পিরামিডের রহস্যভেদের পথে আরও একধাপ আমাদের এগিয়ে নেবে। প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগের এই ডায়রিতে পিরামিড নির্মাণের কাজে শ্রম দেয়া শ্রমিকদের দৈনন্দিন কাজের তালিকা রয়েছে। গিজার পিরামিডের কাজে ব্যবহৃত বিশাল বিশাল পাথর-খণ্ডগুলো সমুদ্র থেকে মরুভূমিতে এসব শ্রমিকেরাই টেনে আনত। মিশরের শাসনকর্তা ফারাওদের এসব পিরামিডে সমাধিস্থ করা হত।

মেরের এর ডায়রি থেকে জানা যায় যে, তিনি তৎকালীন মিশর রাজার কর্মচারী ছিলেন। এই ডায়রিতে তার কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন পরিসংখ্যান এবং প্রশাসনিক তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। তার অধীনে ২০০ লোক কাজ করত। তিনি তাদের নিয়ে মিশরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরে বেড়াতেন এবং এক বিভিন্ন ধরনের পণ্য সংগ্রহ করে এক স্থান থেকে অপর স্থানে পৌঁছে দিতেন। নীল নদের তীরে অবস্থিত তুরা শহরে তার যাতায়াত ছিল বলে এই ডায়রিতে উল্লেখ আছে। চুনাপাথরের জন্য তুরা বিখ্যাত ছিল। এখানকার খনি থেকে পাওয়া চুনাপাথর তিনি সংগ্রহ করতেন এবং নৌকায় করে নীল নদ বেয়ে গিজায় পৌঁছে দিতেন। এই চুনাপাথরের আবরণী তখনকার যুগে পিরামিডের বাইরের দেয়ালে ব্যবহার করা হত।

অন্য যেসব কাগজপত্র পাওয়া গিয়েছে সেগুলো ছিল মিশরের আরেক বড় কর্মকর্তা মার এর। তিনি পিরামিড নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ধারণা করা হয় তিনি পিরামিড নির্মাণে সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন। তার প্রাথমিক দায়িত্বগুলোর মধ্যে ছিল বিশালাকার পাথরগুলো যেন মিশরের বিভিন্ন খাল এবং নীল নদ নিয়ে সুষ্ঠভাবে কায়রোতে পৌছায়। পাথরগুলো পরে কেটে সুনির্দিষ্ট আকৃতি দেয়া হত। এরপর সেগুলোকে পিরামিড বানাতে ব্যবহার করা হত।

মিশরের আরও রহস্যময় কাহিনি জানতে ক্লিক করুন