কয়েকটি পরিচিত সংখ্যা সংকেতের উৎপত্তি কথা – (পর্ব -১)

The numbers speak for themselves – Kevin Kalkhoven.

আমরা মাঝে মাঝেই কিছু সংখ্যা ব্যবহার করে থাকি যেগুলো আসলে শুধুমাত্র গাণিতিক কারনে আমাদের কাছে পরিচিত নয়,যেগুলো ভিন্ন ভিন্ন কারনে আমাদের কাছে পরিচিত এবং বিখ্যাত । যেমন – ৪২০ , ৪০৪ ইত্যাদি । এই সংখ্যাগুলো আমরা প্রায়ই শুনে থাকি এমনকি মাঝে মাঝে ব্যবহারও করে থাকি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে । এই সংখ্যাগুলোকে বিভিন্ন কোড বা সাংকেতিক চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করা হয়  । কিন্তু আমরা হয়ত অনেকেই জানিনা এই কোড বা সাংকেতিক চিহ্নগুলোর উদ্ভব হল কিভাবে বা এই কোডগুলোর পেছনের কাহিনীই বা কি । আজ আপনাদের তেমনই কিছু কোড বা সাংকেতিক চিহ্নের উৎপত্তি কথা সম্পর্কে জানাব । চলুন কোডগুলোর রাজ্য থেকে ঘুরে আসি জেনে আসি এদের শুরুর কথা ।

 

১। সংকেত “৪০৪”  :

আমরা যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করি তারা হয়ত “Error 404: Page not found.” এই লেখাটির সাথে পরিচিত । কিন্তু আসলে এই কথাটির অর্থই বা কি বা এই কথাটির উৎপত্তিই বা হল কিভাবে বা কেন?

এই লেখাটির উৎপত্তি নিয়ে এরকম একটা গুজব বা গল্প প্রচলিত আছে এই কোডটি আবিষ্কৃত হয়েছে একদল তরুণ বিজ্ঞানীদের দ্বারা যারা কিনা ইন্টারনেট আবিষ্কার করেছিল । এই বিজ্ঞানীর দল ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন এর নিউক্লিয়ার গবেষণার সাথে যুক্ত ছিল যেখানে তাদের কেন্দ্রীয় ইন্টারনেট ডাটাবেস রুম নাম্বার “৪০৪” এ তে অবস্থিত ছিল । এই ঘর থেকে তারা নিজেরা বিভিন্ন তথ্য পুনরুদ্ধার করত এবং যেসব তথ্যের জন্য অনুরোধ করা হত কেন্দ্রীয় ডাটাবেস থেকে সেসব তথ্য পাঠাত । এরপর ডাটাবেস এর আয়তন বাড়তে থাকে এবং প্রায় প্রায় মানুষ ভুল নামে নথিপত্র খুঁজতে থাকল । যখন এমন পুনরায় পুনরায় ঘটতে থাকল তখন বিজ্ঞানীরা “Room 404: File not found.” বাক্যটি দ্বারা ছোট্ট করে  উত্তর দিত । কিন্তু যখন ইন্টারনেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে উত্তর দিতে সক্ষম হল তখন বিজ্ঞানীদের আর কস্ট করে উত্তর লিখে দিতে হত না সেখানে সার্ভার নিজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানুষের ভুল নথি খোঁজার উত্তরে এটা পাঠিয়ে দিত । এতক্ষন ধরে আমরা যে গল্পটি পড়লাম তা আসলে পুরোপুরি একটি গুজব ।

আসল বিষয় হল “৪০৪” এই কোডটি এসেছে HTTP error code থেকে, যেগুলো ১,২,৩, ৪ অথবা ৫ দিয়েও শুরু হতে পারে “Error” এর ধরনের ওপর ভিত্তি করে । “4” দিয়ে শুরু হলে তা “ক্লাইন্ট এরর” বোঝায় । “04” যেটা প্রথম ৪ কে নির্দেশ করে যার অর্থ হল “খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না” । সুতরাং, “404” এর অর্থ হচ্ছে, “client error, not found.” অনেক সময় ভিন্ন ভিন্ন সার্ভারে ভিন্ন ভিন্ন লেখা দেখতে পাওয়া যায় যেমন, “Error 404: Page not found”, “Error 404: Not found” or “Error 404: File not found.”এর কারন হচ্ছে “404 error” হল এমন যে, এটা সার্ভারের জন্য প্রথম সংখ্যার পরের দুই সংখ্যাকে চিনতে পারাটা এটা বাধ্যতামূলক নয় ,তাই অনেক সার্ভারে এটা লেখা দেখতে পাওয়া যায় যে, “Error 404: Page not found”, “Error 404: Not found” or “Error 404: File not found.”

 

 

২। সংকেত “420”:

“ ৪২০” এই শব্দটির সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত । সাধারনত এখন “৪২০” বলতে চরিত্রদোষ আছে এমন কাউকে বা ফালতু  বা ধান্ধাবাজ লোকজনকে বুঝায় ।  কিন্তু এই সংকেতটি শুরুতে অন্য কিছু বোঝাতেই ব্যবহার করা হত । বলাই বাহুল্য যে, শুরুর ধারনার সাথে আমাদের এই ধারনার কোন মিলই নেই । চলুন এই সংকেতটি কিভাবে উৎপত্তি হল তা জেনে আসি ।

৪২০ সংখ্যাটি মারিজুয়ানার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ । মারিজুয়ানা গ্রহণকারীরা প্রতিবছরের এপ্রিল মাসের ২০ তারিখে বাৎসরিক মারিজুয়ানা দিবস পালন করে । অর্থাৎ এপ্রিল মানে বছরের ৪র্থ মাস এর ৪ এবং এপ্রিল মাসের ২০ তারিখ । এভাবে সংক্ষেপে ৪২০ । এই কোডের উৎপত্তি নিয়ে এ ধরনের অনেক অনেক ধরনের গুজব আছে । কারও কারও মতে এটা ক্যালিফোর্নিয়া পেনাল কোড ৪২০ কে নির্দেশ করে যেটা মাদক নিয়ে কাজ করে । আবার কারও কারও মতে, এটা লস এঞ্জেলস এবং নিউ ইয়র্ক পুলিশের একটা গোপন কোড যার মাধ্যমে তারা মারিজুয়ানা গ্রহণকারীদের সম্পর্কে তথ্য আদানপ্রদান করে । আবার কেউ কেউ এটা বিশ্বাস করে যে, মারিজুয়ানার মধ্যে যেসব রাসায়নিক পাওয়া যায় সেগুলোর সংখ্যা অনুসারে এই সংকেতের উৎপত্তি  অথবা এপ্রিল মাসের ২০ তারিখে মারিজুয়ানা গাছ লাগানোর জন্য সবচেয়ে ভাল সময়  বলে এই সময়কে  সংক্ষেপে ৪২০ বলা হয় । কিন্তু আসলে এসব গুজবের কোনটাই সঠিক নয় । চলুন এবার আসল ঘটনা জেনে নেয়া যাক ।

১৯৭১ সালে ক্যালিফোর্নিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫জন শিক্ষার্থী মারিজুয়ানা ব্যবহারের ক্ষেত্রে “৪২০” সংকেতটি প্রথম ব্যবহার করে । এটা শুরু হয় মূলত তখন থেকে যখন থেকে এই শিক্ষার্থীরা এটা ঠিক করে যে তারা প্রতিদিন বিকাল ৪ ২০ মিনিটে স্কুল ছুটির  পর তারা একসাথে মিলিত হবে মারিজুয়ানার বাগান কোথায় আছে তা খুঁজে বের করার জন্য । তারা এজন্য একটা ম্যাপও ব্যবহার করত । তারা তাদের দলের নাম দিয়েছিল Waldos কারন তারা প্রায় প্রায়ই একটা দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে থাকত । যদিও তারা কখনও মারিজুয়ানার কোন বাগান খুঁজে পায়নি কিন্তু তারা তারা নিয়ম করে প্রতিদিন বিকাল ৪ ২০ মিনিটে দেখা করাটা চালিয়ে যেতে থাকে । এরপর মারিজুয়ানাকে বুঝাতে তারা এই “৪২০” সংকেতটি ব্যবহার করতে থাকে । এরপর খুব দ্রুত এই সংকেতটি তাদের বন্ধুদের মধ্যে ছড়িয়ে যায় এবং এটা তৎকালীন জনপ্রিয় রক ব্যান্ড “ডেড” এর সদস্যরাও ব্যবহার করতে থাকে এবং তারা  তাদের ভক্তদের মাঝেও এই সংকেতটি পরিচয় করিয়ে দেয় । এবং ধীরে ধীরে এভাবেই এই সংকেতটি চারপাশে বহুল ব্যবহৃত হতে থাকে ।