আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনে একজন সঙ্গী/ সঙ্গিনীর গুরুত্ব অপরিসীম। প্রায় প্রতিটা মানুষই কোন না কোন রিলেশনে আসক্ত। আজকে আমরা জানার চেষ্টা করবো কিভাবে একটা সম্পর্ককে সুন্দরভাবে এগিয়ে নেয়া যায়।
১। সঙ্গীর প্রতি আস্থাশীল থাকুন
তার মধ্যে আস্থার একটা জায়গা তৈরি করুন। আস্থা রাখুন তার প্রতি। আপনার কাজকর্মে বুঝিয়ে দিন আপনি তার প্রতি কতোটা আস্থাশীল । এতে করে আপনার প্রতি তার দায়িত্বটা বাড়বে। সে আপনাকে কেয়ার করতে শিখবে। এটা একটা রিলেশনের জন্য খুব ভালো একটা পয়েন্ট ।
২। কেয়ারিং হোন
কেয়ার বা যত্নশীল জিনিসটাকে বলা হয় রিলেশনের প্রাণ । সঙ্গীর প্রতি আপনার কেয়ারিং মনোভাবটাই ঠিক করে দেবে আসলে আপনাদের সম্পর্কটা কতদূর যাবে । খুব ছোট ছোট বিষয়গুলোর প্রতিও কেয়ার নিতে শিখুন। সে ঠিক মতো খাওা দাওয়া করে কিনা, সে মন খারাপ করে থাকে কিনা, আপনার প্রতি তার কোন অভিযোগ আছে কিনা এই ব্যাপার গুলো উৎসাহ নিয়ে জানার চেষ্টা করুন। তার খোঁজ খবর রাখুন। এই ব্যাপার গুলো তার কাছে আপনার গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলবে ।
৩। সন্দেহপ্রবণতা দূর করুন
সন্দেহ হচ্ছে একটা মারাত্মক রোগ। আপনি কি সন্দেহ বাতিকগ্রস্থ? তাহলে এখন থেকেই সন্দেহ করা বন্ধ করুন । কোন জিজ্ঞাসা থাকলে সেটা ঘুরিয়ে পেচিয়ে জিজ্ঞেস না করে সরাসরি জিজ্ঞেস করুন। এটা আপনার পারসোনালিটির পরিচয়ও বটে । কোন ব্যাপারে সন্দেহ করা থেকে নিশ্চিত হয়ে নেয়া ভালো। এতে মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্ত থাকা যায় এবং রিলেশনটাও সুন্দর হয়। অকারণে ফেসবুকের পাসওয়ার্ড চাওয়া । কথায় কথায় প্রশ্ন তোলা , বার বার আজে বাজে কথায় সন্দেহ করা । তার ছেলে /মেয়ে বন্ধুদের নিয়ে সন্দেহ করা আপনাদের সম্পর্কটাকে এক মুহূর্তে নষ্ট করে ফেলতে পারে । এগুলো না করে তার সম্পর্কে আপনার অবস্থানটা সরাসরি প্রকাশ করুন । নিজের কথাগুলো বলুন । তার থেকে আপনি কি কি প্রত্যাশা করেন সেটাও সরাসরি জানিয়ে দিন । এতে করে আপনাদের মাঝে “”সন্দেহ “”নামক রোগটা আসতে পারবে না ।
৪। সঙ্গীকে বুঝতে শিখুন
আপনার সঙ্গীকে বুঝতে শিখুন। শুধু আবেগ দিয়ে নয়। বাস্তব জ্ঞানেও তাকে বুঝার চেষ্টা করুন। এটা আপনাদের পারস্পরিক আন্তঃসম্পর্ক বাড়াবে। তার সঙ্গে সময় কাটান। তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করুন । তার সম্পর্কে আগ্রহী হোন । তার পছন্দ, অপছন্দ বুঝতে শিখুন । ছোট ছোট ব্যাপারগুলো জেনে রাখুন । আপনার ব্যাপারেও তাকে উৎসাহিত করুন । তার ব্যাপারে আপনার আগ্রহের জানান দিন । এই ব্যাপারগুলো আপনার সঙ্গীকে আপনার সম্পর্কে ভালো ধারণা দেবে ।
৫। বিশ্বাসযোগ্য হোন
বিশ্বাস একটা সম্পর্কের খুব বড় একটা জায়গা । এটা একদিনে তৈরি হয় না । আস্তে আস্তে তৈরি হয় । আবার একবার ভেঙ্গে গেলে সহজে ফিরেও আসে না । নিজের কাজ কর্মে বিশ্বাসের প্রমান দিন । বিশ্বাসের মূল্যায়ন করুন । এবং সেটার মর্যাদা দিতে শিখুন । আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা আপনাকে তার সামনে অন্যরকম মানুষ হিসাবে উপস্থাপন করবে ।
৬। সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন
মানুষকে শ্রদ্ধা করতে শিখুন । শ্রদ্ধা করতে জানাটা একটা বড় গুণ । আপনার সঙ্গী যদি আপনার থেকে শ্রদ্ধাটুকুই না পান তাহলে কি করে সম্পর্কটা এগোবে ? তার কাজের প্রতি শ্রদ্ধা রাখুন। তার পারসোনালিটির প্রতি শ্রদ্ধা রাখুন। সম্মান করলেই সম্মানটা পাবেন। নতুবা সম্পর্কটা ভেঙে যেতে পারে। আপনার সঙ্গীকে যতটুকু সম্মান করবেন ঠিক ততোটুকু সম্মানই আপনি পাবেন। নিজের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন করুন। তার মতামত নিন। এতে সে নিজেকে আপনার জীবনে গুরুত্ব পূর্ণ একজন হিসাবে ভেবে নেবে । আপনার কাজ কর্ম গুলো সম্পর্কে তাকে জানান । প্রতিদিন কি কি করলেন সেগুলো বলুন । তাকে সময় দিন । তার কথা শুনুন । এগুলো আপনার প্রতি তার শ্রদ্ধাটাকে বাড়িয়ে দেবে ।
৭। ভালো সময় কাটান
সঙ্গীর সাথে কীভাবে সময়টা কাটাবেন সেটা ঠিক করে রাখুন । তাকে সময় দিতে শিখুন। কোথাও ঘুরতে যান। ভালো সিনেমা দেখুন। নিজেদের মতো করে সময়টাকে উপভোগ করুন। তার কথাগুলো শুনুন। নিজের কথাগুলো শেয়ার করুন। সম্পর্কটাকে একঘেয়ে না করে সেটাতে বৈচিত্র আনুন। একটা প্ল্যান করে সময় কাটান। কোয়ালিটি টাইম পাস করুন । সময়টা এমনভাবে কাটান যেন সেটার রেশ অনেকদিন পর্যন্ত থাকে । ছোট ছোট গিফট করুন। সময়টাকে স্মৃতিময় করে রাখুন। এই ব্যাপারগুলো একটা সম্পর্কের ফুয়েল হিসাবে কাজ করে । নিজেরা যে সময়টুকু কাটাবেন সেটাকে ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দিও করে রাখতে পারেন ।
৮ । দোষারোপ করা বন্ধ করুন
বেশির ভাগ সম্পর্ক গুলো ভেঙ্গে যাওয়ার কারন টা কি জানেন ?? কারণটা হলো ,একজন আরেকজনকে না জেনে ,না বুঝে ব্লেইম করে। গালি গালাজ করে । এর ফলাফলটা মারাত্মক । পরবর্তীতে ঝগড়া মিটে গেলেও গালাগালি করার প্রভাবটা থেকে যায়। এখান থেকেই আবার নতুন করে ঝগড়ার শুরু হয় ।ঝগড়াটা যাতে আবার নতুন করে শুরু না হয় সেই দায়িত্বটা আজকে থেকেই নিন । ব্লেইম করা থামান । রেগে গেলে কথা বলা বন্ধ রাখুন। কিন্তু ভুলেও গালাগালি করবেন না। অপবাদ দেবেন না । চুপ থেকে পরিস্থিথি বুঝুন । এরপর সময় মতো নিজের মতামত তুলে ধরুন । তাকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করুন । বার বার বোঝান । কিন্তু ব্লেইম করবেন না । আপনার সঙ্গীর যদি কোন অতীত থেকেই থাকে তবে সেটা নিয়ে কথা না বলাই ভালো । কোন মানুষই তার অতীতে বাস করতে চায় না । আপনিও কথায় কথায় তার অতীত টেনে আনবেন না । তাহলেই দেখেবন সম্পর্কটা মধুর হয়েছে ।
৯। প্রশংসা করুন
সঙ্গীর প্রশংসা করতে জানুন । তার ভালো দিকগুলো তুলে ধরুন । প্রতিটা মানুষই প্রশংসা পেতে চায় । সময় বুঝে ,জায়গা বুঝে তার প্রশংসা করুন । তবে সেটা যেন লাগাম ছাড়া কিংবা অপ্রাসঙ্গিক না হয় । তাহলে ব্যাপারটা চাটুকারিতার মতো মনে হবে । তার ভালো কাজ গুলোর প্রশংসা করুন । তবে হ্যা সমালোচনাও করতে হবে । কিন্তু সেটা সঠিকভাবে। এমনভাবে করতে হবে যেন সে তার ভুলগুলোকে শুধরে নিতে পারে । নিজেকে যেন ছোট মনে না করে ।
১০। একজন সাপোর্টিভ মানুষ হোন
সঙ্গীকে মানসিকভাবে দিতে শিখুন। সেটা মানসিকভাবেও হতে পারে, আবার অন্য কোন ভাবেও হতে পারে। মানসিকভাবে সাপোর্ট দেয়াটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তার বিপদে আপদে পাশে থাকুন। তার দুঃখগুলোর সঙ্গী হোন । তবেই তো সে আপনাকে তার সুখের ভাগটা দেবে। চিন্তাভাবনায় ইতিবাচক হোন। নেতিবাচকতা পরিহার করুন এবং সম্পর্কটাকে ভালো রাখুন।
লেখক সম্পর্কেঃ আরাফাত আব্দুল্লাহ । লেখালেখির সাথে যুক্ত আছি । কিছু অনুবাদের কাজ করেছি । প্রিয় কাজ সমসাময়িক বিষয়ের উপর লেখালেখি করা ।