এই লেখাটি পড়ার সময় না থাকলে, শুনতে পারেন এর অডিও ভার্সন। ক্লিক করুন নিচের প্লে-বাটনে।
গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর গরমের তীব্রতা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এ গরম সহসাই কমার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু এই আবহাওয়াতেও আমাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম করার জন্যে ঘরের বাইরে বেরুতেই হয়। আর সেখানেই প্রখর রোদে ওত পেতে থাকে “হিটস্ট্রোক” নামক মারাত্মক এক স্বাস্থ্যঝুকি।
হিট স্ট্রোক কি?
প্রচন্ড গরমের কারণে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেলে দেহের তাপমাত্রা 104 ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে তাকে হিটস্ট্রোক বলে। এটি একটি বিশেষ ধরণের হাইপারথারমিয়া (Hyperthermia )।একে সান স্ট্রোক,থার্মিক ফিভার,সিরিয়াসিস(Siriasis) নামেও অভিহিত করা যায়।গরমের বিপাকীয় ক্রিয়ার জন্য তাপ উৎপন্ন হয়।দেহের অতিরিক্ত তাপ দেহ থেকে বেরিয়ে যায় ঘামের মাধ্যমে।দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রক্তের ভূমিকা অনন্য।দেহের তাপমাত্রা বাড়লে ত্বকের রক্তনালী প্রসারিত হয় এবং অপ্রয়োজনীয় তাপ পরিবেশে মুক্ত করে দেয়।কিন্তু মারাত্মক গরমের কারণে দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেলে হিটস্ট্রোক দেখা যায়। হিটস্ট্রোক থেকে মানুষ পঙ্গু হয়ে যেতে পারে, এমনকি সময় মত সুচিকিৎসা না পেলে মৃত্যুও হতে পারে।
অথচ একটু সাবধানতা আর নিচের উপায়গুলো অবলম্বন করলেই হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচা সম্ভব।
১। বেশি করে পানি খান
যেহেতু পানিশূন্যতা থেকেই হিট স্ট্রোক হয়, তাই গরমে দেহ থেকে বেরিয়ে যাওয়া পানির শূন্যতা পূরণে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। খাবার পানির পাশাপাশি কাচা আমের ঘরে তৈরি জুস, লেবু, বেল, তরমুজের শরবত খেতে যেমন ভালো লাগবে, তেমনি তা আপনার দেহের পানিশূন্যতা পূরণ করে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে আনবে।
২। পোষাক পরুন ঢিলেঢালা ও হালকা রঙ্গের
ফ্যাশনে যাই চলুক না কেন। গরমে আঁটসাঁট পোষাক থেকে শরীরকে রেহাই দিন।তীব্র গরমে হালকা রঙ এর, ঢিলেঢালা সুতি কাপড়ের পোষাক বেছে নিন। নরম কাপড়ের অন্তর্বাস অবশ্যই ব্যবহার করুন। কেননা এটি দ্রুত ঘাম শুষে নিয়ে আপনার শরীরকে ঠান্ডা রাখবে।
৩। জাঙ্ক ফুড একেবারেই নয়
গরমের এই দুই মাস ফাস্টফুডকে না বলুন। কেননা এতে থাকা অতিরিক্ত লবন, তেল গরমে আপনার শরীরকে আরো বেশি ক্ষতিকর অবস্থার দিকে নিয়ে যায়। শরীর ঠান্ডা থাকে এমন ঘরে তৈরী খাবার খান।
৪। গোসল করুন যতবার সম্ভব
প্রচন্ড গরমে শরীরের তাপমাত্রা যাতে সীমা অতিক্রম না করে, এজন্যে যতবার সম্ভব গোসল করুন। তবে প্রতিবার গোসলের পরে চুল ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। নইলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
৫। দুপুর ১২ টা থেকে ২ টা থাকুন ছায়ায়
দুপুর ১২ টা থে ২ টায় রোদের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি থাকে। অর্থাৎ গরমের পরিমাণটাও। তাই চেষ্টা করুন ঘরের বা অফিসের বাইরের জরুরী কাজগুলো এর আগে বা পরে সেরে ফেলার। এই সময়টার সরাসরি সূর্যতাপে কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।
৬। ব্যাগে রাখুন ছাতা, টুপি, পানি, সানগ্লাস
ব্যাগে এই গরমে কয়েকটা জিনিস রাখতেই হবে। ছাতা, টুপি, সানগ্লাস, পানি ছাড়াও রাখতে পারেন একটা পানি স্প্রে করার বোতল ও রুমাল। প্রচন্ড রোদে ঘেমে গেলে মুখে গলায় একটু পানি স্প্রে করতে পারেন।
৭। চা কফি কোল্ড ড্রিঙ্কস নয়
চা, কফি কোল্ড ড্রিঙ্কস গরমে নিস্তেজ শরীরকে কিছুক্ষণের জন্যে সতেজ করলেও, এগুলোর কারণে শরীর থেকে পানি আরো দ্রুত বেরিয়ে গিয়ে পানিশূন্যতা তৈরী হতে পারে। তাই এর বদলে মৌসুমী ফল ও ফলের রস বেছে নিন। সুস্থতা, সতেজতা দুটোই একসাথে পাবেন।
৮। প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে থাকা নয়
প্রখর রোদ এড়িয়ে চলুন। কাজের প্রয়োজনে প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে থাকা লাগলে সেক্ষেত্রে একটু পর পর ছায়াইয় যাবার চেষ্টা করুন। ছাতা, সানগ্লাস, টুপি যা কিছু সম্ভব ব্যবহার করে রোদ থেকে নিজেকে আড়ালে রাখার চেষ্টা করুন।
৯। খাদ্যতালিকার রাখুন সবজি ও ফল
দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা থেকে ভুনা খিচুড়ি, বিরিয়ানি জাতীয় খাবারগুলোকে কিছুদিনের জন্যে বিদায় দিন। এর বদলে ভাত, কম তেল মশলায় রান্না মাছ, প্রচুর পরিমাণে সবজি খেতে পারেন। কম তেলে রান্না খাবার আপনাকে এই গরমে সতেজ রাখবে।
১০। তাপমাত্রার পরিবর্তন খেয়াল রাখুন
নিজের চারপাশের তাপমাত্রা খেয়াল রাখুন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জায়গা থেকে বেরিয়েই প্রচন্ড রোদে চলে যাবেন না। বা প্রখর রোদ থেকে এসেই হুড়মুড় করে এসি রুমে ঢুকবেন না। একটু সময় নিন। নইলে তাপমাত্রার হঠাত পরিবর্তনের সাথে আপনার শরীর মানিয়ে নিতে না পারার কারণে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন।
হিট স্ট্রোক যেকোন সময় যে কারোই হতে পারে। শিশু ও বৃদ্ধদের এই ঝুঁকি বেশী। তবে সব মানুষেরই এ থেকে সাবধান থাকা উচিত। সুস্থ থাকুন।
লেখকঃ উর্মি রুবিনা। দৈনিক যুগান্তরে কাজ করেছি বছরখানেক। এখন একটা ফ্রেঞ্চ প্রতিষ্ঠানের সোশ্যাল ম্যানেজার। লেখালিখি আমার শখ। ব্লগে লিখি টুকটাক। এই তো!