কোরিয়ান মুভির জনপ্রিয়তার কথা সবাই কমবেশি জানে। কোরিয়ান মুভির জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী।থ্রিলার,কমেডি,রোম্যান্টিক সব ধরণের মুভি নির্মাণে তাদের দক্ষতা রয়েছে।এখানে আমরা তেমনি তিন ধরণের তিনটি সুপারহিট কোরিয়ান মুভি নিয়ে বলব।
A moment to remember
কোরিয়ান রোমান্টিক চলচ্চিত্র A moment to remember দুজন তরুণ-তরুণীর ভালোবাসাকে ঘিরে আবর্তিত।এই মুভি যেমন রোমান্টিক। ঠিক তেমন ইমোশনাল।কিছু মুহূর্ত বেঁচে থাকে নিজের মতন করে। সেই মুহূর্তগুলো মনে রাখার মতন হয় । মানুষ সেই মুহূর্ত সময়গুলো ভুলতে পারেনা ।কোরিয়ান চলচ্চিত্র A moment to remember এ এরকম বিশেষ মুহূর্তকে তুলে ধরা হয়েছে।এই মুভিতে উঠে আসে ভালোবাসার সেই মুহূর্তগুলো। ভালোবাসার সময়গুলোতে প্রতিটা জুটিকেই কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় । নিজেদের সম্পর্কগুলো টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হয়। সব সময় মুহূর্তগুলো নিজেদের অনুকূলে থাকেনা ।
মুভির গল্প একটি সাধারণ শিক্ষিত মেয়েকে নিয়ে।যে কিনা মা-বাবার কাছে ফিরে এসেছে বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেক-আপের পর।মেয়েটি নতুনভাবে আবার জীবন শুরু করতে সবকিছু ঘুছিয়ে নেবার চেষ্টা করছিল।ঠিক তখন মেয়েটি একটি ছেলের সাথে পরিচিত হয়।ধীরে ধীরে মেয়েটির ছেলেটিকে ভালো লাগতে শুরু হয়।তারপর,দুজনের মধ্যে নতুন ভালবাসার গল্প শুরু হয়।নিজেদের ছবির মতন সুন্দর একটি বাড়ি করার স্বপ্ন দেখতে থাকে।কিন্তু জীবন কি এতই সোজা??একদিন মেয়েটির হঠাৎজানতে পারে তার Alzheimer নামক অসুখ হয়েছে। সে আস্তে আস্তে তার চারপাশের সব কিছু ভুলে যেতে থাকে। ছেলেটি দেখে কিভাবে তার স্ত্রী তাকে পর্যন্ত চিন্তে পারেনা। এই অবস্থায় অসহায় সে কি করবে?? সেটা জানতে হলে দেখতে হবে মুভিটা।
কোরিয়ান সংস্কৃতি ও পারিবারিক আবহকে ঘিরে যে চলচ্চিত্র সিউল সু এবং সু জিন এর জীবনকে তুলে ধরে, সেই জীবনে থাকে মায়া, দায়িত্ববোধ । তার থেকেও বড় যে জিনিস যে কারণে মানুষ বেঁচে থাকে তা ভালোবাসা । তেই উন কিম এর করা অসাধারণ একটা মিউজিকের ছোঁয়া চলচ্চিত্রকে নতুন মাত্রা যোগ করে ।মুভিটি ২০০৪ সালে কোরিয়াতে মুক্তি পায়। এটি কোরিয়াতে ২০০৪ সালের মুক্তি পাওয়া সবচেয়ে বেশি আয় করা মুভির তালিকায় ৫ম স্থান দখল করে এবং একই সাথে জাপানে মুক্তি পাওয়া হিট সকল কোরিয়ান মুভির রেকর্ড ভাঙ্গে।
Miracle in Cell no. 7
পৃথিবীতে পবিত্রতম ভালবাসা গুলোর একটি হল বাবা মেয়ের ভালবাসা।যায়।২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া অসাধারণ একটি কমেডি এবং ড্রামাধর্মী সিনেমা এটি।এই সিনেমার কাহিনী তে দেখা যায় অসুস্থ বাবা এবং তার মেয়ের গল্প । বাবা মানসিক ভাবে অসুস্থ , প্রতিবন্ধী । একটা দোকানে দাড়িয়ে বাবা আর মেয়ে একটা ব্যাগ দেখছিল । মেয়েটা ব্যাগ টা কিনতে চায় অন্য এক মেয়ে সেই ব্যাগ টা কিনে নেয় । একদিন বাবা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় মেয়েটিকে দেখে এবং বলতে চায় এই ব্যাগ টা আমাকে দিয়ে দাও আমার মেয়ের জন্য । ঠিক ওই সময় মেয়েটা দৌড় দেয় , বাবা ও পিছে পিছে যায় । একটা মোড় ঘুরলেই দেখা যায় মেয়েটা মারা গেছে। পুলিশ সন্দেহ করে এই প্রতিবন্ধী পিতাকে এবং মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দিয়ে জেলে পাঠানো হয় পুলিশ কমিশনারের মেয়েকে অপহরণ, ধর্ষণ এবং হত্যার অভিযোগে । কিন্তু জেলখানায় তার কক্ষের আরেক সদস্য এবং প্রধান কারারক্ষীর জীবন বাঁচিয়ে এই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী লোকটি সবার নজরে চলে আসে । সবাই তখন নতুন করে ভাবতে শুরু করে যে এই লোকটি কিভাবে এই ধরণের অপরাধ করতে পারে এবং পুরষ্কার সরূপ তার ছোট্ট মেয়েটিও মাঝে মাঝে জেলখানায় তার সাথে সময় কাটানোর সুযোগ পায় । আর এই কারণেই সিনেমার নামকরণ করা হয়েছে Miracle In Cell No. 7 ।মেয়েএবং পিতার মধ্যকার ভালোবাসার পাশাপাশি এই সিনেমায় তুলে ধরা হয়েছে সরকারি কর্মকর্তার অনৈতিক আচরণ । কঠোরভাবে সমালোচনা করা হয়েছে জেল ফেরত কয়েদী সম্পর্কে সমাজের প্রচলিত ধারণার । সিনেমার সাউন্ডট্র্যাক এবং আবহ সঙ্গীত ছিল অসাধারণ ।
লোকটি কি আসলেই খুনি? সে কি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবে? তার মেয়েটিরই বা কি হবে? জানতে হলে দেখতে হবে মুভিটি।কোরিয়ান সিনেমা ইতিহাসে সর্বোচ্ছ বক্স অফিসে আয় করা মুভির মধ্যে এটি আছে ৬ নম্বরে! আর এটি মোট ৩৭ টি ভিন্ন ভিন্ন পুরষ্কারে মনোনয়ন পেয়েছে।
No mercy
আমার দেখা এখন পর্যন্ত অন্যতম সেরা রিভেঞ্জ থ্রিলার মুভি এটা। এতো ভয়ানক, সাংঘাতিক, ব্যাতিক্রম আর কল্পনার বাইরের কিছু দেখিয়ে চমকে দিলো এই মুভির ডিরেকটর।এ মুভি মুক্তি পেয়েছে ২০১০ সালে।মানুষের জীবনে মৃত্যু থেকেও কঠিন ক্ষমা করা এমন একটা সত্য দাবি করেছেন No mercy এর ডিরেক্টর। এই মুভি এমন অনেক অসম্ভব জিনিস নিয়ে ভাবাতে শুরু করবে যা কেউ ভাবেনি আগে।
গলা, হাত আর পা কাটা এক মেয়ের লাশ পাওয়া যায়। পোষ্টমর্টেমের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ফরেনসিক ল্যাবে।নতুন জয়েন করা এক মহিলা পুলিশ অফিসার অল্প সময়েই বের করে ফেলে খুনিকে।খুনি একজন পরিবেশবাদী।এতো সহজে খুনি কেন ধরা দিলো?? কি তার মোটিভ?? এই খুনের সাথে তার কি সম্পর্ক?? অনেকগুলো প্রশ্নই চলে আসে সেই সময়।এটা মুভির প্রথম ২০-৩০ মিনিটের কাহিনী।যে ফরেনসিক প্যাথলজি ডাক্তার সেই লাশের ময়নাতদন্ত করছিল তার মেয়েকে কিডনাপ করা হয়। ডাক্তারকে শর্ত দেয়া হয় খুনিকে জেল থেকে আইনী উপায়ে বের করতে পারলে তার মেয়েকে ছেড়ে দেওয়া হবে। এই ধরনের কেসে সাধারনত পুলিশ বা ডিটেক্টিভের কাছের লোকদের কিডনাপ করা হয়। কিন্তু একজন প্যাথলজি ডাক্তার কিভাবে পারবে খুনি জেল থেকে বের করতে যেখানে খুনি নিজেই খুনের কথা স্বীকার করেছে, খুনে ব্যবহার করা অস্ত্রের সন্ধান দিয়েছে। আসলেই দয়ামায়ার চিহ্ন ছিল না প্রতিশোধ নেবার ক্ষেত্রে। প্রতিশোধের বেলায় মানুষের মানসিকতা কত সুক্ষ্ম হইতে পারে এই মুভি না দেখলা বোঝাও যাবে না। বক্স অফিসে আয় করে এই মুভি ৮ মিলিয়ন ডলার।
লেখিকাঃ ফাহমিদা নাসরিন