অদ্ভুত এই দুনিয়াতে কত বিচিত্র কাহিনীই না ঘটে। কত মানুষ প্রতিনিয়ত হারিয়ে যায়, কত মানুষ আবার ফিরে আসে। কিন্তু এমন কিছু অদ্ভুত ঘটনাও ঘটে, যারা কোন কারন ছাড়াই, কোন ক্লু রেখেই হারিয়ে যায়, যাদের আর কোন সন্ধান পাওয়া যায় না। যাদের হারাবার ঘটনার কোন ব্যাখ্যাও করা যায় না। ব্যাখ্যাতিতভাবে হারিয়ে যাওয়া তেমন পাচটি ঘটনা নিয়েই আজ লিখছি।
১. মাউরা মুর্যেঃ ২০০৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মাউরা মুর্যে নিজের গাড়ি থেকে উধাও হয়ে যান, যার কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় নি। মুর্যে ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেটস অ্যামহেরস্ট এ নার্সিং নিয়ে পড়াশুনা করতেন। সেই দিন ম্যাসাচুসেটস থেকে বেরিয়ে নিউ হ্যাম্পশায়ারের হ্যাভেরহিলে র্যুট ১১২ রোডের কাছে কার অ্যাক্সিডেন্ট করেন। উপস্থিত সেখানকার বাসিন্দারদের কথা অনুযায়ী ২১ বছর বয়সী মুর্যে তাদের কাছে মিনতি করে যেন পুলিশে খবর না দেয়া হয়। পরবর্তিতে একজন পুলিশ অফিসার পৌঁছুতে পৌঁছুতে সে হাওয়া হয়ে যায়। পুলিশের তার কারটি লক করা অবস্থায় পায়। পরবর্তিতে ইন্সপেকশনে তার গাড়ির ইমার্জেন্সি কিট থেকে একটা মাফলার পায়। পুলিশের ডগ স্কোয়াড মাফলারের গন্ধ ট্রেস পারে না। সুতরাং বোঝা যায় যে সে ২য় কোন গাড়িতে উঠেছিল। সেইদিন সন্ধ্যার দিকে একজন ঘটনাস্থল থেকে ৫ মাইল বা প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে মুর্যের মত কেউ একজনকে দৌড়ে পালাতে দেখেছে বলে রিপোর্ট করে। কিন্তু এরপর থেকে আর কোনদিন তাকে খুজে পাওয়া যায় নি।
২. জেব কুইনঃ ১৮ বছর বয়সী জেব কুইন নর্থ ক্যারোলিনার অ্যাসেভিলের বাসিন্দা ছিলেন। ২০০০ সালের ২ জানুয়ারি রাতে, নিজের কারে একটা চিরকুট পায়। তার বন্ধু রবার্ট ওয়েন্স জানায় যে তাকে ছেড়ে সে রাতে ড্রাইভে যাওয়ার সময় কুইন পে-ফোনে কথা বলেছিল। তারপর পাগলের মত নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে চলে গিয়েছিল। এরপর আর কেউ তাকে কোনদিন দেখেনি। কুইন চলে যাওয়ার কয়েক ঘন্টা পরে ওয়েন্স অদ্ভুত একটা কার অ্যাক্সিডেন্টে আহত হয়, যেটা কখনোই পুলিশ রিপোর্ট করা হয় নি। ইনভেস্টিগেটরেরা সেই পেজটির সুত্র ধরে কুইনের এক আন্টির বাড়ি অব্দি পৌছে যায়। কিন্তু তার আন্টি জানায় যে তার বাড়িতে চোর ঢুকেছিল, এবং এই ব্যাপারে ডায়রিও করা হয়েছিল। কিন্তু এই পেজের ব্যাপারে সে কিছু জানেনা। ঘটনার দুই সপ্তাহ পরে কুইনের গাড়ি খুজে পাওয়া যায়, যার পিছনের সিটে লিপ্সটিক দিয়ে আঁকা কয়েক জোড়া ঠোট, একটা নতুন স্টাফড পাপি কুকুর আর একটা হোটেলের কি-কার্ড। ২০১৫ তে রবার্ট ওয়েন্স অন্য একটা ট্রিপল মার্ডার কেসে ফেসে যায়। তার বাড়ি সার্চ করে পুলিশ কিছু সন্দেহজন ‘টুকরা’ বা ‘ফ্র্যাগমেন্টস’ পায়। কিন্তু জেব কুইনের সাথে কি ঘটেছিল, তার হদিস এখনো জানা যায় নি।
৩. অ্যামি লিন ব্র্যাডলিঃ ২৩ বছর বয়সী অ্যামি ২৪ মার্চ ১৯৯৮ সালে রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ক্রুইজ শিপ কুরকও ডকে ভেড়ার ঠিক আগ মুহুর্তে নিখোঁজ হয়। পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী সর্বশেষ তাকে খালি পায়ে সিগারেট হাতে কেবিন থেকে বের হতে দেখা যায়। কেবিনের ব্যালকনির স্লাইড দরজা খোলা রেখেই বের হয়েছিল অ্যামি। তার এই নিখোঁজ হবার পরে শিপেও বেশ কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে। যেমনঃ শিপ গ্যালারির ভ্যাকেশন ফটো থেকে তার প্রতিটি ছবি গায়েব হয়ে যায়। ইনভেস্টিগেটরেরা ট্রিপে থাকা অবস্থায় অ্যামির কিছু পোস্টকার্ড সনাক্ত করে, যেটা দেখে খানিকটা পরিস্কার হয় যে তার কোন পালিয়ে যাবার প্ল্যান ছিল না। সে ছিল একজন ট্রেইন্ড লাইফগার্ড, সুতরাং পানিতে ডুবে যে সুইসাইড করবে এমন চিন্তাও জলে পড়ে গেল। ১৯৯৯ সালে একজন নেভি কর্মকর্তা অ্যামিকে একটা ব্রথেলে দেখেছেন বলে রিপোর্ট করেন। সে তার কাছে সাহায্য চেয়েছিল, কিন্তু তার সেখান থেকে নাকি যাওয়া মানা ছিল। ২০০৫ সালে আরেকজন লোক দাবি করে তাকে বারবাডোজের কোন এক দোকানের রেস্টরুমে দেখেছে। পরবর্তিতে তার প্যারেন্টসের কাছে ইমেইলে একটা ছবি পাঠানো হয়, যাতে দেখা যায় তাকে কোন পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। তার সন্ধান দিতে পারলে ২৫০০০০/= ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল যা এখনও বিদ্যমান।
৪. ডায়না লুইস অগাটঃ ৪০ বছর বয়সী ডায়না ১৯৯৮ সালের এপ্রিলের ১০ তারিখে হঠাৎ তার বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। পরের দিন তাকে দেখা যায় ফ্লোরিডার হাডসনের কোরাল স্যান্ডস মোটেলে। এরপর তাকে আর দেখা যায় নি। পরে ডায়না তার মায়ের ফোনে একটা ভিডিও ম্যাসেজ ছেড়ে দেয়, যেখানে সে উচ্চস্বরে মিনতি করেছিল, ‘হেল্প, হেল্প, লেট মি আউট!’ এরপরে কিছু ধ্বস্তাধস্তির শব্দ ছাড়া আর কিছু শোনা যায় নি। কলার আইডি থেকে জানা যায় এটি স্টারলাইট নামের কোন মানুষের নামে রেজিস্টার্ড নাম্বার, কিন্তু লোকেশন ট্রেস করা যায় নি। এপ্রিলের ১৬ তারিখে ইউএস হাইওয়ে ১৯ এর কাছে তার ডান হাতের মধ্যম আঙ্গুল পড়ে থাকতে দেখা যায়, যার মাথায় লাল রঙ করা ছিল। তার জামা ওডেসা শহরের একটা দোকানের ফ্রিজারের মধ্যে খুব সুন্দরভাবে ভাজ করা অবস্থায় পাওয়া যায়। ২০০০ সালে তার আরো কিছু জামা প্যাস্কোর একটা কনভেনশনাল স্টোরে একটা পলিথিনের ব্যাগে পাওয়া যায়। ব্যাগের উপরে লেখা ছিল ‘ডায়না’। এরপরে তার আর কোন হদিস পাওয়া যায় নি।
৫. জনি গসঃ ১৯৮২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জনি গস নামের ১২ বছরের এক ছেলে ওয়েস্ট দেস মইন্স, ইওয়া পেপার ডেলিভারি র্যুট থেকে সন্ধ্যার আগ দিয়ে হারিয়ে যায়। হারিয়ে যাওয়ার আগে তার পিছে নীল রঙের একটা কার ফলো করছিল বলে জানা যায়। তার নিউজপেপার ওয়াগনটি তার বাড়ি থেকে দুই ব্লক দূরে পড়ে থাকতে দেখা যায়। ইনভেস্টিগেটরেরা সিদ্ধান্তে আসে যে গসকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এবং কেসটি ঢিমেতালে ঝুলছিল। কিন্তু ১৯৯৭ সালে কেসটি আবার নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, যখন হঠাৎকরেই গস তার মায়ের সাথে দেখা করতে আসে। তার মা পুলিশকে জানায় গস একটা চাইল্ড অ্যাবইউজ রিং থেকে পালিয়েছে। রিংটি কিছু প্রতাপশালী ব্যাবসায়ী ও রাজনীতিবিদ চালায় বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তার কথার কোন প্রমান পাওয়া যায় না। কিন্তু ২০০৬ সালে তার ঘরের সামনে কে বা কারা কিছু বাচ্চার ছবি ফেলে যায়, যাদের অ্যাবইউজ করা হয়েছে। কিন্তু কারা গসকে তুলে নিয়ে গেছিল, জানা যায় নি।
লেখাটি যদি আপনার ভাল লেগে থাকে, তবে শেয়ার করুন, অন্যদেরও পড়তে উৎসাহিত করুন। কমেন্টে আপনার মুল্যবান মতামত দিন। আপনাদের প্রতিটি শেয়ার, প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নতুন লেখার প্রেরনা জোগায়।
সর্বদা নতুন নতুন কিছু জানতে বাংলাহাবের সাথেই থাকুন। আর বাংলাহাবের সকল আপডেট সবার আগে পেতে লাইক দিয়ে রাখুন বাংলাহাবের ফেইসবুক পেইজঃ www.facebook.com/banglahub