Unsolved Mystery বা অমীমাংসিত রহস্যের ব্যাপারে কে না আগ্রহী? আসুন জেনে নেই পাঁচটি রহস্যের ব্যাপারে যা আজও সমাধান করা যায় নি।
১. এরডস্টাল (Erdstal)
প্রায় পুরো ইউরোপ জুড়ে খুবই সরু আন্ডারগ্রাউন্ড টানেলের সন্ধান পাওয়া গেছে, যার নাম রাখা হয়েছে এরডস্টাল। শুধুমাত্র জার্মানির বাভারিয়াতেই সাতশরও অধিক এ ধরনের টানেলের সন্ধান মেলে। টানেলগুলো খুবই সংকীর্ণ; উচ্চতায় এক থেকে দেড় মিটার উঁচু ও চওড়ায় এক মিটারের মত। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই টানেল কে তৈরী করেছিল, বা কবে তৈরী করেছিল, কিংবা কি উদ্দেশ্যেই তৈরী করেছিল তা এখনো জানা যায় নি। কোন কোন স্কলার বিশ্বাস করেন যে এগুলো ধর্মীয় বা স্পিরিচুয়াল কাজের জন্য তৈরী হয়ে থাকতে পারে। কেউ কেউ অবশ্য বলেন যে, টানেলগুলো পালিয়ে শেল্টার হিসেবে ব্যাবহার করার জন্য তৈরী হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এসব টানেলের লিখিত কোন ম্যাপ বা কন্সট্রাকশনের প্রমান পাওয়া যায় না।
টানেলগুলো কেন এত গোপনীয়তার সাথে তৈরী করা হয়েছে সেটি খুবই রহস্যের বিষয়। টানেলগুলোর ভিতরে ঢোকার মুখগুলোও রহস্যজনক স্থানে অবস্থিতঃ কোনটা লোকালয় থেকে কাছে কিন্তু শহর থেকে কিছুটা অফসাইডে, কোনটা বনের ভেতরে, কোনটা চার্চের নিচে আবার কোনটা গোরস্থানের (Cemetery) ভিতরে। যদি টানেলগুলো খ্রিষ্টানদের দ্বারা তৈরী কিংবা ব্যাবহৃত হত, কেন তবে তা কোন খ্রিষ্টান কিংডম দ্বারা স্বীকৃত নয়? আর যদিও এটি দীর্ঘ সময় জুড়ে আত্মগোপনের উপযোগী করে তৈরী করা, কিন্তু এর ভেতরে আজ পর্যন্ত কোন গুরুত্বপুর্ন পুরাতাত্ত্বিক বস্তু পাওয়া যায় নি। তবে বেশ কিছু সিরামিক আর কার্বন কোলের টুকরা পাওয়া যায়, যা পরীক্ষা করে ধারনা করা হয় ওগুলো ১০০০-১২০০ সালের দিকে নিয়ে আসা হয়েছিল। ওই টুকরাগুলো ছাড়া এই টানেলগুলো বর্তমানে পৃথিবীর সবথেকে বড় অসমাধিত রহস্য।
২. ব্রাব্যান্ট এর খুনি(Brabant Killers)
১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বেলজিয়ামের ব্রাব্যান্টে একদল খুনির আবির্ভাব হয় যারা বেশ কিছু ভয়াবহ খুনের জন্য অভিযুক্ত ছিল। খুনির দল সাধারণত সুপারমার্কেট ও রেস্টুরেন্টে আক্রমন চালাতো, আর যথেচ্ছভাবে খুন ও টর্চার করত। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, তাদের খুনের মোটিভ কি ছিল তা জানা যায় নি। তারা খুনখারাপি শেষে হয়ত সামান্য কিছু টাকা নিয়ে যেত, কখনো কখনো টাকাপয়সাও ছুড়ে ফেলে দিত।
চিত্রঃ পুলিশ ফাইলসে পাওয়া ব্রাবান্ট কিলার্সের স্কেচ। বাম থেকে ‘দ্য জায়ান্ট’, ‘দ্য কিলার’ ও ‘দ্য ওল্ড ম্যান’।
এসব আক্রমণের স্বীকার যারা মারাত্মক আহত অবস্থায় সার্ভাইভ করেছিল, তাদের কাছে জানা যায় তারা ছিল তিনজনের একটি গ্রুপ। তাদের ডাকনাম ছিলঃ ‘দ্য জায়ান্ট’, ‘দ্য কিলার’ ও ‘দ্য ওল্ড ম্যান’। ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ২৮ জনকে খুন করার পরে তা গায়েব হয়ে যায়। এর প্রায় দুই বছর পরে ১৯৮৫ সালে তারা আবার তিনটি আক্রমন করে ও প্রায় ১৬ জনকে হত্যা করে। এরপরে তাদের আর কখনো খোঁজ পাওয়া যায় নি। তারা কারা, বা কি ছিল তাদের মোটিভ কিছুই জানা যায় না।
৩. দ্য স্লিপি হলো (The Sleepy Hollow)
কাজাকিস্থানের একটি গ্রামে অদ্ভুত একটি ঘটনা ঘটে, যাকে “দ্য স্লিপি হলো” বা “স্লিপিং সিকনেস” বলা হয়। ভর দিনের বেলা সময়ে অসময়ে এখানকার বাসিন্দারা কোন কারন ছাড়াই ঘুমিয়ে পড়েন। এমনকি বহিরাগত কেউ এলেও একইভাবে দিনের আলোয় ঘুমিয়ে পড়েন। যারা ঘুমিয়ে পড়েন তারা এক নাগাড়ে কয়েক ঘন্টা, কখনো কখনো কয়েক দিনও ঘুমিয়ে থাকেন।
চিত্রঃ কাজের মাঝেই টুপ করে ঘুমিয়ে গেছেন বাসিন্দাদের একজন।
প্রথমে ধারনা করা হয়েছিল, এটি হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের কোন ব্রেন ডিজিজের কারনে ঘটে, কিন্তু মেডিকেল এক্সপার্টরা কোন যুক্তিযুক্ত কারন, কোন ওষুধ বা প্রিভেনশন মেথড নিশ্চিত করতে পারেন নি। একদল মনে করেন যে এখানে উচ্চ মাত্রার রেডিয়েশন বা কার্বন-মনো-অক্সাইড পয়জনিং এর ফলে এমনটি ঘটে। কিন্তু পরবর্তিতে এর সপক্ষেও কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তি দাড় করানো যায় নি।
৪. বেটে মানুষের গ্রামঃ ইয়াংসি
প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কোলে চীনে ইয়াংসি নামে এমন একটি গ্রাম আছে যেখানে সর্বসাকুল্যে আশি জনের মত বাস করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই গ্রামের অর্ধেকের বেশী মানুষ আকৃতিতে বেটে।
চিত্রঃ ইয়াংসি গ্রামের বেটে বাসিন্দা
যার কারনে এই গ্রামের নামই হয়ে গেছে ‘দ্য ডোয়ার্ফ ভিলেজ’ বা ‘বেটে মানুষের গ্রাম’। সাধারণত প্রতি ২০০০০ হাজারে একজন মানুষ বেটে হবার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এই গ্রামের দিকে তাকালে এসব স্ট্যাটিস্টিক্স আর প্রোবাবিলিটির কোন ভাত নেই। কারন হিসেবে কেউ কেউ মনে করেন ভুমি, জল ও আবহাওয়ার কারনে এমনটি হতে পারে। আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করেন এই গ্রামটি অভিশাপের স্বীকার। তবে চাইনিজ সরকার এই গ্রামে বহিরাগতদের প্রবেশে সম্পুর্ন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কিন্তু কেন? এই উত্তর আমার কাছে নেই।
৫. পিটার বার্গম্যান
২০০৯ সালের ১২ই জুন আয়ারল্যান্ডের স্লাইগো আইল্যান্ডের একটি লোকাল হোটেলে একজন বৃদ্ধ এসে পৌছান। হোটেলে রুম ভাড়া নেওার সময় তার নাম লেখান পিটার বার্গম্যান (Peter Bergmann)। ঠিকানা দেন অষ্ট্রিয়া। তিন দিন পরে তাকে হোটেলের অদূরেই সমুদ্র-বীচে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। মৃত পিটারের গায়ের কোন পোশাক ছিলনা, যা সেই বীচেই আরেকটু দূরে পানিতে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যা। তার সাথে না ছিল কোন টাকা-পয়সা, না ছিল কোন আইডেন্টিটি কার্ড। ইনভেস্টিগেশনে জানা যায় তিনি হোটেলে যে ইনফরমেশন দিয়েছিলেন তা ছিল সম্পুর্নরুপে ভুয়া। তার শেষ তিনদিনের হোটেলে আগমন ও প্রস্থান সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়। তিনি যখনই বাইরে যেতেন, একটি বেগুনী প্লাস্টিকের ব্যাগ হাতে থাকত।
চিত্রঃ (বাম থেকে) মর্গে পিটার, হোটেলে প্রবেশের সিসিটিভি ফুটেজ, বেগুনী ব্যাগ হাতে বাইরে যাচ্ছেন পিটার
আর ফিরবার সময় সেটি থাকতো না। এছাড়া, পিটার মশায় নিজের আইডেন্টিটি গোপন রাখতে ছিলেন ওস্তাদ। তিনি খুব ভালভাবেই জানতেন, কোথায় দাড়ালে, কিংবা কোন পথে যাত্রা করলে সিসিটিভি ক্যামেরা এড়িয়ে চলা সম্ভব। এছাড়াও তিনি তার কাপড়ের সমস্ত লেবেল তুলে ফেলেছিলেন। ইনভেস্টিগেশনে আরো জানা যায়, তার শরীরে বাসা বেধেছিল প্রোস্টেট ক্যান্সার। কিন্তু সে জন্য তিনি কখনো পেইন কিলার বা মেডিকেশন গ্রহন করতেন না। এছাড়াও মৃত্যুর আগে সে কয়েকটা চিঠি পাঠাতে সমর্থ হয়, কিন্তু পুলিশ সেগুলোর হদীস পায় নি। এ থেকে নিশ্চিত যে কেউ একজন জানত, কে ছিল এই পিটার বার্গম্যান। ছয় মাস একটানা ইনভেস্টিগেশন শেষে তার ফাইল আত্মহত্যা লিখে ক্লোজ করা হয়। এরপর তার দেহ পুড়িয়ে সৎকার করা হয়।