প্রথম সফল এভারেস্ট বিজয়ের ইতিহাস রচনা করেছিলেন স্যার এডমন্ড হিলারি এবং তেনজিং নোরগ। সেই গৌরবগাঁথা সাফল্যের পরবর্তী ৬০ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও মানুষের মাঝে এভারেস্ট জয়ের অদম্য ইচ্ছা বিন্দুমাত্র অবদমিত হয়নি । এখনও এভারেস্ট চূড়া বিজয়ের লোমহর্ষক কাহিনী বা দুর্দান্ত ট্র্যাজিক গল্প আমরা শুনতে পাই। কিন্তু সেই স্বপ্ন ছোঁয়া এভারেস্ট সম্পরকে অনেক মজার তথ্য আছে যা আমাদের একেবারেই অজানা।
১। পর্বত মাকড়শা
এই প্রজাতির মাকড়শাকে এক কথায় বলা চলে , “Standing above Everything” , অর্থাৎ সবকিছুর উপরে দাঁড়িয়ে আছে যারা। আরও ভালভাবে এই মাকড়শাকে বিশেষায়িত করা যায় “হিমালয়ের জাম্পিং স্পাইডার” নামে। এরা হিমালয়ের সরু ফাটল বা চিড়ের মাঝে লুকিয়ে থাকে। পৃথিবীর সবোর্চ্চ স্থায়ী বাসিন্দা আসলে এই Jumping Spider. পর্বতারোহীরা এই প্রজাতির মাকড়শাকে সনাক্ত করেছে ৬,৭০০ মিটার ( ২২,০০০ফুট ) উচ্চতায়।
২। ২১ বার এভারেস্ট ছিনিয়ে এনেছেন যে দু”জন বিজয়ী
দু’জন শেরপা, আপা শেরপা এবং Phurba Tashi – সর্বাধিকবার এভারেস্ট জয়ের যৌথ রেকর্ড রাখা জুটি। তাঁরা দুজনের প্রত্যেকেই আলাদাভাবে ২১বার এভারেস্ট জয় করেছেন। ২০০৭ সালে Phurba তিনবার একাকী এভারেস্ট শীর্ষে আরোহণ করেছিলেন এবং Apa ১৯৯০-২০১১ সাল অব্দি প্রায় প্রতিবছরই সফল এভারেস্ট আরহির শিরোপা জিতে নিয়ে এসেছিলেন। এছাড়াও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের দরুন প্রতিবছর কিভাবে এভারেস্টের পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় তা Apa সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন এবং পর্বতারোহীদের যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে পরামর্শ দিয়েছেন।
৩। তোলপাড় করা ঘটনা
২০১৩ সালে শেরোপাদের সাথে Ueli Steck, Simone Moro এবং Jonathan Griffith নামে তিন জন পর্বতারোহীর চরম ঝগড়া হয় যখন শেরোপারা তাঁদের পর্বত আরোহণ স্থগিত করার আদেশ দেন। শেরোপারা পদে পদে পর্বতারোহীদের অভিযুক্ত করতে থাকেন এই বলে যে তাঁদের কারনেই পাহাড়ে ধ্বস নেমে আসে এবং তাতে শেরোপারা আহত হন। পর্বতারোহীগণ সে অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং তা সহিংসতার রুপ ধারণ করে। ঐ সহিংসতায় শেরোপারা একজন পর্বতারোহী কে আঘাত করে ও হত্যা করার চেষ্টা করে।
৪। ৪৫০ মিলিয়ন বছরের ইতিহাস
৪৫০ মিলিয়ন বছর আগে পর্বত শিখরে প্রাপ্ত চুনাপাথর ও বেলেপাথরের শিলা ছিল সমুদ্রতীরে নিমজ্জিত পাললিক শিলার অংশ বিশেষ। সময়ের সাথে সাথে ক্রমাগত সমুদ্র তলার পাথরের ঊর্ধ্বমুখী প্রায় ১১সে.মি.( বছরে প্রায় ৪.৫) ধাক্কা ও গতির ফলস্বরূপ ক্রমাগত বর্তমান অবস্থায় এসে উপস্থিত হয়েছে। এভারেস্টের উপরের গঠন এখন সামুদ্রিক ফসিল, সমুদ্র সৃষ্ট জিনিস সমন্বিত রুপ ধারণ করেছে জা পূর্বে সমুদ্র তলদেশের গঠনরূপ ছিল।
১৯২৪ সালে Noel Odell নামে একজন অনুসন্ধানকারী এই জীবাশ্ম আবিশকার করেন এবং এর দ্বারা এটি প্রমাণিত হয় যে পর্বত টি এক সময় সমুদ্রে নিমজ্জিত ছিল।
৫। উচ্চতা নিয়ে বিরোধ
মাউন্ট এভারেস্ট ঠিক কতটা উঁচু তা নিরভর করে আসলে আপনি ঠিক সীমান্তের কোন পাশে আছেন তার উপর। চীনের গবেষকরা বলেছেন যে এভারেস্ট শিখরটি প্রায় ৮,৮৪৪ মি (২,০১৬ফুট) উঁচু অপরদিকে নেপালের গবেষকরা বলেন যে শিখরটি প্রায় ৮,৮৪৮ মি (২৯,০২৯ ফুট) উঁচু। চীনের পক্ষ হতে যুক্তি দেওয়া হয় যে সঠিকভাবে উচ্চতা পরিমাপের জণ্ণে পর্বতের উপরে জমে থাকা বরফ বেতিরেখে পর্বতের শিলার উচ্চতা পরিমান করাই সঠিক পন্থা।কিন্তু আন্তর্জাতিক ধারনা মতে পর্বতের উচ্চতা পরিমাপে পর্বতের শিখরের বরফ ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১০সালে উভয় দেশ সরকারিভাবে মাউন্ট এভারেস্ট এর উচ্চতা ৮,৮৪৮ মি. মেনে নেন।
৬। ক্রমবর্ধমান মাউন্ট এভারেস্ট
সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী চীন ও নেপালের পর্বত উচ্চতা পরিমাপ ভুল হতে পারে.১৯৯৪ সালে একদল গবেষক আবিষ্কার করেন যে মাউন্ট এভারেস্ট বছরে প্রায় ৪ মিলিমিটার করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৯৯সালে যুক্তরাষ্ট্রের একদল অভিযাত্রীরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যাবহার করে দেখতে পায় যে পর্বতের সঠিক উচ্চতা হচ্ছে ৮,৮৫২মি. (২৯,০৩৫ফুট) এবং তা প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল।
৭। বহুবিধ নামকরণ
প্রাচীন তিব্বতিরা মাউন্ট এভারেস্টকে “Chomolungma” নামে অভিহিত করেন। এর অর্থ পর্বতমালার দেবিমাতা। অধিকাংশ নেপালিদের কাছে মাউন্ট এভারেস্ট “Sagarmatha,” নামে পরিচিত জার অর্থ পর্বতের উচ্চ শিখর। এই পর্বত টি এখন নেপালিদের “Sagarmatha National Park.”এর একটি অংশ বিশেষ।
লেখিকা সম্পর্কেঃ পাপিয়া দেবী অশ্রু। শখ -বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে বেড়ানো, গান করা, ছবি আঁকা। লেখা – লিখিতে বেশ আগ্রহ থাকলেও তেমন ঘটা করে হয়ে উঠেনি কখনও। শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত আছি। ইচ্ছে আছে একেবারেই নতুন কিছু করার, যা বিশ্বজুড়ে সবার দেখার মতই। অদ্ভুত ইচ্ছে!!!