ইন্টারনেটে প্রেম- ৭ ভালোবাসার গল্প যখন রুপান্তরিত হয়েছিল দুঃস্বপ্নে

https://media.consumeraffairs.com
https://media.consumeraffairs.com

প্রতিনিয়তই আমরা দেখছি আমাদের আশপাশে অনেক মানুষ কীভাবে প্রেমে প্রতারিত হচ্ছে। চলুন জেনে নিই এই তথ্য-প্রযুক্তির যুগে ইন্টারনেটে সংঘটিত কয়েকটি সত্যিকার প্রেম-বিয়ের নামে ধোঁকা দেওয়ার ঘটনা যা আমাদেরকে আরও সচেতন করে তোলবে।

 ১। প্রেমের মড়া জলে ডোবে না

প্র্যাট নামক তরুণ এক যুবক একবার এক তরুণীর প্রেমে পড়েছিলো। তাদের মধ্যকার সম্পর্কের তিনটি সমস্যা ছিল। প্রথমটি তরুণীটি চীনে বাস করতো ,দ্বিতীয়ত তারা কখনো সরাসরি দেখা করেনি এবং তৃতীয়ত প্র্যাট শধুমাত্র তার ডাকনাম,জিয়াওকিয়ান জানতো। প্র্যাট তার প্রেমিকাকে অবাক করে দেওয়ার জন্য ৭০০০ মাইল উড়ে জিয়ানশান, চীনে দেখা করতে যাবে। কিন্তু তরুণীটি তাকে ভালবাসার সঠিক প্রতিদান দেয়নি এবং তাতে প্র্যাট মাতাল হয়ে জু নদীতে পড়ে যায়। সেখানকার বরফ পানিতে সে হারিয়ে যায়। পরবর্তীতে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে এবং তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো হয়।

২। যুক্তরাজ্যের ভিসার জন্য ভালোবাসা

৬৪ বছর বয়সী প্যাত্রিসিয়া তিউনিশিয়ার মন্ধার নামক ৩৩ বছর বয়সী যুবককে পেয়ে ভাবে সে তার সত্যিকার ভালবাসা খুঁজে পেয়েছে এবার। মন্ধারও দাবি করে বয়স শুধুমাত্র নামে একটি সংখ্যা; সে যেভাবেই হোক তাকে কাছে নিয়ে আসবে। প্যাত্রিসিয়ার শরীরের হাঁড়গুলো ক্ষয় হয়ে অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও মন্ধার দেশে পাড়ি দেয় এবং তাকে বিয়ে করে; বিয়ের যাবতীয় খরচ সেই বহন করে যার মাঝে ছিল একটি ভেড়া জবাই করাও। আট মাস পর মন্ধার ইংল্যান্ড এ যাওয়ার ভিসা আসলে সে তিউনিশিয়া থেকে যুক্ত্রাজ্যে যায়, প্যাত্রিসিয়ার সাথে দেখা করে। কিছুদিন পর প্যাত্রিসিয়াকে বলে সে আর সম্পর্কটা চাচ্ছে না। তখন প্যাঁত্রিসিয়া বলে সে তার সাথে ভালবাসার অভিনয় করে ভিসার জন্য প্রতারণা করেছে। মন্ধার তাকে বোঝায় যে সে পরিস্থিতির শিকারে পড়েছে তাই তার আর কিছু করার নেই।

৩। ভালোবাসা ও কারাগারের গল্প

সারা নামক এক ভদ্রমহিলার তার প্রেমিক এর জন্য অন্যরকম এক ভালবাসায় আচ্ছন্ন ছিলেন।  চেরিশ ওলসেন, ইটালিয়ান এক ব্যবসায়ী যিনি আফ্রিকায় বাস করেন। তারা কেউই কাউকে সামনাসামনি দেখেনি, ইন্টারনেটে ইমেইল, ফেসবুক এবং এই তাদের পরিচয় এবং ভালবাসা গড়ে উঠার মাধ্যম। দেখা না হওয়া সত্ত্বেও সারা এমনটা সবসময় কল্পনা করে যে সে চেরিশ এর স্ত্রী এবং কোন একদিন তারা বিয়ে করবে। সারা বলে, চেরিশ অনেক বার আমেরিকায় আসার চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে জেল এ নিয়ে যায় আর তাই সারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজে তাকে ডলার পাঠিয়েছে এবং যাবতীয় খরচও বহন করেছে যার পরিমাণ প্রায় ১মিলিয়ন এরও উপরে। তিনি এখনও বলেন চেরিশ ফিরে আসার এবং তাকে সব ডলার ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করছে। সারা তার ভালবাসায় বিশ্বাসী।

৪। আপনার নামে খোলা ফেইক ফেসবুক একাউন্ট যখন বিপদের কারণ

“ক্যাটফিশ” এমন একটি শব্দ যার অর্থ যে ব্যক্তি মিথ্যা প্রেম অথবা এরুপ কোন খারাপ কাজের জন্য অনলাইনে মিথ্যা প্রোফাইল খোলে।(এটি ২০১০সালের এক প্রামাণ্যচিত্র,যার একটি রিয়েলিটি শো ও দেখানো হয়)

ক্যাটফিশাররা অন্যের প্রোফাইল থেকে প্রোফাইল পিকচার চুরি করে। এমনই একটি ঘটনা সান ডিয়েগার এক মহিলার সাথে ঘটে যিনি কখনই তার প্রেমিককে সরাসরি দেখেনি। মিশিগানের ২৯ বছর বয়সী ব্রায়ান কুরতিস হিল নামক এক ছেলের প্রেম হয় ফেসবুকের এক নারীর সাথে। যে কিনা তার নিজের ছবি ব্যবহার না করে সান ডিয়েগোতে থাকা মেয়েটির ছবি ব্যবহার করে। হিল তার ছবির প্রেমের পড়ে যায়। হিল পরে বুঝতে পারে এটা ফেইক প্রোফাইল, যা দক্ষিণ আফ্রিকার এক হ্যাকার ও স্ক্যামারের কাজ।

দক্ষিণ আফ্রিকা তো দূরে, তাহলে কি করা যায়? হিল ছবির মেয়েটিকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। হিল ছিল একজন পারদর্শী হ্যাকার যার ফলে সে সান ডিয়েগোতে থাকা মেয়েটির নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর এমনকি তার পছন্দের রেস্টুরেন্টও বের করে ফেলে। হিলের বাবা-মা সন্দেহ করে পুলিশ কে জানায়। পুলিশ মেয়েটির বাসা থেকে এক মাইল দূরবর্তী এক জায়গায় হিলকে খুঁজে পায়; সাথে একটি পণ্য ক্রয়ের তালিকা ছিল যাতে লিখা ছিল একটি ছুরি এবং অচেতন করে দেওয়ার একটি পদার্থ।

৫। ফেইক প্রোফাইলের সাথে প্রেম হতে পারে মৃত্যুর কারণ

এটি ইন্টারনেটে প্রেমের ক্যাটফিশদের একটি নির্মম ও অদ্ভুত একটি কাহিনী। নাটালিয়া বারজেস অকল্যান্ড থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিউজিল্যান্ডের অনেক কিশোর ছেলেদের বোকা বানায়। সে ডজন খানেক মিথ্যা প্রোফাইল বানিয়ে ছেলেদের মিথ্যা ভালবাসার জালে ফেলে এবং তাদেরকে দেখা করতে সম্মত করে।তারা যখন দেখা করতে আসে তখন বারজেস তাদের হত্যা করে এক রকম সুখ অনুভব করে। বারজেসকে দুই বছর দুই মাস এর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

৬। বিয়ের খরচ যোগাতে প্রেমিকার ব্যাঙ্ক একাউন্ট হ্যাক

ভালবাসার একটি সম্পর্ক এবং হানিমুন এর এক নিমিষেই কিভাবে সমাপ্তি হয়ে যায় তা নিয়েই এই কাহিনী। এটি ১৯৯৭সালের আগস্টের এর ঘটনা যখন ইন্টারনেট ডেটিং এখনের মত এতোটা প্রচলিত ছিলোনা। কার্লা কোয়েলহো একটি চ্যাটরুমে ফ্লেভিও ডি অলিভেরা ই সিল্ভার এর সাথে পরিচিত হয়। ফ্লেভিও তার ১০০০০গবাদি পশু এবং একটি জেট প্লেন এর সাথে তোলা ছবি দিয়ে তাকে মুগ্ধ করে, দাবি করে গবাদিপশু, জেট প্লেন তার নিজের। তিন মাস পর তরুণীটি ব্রাজিলে দেখা করতে রাজি হয়। তারা সিদ্ধান্ত নেয় সেখানেই বিয়ে এবং হানিমুন করবে (সব খরচ ফ্লেভিও দিবে)। কিন্তু তার কাছে এতো অর্থই ছিল না। তবে উপায়?

ফ্লেভিও $৯১০০০ কার্লার ব্যাংক একাউন্ট থেকে চুরি করে। পুলিশ তাদের সাময়িক আবাস থেকে ধরে, উদ্ধার করে ৩৫টা চেক যার মূল্য মোট ৬৪০০০ ডলার এবং ফ্লেভিও প্রতারক হিসেবে চিহ্নিত হয়।

কার্লা কোয়েলহো বলে, “কোন মেয়ে যেমন এতোটা ভা্লবাসতে পারে না তেমনভাবে কোন মেয়ে এতোটা প্রতারিত ও হয় না” ।

৭। ইন্টারনেটের ভালোবাসা যেভাবে মানসিক নির্যাতনে পরিণত হয়

কানাডিয়ান এক মহিলার জেমস অলিভার নামক এক ভদ্রলোকের সাথে ২০১০সালের মে মাসে অনলাইনে পরিচয় হয়েছিলো। প্রথমে তাদের সম্পর্ক ভালো গেলেও, গ্রীষ্মের শেষে মহিলাটি জেমস এর সাথে সম্পর্ক রাখতে চায়নি। যদিও জেমস তাতে কোনরকম পাত্তা দেয়নি। সে বরং তাকে অবিরামভাবে ইমেইল,টেক্সট,ভয়েস মেসেজে নানারকম হুমকি দেয়। কারণ সে জেমসকে আগে বলেছিল ছয় বছর বয়সেই তার চাচা তাকে ধর্ষণ করে। অলিভার এ কারণে আরও বেশি মানসিক অত্যাচার  করে সেই মহিলাকে “নষ্ট মেয়ে” বলে। পরবর্তীতে জেমসকে তিন বছরের জন্য শাস্তি দেওয়া হয়।

লেখিকা সম্পর্কেঃ  সাবরিনা আফরিন।পড়াশুনা করছি বিবিএ তে। ভাল লাগে বই পড়তে ও নতুন নতুন তথ্য জানতে ।