এই লেখাটি পড়ার সময় না থাকলে, শুনতে পারেন এর অডিও ভার্সন। ক্লিক করুন নিচের প্লে-বাটনে।
এমন অনেকেই আছেন যারা মনে করেন জাদুঘরে ঘোরা মানেই একঘেয়ে বা বিরক্তিকর ভ্রমণ। অথচ পৃথিবী জুড়ে এমন প্রচুর জাদুঘর রয়েছে যার সংগ্রহ আমাদের অনেকের কল্পনাকেও হার মানায়। দেখতে শুনতে যতই উদ্ভট হোক না কেন, সেগুলো একই সাথে আমাদের শিক্ষা আর গতানুগতিক চিন্তাধারার বাইরে নিয়ে যায় । চলুন দৃষ্টি বুলানো যাক পৃথিবীর এমন ৮টি অদ্ভুত জাদুঘরের দিকে।
১। দ্য বানি মিউজিয়াম (The Bunny museum)
এটি ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত, অবস্থান মার্কিনের ক্যালিফোর্নিয়ার পেসাডেনায়। এই বানি বা খরগোশ জাদুঘর উৎসর্গ করা হয়েছে খরগোশদের প্রতি এবং এর সংগ্রহে ২৮০০০ হাজারেরও বেশী খরগোশ সম্পর্কিত উপকরণ রয়েছে। এই জাদুঘর মূল স্লোগান হল “The Hoppiest place in the world” যার বাংলা করলে দাঁড়ায়- “বিশ্বে সবচে লাফালাফির স্থান”। এর সংগ্রহে আছে সিরামিক খরগোশ, স্টাফড খরগোশ, খরগোশ আকৃতির কুকিজার এবং সামনের লনে একটি বৃক্ষকে ছেটে একটি দৈত্য আকৃতির খরগোশের আকার দেয়া হয়েছে। এছাড়াও এই জাদুঘরটি বিশ্বে সবচেয়ে বেশী খরগোশ সম্পর্কিত আইটেম রাখার জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান করে নিয়েছে।
২। ইন্টারন্যাশনাল ইউএফও মিউজিয়াম এন্ড রিসার্চ সেন্টার( International UFO museum and Research Center)
গ্লেন ডেনিস ১৯৯১ সালে এই আন্তর্জাতিক ইউএফও জাদুঘর ও গবেষণা কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি মেক্সিকোর নিউ মেক্সিকো অঞ্চলে রসওয়েল নামক জায়গায় অবস্থিত। এই জাদুঘরটি সনাক্ত করা যায় নি এমন উড়ন্ত বস্তু দেখা গেছে এমন ঘটনাগুলোর ইতিহাস সংরক্ষন করে। অসনাক্ত বা অচেনা উড়ন্ত বস্তু বা ইউএফও(UFO=Unidentified Flying Object) কে নিছক কল্পনা বা শোনা কথা হিসেবে মনে না করা যেসব বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী প্রেমিক আছেন তাদের জন্য এই জাদুঘর ও গবেষণা কেন্দ্রটি নিঃসন্দেহে বিশেষ আনন্দের খোরাক যোগায়।
৩। মিনি বটল গ্যালারি( Mini Bottle Gallery)
একটি বোতল যা প্রাথমিকভাবে একটি নিছক সাধারণ তরল জাতীয় পদার্থ যেমন খাওয়ার পানি, এলকোহল, দুধ, ফলের রস, সস, শ্যাম্পু রাখার জায়গা হিসেবেই আমরা দেখে থাকি। কিন্তু এর কিছুটা ইতিহাস জানলে অনেকেই একটু নতুন দৃষ্টিতে বোতলের দিকে তাকাবেন। আপনি যদি নরওয়ের অসলোতে অবস্থিত এই বোতলের গ্যালারিটি না ঘুরে আসেন দুঃখজনক হলেও সত্যি, আপনি ভুল করবেন। এখানে রয়েছে সারা পৃথিবী থেকে সংগৃহীত বোতল যা বৈচিত্র্যময় উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছিল এবং যেগুলোর আকার, আকৃতি ও রঙ আপনাকে অবাক করে দিবে।
৪। গণিত জাদুঘর (Museum of mathematics)
বিশ্বের গণিত পাগলদের জন্য বিশেষ এই জাদুঘর ১৯২৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্বের অন্যান্য জাদুঘর থেকে যে বৈশিষ্ট্যটি এই জাদুঘরকে আলাদা করেছে সেটি হল এর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে দর্শনার্থীদের জড়িত করে ফেলা। এই জাদুঘরটির লক্ষ্য হল সাধারনের কাছে গণিতকে সহজবোধ্য করা ও গণিত সম্পর্কে ধারণা বিকশিত করা। এর বিশেষ আকর্ষণগুলোর মধ্যে ম্যাথ মিডওয়ে, ম্যাথ মিডওয়ে টু গো, ম্যাথ এঙ্কাউন্টার এবং ফ্যামিলি ফ্রাইডে ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
৫। মিউজিয়াম অফ এন্ডিউরিং বিউটি (Museum of Enduring Beauty)
এটি মালেয়শিয়ার মালাক্কায় অবস্থিত। এটি ঘুরে দেখতে আপনাকে স্পষ্টভাবে দৃঢ় সাহস দেখানোর দাবি রাখে। এখানে তুলে ধরা হয়েছে কিভাবে সৌন্দর্যকে প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে ভিন্ন ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এবং আনুগত্যের মাত্রা প্রকাশে এবং প্রধান ধর্মানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে মানুষ কীভাবে দৈহিকভাবে অনিন্দ্য সুন্দর হয়ে ওঠে। যেমন- ত্বকে ট্যাটু আঁকা, গোল ডিস্ক ঢুকিয়ে ঘাড় ও ঠোঁট মোটা করা, দাঁত ফিলিং, ডিম্বাকৃতিক ভাবে মাথা ন্যাড়া করা, বা বেঁধে পায়ের বৃদ্ধিকে ব্যাহত করা। এই ধরনের জাদুঘর ভ্রমনের জন্য দর্শনার্থীকে সংস্কৃতিগত পার্থক্যের ধাক্কা খাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
৬। কানকুন আন্ডারওয়াটার মিউজিয়াম(Cancun Underwater Museum)
পানির নিচে জাদুঘর ভ্রমনের অভিজ্ঞতা নিতে চান? তাহলে আপনি নিশ্চিতভাবে পানির নিচের এই কানকুন জাদুঘরটি ঘুরে আসতে পারেন। এর অবস্থান মেক্সিকোর কানকুনে। এর সংগ্রহে প্রায় ৫০০ রকমের ভাস্কর্য রয়েছে, যেগুলো ৩ থেকে ৬ মিটার পানিতে নিমজ্জিত তিনটি ভিন্ন গ্যালারিতে সংরক্ষন করা আছে। এখানকার ভাস্কর্যগুলো পিএইচ-নিরপেক্ষ সামুদ্রিক কংক্রিট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
৭। সুলভ ইন্টারন্যাশনাল টয়লেট মিউজিয়াম(Sulabh International Toilet Museum)
এর অবস্থান ভারতের নয়াদিল্লিতে। জাদুঘরটির নাম শুনে মনে হতে পারে জায়গাটি কুৎসিত, কিন্তু এটি তৈরির পেছনে রয়েছে জোরালো উদ্দেশ্য। এর উদ্দেশ্য হল তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নতি তথা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের অবস্থার উন্নয়ন। এর সংগ্রহে টয়লেট সম্পর্কিত প্রযুক্তির বিকাশ থেকে শুরু করে এই সংক্রান্ত সামাজিক অভ্যাস, বিভিন্ন রাজা মহারাজার ব্যবহৃত টয়লেট সামগ্রী, টয়লেট সংক্রান্ত বুদ্ধিদীপ্ত কার্টুন, জোকস ভরা ডিসপ্লে বোর্ড রয়েছে। জাদুঘরটি তৈরির পেছনে রয়েছে ভারত-ভিত্তিক সমাজসেবামূলক সংস্থা ‘সুলভ ইন্টারন্যাশনাল’, যারা কাজ করে মানবাধিকার, পরিবেশগত স্যানিটেশন, শক্তির অপ্রচলিত উৎস, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার মাধ্যমে সামাজিক সংস্কারের উন্নয়ন করা নিয়ে।
৮। কুৎসিত শিল্পের জাদুঘর (Museum of Bad Art)
এর অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস এ। প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৯৪ সাল। এটি উৎসর্গ করা হয়েছে সেই সব শিল্পীদের প্রতি যাদের শিল্পকর্ম কোন ফোরামে প্রদর্শিত হয় নি অথবা প্রশংসিত হয় নি। জাদুঘরটির সংগ্রহের মধ্য থেকে কিছু উল্লেখযোগ্য উদাহরন হল ‘সানডে অন দ্য পট উইথ জর্জ’, ‘ লুসি ইন দ্য ফিল্ড উইথ ফ্লাওয়ারস’ , ‘জাগ্লিং ডগ ইন হুলা স্কার্ট’, ইত্যাদি।