অভিশাপ : হরর গল্প

” আচ্ছা, তুমি সবসময় এত দূরে দূরে থাকো কেনো? ” একরাশ অভিমান নিয়ে গাল ফুলিয়ে কথা বলে উঠলো স্নিগ্ধা।

” কোথায় দূরে থাকি? আমি তো সব সময় তোমার চারপাশেই ঘুরঘুর করি। ” মাথা চুলকে জবাব দিলো আহাদ।

” না।তুমি কাছে থেকেও অনেক দূরে আমার। কেমন যেনো আলাদা আলাদা থাকো।হাত ধরতে চাইলে হাত ধরতে দাও না।কাছে আসলে কেমন যেনো শিউড়ে উঠো বার বার। এমন কেনো করো? “

” স্নিগ্ধা.. আমি আসলে বিয়ের আগে স্পর্শ করতে চাই না তোমাকে।এসব পছন্দ না আমার একদমই। “

কিছু বললো না স্নিগ্ধা।খানিকক্ষন কি যেনো ভাবলো। তারপর মুখ গম্ভীর করে বললো, ” আহাদ তোমাকে আমি কিছু বলতে চাই। “

” হ্যাঁ,বলো।”

” আমার মনে হয় আমাদের আর যোগাযোগ রাখা উচিত হবে না। “

একমূহুর্তের জন্য কেমন যেনো বিভ্রান্ত দেখালো আহাদকে।তাকে দেখে মনে হলো স্নিগ্ধা কি বলছে,তা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না সে। ভ্রূ কুঁচকে স্নিগ্ধার দিকে তাকালো আহাদ।

একটুখানি হেসে আবার কথা বলতে শুরু করলো স্নিগ্ধা – ” আসলে অনেক আগেই তোমাকে সব বলা উচিত ছিলো।কিন্তু আমি বলতে পারিনি।ভয় পাচ্ছিলাম ভীষন। আমি আসলে অপয়া এবং অভিশপ্ত।আমার প্রিয়জনরা ভালো থাকে না কখনোই। যাদের সাথেই আমার ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে,তাদের জীবনটা ধ্বংস হয়ে গেছে চিরতরে। মা বলতো আমার ওপর নাকি শয়তানের দেবীর অভিশাপ আছে।বাবা আমাকে উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন শয়তানের দেবীর কাছে।কিন্তু মায়ের জন্য পারেননি।বাঁচিয়ে ফেলেছিলেন আমার মা আমাকে সেদিন।কিন্তু অভিশাপ থেকে রক্ষা করতে পারেননি তিনি আমাকে।শয়তানের দেবী ভীষন রকমের রুষ্ঠ আমাদের উপর।তাই ভালো থাকতে পারে না আমার প্রিয়জনরা। আমি চাইনা তোমার সাথে এমনটা হোক।আমি তোমাকে ভালোবাসি ভীষন। “

একনাগাড়ে দ্রুত কথাগুলো বলে হাঁপিয়ে উঠলো স্নিগ্ধা। আহাদ খানিকক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো স্নিগ্ধার দিকে। তারপর খিলখিল করে হেসে ফেললো হঠাৎ। হাসতে হাসতে বলল – ” আরে ধ্যাৎ বোকা মেয়ে। কিছু হবে না আমার। আমি আছি তোমার পাশে সবসময়। “

” হু।”
” কি হু? “
” কিছু না। বাসায় যাবো।”
” আচ্ছা চলো।”

সেদিন স্নিগ্ধাকে বিদায় জানিয়ে যখন আহাদ নিজের বাড়িতে এসে পৌছলো,তখন মহাসর্বনাশ ঘটে গেছে। আহাদের দাদা মারা গেছেন ঘুমের ভেতর। বাড়িভর্তি একগাদা লোকজন।সবাই যখন দুঃখ কষ্টে জর্জরিত,ঠিক তখনি আর একটা দুঃসংবাদ এলো।গরম পানি পড়ে পুড়ে গেছে ওর ছোট বোনের হাত পা আর শরীর।বড় আপু একটা মরা বাচ্চা প্রসব করেছে!

কেমন যেনো দিশেহারা হয়ে গেলো আহাদ।কাঁদতে কাঁদতে ফোন দিলো স্নিগ্ধাকে।সব শুনে ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো স্নিগ্ধা। তারপর ধীরে ধীরে বলল – ” আমি তোমাকে সাবধান করেছিলাম আহাদ। এখনও সময় আছে।আমার মনে হয় সব কিছু শেষ হয়ে যাবার আগেই দূরে সরে যাওয়া উচিত আমাদের। “

” ধ্যাৎ পাগল মেয়ে। এসব কেবলই দুর্ঘটনা কিংবা দুর্ভাগ্য মাত্র। আর তোমার মনের মিথ্যে ভয়।ঠিক হয়ে যাবে সব।তুমি চিন্তা করো না।” মৃদু কন্ঠে তাকে স্বান্তনা দিলো আহাদ।

কিন্তু কিছুই ঠিক হলো না।বরং আরও ভয়াবহ এবং ভয়ঙ্কর হয়ে গেলো পরিস্থিতি। আহাদের ছোট বোনটাকে কে যেনো তুলে নিয়ে গেলো সেদিন।একদিন রাস্তার ধারে খুঁজে পাওয়া গেলো তার মৃত বিধ্বস্ত লাশ।।বাচ্চার শোকে বড় আপুর পাগলপ্রায় অবস্থা। বাবাও মারা গেলেন কোন এক শান্ত দুপুরে।মায়ের অবস্থাও খুব একটা ভালো না।আর তাদের ফ্যাক্টরিগুলাও সব পুড়ে ছাই হয়ে গেলো কোন এক অজানা কারনে।সর্বহারা হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো আহাদ।স্নিগ্ধাকে খুব একটা বিচলিত দেখা গেলো না। ঠান্ডা মাথায় হঠাৎ করেই একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো সে।আহাদকে ফোন দিয়ে বললো – ” আহাদ ভালো থেকো।আজ থেকে আর কোন বিপদ হবে না তোমার। একটা পথ খুঁজে পেয়েছি আমি।আর হ্যাঁ,পারলে মাফ করে দিও আমাকে।তোমার সব বিপদের জন্য আমিই দায়ী। “

” না।তুমি দায়ী না।সব আমার ভাগ্যের দোষ।আমি জানি আমাকে কি করতে হবে এখন।”

” কি করবে তুমি? “

কিছু বললো না স্নিগ্ধা। ধুপ করে কেটে দিলো ফোনটা।কেমন যেনো কুডাক দিয়ে উঠলো আহাদের মনের ভেতর।দৌড়ে চলে গেলো স্নিগ্ধার বাড়িতে। সদর দরজাটা খোলাই ছিলো।দ্রুত গতিতে ঢুকে পড়লো সে ঘরের ভেতর এবং চমকে উঠলো ভীষনভাবে।রক্তে ভেসে যাচ্ছে সমস্ত ঘরবাড়ি। চারিদিকে কেমন যেনো একটা অশুভ অশুভ ভাব।বিশাল একটা চক্রের ভেতর শুয়ে আছে স্নিগ্ধা। ভয়াবহ যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে মেয়েটা। হাতে একটা রক্তাত্ব ছুরি ধরা।আর তার ডান চোখটা ক্ষতবিক্ষত।কেউ একজন নিষ্ঠুরভাবে খুবলে তুলে ফেলেছে তার সেই চোখ।

আহাদকে দেখে একটুখানি হাসার চেষ্টা করলো স্নিগ্ধা। বিড়বিড় করে বললো, ” আহাদ, আমার উপর যে অভিশাপটা ছিলো,তা কেটে গেলো আজ। আর কোন ভয় নেই আমাদের।মা বলেছিলো শয়তানের দেবীকে ডানচোখটা উৎসর্গ করলে নাকি সন্তুষ্ট হযে যাবে সে । আমি তা-ই করেছি আজ। “

কেমন যেনো হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো আহাদ। জড়ানো কন্ঠে আবার কথা বলে উঠলো স্নিগ্ধা – ” কাছে এসো আহাদ।আমি তোমার কোলে মাথা রেখে মরতে চাই। “

বুকের ভেতরটায় কেমন যেনো একটা চিনচিনে ব্যাথা টের পেলো আহাদ।তার মনে হলো কেউ একজন ধারালো ছুরি দিয়ে ফালা ফালা করে কেটে দিচ্ছে তার বুকের ভেতরটা। একগাদা কষ্ট নিয়ে সে ছুটে গেলো স্নিগ্ধার দিকে। ঠিক করেছিলো বিয়ের আগে সে কখনোই স্পর্শ করবে না স্নিগ্ধাকে। কিন্তু আজ হঠাৎ করেই ভেঙ্গে ফেললো সে প্রতিজ্ঞা। শক্ত করে চেপে ধরলো স্নিগ্ধার হাতটা।বিষন্ন স্বরে বিড়বিড় করে কিছু একটা বললো সে স্নিগ্ধাকে। তারপর টেনে নিয়ে যেতে লাগলো হসপিটালের দিকে।