এভেঞ্জারসঃ ইনফিনিটি ওয়ার রিভিউ (সম্পূর্ণ স্পয়লারমুক্ত)

অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত এভ্যাঞ্জারসঃ ইনফিনিটি ওয়ার মুক্তি পেল বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে । প্রথম দিন প্রথম শো সিনেপ্লেক্স এ বসে উপভোগ করার জন্য অনেক আগে থেকে প্ল্যান-প্রোগ্রাম করে রেখেছিলাম আমি। গতকাল টিকিট কাটার জন্যে কি পরিমাণ কষ্ট যে করা  লাগলো তা আর নাই বলি! সিভিল ওয়ার, ব্যাটম্যান ভার্সাস সুপারম্যান, এভেঞ্জার আল্ট্রন, জাস্টিস লীগ সহ আরও অনেক হাইপ তোলা মুভির টিকিট কাটার অভিজ্ঞতা আমার আছে , কিন্তু এবারের মতন মানুষের ঢল আমি আর কখনোই দেখি নাই সেভাবে । যথারীতি টিকিট কাউন্টার এর সামনে যেয়েও (অনেক ঝড়-ঝাপটা পাড়ি দিয়ে) প্রথম শো’র টিকিট পেলাম না।

নাই! নাই!! নাই!!! চারিদিকে টিকিটের হাহাকার এর মাঝে অবশেষে বিকালের শো’র টিকিট হাতে নিয়ে বিজয়ের বেশে বাড়ি ফিরলাম।

এভ্যাঞ্জারসঃ ইনফিনিটি ওয়ার অফিশিয়াল পোষ্টার

যথারীতি পরদিন সময়মতো হলে গিয়ে বসলাম । চারিদিকে এক অন্যরকম উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে, সবারই চোখে-মুখে একধরনের অস্থিরতা। অনেকেই ছবি তুলছে আয়রন ম্যানের সাথে, অনেকেই ক্যাপ্টেন আমেরিকা কিংবা স্পাইডার ম্যান, হাল্ক, থোর, ব্ল্যাক উইডো, স্কারলেট, ভিশন, ব্ল্যাক প্যান্থার এর ডামির সাথে সেলফি তুলছে। অনেক জল্পনা-কল্পনা নিয়ে আমরা সবাই উপস্থিত মার্ভেল এর দশ বছরের অধ্যবসায় এর ফসল “এভ্যাঞ্জারসঃ ইনফিনিটি ওয়ার” এর প্রথম কিস্তি উপভোগ করার জন্যে।

“এভ্যাঞ্জারসঃ ইনফিনিটি ওয়ার” দেখার কথা প্রথম চিন্তা করলে যে জিনিসটা মাথায় আসে সেটা হল একটা সুপারহিরো জ্যাম সেশন যেটা সমগ্র মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সকে একসাথে করে। মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত মুভি এই ইনফিনিটি ওয়ার। পরিচালক অ্যান্থনি এবং জো রোসো একসঙ্গে মার্ভেলের সবচেয়ে বড় সুপারহিরোদের- আয়রন ম্যান, ক্যাপ্টেন আমেরিকা, স্পাইডার ম্যান, হাল্ক, থোর, ব্ল্যাক উইডো, স্কারলেট, ভিশন, ব্ল্যাক প্যান্থার, ফ্যালকন, দ্য গার্ডিয়ান অফ দ্য গ্যালাক্সি সবাইকে এক সুতোয় বাঁধার চেষ্টা করেছেন  এই মুভিতে । মুভিতে ভিলেন ম্যাড টাইটান “থানোস” এর মূল লক্ষ্যই ৬টি ইনফিনিটি স্টোন নিজের বশে আনা এবং এগুলোর সাহায্যে সমগ্র ইউনিভার্স  তুলাধুনা করা। মুভির শুরু থেকেই তাকে এ কাজে বেশ তৎপর দেখা যায়। সব সুপার হিরোরাই চেষ্টা করবে নিজ নিজ অবস্থান থেকে থানোসকে রুক্ষে দেয়ার । বিলিভ মি, সব সুপার হিরোদের সবথেকে সেরাটা আপনি দেখতে পারবেন এই মুভিতে। থানোস যে পাড়ার কোন পাতি-মাস্তান না কিংবা বাংলা ছায়াছবির কোন চৌধুরী-সাহেব মার্কা ভিলেন না সেটা মুভির পরোতে-পরোতে অনুভব করা যায়।

মুভির আরেক বিশেষত্ব হলও, সব ক্যারেক্টার কে এখানে যথাযথ গুরুত্ব সহকারে দেখানো হয়েছে। কোন চরিত্রকে কম মূল্যায়ন করা হয়নি বা অযথা টেনে হিঁচড়ে বড় কিছু হিসেবে দেখানো হয়নি। একদম যেমনটা আমরা দেখতে পাই, “ক্যাপ্টেন অ্যামেরিকাঃ সিভিল ওয়ার” বা এভেঞ্জার এর বাকি মুভিগুলোতে।

মুভিতে আপনি ভিলেন থানোস সম্পর্কেও অনেক কিছুই দেখতে পাবেন। ভিলেন হিসেবে এক কথায় অপ্রতিরোধ্য থানোস আর ট্যাক্টিকালি আরও বেশী শার্প। মুভি দেখার সময় অবশ্যই মাথায় রাখবেন থানোস যা করে তার পিছনে এক বিরাট পরিকল্পনা লুকিয়ে থাকে। এবং খুব অবাক লাগল সে সব সুপার হিরো’র উইকনেস বা স্ট্রেন্থ সম্পর্কে ভালোভাবে ওয়াকিবহল। জানি না শেষ পর্যন্ত এভেঞ্জার’স এন্ড আদার্স কিভাবে থানোসকে থামাবে কারণ আমি এখন সত্যিই ভয় পাচ্ছি থানোসকে।

মুভির গ্রাফিক্স আর ভিএফক্স নিয়ে কথা হবে না, অসাধারণ! ইনফিনিটি ওয়ারের কিছু মুহূর্ত এমন ছিল যেটাকে হরর জেনারের মুভির দৃশ্য বলে মনে হবে। বিশেষ করে “ওকান্ডা”র ফাটিং সিন থেকে আপনি এমন সব দৃশ্যের অবতারণা দেখবেন যা আপনাকে সিটের সাথে বেধে রাখতে পারবেনা। অনেক সিন আপনাকে যেমন শক দিবে আবার এমন অনেক দৃশ্যের দেখা পাবেন যেগুলো দেখলে মনে অজান্তেই আপনি শিটি দিবেন আর শিহরিত হবেন।

সবশেষে বলতে চাই,এভ্যাঞ্জারসঃ ইনফিনিটি ওয়ার মুভির প্রথম পর্ব যেমন আপনার এতদিনের যত জল্পনাকল্পনা এবং প্রশ্ন মনে জমা ছিল সবকিছুর উত্তর দিবে ঠিক তেমনি আরও ডজন ডজন প্রশ্নের মুখে ফেলে দিবে। সুতরাং সুযোগ করে হলে যান আর উপভোগ করে আসুন মারভেল ইউনিভার্স এর সবথেকে সেরা এক সৃষ্টি এভ্যাঞ্জারসঃ ইনফিনিটি ওয়ার।

স্পয়লার থেকে দূরে থাকুন, কারণ এমন মুভির স্পয়লার খাওয়া মানে জীবন ষোল আনাই বৃথা । আর যারা গর্বের সাথে স্পয়লার দিয়ে বেড়াইতেছেন, তাদের কে খোদ থানোস আইসা ছেঁচা দিবে ।

blank
#thanosdemandsyoursilence এই হ্যাশ-ট্যাগ এর মাধ্যমে স্পয়লার বিরোধী ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে সিনেমাটির পরিচালক

এভ্যাঞ্জারসঃ ইনফিনিটি ওয়ার ট্রেইলার ঃ https://www.youtube.com/watch?v=6ZfuNTqbHE8&t=31s