ডেমনলজি বা পিশাচবিদ্যা পর্ব-৭ঃ অ্যামিটিভিল কাহিনী (প্রথম খন্ড)

ডেমনলজি সিরিজের আগের পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

অ্যামিটিভিল, লং আইল্যান্ড, নিউ ইয়র্ক এ অবস্থিত অ্যামিটিভিল হন্টিং হাউস; যেখানে ১৯৭০ সালে একটি পরিবার ভয়াবহ ভুতুড়ে ঘটনার সম্মুখীন হয় বলে জনশ্রুতি আছে। এড এবং লরেইন ওয়ারেন প্রথম এই ঘটনাকে ডেমনিক বলে দাবী করেন। এই মামলাটি আধুনিক রেকর্ডগুলির মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত এবং বহু তদন্ত, দাবি, আইন-আদালত, বই, চলচ্চিত্র ইত্যাদি বিভিন্নভাবেই এর স্বরূপ উৎঘাটন করার বহু প্রচেষ্টা করা হয়েছে।

১৯৭৪ সালের ১৩ই নভেম্বর, ১১২ ওশেন স্ট্রিটের এই বাড়িটিতে কয়েকটি ভয়াবহ খুনের ঘটনা ঘটে। ডিফিও পরিবারের মোট ছয়জন সদস্য- বাবা-মা, দুই পুত্র ও দুই কন্যার ছয়জন সদস্যকে পয়েন্ট থার্টি ফাইভ ক্যালিবারের রাইফেল দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাদের মৃত্যুর আনুমানিক সময় ছিল রাত ৩.০০টা। পরিবারের তৃতীয় পুত্র, ২৩ বছর বয়েসী রোনাল্ড বুচ ডিফিও-কে হত্যার এই হত্যার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তাকে মাদকের অপব্যবহারের ইতিহাস তুলে ধরে পাগলামির জন্য আত্মসমর্থনও করেছিল, তবুও তাকে সেকেন্ড ডিগ্রী মার্ডারের ছয়টি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং তিনি ২৫ বছরের কারাদণ্ডে দন্ডিত হন।

ছবিঃ (বাম হতে  ডানে) ড্যানিয়েল, জর্জ, ক্যাথি, মেলিসা এবং (নিচে) ক্রিস্টোফার  ও পোষা কুকুর

১৯৭৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িটি খালিই পড়ে ছিল। তারপর নব বিবাহিত জর্জ এবং ক্যাথি লুৎজ দম্পতি সেটি কিনে নেন। তাদের হত্যাকাণ্ডের খবরটি জানানো হয়, কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা বাড়িটি কিনে নেন। ১৮ই ডিসেম্বরে সন্ধ্যায় তারা তাদের নতুন বাড়িতে ওঠেন। ক্যাথির আগের স্বামীর ঘরে তিন সন্তান ছিলঃ ড্যানিয়েল (৯ বছর), ক্রিস্টোফার (৭ বছর) এবং মেলিসা (৫ বছর)।

লুৎজ দম্পতির বরাতে জানা যায়, তারা অবিলম্বে ভয়ঙ্কর ঘটনার অভিজ্ঞতা পেতে শুরু করেন। অদৃশ্য কন্ঠে তাদের বলা হয় “Get Out”; শীতকালের ঠান্ডার মধ্যেও দল ধরে মাছি দেখা যেত; ক্যাথি প্রায়শই সেই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল; মাঝেমধ্যেই একটি “ডেমন বয়” এর আবির্ভাব হত, যে একটি ডেমনিক-শূকরের আকৃতিতে পরিবর্তিত হয়ে যেত; দেয়াল থেকে সবুজ রঙ ধীরে ধীরে পাতলা হয়ে উবে গিয়েছিল; দেয়ালে ঝুলানো একটি ক্রুশ মাঝেমধ্যেই উল্টো হয়ে যেত; জর্জের সামনে ক্যাথির মুখ একটি ভয়ংকর বুড়িতে রূপান্তরিত হয়ে যেত; মধ্যরাতে রহস্যময় শব্দ ঘরময় দাপিয়ে বেড়াত; একটি কাল্পনিক ছোট মেয়ে এর আবির্ভাব হয় যে কিনা মেলিসার খেলার সাথী হয়ে ওঠে; অদৃশ্য কিছু ক্যাথিকে জড়িয়ে ধরত; ঘরের বাইরে তুষারের মধ্যে ঘোড়ার খুরের ছাপ পাওয়া যায়; দরজা ও দরজার লক ক্ষতিগ্রস্ত হয়; এবং আরো অনেক কিছু। তাদের সকলেরই আচরণ এবং মেজাজ খারাপ থাকতে শুরু করে। ছেলেমেয়েদের স্কুলে যেতে পারত না এবং জর্জও কাজ করতে অসমর্থ হয়ে পড়েন।

লুৎজ ফ্যামিলি বিভিন্নভাবে প্রার্থনা করে তাদের ঘরকে এই সমস্যা থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন বটে, কিন্তু তাতে কোন উপকার হয়নি। উল্টো তারা এমন ভয়াবহ ঘটনার সম্মুখীন হতে লাগল যে তারা বুঝে গিয়েছিল তাদের বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হবে। শেষ রাতে আসলে কতখানি ও কি কি ঘটেছিল, লুৎজ ফ্যামিলি তার সবটুকু কখনোই প্রকাশ করে নি। শুধু জানা যায় তারা সিড়ির উপরে একটি হুডি পড়া অবয়ব দেখেছিল যেটি জর্জের দিকে আঙ্গুল তুলেছিল ও সারা বাড়ি জুড়ে অনবরত হট্টগোল ও দৌড়াদৌড়ির ধুমধাম শব্দ শুনেছিল। ১৯৭৬ সালের ১৪ই জানুয়ারী রাতেই তারা তাড়াহুড়া করে এই বাড়ি ছেড়ে ঘরে চলে যায় এবং নিউইয়র্কের ডিয়ার পার্কে ক্যাথির মায়ের বাড়িতে চলে যায়। তারা তাদের বেশিরভাগ জিনিসপত্র বাড়িতে ফেলেই চলে গেছিল এবং পরবর্তীতে সেগুলো সংগ্রহ করার জন্য ভাড়া করা লোক পাঠিয়েছিল।

blank
ছবিঃ ওয়ারেন দম্পতি

ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে, নিউ ইয়র্ক সিটির একটি টেলিভিশনের প্রযোজক এড এবং লরেন ওয়ারেনের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি চাচ্ছিলেন তারা যেন সেই বাড়িতিতে যান ও ঘটনার সত্যতা যাচাই করেন। যারা প্যারাসাইকোলজিস্ট ও ফিজিক্যাল রিসার্চারেরা সেই বাড়ীতে গিয়েছিলান, কিন্তু আসলে কি ঘটেছে তা তখনো একটি রহস্যই রয়ে গেছিল। প্রযোজক ওয়ারেন দম্পতিকে সেই বাড়ীতে একটি অধিবেশন রাখার জন্য অনুরোধ করেন।

ওয়ারেন দম্পতি লুৎজ দম্পতির সাথে দেখা করেন ও তাদের কাছে থেকে বাড়িতে যাবার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ ও বাড়ির চাবি সংগ্রহ করেন। লুৎজ দম্পতি সেই বাড়িতে প্রবেশ করতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন; কিন্তু তারাও ওয়ারেন দম্পতিকে চাচ্ছিলেন যেন তারা মুল ঘটনাটি তাদের জানাতে পারেন।

ওয়ারেন দম্পতি তাদের সেই বাড়িতে ঢুকে একটি প্রথমে একটি সাধারণ বাড়ি দেখতে পান, যেটিকে খুব দ্রুত ফাকা করে চলে যাওয়া হয়েছে। ক্রিসমাসের জন্য তৈরী একটি জিঞ্জারব্রেড হাউস (বড়সড় একটি আদা ফ্লেভারের কেক যা সাধারণত উৎসবের সময় তৈরী করা হয়ে থাকে) তখনও ডাইনিং টেবিলেই পড়ে ছিল। লন্ড্রিতে কাপড়চোপড় ভাঁজ করাই ছিল, ফ্রিজে খাদ্য তেমনই স্টক করা ছিল। পোশাক, জুয়েলারী, পারিবারিক ফটো এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিসপত্রগুলোও যার যার স্থানেই ছিল।

ওয়ারেন দম্পতি তখন সেই বাড়িতে একটি অধিবেশন করেন এবং পরবর্তিতে ফিরে গিয়ে আবার টেলিভিশনের জন্য একটি রাত্রিকালীন অধিবেশন সঞ্চালন করেন। সেখানে প্রায় ১৭ জন ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে দুজন ছিলেন ট্রান্স মিডিয়াম; আলবার্টা রিলে এবং মেরি প্যাসকারেলা। অধিবেশন শুরু করার আগে এড ডেমনের উপস্থিতি পরীক্ষা করার জন্য ধর্মতত্ত্বের শ্লোক ব্যবহার করেছিলেন। উপস্থিত ব্যক্তিদের প্রায় অর্ধেকই সে রাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছিল। এড গুরুতর হৃদস্পন্দনজনিত সমস্যায় ভোগেন, যা তাকে প্রায় তিন সপ্তাহের জন্য প্রভাবিত করে।

সে রাতে বাড়ি থেকে কানেক্টিকাটে ফিরে আসার পর, ওয়ারেন দম্পতি বলেছিলেন যে রাত প্রায় ৩ টার দিকে তারা একটি ডেমোনিক ফোর্স দ্বারা আক্রমণের শিকার হন। এই হামলার বিস্তারিত তাদের আত্মজীবনী “দ্যা ডেমোনোলজিস্ট (1980)” তে প্রকাশ করা হয়।

এড প্রথমে অপ্রীতিকর এই ডেমোনিক উপস্থিতির হামলার শিকার হন। তখন এড তার কটেজের অফিস রুমে একা কাজ করছিলেন। হঠাৎ তিনি দরজা খোলা এবং তিনটি পদধ্বনির শব্দ শুনতে পান। প্রথমে তিনি মনে করেছিলেন লরেন বুঝি তাকে কফি দিতে এসেছে। তারপর একটি ঘুর্ণিবায়ু শুরু হয় যা ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হতে শুরু করে। ডেস্ক ল্যাম্প ধীরে ধীরে আবছা হয়ে আসতে শুরু করে এবং ঘরের তাপমাত্রাও হঠাৎ করে কমে যায়। আর সালফারের উৎকট গন্ধে ঘর ভরে যায়।

বিপদ বুঝে এড হোলি ওয়াটার এবং একটি ক্রস দিয়ে নিজের চারপাশে বন্ধ করে নেন। তারপর তার সামনে একটি ত্রিভুজ আকৃতির কালো একটি শক্তির দেখা পান, যার চিকন অংশ ছিল নিচের দিকে আর চওড়া অংশ ছিল উপরের দিকে ও এটি ভয়াবহরকমের অস্থির ছিল। ক্রমেই সেটি ঘন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে নিজেকে রুপান্তরিত করতে শুরু করে ও একটি ভয়ানক হুডি পড়া বৃদ্ধের রুপ নেয়। এর পর এড এর দিকে আক্রমনাত্মক ভঙ্গিতে ছুটে আসে। এড তার দিকে হোলি ওয়াটার ছুড়ে দেন এবং ক্রুশকে তার সামনে উচিয়ে ধরে চিৎকার করে যীশু খ্রীষ্টের নামে চলে যাওয়ার আদেশ দেন। তখন বিশাল আকৃতির সেই ডেমোনিক ফিগারটি একটি ছবিতে রুপান্তরিত হয়, যেখানে দেখানো হয় যে এড ও লরেন গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা গেছে। তারপর এটা চলে যায়।

তারপর সেই জিনিসটি লরেনের উপরে হামলা করতে যায়। লরেন তখন তার পোষা দুই কুকুরের সাথে বিছানায় শুয়ে পড়ছিলেন। হঠাৎ জোরে একটি শব্দ হয় ও ঘরের তাপমাত্রা মুহুর্তের মধ্যে কমে যায়। মনে হতে থাকে বাতাসের শব্দ সিঁড়ি বেয়ে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে শুরু করেছে। ডেমনটি ঘরে প্রবেশ করার সাথেসাথে লরেন প্যারালাইসিস হয়ে পড়েন ও প্রতিক্রিয়া বা চিত্কার করতে অক্ষম হয়ে যান। তিনি নিজেকে অন্ধকার কালোতে ডুবে যাচ্ছেন, এমন অনুভব করেন। ঈশ্বরের কাছে সুরক্ষা জন্য আহ্বান করে তিনি নিজেকে প্যারালাইসিসের হাত থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হন। মুক্ত হয়েই সাথে সাথে তিনি বাতাসে ক্রস চিহ্ন তৈরি করেন যাতে করে ডেমোনিক ওই শক্তিটিকে থামানো যায়। শক্তিটিকে এভাবে থামানো গেলেও এটি বাড়ি থেকে প্রস্থান করে না। এড এক দৌড় দিয়ে এসে জোরে জোরে মন্ত্র পড়তে শুরু করলে অবশেষে তখন সেটি পাশের রুমে চিমনী দিয়ে উপরে চলে যায়।

এই ধরনের ডেমনিক আক্রমণের ঘটনা অ্যামিটিভিলের বাড়িতে যাওয়ার পরেই যে প্রথম হয়েছে এমন না। ওয়ারেন দম্পতিকে এর আগেও যথেষ্ট এমন ঘটনার শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু তার কোনটিই এত শক্তিশালী ছিল না। অবশেষে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন যে, অ্যামিটিভিলে যে ভয়ানক ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলো সত্যিই ডেমনিক কারনে হয়েছিল। লুৎজ ফ্যামিলি কিছুই বানিয়ে বলে নি। ওয়ারেন দম্পতি সে বাড়িতে অনেকগুলি ছবি তুলেছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে একটি ছবিতে একটা ডেমনিক ছেলেটির মুখ দেখা যায়, যে বেডরুম থেকে উঁকি দিচ্ছিল।

blank
ছবিঃ ওয়ারেন দম্পতির তোলা ছবি ও ইনসেটে জীবিত অবস্থায় ভুতুড়ে বালকটির আসল চেহারা

লুৎজ ফ্যামিলিও একটি বিস্মিত হয়ে পড়েছিলেন। কারন সত্যিই যদি এই বাড়িতে ভৌতিক কিছু থেকে থাকে, তাহলে সেটিই হয়ত ডিফিওকে খুন করতে বাধ্য করেছিল। সেক্ষেত্রে ডিফিও নির্দোষ। পরবর্তিতে তারা ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগোতে চলে যায়। সেখানে তারা লেখক জে অ্যানসনের সাথে একটি বই লেখার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। ১৯৭৭ সালে প্রথম “The Amityville Horror” নামে বইটি প্রকাশিত হয় এবং ১৯৭৯ সালে সেটির উপর ভিত্তি করে প্রথম সিনেমা তৈরী হয়। অ্যানসন মুল বাড়িটিতে কখনও যান নি। বরং টেপ করা সাক্ষাত্কার থেকে বই লিখেছেন। ফলে এই সাহিত্যকর্মে অনেক ত্রুটি এবং বিচ্যুতি রয়েছে, কিন্তু মিডিয়া এতেই বেশ সংবেদনশীল হয়ে ওঠে।

এইসব ত্রুটিকে কেন্দ্র করেই সন্দেহবাতিকেরা পুনরায় মামলাটি আবার আদালতে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু যে সময়কার খুরের ছবিগুলো দেখানো হয়েছিল, অ্যামিটিভিলে সেই সময়ে যে কোন তুষারপাতই হয় নি। নেটিভ আমেরিকানরা অ্যানসনের দাবীর প্রেক্ষিতে জানিয়েছিল যে বাড়ির অংশটি এমন একটি স্থানে অবস্থিত যেখানে শিনেকক ইন্ডিয়ানরা মানসিকভাবে অসুস্থ এবং মৃত ব্যক্তিদের পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখত। ফাদার পিকারারো দাবী করেছিলেন যে তিনি কখনোই ঐ বাড়িতে আশীর্বাদ করতে ঘরে যাননি, যদিও লুত্জ সবসময়ই বলেছিলেন যে তিনি করেছিলেন। বিতর্কের আরো অনেক পয়েন্টই এই বইয়ে আছে। এমনকি ওয়ারেন দম্পতি এবং জর্জ লুত্জও স্বীকার করেছেন যে অ্যানসনের বইটি পুরোপুরি সঠিক ছিল না। বছরের পর বছর ধরে অসংখ্যবার এই ঘটনাটির সত্যতা যাচাই করার চেষ্টা করা হয়েছে।

১৯৭৭ সালে, লুৎজ ফ্যামিলি ডিফিও এর অ্যাটর্নি উইলিয়াম ওয়েবার, গল্প লেখক পল হফম্যান, বার্নার্ড বার্টন ও ফ্রেডেরিক মার্স নামের দুই ক্ল্যারভয়েন্ট (অলোকদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যাক্তি, সহজ ভাষায় যারা ভূত দেখতে পায়) এবং এই ঘটনা নিয়ে নিবন্ধ প্রকাশকারী গুড হাউজকিপিং, দ্য নিউ ইয়র্ক সানডে নিউজ ও দ্য হ্যার্স্ট কর্পোরেশন নামের তিনটি ম্যাগাজিন বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। লুৎজ পরিবারের এদের বিরুদ্ধে তাদের ব্যাক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন, বাণিজ্য উদ্দেশ্যে তাদের নামের অপব্যবহার, এবং অযথা মানসিক যন্ত্রণার কারন ঘটানোর জন্য ৫.৪ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ দাবী করেছিলেন। ওয়েবার, হফম্যান এবং বার্টন চুক্তি জালিয়াতি এবং লঙ্ঘনের অভিযোগে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়। সংবাদ সংস্থার বিরুদ্ধে লুৎজ পরীবারের দাবী খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল।

১৯৭৯ সালে লুৎজ পরিবারের এই ঘটনাটি নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনের জেলা আদালতে পর্যন্ত গিয়েছিল। বিচারক সব শুনে মামলাটি খারিজ করে দিয়ে বলেছিলেন, “এটা আমার কাছে মনে হয় যে, এই বইটি বড় আকারের একটি ফিকশন ও মিঃ ওয়েবারের কল্পনা।”

লুৎজ ফ্যামিলি থেকে যারা বাড়িটি কিনেছিলেন তাদের দাবী তাদের সাথে এমন অস্বাভাবিক কিছুই ঘটেনি। যাইহোক, তারাও মিডিয়ার প্রচার এবং কৌতুহলের অনুসারীদের অবিচলিত আগমনে এত বিরক্ত হয়ে পড়েছিল যে উলটো তারাও অ্যানসন, লুৎজ এবং প্রকাশক প্রেন্টিস হলের বিরুদ্ধে ১.১ মিলিয়ন ডলারের মানহানী মামলা করেছিল। পরবর্তিতে অপ্রকাশিত অনির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে বিষয়টির নিষ্পত্তি ঘটানো হয়। লুৎজ পরিবারকে সাহায্যকারী ফাদার পিকোরারোও মামলার সাথে জড়িত থাকার গোপনীয়তা এবং বিকৃত আক্রমণের জন্য লুৎজ এবং প্রেন্টিস হলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল। এটি অবশ্য Out-of-Court হিসেবে নিষ্পত্তি হয়।

blank
ছবিঃ মৃত্যুর পুর্বে শেষ টিভি শো তে জর্জ ও ক্যাথি

এরপরে লুৎজ পরিবার তাদের ব্যাক্তিগত জীবনে ঝুকে পড়েন। ১৯৮০ সালে তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ২০০৪ সালের ১৭ই অক্টোবরে ক্যাথি শ্বাসকষ্টজনিত কারনে (এমফিসেমা) মারা যান। জর্জ লাস ভেগাসে চলে যান ও ২০০৬ সালের ৮ই মে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অ্যানসন ১৯৮০ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ফাদার পিকোরারোও আর বেঁচে নেই।

অ্যামিটিভিল কেসটি একটি মিনি-ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। গাদাগাদা বই, সিনেমা, নিবন্ধ, ওয়েব সাইট আর সাথে অবিরাম বিতর্ক তো রয়েই গেছে। জন জি জোনস এর Amityville II এবং Amityville: The Final Chapter এ বেশ কিছু মৌলিক পরিবর্তন এনে অন্যান্য বিবরণ যোগ করা হয়েছে।

অতিরিক্ত সিনেমাগুলোর ভেতরে Amityville II: The Possession (1982), Amityville 3D (1983), Amityville 4: The Evil Escapes (1989, টেলিভিশনের জন্য নির্মিত), The Amityville Curse (1990), Amityville 1992: It’s About Time (1992), Amityville: A New Generation (1993), Amityville Dollhouse: Evil Never Dies (1996), এবং আসল সিনেমার রিমেক The Amityville Horror (2005) অন্যতম।

পরবর্তি খন্ডে ডিফিও পরিবারের খুনের ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে। সুতরাং শেয়ার করুন ও সাথেই থাকুন।

সম্পুর্ণ আর্টিকেলটি ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

রেফারেন্সঃ
1. The Amityville Horror (1977).
2. ESP, Hauntings and Poltergeists (1986).
3. The Demonologist: The Extraordinary Career of Ed and Lorraine Warren (1980).
4. The Warrens Investigate: The Amityville Horror; http://www.warrens.net/amityvill.htm.
5. The Amityville Horror: Interview with GeorgeLutz; 
   http://www.amityvillehorrortruth.com/articles/lutzinterview1.html.