এই লেখাটি পড়ার সময় না থাকলে, শুনতে পারেন এর অডিও ভার্সন। ক্লিক করুন নিচের প্লে-বাটনে।
গ্রীষ্মের সুন্দর সকাল। গত শীতে তুষারপাতে বিব্রত শহরটি আস্তে আস্তে সবুজ হয়ে উঠছে। কর্মব্যস্ত মানুষ অন্য সব দিনের মতই খুব দ্রুত পায়ে রাস্তা পার হচ্ছে। রোড ৩৪, অ্যাভিন্যু ৫। পেট্রোলম্যান জন মরিস ট্রাফিক কন্ট্রোল করতে করতে আচমকা একটা অদ্ভুত দৃশ্য দেখতে পেলো। একটা সাদা স্কার্ফ অ্যাম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং এর উপর থেকে ভেসে আসছে। সাদা স্কার্ফ কোথা থেকে এলো – এটা ভাবতে ভাবতেই বিকট শব্দে চারপাশের সবাই চমকে গেলো। রোড ৩৪ এ পার্ক করে রাখা একটা লিমুজিন গাড়ি দুমড়ে মুচড়ে গেছে আর তার উপর খুব শান্তভাবে শুয়ে আছে এক তরুনী। কে এই তরুনী – এটা বের হওয়ার আগেই রবার্ট সি ওয়াইলস রাস্তার অন্য দিক থেকে এসে ঝটপট একটা ছবি তুলে ফেললো। তখন এত কিছু ভাবার সময় ছিলো না। ফটোগ্রাফির তৎকালীন ছাত্র রবার্ট তখন কল্পনাও করে নি যে তার তোলা এই ছবি পরবর্তী দশকের মানুষও বিস্ময় নিয়ে দেখবে। পেট্রোলম্যান জন মরিসও বুঝে নি কি এক নিষ্ঠুর সৌন্দর্যময় দৃশ্যের সাক্ষী সে হলো।
এবার কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে যাই আমরা। ২৪ বছর বয়সী তরুন ব্যারী তার ভালোবাসার মানুষকে ট্রেনে তুলে দিতে এসেছে। এ্যভলিন ম্যখেইল, সাত ভাইবোনের মধ্যে একটু অন্যরকম একজন। ব্যারীর ভালোবাসার মানুষ। সপ্তাহের ছুটির দিনটা কাটাতে এসেছিলো নিউ ইয়র্ক থেকে। ঝকঝকে এই তরুন জুটি বিয়ে করবে আগামী জুনে। সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে। ছুটি কাটিয়ে, সকাল ৭ টার ট্রেনে করে এ্যভলিন নিউ ইয়র্ক ফিরে এলো। এরপরের কয়েক ঘন্টা কিছুটা ঘোলাটে। কেউ এখনো ঠিক জানে না, তখন আসলে এমন কি হয়েছিলো যে এ্যভলিন বাড়ি ফিরে না গিয়ে চলে গেলো অ্যাম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং। আর কি করেই বা পৌঁছে গেলো ৮৪ তলার ডেকে, যেখান থেকে গ্রীষ্মের নিউ ইয়র্ক শহর কে দেখাচ্ছিলো অনিন্দ্য সুন্দর।
গোছানো এ্যভলিন কিন্তু সুন্দরী শহরের মায়া করলো না। তার লম্বা কোট খুলে সুন্দর করে ভাঁজ করলো যার ভেতর ছিলো একটা চিঠি। চিঠিতে লেখা – “আমি চাই না আমার পরিবার অথবা পরিবারের বাইরের কেউ আমার কোন অংশ দেখুক। আমার শরীরকে কি পুড়িয়ে ফেলা যায়? সবার কাছে অনুরোধ করছি, আমার জন্য যেন কোন শোক সভা অথবা স্মরণসভা না হয়। আমার প্রেমিক আমাকে জুনে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু আমি জানি আমি একজন ভালো স্ত্রী হতে পারবো না। আমাকে ছাড়াই সে অনেক ভালো আছে। আমার বাবাকে বলো, আমার মধ্যে মায়ের অনেক কিছু আছে”।
ভাঁজ করা কোট ৮৪ তলা ডেকে রাখার পরই এ্যভলিন লাফিয়ে পড়লো। আর অদ্ভুত সুন্দর, কিন্তু মন কাঁদানো এক ভঙ্গিতে শুয়ে থাকলো সেই লিমুজিন এর উপর। একজন মৃত মেয়ের ছবি এতো গোছানো কীভাবে হয়? রবার্টের তোলা সেই ছবিটিতে এ্যভলিন কে লাগছে অনিন্দ্য সুন্দরী, যেন স্লিপিং বিউটির সেই রাজকন্যা। মাথা হালকা কাত করা। দুই হাতেই রুচিশীল সাদা গ্ল্যাভস। এক হাতে ধরে আছে গলার মুক্তার মালা। আর এক হাত আলতো ভাবে পাশে রাখা। লিমুজিন গাড়ির দুমড়ানো মেটাল বডিকে মনে হচ্ছে বিছানার এলোমেলো চাদর। এমনকি এ্যভলিন তার দুই পা সুন্দর ক্রস করে রেখেছে। মৃত এ্যভলিন যেন জীবিত এ্যভলিন এর চেয়েও সুন্দর। পোশাকের সাথে মেলানো লিপস্টিক দিতেও সে ভোলে নি। প্রায় ১০৫০ ফুট উপর থেকে লাফ দিয়ে সে মরেছে, তারপরও মৃত দেহতে কোন দাগ নেই, কোন খুত নেই। মুখে নেই কোন যন্ত্রনার ছাপ।
লাইফ ম্যাগাজিন সেই মাসেই তার ছবি একটা পুরো পাতায় ছাপিয়ে ফেলে। তবে ছবি যত সুন্দর, আসলে সব কিছু এতো সুন্দর ছিলো না। পরবর্তী প্রতিবেদন অনুযায়ী, মৃত দেহ সরানোর সময় বুঝা যায় যে শরীরের ভেতরে পুরোটাই একদম গুঁড়ো হয়ে তরল হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু তার ইচ্ছা অনুযায়ী এ্যভলিনকে কবর দেওয়া হয় নি। তাকে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিলো।