জ্যাকি চ্যানকে নিয়ে টুকিটাকি…

rsz_chan.jpgমুভি দেখতে ভালবাসেন, কিন্তু জ্যাকি চ্যানের কোন মুভি দেখেন নি, এমন মানুষ পুরো পৃথিবীতে একটাও বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। চরম হাসির সব স্ট্যান্ট আর ভোলাভালা হাসিই তার ট্রেড মার্ক। কুংফু-ক্যারাটে কে হলিউডে জনপ্রিয়তার শীর্ষে তিনিই তুলেছেন। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অন্যবদ্য অবদান রাখার জন্য Academy of Motion Picture Arts and Sciences গত ১২ই নভেম্বর তাকে ‘সম্মান সূচক একাডেমী এওয়ার্ডে’ ভূষিত করে, যেটাকে আমরা অস্কার নামে চিনি। চলুন এই প্রিয় অভিনেতা সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক-

 

  • জ্যাকি চ্যানের আসল নাম চ্যান কং-স্যাং (Chan Kong-sang)। জন্ম ১৯৫৪ সালের ৭ই এপ্রিল (বর্তমান বয়স ৬২)।
  • কৈশরে অপেরায় গাইতেন তিনি। ১৯৮০ সালের দিকে তিনি প্রফেশনালি গাইতে শুরু করেন এবং খুব দ্রুতই এশিয়ার জনপ্রিয় শিল্পীদের একজনে পরিণত হন। এখন পর্যন্ত ৫টি ভাষায় (ক্যান্টনিজ, জাপানিজ, মান্দারিন, তাইওয়ানিজ এবং ইংরেজি) তার প্রায় ২০ টি অ্যালবাম মুক্তি পেয়েছে। ‘কুং ফু ফাইটিং ম্যান’, ‘দ্য ইয়াং মস্টার’, ‘পুলিশ স্টোরি’, ডিজনীর এনিমেটেড ফিচার ‘মুলান’সহ বেশ কিছু মুভিতে প্লেব্যাক সিংগার হিসেবে গেয়েছেন তিনি। গানে অবদানের জন্য জাপানের বিখ্যাত Japan’s Best Foreign Singer Award-ও আছে তার ঝুলিতে। ২০০৮ সালের Beijing Olympics Closing Ceremony তেও গেয়েছিলেন তিনি। প্রিয় নায়ক দেখি গায়ক হিসেবেও বেশ বিখ্যাত।
  • আগে ছোটখাটো কাজ করলেও মূলত ১৯৭৬ সালে Bruce Lee-র New Fist of Fury মুভিতে স্ট্যান্টম্যান হিসাবে কাজ করে পরিচালকদের নজরে আসেন তিনি। ১৯৭৮ সালে Snake in the Eagle’s Shadow মুভিতে প্রথম মূল চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ভাষার প্রায় দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি এবং প্রতি বছরই এই সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে!
  • তিনিই প্রথম ‘কমেডি কুং ফু’ উদ্ভাবন করেন। The Eagle’s Shadow মুভিতে যখন তিনি নিজের মত করে স্ট্যান্ট করার পূর্ণ অধিকার পান, তখন তিনি এটি উদ্ভাবন করেন।
  • পারফেক্ট শটের ব্যাপারে তিনি বরাবরই খুঁতখুঁতে। কাজ নিখুঁত হওয়ার আগ পর্যন্ত তার শান্তি নেই! ১৯৮২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত Dragon Lord মুভির একটা শটের জন্য তিনি প্রায় ২৯০০ টা টেক নিয়েছিলেন। আনঅফিসিয়ালি এটা একটা রেকর্ড।
  • তিনি কখনোই খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করতে চাননি।
  • নিজের স্ট্যান সব সময় তিনি নিজেই করেন। ভয়ংকর স্ট্যানগুলোও তিনি প্রফেশনাল দিয়ে করান না। স্ট্যান্ট করতে গিয়ে এতবার নিজের শরীরের হাড় ভেঙ্গেছেন যে এখন আর কোন ইন্সুরেন্স কোম্পানিই তার হেলথ ইন্সুরেন্স করতে চায় না! ২০০১ সালে The Accidental Spy মুভিতে স্ট্যান্ট করতে গিয়ে তিনি সাময়িক প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছিলেন।
  • ১৯৯৬ সালে Hong Kong Baptist University এবং ২০০৯ সালে University of Cambodia থেকে তিনি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন। এছাড়াও Hong Kong Polytechnic University-তে তিনি ‘হোটেল এন্ড টুরিজম ম্যানেজম্যান্ট’ পড়ান। তো চাইলেই আজ থেকে প্রিয় নায়ককে ‘প্রফেসর ডক্টর জ্যাকি চ্যান’ নামে ডাকতে পারেন!
  • একাধারে তিনি একজন গায়ক, অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক, মার্শাল আর্টিস্ট, স্ক্রিন রাইটার, একশান কোরিওগ্রাফার, স্ট্যান্ট ডিরেক্টর, স্ট্যান্ট পারফর্মার এবং শিক্ষক। ঠিক যেন হংকং এর রবীন্দ্রনাথ!
  • ১৯৮২ সালে তাইওয়ানিজ অভিনেত্রী জোয়ান লিন (Joan Lin) কে বিয়ে করেন তিনি। তাদের একমাত্র ছেলে জ্যাসি চ্যান (Jeycee Chan)। তবে প্রিয় এই নায়ক সম্পর্কের ব্যাপারে ততটা পরিশুদ্ধ নন। হংকং এর অভিনেত্রী ইলেইন উ (Elaine Wu, মিস এশিয়া, ১৯৯০)-র সাথে এক্সট্রা ম্যারেটাল অ্যাফেয়ারে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৯৯ সালে তাদের ঘরে এক মেয়ের (Etta Ng Chok Lam) জন্ম হয়। এই ঘটনাকে জ্যাকি চ্যান ‘Only committed a fault that many men in the world commit’ বলে অভিহিত করেন। তখন থেকেই Etta (বর্তমান বয়স ১৭) তার মা Elaine-র সাথেই থাকেন।
  • জ্যাকি চ্যান তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য পুরষ্কার পান। ২০০৫ সালে চীনের চলচিত্রে অসামান্য অবদানের জন্য চীনা সরকার তাকে বিশেষ ভাবে সম্মানিত করে।

প্রিয় এই নায়কের একটি উক্তি দিয়েই আজকে ইতি টানবো- Do not let circumstances control you. You change your circumstances.

 

তথ্যসূত্রঃ গুগল, উইকিপিডিয়া, ফেসবুক।