কয়েকদিন আগেই খালাতো বোনকে এক পাত্র পক্ষ দেখতে আসে। ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। খালারা সবাই খুব আগ্রহী। ছেলে মেয়েকে পছন্দ করলেই বিয়ে। ছেলে মেয়েকে দেখতে এসে প্রশ্ন করে,’ বিয়ের পর চাকুরী করবে তো?’ আমার খালাতো বোনের সোজা জবাব, ‘ আমার দ্বারা দুই কাজ হবে না। আমি শুধু সংসার করবো।’ সে যাত্রায় বিয়েটা আর হয়নি। খালাদের সবার মন খারাপ। কিন্তু আমার ভালো লেগেছিলো। এখন চাকরি করাটাও মেয়েদের একটা যোগ্যতা ভাবা হচ্ছে তাহলে!!!! কিন্তু একটু ভাবার পর বুঝলাম, এটা কি আদৌ নারীর ক্ষমতায়ন নাকি নারীর নতুন উপযোগিতা???
যুগ যুগ ধরেই নিজের রান্নাঘরই মেয়েদের কর্মক্ষেত্র ছিলো। নিজের মাকে দেখেছি। একা হাতে পুরো সংসার সামলেছেন। আমাদের মানুষ করেছেন। আবার বাবার যত্নও নিয়েছেন। প্রতিদিন আম্মুকে দেখতাম আব্বু আসার আগেই সব কাজ শেষ করে রাখতেন। আব্বু আসার পর তার সাথে একসাথে বসে কথা বলতেন। আম্মু সংসারের কথা বলতো, আর আব্বু অফিসের কথা। আমাদের যাবতীয় চাহিদা আর যোগানের সিদ্ধান্তগুলো এভাবেই নেওয়া হতো। মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং শব্দটার বাস্তব জ্ঞান আমার এখান থেকেই হয়।
কিন্তু এখনকার জীবনে স্বামীর একার ইনকামে ঘর চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। তাই প্রয়োজনের তাগিদে হোক বা আত্মমর্যাদার খাতিরেই হোক ঘরের বউ এখন ঘরের বাইরে কাজ করছে। বাইরের জগতে স্বামী স্ত্রী এখন সমান তালে কাজ করছে। কিন্তু ঘরের ভিতরের জগৎটা আদৌ কতটুকু পাল্টেছে??
অফিস থেকে বের হয়েই গাড়ির জ্যামে আটকে পড়ে থাকা স্ত্রী ভাবেন রাতের খাবারের মেন্যু কি হবে, আর স্বামী ভাবেন বন্ধুদের আড্ডায় আজকে কোন জোকসটা বলা যায়!!! বাসায় ফিরে স্ত্রী ব্যস্ত হয়ে পড়েন আলু পিঁয়াজ নিয়ে, আর স্বামী সাহেব টিভির রিমোট নিয়ে!!! আর তাই যখন দিন শেষে একই বিছানায় দুজন এক হওয়ার কথা তখন স্ত্রী ক্লান্তিতে খুব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েন, আর স্বামী স্ত্রীর অভাব পূরনের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন ফেসবুক বা হোয়াটস এপে কোনো এক সুন্দরী রাত জাগা পাখির সাথে চ্যাটিংয়ে!!!!
সম্পর্কের ভাঙনগুলো ঠিক এই জায়গা গুলো থেকেই শুরু হয়!!!
অনেকে বলবেন, মেয়েদের বাইরে কাজ করার দরকার কি?? তাদের জন্যই বলছি, বন্ধুদের আড্ডায় যখন অভিযোগ করেন, “বউয়ের শাড়ি চুড়ি কিনতেই মাসের বেতন শেষ, সারাদিন তো ঘরেই থাকে, এতো শাড়ি চুড়ির কি দরকার” তখন ভাবা উচিত, ঘরে আয় রোজগার শুধু আপনি একাই করেন, তাই বউকে তার শখের জিনিস কিনে দেওয়ার দায়িত্বও আপনার। সারাদিন আপনার সংসার সামলানোর জন্য আপনি তাকে কোনো বেতন দেন না, তাই তার শাড়ি চুড়ির জন্য আপনার উপরই তাকে নির্ভরশীল হতে হয়!!!
দিন না তাদেরকে তাদের শখের জিনিসের দামটুকু কামাই করে নিতে। যে টাকা মাসের ত্রিশ দিন পরিশ্রম করে আপনি আয় করেন আর আপনার স্ত্রী মাত্র কয়েক ঘন্টায় শেষ করে দেন বলে আপনি অভিযোগ করেন, একবার তাকেও মাসের ত্রিশটা দিন বাইরের জগৎটা দেখতে দিন। সেও বুঝক তার স্বামীকে সারাটাদিন কিসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়!!!!!
তাই, ছেলেরা, যারা আছেন, যারা ভবিষ্যৎ -এ কোনো মেয়ের স্বামী বা কোনো মেয়ের বাবা হবে তাদেরকে বলছি, বউকে চাকরি করতে দেওয়া পুরুষের আধুনিক মানসিকতা হতে পারে সত্যি, তবে এই আধুনিকতা পুরোপুরিভাবে ধারণ করার জন্য নিজেদের কিছু অভ্যাসও আপনাদের পালটাতে হবে। পারবেন, মাস শেষে যার সাথে বেতনের টাকা ভাগাভাগি করে সংসার চালাবেন, দিন শেষে তার সাথে রান্নাঘরে আলু- পিঁয়াজ কুটতে?? বাচ্চার নোংরা ডায়াপার পালটে দিতে?? কোনোদিন বউয়ের আসতে দেরি হচ্ছে তাই তার জন্য চা করে রাখতে, যেমনটা সে আপনাকে সবসময় বানিয়ে দেয়?? সকালে সে নাস্তা বানাতে কিচেনে গেলে, বিছানাটা গুছাতে পারবেন?? নাকি সেটাও তাকে নাস্তা বানানোর পর এসে করতে হবে??
যদি উত্তরগুলো হ্যাঁ হয়, তবে পাত্রীকে প্রশ্ন করুন। চাকরিজীবী স্ত্রীকে টাকা কামানোর মেশিন না ভেবে আপনার জীবনসঙ্গিনী ভাবুন। আপনার বেতনের সীমাবদ্ধতা আছে, সেটা আমরাও বুঝি, কিন্তু মানসিকতার সীমাবদ্ধতা!!!! সেটা কোনো অজুহাতেই কাম্য নয়।….
(ছবি-ইন্টারনেট)
লেখিকাঃ তাজমিন তুলি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর অধীনে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন।