প্রচ্ছদের কার্টুন ইন্টারনেট থেকে নেয়া ও সম্পাদিত।
আমাদের এই দেশের যে কটা বিষয়ের দুর্নীতি সবচাইতে বেশী উচ্চ শিখরে, তার মধ্যে “শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি” বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এ কথা টা স্বীকৃত প্রায়। আমরা প্রায় সবাই জানি।
তবে সবচাইতে কষ্টের এবং দুঃখজনক বিষয়টা হচ্ছে, এই দুর্নীতিটা বড্ড রগরগে হয়ে দেখা যায় একদমই ছোট্ট শিশুদের প্রথম শ্রেণীর ভর্তি সময় কালে।একটা শিশুর জীবনের প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুরুটাই হয় দুর্নীতির মাধ্যমে! ব্যাপারটা যে কতোখানি ভয়ংকর,এই ব্যাপার টা বুঝেও কেনো জানি সবাই না বোঝার ভান করে থাকে । যেনো এটাই স্বাভাবিক,এটাই নিয়ম! এই অন্যায়ের ,এই নোংরামির কোন প্রতিকার নেই!
এই ঢাকা শহরের প্রতিষ্ঠিত এবং স্বনামধন্য প্রায় সব ক’টা স্কুলগুলোতে প্রকাশ্যে সবার চোখের সামনে দিয়েই মূলত এই দুর্নীতিটা চলে । লাখ,লাখ টাকার ভর্তি বানিজ্য চলে ঢাকার নামি-দামী স্কুল সহ আরও সব বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। স্কুলের বিভিন্ন শিক্ষক, কর্মচারী সহ স্থানীয় সাংসদরা এই বানিজ্যের সাথে জড়িত ।
আর আছে অভিভাবক! যারা ন্যায় অথবা নীতিবোধ কে পুরোপুরি বিসর্জন দিয়ে সন্তান কে কেবল একটা বিখ্যাত স্কুলে ভর্তি করবে বলে ছোট্ট শিশুর জীবনের শুরুটাই করে দু নম্বরী উপায়ে। একটি স্কুলে এই দু নম্বরী টাকা কে বলা হয়ে থাকে ডোনেশান । একটা প্রথম শ্রেণীর বাচ্চা ভর্তির জন্য তারা তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ডোনেশান দাবী করে থাকে ।
ঢাকা শহরে সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন বেশ কিছুাস্বনামধন্য প্রতিষ্ঠিত স্কুল রয়েছে । এইসব স্কুলগুলোতেও ভর্তি নিয়ে চলে আরেক ধরনের দুর্নীতি। মূলত এইসব স্কুলগুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়াটা হয় বিভিন্ন বাহিনী বা প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নির্দেশ,আদেশ,অনুরোধ অথবা বলা ভালো তদবিরে । ধরুন, আপনার পরিচিত কোন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কোনো বাহিনীতে কর্মরত আছেন, তাকে দিয়ে তদবির করালেই কেবল আপনি ওইসব স্কুলে আপনার বাচ্চা কে ভর্তি করানোর সুযোগ পাবেন।
ওইসব স্কুলে প্রথম শ্রেণীর জন্য হয়তো আসন আছে ৬০ টি। ভর্তি ফরম ছাড়ার আগেই এইসব আসন কেবল তদবিরেই পূর্ণ হয়ে যায় ।আগে থেকেই ঠিকঠাক হয়ে যায়, কারা কারা এই স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাবে। অথচ ভর্তি ফরম ছাড়া হয়।
আর দুর্ণীতি বা বানিজ্য টা চলে ঠিক এইখানে। ২০০ থেকে ৫০০ টাকার ভর্তি ফরম বিক্রি হয় হাজার হাজার। লাইন দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে সাধারন অভিভাবকরা এই ভর্তি ফরম সংগ্রহ করে থাকে । তারপর সেগুলো জমা দেয়ার পর তাদের একটা মৌখিক পরীক্ষা র জন্য ডাকা হয়। এরপর যেটা হয় তার নাম লটারি! এখানে পুরো বিষয়টা ই এক ধরনের সাজানো নাটক! স্রেফ অাই ওয়াশ। এক ধরনের জঘন্য প্রতারণা!
আর অভিভাবকরাও সবকিছু জেনে শুনেও বারে বারে সন্তানকে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আশায় এই প্রতারণার শিকার হন!
অথচ একটা সময়ে যখন ছোট্ট শিশুদের উপর ভর্তি পরীক্ষা নামক ভয়াবহ এক যুদ্ধ বন্ধ করে সরকার প্রথম শ্রেণীর ভর্তির জন্য লটারি পদ্ধতি চালু করেছিলো , তখন খুব খুশী হয়েছিলো সকল সচেতন নাগরিক।আমরাও হাঁঁফ ছেড়ে ছিলাম। অথচ কি আশ্চর্য! একটা অন্যায় কে রুখতে গিয়ে ঠিকই আরেকটা বড় দুর্ণীতির সূচনা হয়ে গেলো!
আমাদের মতো অদ্ভুত দুর্ভাগা জাতি বোধহয় এই পৃথিবীতে খুব কম আছে!
যেখানে ছোট্ট শিশুদের শিক্ষা জীবনের শুরুটাই হয় দুর্নীতির মাধ্যমে!
এ তো গেলো বাংলা মাধ্যম অথবা ইংরেজী ভার্সনে দেশীয় শিক্ষার প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে ভর্তি র প্রক্রিয়ার দুর্নীতির চিত্র। ইংরেজি মাধ্যমে কি নেই? ওখানেও আছে। পরিচিত জনদের কাছে শুনেছি অনেক নামজাদা স্কুলের প্রতিষ্ঠিত শাখাগুলোয় লাখ টাকার নিচে ভর্তি করানো হয় না! মাসিক বেতন উচ্চমধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তদের আওতাধীন । উঁচু ক্লাসে উঠার পর সবকটি বিষয়ের জন্যই প্রাইভেট পড়তে হয়,কোচিং করতে হয় উঁচু বেতনের বিনিময়ে!
মোটের উপর এই দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য যে শিক্ষা ব্যবস্থা বা শিক্ষা শুরুর যে পদ্ধতি সেইখানে ভয়াবহ গলদ!শিক্ষায় একধরনের নোংরা বাণিজ্য চলে । যেটার প্রতিকার হওয়া খুব প্রয়োজন ।
প্রয়োজন নতুন নতুন দুর্দান্ত মানের কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হওয়া । ভর্তি বানিজ্য বন্ধ করে সঠিক উপায়ে লটারি পদ্ধতিতে ভর্তি । নতুন নীতিমালা তৈরী হোক ।
আর সবার আগে বন্ধ হোক তদবির আর ডোনেশান পদ্ধতি!
সরকারের এই বিষয়গুলোতে নজর দেয়া ভীষণ,ভীষণভাবে জরুরী । ছোট্ট শিশুদের জীবনের শুরুটা হোক তাদের মতো নির্মল আর সহজ ভাবে। তবে ই না আমরা একটা দুর্দান্ত সুন্দর আগামী প্রজন্ম দেখতে পাবো । একটা সুন্দর বাংলাদেশের প্রত্যাশা করতে পারবো!
লেখক সম্পর্কেঃ
আমি আজমেরী সুলতানা ঊর্মি । স্বপ্ন দেখি অপূর্ব সুন্দর এক বাংলাদেশের। দক্ষ, পরিশ্রমী,সৎ এবং সাহসী এক জাতি তৈরী হোক । প্রত্যাশা এইটুকু। কবিতা এবং গল্প লিখতে ভালোবাসি । বিশ্বাস করি,পরিবার হচ্ছে শিক্ষার প্রধান স্থান । সুস্থ্য এবং সুন্দর পারিবারিক শিক্ষাই পারে ভবিষ্যতের একজন সঠিক মানুষ গড়ে দিতে ।