“দ্যা ডোর টু হেল” বা “নরকের দ্বার” হচ্ছে একটি প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র। এটি তুর্কমেনিস্তানের ডারউইজে অবস্থিত। এটি ১৯৭১ সালে একটি ভূগর্ভস্থ জ্বালামুখে পরিণত হয়। ভূবিজ্ঞানীগণ এই জ্বালামুখে আগুন জ্বালিয়ে দেন যেন মিথেন গ্যাস ছড়িয়ে পড়তে না পারে। সেই থেকে আজ অবধি সেখানে আগুন জ্বলছে। এই জ্বালামুখটির ব্যাস ৬৯ মিটার এবং গভীরতা ৩০ মিটার।
এই গ্যাসক্ষেত্রটি সোভিয়েত ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বারা আবিষ্কৃত হয় ১৯৭১ সালে। তারা ভেবেছিলেন,এটি একটি তৈলকূপ। তাই তারা সেই স্থানে ড্রিল মেশিন স্থাপন করেন তেল উত্তোলনের জন্য। কিন্তু ড্রিল মেশিন স্থাপনের কিছু সময় পরে ড্রিল মেশিনের নিচের ভূমি পাতালে ধসে পরে এবং বিশাল একটি পাতাল গ্যাসক্ষেত্র উন্মোচিত হয়। ড্রিল মেশিন ও তাদের ক্যাম্প হারিয়ে পাতাল গহ্বরে।
ইঞ্জিনিয়ারদের আশঙ্কা হয় যে, এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে বিষাক্ত গ্যাস আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পরবে। তাই তারা এই গ্যাসক্ষেত্রটিতে অগ্নিসংযোগ করেন। তারা ভেবেছিলেন যে কিছুদিনের মধ্যেই গ্যাস পুড়ে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু তাদের গণনা এবং ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত করে চার দশকের ও বেশি সময় ধরে এই গ্যাসক্ষেত্রটি ক্রমাগত জ্বলছে।
এই জ্বালামুখটি বিখ্যাত টিভি শো “ডাই ট্রাইং” এ দেখানো হয়েছিলো। সেখানে অনুসন্ধানকারী জর্জ করোনিস এই জ্বালামুখের গভীরে সর্বপ্রথম প্রবেশ করেন। তিনি সেখান থেকে “Extremophile Microorganisms” অর্থাৎ যে সকল অণুজীব অধিক তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে সক্ষম সেগুলোর নমুনা সংগ্রহ করে আনেন। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে ২০১৪ সালের ১৬ই জুলাই এই পর্বটি সম্প্রচারিত হয়।
২০১০ সালের এপ্রিলে তুর্কমেনিস্তানের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন যে, এই গ্যাসক্ষেত্রটি বন্ধ করে দেয়া উচিত বা এই গ্যাসক্ষেত্রের প্রভাব যেন অত্র এলাকার গ্যাসক্ষেত্রের উপর না পরে সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। টার্কমেনিস্তান তাদের প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবস্থাপনা নিয়ে বর্তমানে পরিকল্পনা করছে। তারা বিভিন্ন দেশে তথা পাকিস্তান, চায়না, ভারত, ইরান, রাশিয়া এবং ইউরোপীয় দেশগুলোতে তাদের প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি করার কথা ভাবছে কারণ বর্তমানে তাদের প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের হার হচ্ছে ২২৫ কিউবিক মিটার।
লেখিকাঃ তাসনিয়া আজমী, বাংলাহাব টিম।