বিপিএল (BPL)-এর পূর্ণরূপ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (Bangladesh Premier League)। তবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ অপেক্ষা টুর্নামেন্টটি বিপিএল নামেই সর্বাধিক পরিচিত দেশ-বিদেশের ক্রিকেটপ্রেমী মানুষের কাছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (Bangladesh Cricket Board) তথা বিসিবি (BCB)’র সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে আয়োজিত বাংলাদেশের পেশাদার ক্রিকেট লীগ হলো এই বিপিএল, যেখানে প্রতিটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ টি-২০ পদ্ধতি অনুসরণ করার মাধ্যমে। বিশ ওভার দীর্ঘ প্রতিটি ম্যাচ থাকে টানটান উত্তেজনায় ভরপুর। তাই ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে বিপিএল’র যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। উল্লেখ্য, পৃথিবীতে আয়োজিত এ ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলোর মধ্যে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের অবস্থান বিশ্বে ১৬তম।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের যাত্রা শুরু হয় ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারির ৯ তারিখে, জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে। যাত্রা শুরুর পর বিভিন্ন সময়ে ছোটো বড়ো বেশ কিছু চড়াই-উতড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে এই আয়োজনটিকে। আর এসবের মধ্যেই এখন পর্যন্ত বিপিএল’র আসর বসেছে মোট সাতটি। এই সাত আসরে ঘটেছে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, তেমনি এর দায়ে কখনও খেলোয়াড়, কখনও বা গোঁটা ফ্রেঞ্চাইজকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিয়মেও এসেছে অনেক পরিবর্তন। এসেছে নতুন নতুন দল। কখনও জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়তেও দেখা গেছে। আবার সেই ঘাটতি পুষিয়ে নিয়ে বিপিএল তার জনপ্রিয়তাকে আগের অবস্থানেও নিয়ে এসেছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীকে সামনে রেখে তাঁর নামে বিপিএল-২০১৯ এর নামকরণ করার ঘোষণা দেয় বিসিবি। সেই সাথে ফ্র্যাঞ্চাইজগুলোর সাথে বনিবনা না হওয়ার কারণে প্রথমবারের মতো সরাসরি বিসিবি’র নিজের তত্ত্বাবধায়নে বিপিএল আয়োজনেরও ঘোষণা দেয় তারা। যদিও বা আগে বিসিবি’র তত্ত্বাবধায়নেই টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হলেও, সেখানে সরাসরি বিসিবি ভূমিকা পালন করতো না। সবটাই ছিল ফ্র্যাঞ্চাইজ ভিত্তিক। আর পরিচালনার দায়িত্বে থাকতো গর্ভনিং কাউন্সিল বা জিসি। বিপিএল-২০২০ আয়োজনের ঘোষণা থাকলেও করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহরূপ নিতে শুরু করলে বাতিল করা হয় টুর্নামেন্টটি। অবশ্য বিদেশি খেলোয়াড় ছাড়াই কেবল দেশীয় তারকা খেলোয়ারদের নিয়ে বিসিবি ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে তিন দল নিয়ে আয়োজন করে ৫০ ওভারের প্রেসিডেন্ট কাপ টুর্নামেন্টের। আর ছয় দল নিয়ে আয়োজন করা হয় কর্পোরেট টি-২০ টুর্নামেন্ট। তবে বিসিবি’র পক্ষ থেকে বিপিএল-২০২১ আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। প্রকাশ করা হয়েছে সময়সূচীও।
আজকে আমরা বিপিএল’র যাত্রা থেকে শুরু করে বিভিন্ন তথ্যাদি সম্পর্কে জানার পাশাপাশি আসন্ন বিপিএল-২০২১ টুর্নামেন্ট সম্পর্কেও জানবো।
যেভাবে যাত্রা শুরু বিপিএল’র
বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে প্রতি বছর ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। তত্ত্বাবধায়নে থাকে দেশের ক্রিকেটের কর্তা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কিন্তু ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল)-এর মতো বিশ্বব্যাপী বেশ কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট সফলভাবে আয়োজন করা হলে, স্বল্পদৈর্ঘের তথা বিশ ওভারের এইসব ফ্র্যাঞ্চাইজ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। ২০১১ সালে বাতিল হয়ে যায় বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেট টুর্নামেন্টটি। তারই ধারাবাহিকতায় বিসিবি দেশে আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেট টুর্নামেন্টকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করে। গতানুগতিক ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে তারাও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ক্রিকেট টুর্নামেন্টের সাথে ফ্র্যাঞ্চাইজ ধারণাটি যুক্ত করে নেয়।
এ লক্ষে, ২০১২ সালের ১৮ই জানুয়ারি, বিসিবি ৬ বছরের জন্য ৩৫০ কোটি টাকার একটি চুক্তি করে গেম অন স্পোর্টস গ্রুপের সাথে—উদ্দেশ্য ফ্র্যাঞ্চাইজ টুর্নামেন্ট শুরু করা। এই চুক্তির মাধ্যমে গেম অন স্পোর্টস গ্রুপটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করার বিশেষ দায়িত্ব লাভ করে। তারা দেশের বড়ো বড়ো ছয়টি শহর নিয়ে ছয়টি আলাদা আলাদা ফ্র্যাঞ্চাইজ প্রতিষ্ঠা করে। ফ্রাঞ্চাইজ ছ’টি হলো—ঢাকা গ্লাডিয়েটরস, বরিশাল বার্নার্স, চিটাগং কিংস, খুলনা রয়েল বেঙ্গল, সিলেট রয়েলস ও দুরন্ত রাজশাহী। পরবর্তীতে ফ্র্যাঞ্চাইজ ছয়টির মালিকানা বিক্রির জন্য আয়োজন করা হয় একটি নিলামের, যেখানে অংশ গ্রহণ করে মোট তেরোটি কোম্পানি। নিলামের মাধ্যমে বিজয়ী ছয় কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া হয় ফ্র্যাঞ্চাইজ ছয়টির মালিকানা।
রাজধানী ঢাকার র্যাডিসন হোটেলে জানুয়ারির ১৯ তারিখে আয়োজন করা হয় খেলোয়াড় নিলামের, যেখানে প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজকে দশজন দেশীয় করে খেলোয়াড় এবং আটজন করে বিদেশী খেলোয়াড় দলে ভিড়ানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সেই সাথে প্রত্যেক ফ্র্যাঞ্চাইজকে দেওয়া হয়েছিল একজন করে দেশীয় আইকন প্লেয়ার। প্রথমবারের টুর্নামেন্টে প্রত্যেক দলকেই কোনো একটি ম্যাচে সর্বোচ্চ পাঁচজন বিদেশি খেলোয়াড় খেলানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।
একই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ৯ তারিখে রাজধানী ঢাকার শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পর্দা ওঠে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল)-এর প্রথম আসরের। পরের দিন, ১০ ফেব্রুয়ারি, অনুষ্ঠিত হয় উদ্বোধনী ম্যাচ। এই ম্যাচে বরিশাল বার্নাসের মুখোমুখি হয় সিলেট রয়েলস। সেবার চ্যাম্পিয়ন হিসাবে শিরোপা ঘরে তোলে ঢাকা গ্লাডিয়েটরস।
এভাবেই প্রথমবারের মতো মাঠে গড়ায় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ বা বিপিএল।
এক নজরে বিপিএল’র সাত আসর
যাত্রা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত বিপিএল’র সাতটি আসরের পর্দা উঠেছে। ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো শুরু হওয়া টুর্নামেন্টটির শিরোপা ঘরে তোলে ঢাকা গ্লাডিয়েটরস। আট উইকেটে তারা সেবার টুর্নামেন্টের ফাইনালে বরিশাল বার্নার্সকে পরাজিত করেছিল। টুর্নামেন্ট সেরা নির্বাচিত হন সাকিব আল হাসান। বিপিএল’র দ্বিতীয় আসর বসে ২০১৩ সালে। টুর্নামেন্টটির ফাইনালে মুখোমুখি হয় ঢাকা গ্লাটিয়েটরস আর চিটাগং কিংস। বিপিএল’র দ্বিতীয় আসরেও চ্যাম্পিয়ন হয় ঢাকা গ্লাডিয়েটরস। চিটাগং কিংসকে তারা ৪৩ রানে পরাজিত করে টানা দ্বিতীয়বারের মতো তারা শিরোপা ঘরে তোলে। বিপিএল’র প্রথম দুই আসর ভালোভাবেই আয়োজন করা গেলেও ২০১৪ সালের আসরটি বাতিল হয়ে যায় দ্বিতীয় আসরের ফিক্সিংয়ের অভিযোগের দায়ে। এছাড়াও বিদেশি খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক মেটানোয় ঝামেলা করার অভিযোগ ওঠে। আজীবন নিষিদ্ধ হয় ঢাকা গ্লাডিয়েটরসের প্রধান নির্বাহি। বাতিল করে দেওয়া হয় ছয় ফ্র্যাঞ্চাইজ। ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে নিষিদ্ধ হন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলও।
২০১৫ সালে বিপিএল’র তৃতীয় আসর আয়োজনের লক্ষে নতুন করে ছ’টি ফ্র্যাঞ্চাইজ গঠন করা হয়। তৃতীয় আসরে বরিশাল বুলসকে তিন উইকেটে হারিয়ে টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতে নেয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। ২০১৬-১৭ সেশনে বিপিএল’র চতুর্থ আসরে নিয়ম ভঙ্গের কারণে বাতিল করা হয় সিলেট সুপার স্টারসকে। যুক্ত হয় নতুন দুটি দল। টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী ফ্র্যাঞ্চাইজের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় সাতে। এই আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় ঢাকা ডিনামাইটস। তারা ৫৬ রানে হারায় রাজশাহী কিংসকে।
২০১৭-১৮ সেশনে সিলেট সিক্সারস নামে সিলেটের ফ্রাঞ্চাইজটি টুর্নামেন্টে অংশ নেয়। নতুন ভ্যেনু হিসাবে ঢাকা ও চিটাগংয়ের পাশাপাশি যুক্ত হয় সিলেট। বাদ দেওয়া হয় বরিশাল বুলস ফ্র্যাঞ্চাইজকে। বিপিএল’র এই আসরে ঢাকা ডিনামাইটসকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয় রংপুর রাইডার্স।
২০১৮-১৯ সেশনে আয়োজিত আসরটি ছিল বিপিএল’র ষষ্ঠ আসর। এই আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সাবেক চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা ঘরে তোলে। সতেরো রানে তারা ঢাকা ডিনামাইটসকে পরাজিত করে।
২০১৯-২০ সেশনে আয়োজন করা হয় বিপিএল’র সপ্তম আসর—বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ-২০১৯। আনা হয় বেশ কিছু পরিবর্তন। বদলে যায় নাম। বিপিএল’র বিশেষ এই আসরে খুলনা টাইগার্সকে ২১ রানের পরাজিত করে টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতে নেয় রাজশাহী রয়েলস। টুর্নামেন্ট সেরা নির্বাচিত হয় রাজশাহী রয়েলসের বিদেশি খেলোয়াড় অ্যান্ড্রু রাসেল।
বঙ্গবন্ধু বিপিএল
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী সামনে রেখে বিপিএল’র নাম পরিবর্তনের ঘোষণা দেয় বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। টুর্নামেন্টের আয়োজক বিসিবি। বিশেষ এই আসরে নিয়ে আসা হয় অনেক পরিবর্তন।
পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী বিপিএল-২০১৯ টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ মাঠে গড়াবে ৬ ডিসেম্বর তারিখে। নির্ধারিত হয়েছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের তারিখও। ডিসেম্বরের ৪ তারিখে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পর্দা উঠার কথা ছিল বিপিএল’র সপ্তম আসরের। প্রতিযোগিতাটি হবে ৩৮দিন ব্যাপী। বিপিএল ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ১১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে। কিন্তু বিপিএল’র গভর্নিং কাউন্সিল ও ফ্রাঞ্চাইজদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় অর্জিত লভ্যাংশ নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। সেই বিরোধ নিয়ে কোনোরূপ সমাধানে আসতে না পারায় টুর্নামেন্টের পৃষ্ঠপোষক বিসিবি’র পক্ষ থেকে আসে নতুন ঘোষণা।
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন নতুন এক ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, এখন থেকে কোনোপ্রকার ফ্র্যাঞ্চাইজ ছাড়াই সরাসরি বিসিবি’র তত্ত্বাবধায়নে বিপিএল আয়োজন করা হবে। এভাবেই বাতিল হয়ে যায় বিপিএল’র পূর্বের সব ফ্র্যাঞ্চাইজগুলো। পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের হাতে।
তিনি আরও ঘোষণা করে, প্রতিযোগিতাটি আগের তারিখে হচ্ছে না। শুরুর নতুন তারিখ নির্ধারন করা হয় ৮ ডিসেম্বর। প্রথম ম্যাচ মাঠে গড়ায় ১১ ডিসেম্বর ২০১৯। ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারিত হয় ১৭ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেদিনের সংবাদ সম্মেলনে আরও ঘোষণা করা হয়, বিপিএল’র নাম পরিবর্তন করে ‘বঙ্গবন্ধু বিপিএল টি-২০১৯’ রাখা হবে। বিসিবি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, এখন থেকে স্থায়ীভাবেই বিপিএল’র নাম ‘বঙ্গবন্ধু বিপিএল’ থাকবে।
সেই লক্ষে তৈরি করা হয় খেলোয়াড়দের নতুন খসড়া। বাতিল করা হয় ফ্র্যাঞ্চাইজের সাথে খেলোয়াড়দের সকল চুক্তি। অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা কমিয়ে সাত করা হয়। যেহেতু পূর্বের মতো আর ফ্র্যাঞ্চাইজ থাকছে না, এবং বিসিবি নিজেই টুর্নামেন্টটি পরিচালনা করবে, তাই খেলোয়াড়দের যাতায়াত ও আবাসন ব্যবস্থা বরাদ্দেরও ঘোষণা আসে বিসিবি থেকে।
প্রথমবারের মতো আয়োজিত বিপিএল’র বিশেষ আসর বঙ্গবন্ধু বিপিএল-এ অংশগ্রহণকারী সাতটি দল হলো—চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স, কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স, ঢাকা প্লাটুন, খুলনা টাইগার্স, রাজশাহী রয়্যালস, রংপুর রেঞ্জার্স, সিলেট থান্ডার। খুলনা টাইগার্সকে ২১ রানের পরাজিত করে টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতে নেয় রাজশাহী রয়েলস। টুর্নামেন্ট সেরা নির্বাচিত হয় রাজশাহী রয়েলসের বিদেশি খেলোয়াড় অ্যান্ড্রু রাসেল।
বিপিএল ২০২০
রবাবরের মতো ২০২০ সালেও বিপিএল আয়োজনে কথা ছিল বিসিবি’র। সেই মতো ঘোষণা করা হয়েছিল অষ্টম আসরের সময়সূচী। কিন্তু বাধসাধে করোনা মহামারি। গোঁটা পৃথিবী বর্তমানে করোনায় পর্যদুস্ত। এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টের মধ্যে বাতিল হয়েছে মেয়েদের দুটো বিশ্বকাপ। তারপরেও বিপিএল-২০২০ নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। ক্রিকেটপ্রেমীদের অনেকেই আশা করেছিল বিপিএল-২০২০ হয়তো আয়োজন করা হবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে। কিন্তু ১১ অক্টোবর ২০২০ তারিখে আয়োজক ও পরিচালক প্রতিষ্ঠান বিসিবি’র পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবার আর আয়োজন করা হচ্ছে না ‘বিপিএল-২০২০’।
বিপিএল বাতিলের কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে করোনা পরিস্থিতির কারণে বিদেশি খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ করতে না পারার বিষয়টি। তাছাড়া বিপিএল কোনো ছোটোখাটো টুর্নামেন্টও নয়। এটি পরিচালনার জন্য দরকার বিশাল সংখ্যক লোকবল। সামগ্রিকভাবে সবকিছু বিবেচনা করেই বিসিবি এবারের আসরটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। ফ্র্যাঞ্চাইজের ব্যাপারে বিসিবি সভাপতিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ফ্র্যাঞ্চাইজ গঠন হবে নাকি আগের বারের মতো বিসিবি’র সরাসরি তত্ত্বাবধায়নে বিপিএল আয়োজিত হবে তা পড়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে বিপিএল’র অষ্টম আসরটি বাতিল করা হলেও দেশীয় তারকা খেলোয়াড়দের নিয়ে বিসিবি আয়োজন করে দুটি ভিন্ন ভিন্ন টুর্নামেন্ট। তিন দল নিয়ে আয়োজন করা হয় ৫০ ওভারের ‘প্রেসিডেন্ট কাপ টুর্নামেন্ট’-এর। আর ছয়টি দল গঠন করে বিপিএল’র আদলে আয়োজন করা হয় ‘কর্পোরেট টি-২০ টুর্নামেন্ট’।
বিপিএল চ্যাম্পিয়ন তালিকা
এখন পর্যন্ত সাতবার বসেছে বিপিএল’র আসর। এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন দলগুলো হলো ঢাকা গ্লাডিয়েটরস, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস, ঢাকা ডিনামাইটস, রংপুর রাইডারস, ও রাজশাহী রয়েলস। সবগুলো আসরের চ্যাম্পিয়ান দল ও রানার্স আপ দল এবং ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের তালিকা দেওয়া হলো—
আসর | ফাইনাল ভেন্যু | চুড়ান্ত ফলাবল | দলের সংখ্যা | ম্যান অব দ্য টুরনামেন্ট | ||
বিজয়ী | ফলাফল | রানার আপ | ||||
২০১২ | শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম, মিরপুর | ঢাকা গ্লাডিয়েটরস | ৮ উইকেটে ঢাকা গ্লাডিয়েটরস’র জয় হয় | বরিশাল বার্নার্স | ৬ | সাকিব আল হাসান |
২০১২-১৩ | শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম, মিরপুর | ঢাকা গ্লাডিয়েটরস | ৪৩ রানে জয়ী হয় ঢাকা গ্লাডিয়েটরস | চিটাগং কিংস | ৭ | সাকিব আল হাসান |
২০১৫-১৬ | শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম, মিরপুর | কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস | কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ৩ উইকেটে জয়ী হয় | বরিশাল বুলস | ৬ | আশার যায়িদি |
২০১৬–১৭ | শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম, মিরপুর | ঢাকা ডিনামাইটস | ঢাকা ডিনামাইটস ৫৬ রানে জয়ী হয় | রাজশাহী কিংস | ৭ | মাহমুদুল্লাহ |
২০১৭-১৮ | শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম, মিরপুর | রংপুর রাইডার্স | ৫৭ রানে রংপুর রাইডার্স জয়ী হয় | ঢাকা ডিনামাইটস | ৭ | ক্রিস গেইল |
২০১৮-১৯ | শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম, মিরপুর | কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস | ১৭ রানে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস জয়ী হয় | ঢাকা ডিনামাইটস | ৭ | সাকিব আল হাসান |
২০১৯-২০ | শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম, মিরপুর | রাজশাহী রয়েলস | ২১ রানে জয়ী হয় রাজশাহী রয়েলস | খুলনা টাইগার্স | ৭ | অ্যান্ড্রু রাসেল (রাজশাহী রয়েলস) |
বিপিএল ২০২১
শেষ করবো বিপিএল’র অষ্টম আসরের খবর দিয়ে। শীঘ্রই পর্দা উঠতে চলেছে বিপিএল’র অষ্টম আসল ‘বঙ্গবন্ধু বিপিএল-২০২১’-এর। এ বছর মার্চে শুরু হবে টুর্নামেন্টটি। আয়োজক হিসাবে থাকছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। আসরের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এপ্রিল মাসে। রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। অষ্টম আসরে অংশগ্রহণ করবে মোট ৭টি দল। তবে এখনো ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার সময়সূচী ও ভেন্যু সম্পর্কে অফিশিয়াল কোনো ঘোষণা আসেনি।
তথ্য সূত্র :
ESPNcricinfo
CricBuzz
Bangladesh Cricket Board
দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পত্রপত্রিকা
বাংলাহাব প্রশ্ন-উত্তর ভিত্তিক কমিউনিটি ওয়েবসাইট বাংলাহাব Answers থেকে পাঠকের কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর। আপনিও ভিজিট করুন ও প্রশ্ন-উত্তর দিন।
প্রশ্ন- বঙ্গবন্ধু বিপিএলে কোন খেলোয়াড়ের ব্যাটিং গড় সবচেয়ে বেশি ছিলো?
উত্তর- রান সংগ্রাহকের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন ইংল্যান্ডের ডেভিড মালান। এবার কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের হয়ে খেলছেন তিনি। এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান ৮ ম্যাচে ৬২.৮৩ গড়ে ৩৭৭ রান সংগ্রহ করেছেন। তার স্ট্রাইক রেট ১৫২.০১। এখন পর্যন্ত ১টি সেঞ্চুরি এবং ২টি হাফসেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি।