আপনার সিভি এবং আপনার ব্যক্তিত্ব যদি এক হয়ে উঠে তবে সেটা হবে একটি দারুন সিভি।প্রশ্ন আসতেই পারে। সিভি আসলে কি??সিভি একটি নিজস্ব পরিচয় বহনকারী মাধ্যম। সহজ ভাষায় এটাই অর্থ হবে। আমার পরিচয় যে কাগজ টি ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হবে সেটাই সিভি।তবে পরিচয় বহন করে এমন আরও কয়েকটি উদাহরণ দেয়া যায়।
১] বায়োডাটা
২]সিভি
৩]রিজিউমি
প্রথম টি নিয়ে বলছি। সহজ ভাষাতে বিয়ে করার সময় ছেলে পক্ষ মেয়ে পক্ষের কাছে ছেলের গুণগান গেয়ে যে পত্র প্রেরণ করে থাকে সেটা হচ্ছে বায়োডাটা ।ঠিক মেয়ে পক্ষের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। মেয়ের গুণগান গেয়ে ছেলে পক্ষের নিকট যে পত্র প্রেরণ করা হয় তাই বায়োডাটা ।বায়োডাটা মূলত সংক্ষিপ্ত আকারে কারো তথ্যাবলি তুলে ধরা। যেহেতু আজকের বিষয় টি সিভি নিয়ে করা হচ্ছে এবং ভার্সিটি জীবন শেষে যদিও বায়োডাটাটা অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে বিবাহের ক্ষেত্রে তবে সিভি টা বায়োডাটার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারন আগে চাকরি তবেই তো বিয়ে। 😀
দ্বিতীয়টি সিভি। প্রথমেই বলেছি সিভি আপনার নিজস্ব তথ্য কে প্রকাশ করবে। আপনি যা সেটারই সিভিতে বহিঃ প্রকাশ ঘটবে। সেটা হতে হবে সত্য এবং নিখুঁত। এখানে লুকোচুরির কোন সুযোগ নেই। সিভি অবশ্যই দেখতে সুন্দর হতে হবে। অতিরিক্ত রঙ চং না করাটাই ভালো। নয়তো যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আপনি বাদ পরে যেতে পারেন।মনে রাখবেন ফ্রেশার দের জন্য সিভি সর্বচ্চো ২ পেইজের হবে।
সিভি মূলত কয়েকটি পার্ট নিয়ে করতে হবে। একটি একটি করে বলছি। মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
১] ছবিঃ প্রথম দর্শনটাই হচ্ছে আপনার প্রথম পরিচয়। আপনার ছবির কথা বলছি। সেলফি নয় কিন্তু আবার। এমন অনেকেই আছে যারা সেলফি কেই সিভিতে বসিয়ে দেয়। খবরদার। এমন ভুল কক্ষনো করা যাবে না। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড নীল বা এখন সাদা করা হয়। পোশাকের বিষয়ে ার কি বলবো। সাবলীল , শালীন পোশাকই যথেষ্ট। তবে সেলফি দেবেন না।
২]নামঃ নামটি বড় অক্ষরে লিখবেন। রঙ না করে কালো রাখাটাই বেশি ভালো। যেকোনো কোম্পানির এইচআর ডিপার্টমেন্ট এর লোকদের কাছে হয়তো সেটা ভাল নাও লাগতে পারে।
৩] ঠিকানাঃ আপনি বর্তমানে যেখানে থাকছেন সেই জায়গার ঠিকানা দিবেন। যে ঠিকানায় আপনাকে পাওয়া যাবেনা সে ঠিকানা দিয়ে কি হবে?? কত গুরুত্বপূর্ণ কাগজ আসতেই পারে। তাই না?
৪] মোবাইল নাম্বারঃ আপনার অনেক গুলো নাম্বার থাকতে পারে। তবে যেই নাম্বার টি সবসময় সচল থাকে তাই দিয়ে দিন। দেখা গেলো আপনাকে হয়তো ফোন করা হলো কিন্তু আপনাকে পাওয়া গেলো না, তাহলে একটা সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে গেলো। দায়ভারটা কিন্তু আপনার।
৫] ইমেইলঃ আপনার ইমেইল আইডি হতে হবে প্রফেশনাল। anglebird@gmail.com বা এজাতীয় উদ্ভট নাম না দিয়ে আপনার নিজের নাম দিয়ে ইমেইল আইডি খুলুন। সাথে দু একটি সংখ্যা ও দিতে পারেন। ধরুন, siyam045@gmail.com অথবা mahbub.eee.aust14@gmail.com এরকম আর কি।
৬] সোশ্যাল মিডিয়ার লিংকঃ সোশ্যাল মিডিয়ার আপনার প্রোফাইল লিংক গুলো সিভিতে সংযুক্ত করতে পারেন। স্কাইপ আইডি ,লিংকডইন, ফেসবুক, টুইটার এগুলোর লিংক এড করতে পারেন। মনে রাখবেন অনেক সময় ইন্টার্ভিউ স্কাইপ এও নেয়া হয়। আর আপনি যে অন্যদের থেকে একটু আলাদা তাও প্রকাশ পাবে এতে। হতে পারে কেউ কেউ এই লিংক গুলো নাও দিতে পারে।এতে একটু হলেও আপনি এগিয়ে রইলেন।
৭] ক্যারিয়ার অবজেক্টিভঃক্যারিয়ার অবজেক্টিভ হবে আপনার কি কি কাজ করার ক্ষমতা। আপনাকে দিয়ে কি হবে? কোম্পানির লাভ কি হবে আপনাকে দিয়ে?? সেটা তিন লাইনে লিখতে পারেন। শুরুটা To work দিয়ে করতে পারেন। তবে I বা Myself এই শব্দ গুলো ব্যবহার না করা ভাল। মনে রাখবেন নিজের দুর্বলতা প্রকাশ পায় এমন শব্দ ইউজ করবেন না। যেমন, seeking, looking for the post এগুলো। আপনি যে চাকরি খুজতে এসেছেন তা সবাই জানে। আপনি কি কি পারেন তা তো জানেনা।
৮]এরিয়া অফ ইন্টারেস্ট ঃ আপনি কি কি এরিয়া তে কাজ করতে পছন্দ করেন সেটা বলবেন এখানে। হতে পারে মার্কেটিং নয়তো ম্যানেজমেন্ট। আপনার ইচ্ছা যেখানে সে সে সেক্টর উল্লেখ করুন।
৯] পারসোনাল ইনফরমেশনঃ আপনার বাবা, মা, বয়স , এনআইডি নাম্বার, পাসপোর্ট থাকলে সেটার নম্বর দিতে পারেন। আপনার তথ্য গুলো এক এক করে দিন।
১০] ওয়ার্কিং এক্সপেরিএন্সঃ এখানে আপনি আপনার বিগত সাল গুলতে কি কি কাজ করেছেন সেগুলো লিখুন। সবার উপরে থাকবে রিসেন্ট যেখানে জব করেছেন সেটি। এভাবে নিচে নিচে পূরণ করতে থাকবেন।
১১] এচিভমেন্টঃ আপনার বিগত বছর গুলোতে কি কি সাফল্য অর্জন করেছেন তা লিখুন।
১২] প্রফেশনাল কোয়ালিফিকেশন ঃ আপনি যে সেক্টরে পড়ছেন সে সেক্টর এর উপর আপনার কোন ট্রেনিং আছে কিনা তা উল্লেখ করুন।
১৩] একাডেমিক কোয়ালিফিকেশন ঃ আপনার একাডেমীক ব্যাকগ্রাউন্ড গুলো লিপিবদ্ধ করুন। রিসেন্ট যে প্রতিষ্ঠানে পড়ছেন সেটি সবার উপরে দিন।
১৪] পার্ট টাইম ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্সঃ ছাত্র জীবনে যদি কোন পার্ট টাইম জব করে থাকেন সেটাও যুক্ত করুন। এতে সিভি হবে সামান্য একটু ভারি আরকি। বস বুঝবে যে আপনি জীবনে কিছু একটা করেছেন।
১৫] ভলা্নটারি ওয়ার্কঃ এমন অনেক সংস্থা আছে যারা ভলান্টিয়ার নেয়। এগুলোতে কাজ করে থাকলে সিভিতে যুক্ত করুন।
১৬] এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিসঃ আপনার জীবনের এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস গুলো এড করুন। যদি কোথাও ডিবেট করে থাকেন তাও বলুন, কোন কন্টেস্ট এ অংশ গ্রহণ করে থাকলেও বলুন।
১৭] ইন্টার্নশিপ ঃ কোন কোম্পানিতে ইন্টার্ন করে থাকলে উল্লেখ করুন। সম্ভাব্য বস জানুক যে আপনি কিছু কাজ শিখেছেন।কোন ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট করে থাকলে বলুন। হ্যাঁ আমি এটা এটা করেছি।
১৮] ল্যাংগুয়েজ স্কিলঃ আপনি কোন কোন ভাষা পারেন তা বলুন। যেহেতু আপনি বাঙালি তাই বাংলা আপনি ভাল পারেন সেটা বলুন আর যদি ইংরেজি কাজ চালিয়ে নেয়ার মতো হলে বলুন working knowledge in English.
১৯] কম্পিউটার স্কিলঃ আপনি যদি এম এস এক্সেলের কাজ, এম এস ওয়ার্ড অথবা পাওয়ার পয়েন্ট এর কাজ পারেন তবে তা বলুন। মনে রাখবেন এই তিন টি কাজ জানা থাকলে আপনি অনেকের থেকেই একটু এগিয়ে আছেন। সেটা আপনি হয়তো নিজেই জানেন না।
২০] রেফারেন্সঃ রেফারেন্স হিসেবে এমন কাউকে দিন যে আপনাকে ভালো ভাবে চিনে। যদি কোন কম্পানি আপনার সম্পর্কে জানতে চাওয়ার জন্য উল্লেখিত ব্যক্তি কে ফোন দেয় আর আপনার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতে পারলো না। তবে ধরে রাখুন আপনার উপর কোম্পানির একটি খারাপ ধারনা হতে পারে।
২১] ডেট এবং সিগনেচার ঃ আপনি যেদিন এপ্লাই করেছেন জবের জন্য সে দিনের তারিখকটি দিন, এবং সিগনেচার অবশ্যই বোধগম্য হতে হবে। একটি সিগনেচার ই সব ক্ষেত্রে ইউজ করবেন। মনে রাখবেন, আপনি মানুষ একজন, তাই আপনার সিগনেচার য় একটাই হওয়া উচিৎ।
এবার একটু রিজিউমে নিয়ে বলা যাক।রিজিউমি মূলত সিভির কিছুটা সংক্ষিপ্ত ভার্সন।এতে শুধু আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কাজের অভিজ্ঞতা অন্তর্ভুক্ত থাকবে, আর কিছু নয়। বিসারিত পড়ুন এখানে।
মনে রাখবেন, আপনি হয়তো কোম্পানির দরজা পর্যন্ত যাবেন না, কিন্তু আপনার সিভি চলে যাবে। তাহলে বলুন, সিভি আপনার জন্য কতো তা গুরুত্বপূর্ণ ???