মানুষ সৃষ্টির আদি জীব। বিদ্যা, বুদ্ধি আর জ্ঞান চর্চায় জয় করে নিয়েছে সে পৃথিবীকে। প্রাণীজগতে মানুষের মস্তিষ্ক বৃহত্তম না হলেও আপেক্ষিকভাবে বৃহত্তরদের মাঝে অন্যতম। আকৃতি অপেক্ষা এখানে বুদ্ধিচর্চা মুখ্য। প্রাণের বিকাশ এবং বিবর্তনকে একটা বিশাল গাছের সাথে তুলনা করা চলে। উদ্ভিদ যেমন সহস্র ডাল- পালা মেলে প্রাণের ধারায় উৎসরিত তেমনি বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতাধর মানুষও তেমনি প্রতিনিয়ত গড়ে চলেছে তার আবিষ্কার।
আবিষ্কারের জগতে ছুটতে ছুটতে মাঝে মাঝে খুঁজে পায় অদ্ভুত সব আশ্চর্য রকম জিনিসের সন্ধান। আজ তেমনই এক খুঁজে পাওয়া আবিষ্কারের খোঁজ জানবো।
দেখতে অবিকল মানুষের মতো, কিন্তু পুতুল আকৃতির। ভাবছেন এ আবার কীভাবে সম্ভব! বিপুলা এই পৃথিবীর কতোটুকুই বা আমরা জানতে পেরেছি। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের প্রতিনিয়ত জানার আগ্রহ থেকেই নিত্য নতুন কিছু বিষয় আমাদের চোখে দৃষ্টিগোচর হয়। আর তা জেনেই স্বাভাবিকভাবেই সকলের মনে কৌতুহল জাগে।আমরা কম বেশি সকলেই জানি বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু গাছের মধ্যে প্রাণের অস্তিত্ব পেয়েছিলেন। কিন্তু এ কথা কেউ কখনও কোথাও বলে যাননি যে প্রাণের অস্তিত্ব সম্পন্ন গাছের শিকড়ও হতে পারে মানুষ সদৃশ।
এটি মূলত: মানুষের ছাঁচে তৈরী একধরনের গাছের শিকড়। অদ্ভুত দেখতে এই শিকড় পাওয়ার যায় চীনের দুর্গম কিছু জায়গায়। চীন দেশে এই শিকড় ফ্লিসফ্লাওয়ার (Fleece Flower) নামেই সর্বাধিক পরিচিত ।
দিনের পর দিন এই শিকড় নিয়ে মানুষের কৌতূহল তুঙ্গে উঠেছে৷ এই গাছের শিকড় যেই দেখে সেই চমকে ওঠে। সকলেই ভাবতে বসেন কীভাবে সম্ভব এমন শিকড়! মানুষের মত দেখতে এই পুতুল শিকড়গুলো কিভাবে মাটির নীচে এলো। এদের জন্মও হলো কিভাবে? এ নিয়ে মানুষের জানার আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
দু’জন চীনা কৃষক তাদের চাষ করা ক্ষেতে তাদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি কিছু খুঁজে পেয়েছিলেন যখন তারা ফ্লিস ফ্লাওয়ারের শিকড় মাটি থেকে তুলেছিলেন। তাদের একজন কং লিংফা যার ভাষ্য মতে ফ্লিস ফ্লাওয়ারের শিকড়টি ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা যা দেখতে বিখ্যাত কার্টুন চরিত্র হোমার সিম্পসনের অনুরূপ। তিনি এই গাছটি এনেছিলেন সেংনংজিয়া পর্বত থেকে। এটি নিয়ে ছবিও আঁকা হয়। ছবিতেই দেখানো হয় হোমার সিম্পসনের সাথে ঐ গাছের শিকড়ের কতো মিল। ভালোভাবে খেয়াল করেই বের করা হয় শিকড়টিতে দু’টো স্ফীত চোখ, বড় একটা নাক, সাথে দু’টো হাতের আদলে তৈরি শিকড় এমনভাবে রয়েছে যেনো দেখলেই মনে হয় হোমার সিম্পসন গভীর চিন্তায় মগ্ন।
এমনটি শুধুমাত্র একবারই ঘটে নি। ইংল্যান্ডের কর্ণওয়াল থেকে আসা ৫৬ বছর বয়সী এক প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার মার্ক ওয়েবস্টার। ২০ বছর তার প্রফেশনাল ফটোগ্রাফির বয়স হলেও তার অনেক আগে থেকেই তিনি শখের বশেই ছবি তুলতেন। তার বিশেষ শখ হল বিভিন্ন অদ্ভুত জিনিসের ছবি ধারণ করা। তিনি বলেছিলেন হোমার সিম্পসনের মত দেখতে গাছটির শিকড়ের ছবি তুলে তিনি খুবই আনন্দিত। সে ছবি খানা তিনি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে কোনো এক এক্সজিবিশানেও দিয়েছিলেন।
এদিকে আবার চীনের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকেরা বের করেছেন এই শিকড়ের ভালো গুণ গুলো। তারপর তাকেই কাজে লাগিয়েছেন মানব কল্যাণে। চীনা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের মতে, মানুষের মতো দেখতে শিকড় থেকে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করা হচ্ছে। এই গাছের শিকড়ের সাহায্যে হাড় ক্ষয়ের মতো রোগ, চুল পড়া ইত্যাদি নানা রোগ প্রতিরোধে ব্যবহার করা হয়। এই মানুষের মতো দেখতে শিকড় থেকেই তাদের আবিষ্কার ওষুধ চুল পড়া প্রতিরোধও খুবই উপকারি। এছাড়া এর গুণাগুণের মধ্যে আরও রয়েছে কিডনী এবং লিভারের নানা রোগের প্রতিষেধক গুণাবলী। বহু বছর ধরেই চীনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই মানুষের মতো দেখতে শিকড় দিয়েই বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ব্যবহার করে আসছে। আজব এই শিকড়ের চাহিদাও রয়েছে প্রচুর৷
ফ্লিস ফ্লাওয়ার মূলত পলিগোনেশিয়া গোত্রের অন্তর্ভুক্ত লতা জাতীয় গাছ। এটি আর্দ্ মাটিতে সমুদ্র উপকূল অথবা পাহাড়ী উপত্যকায় ভালো জন্মে। এর ওষধি গুণাগুণের জন্যেই চীন, জাপান ও মালয়েশিয়াতে চাষ করা হয়ে থাকে। তবে চীনেই গাছটির চাষ বেশি হয়ে থাকে। এই লতানো গাছ মূলত ৪.৫ মিটার উচ্চতায় পর্যন্ত যেতে পারে। গাছটিতে সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরে ফুল আসে। ফুল উভলিঙ্গ হয়ে থাকে। পরাগায়নের মাধ্যমে গাছটিতে ফুল আসে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ৩ থেকে ৪ বছর বয়সী গাছগুলো থেকে শরত ও বসন্ত কালেই মূল সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। তারপর মূলগুলো ভালভাবে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে তাদের নানা ওষুধ তৈরির কাজের জন্য সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।
মানুষের মতো দেখতে বলে এর কদর বিশ্ব জুড়ে৷তবে কিছু কিছু মানুষের এমনতর ধারণার জন্ম নিয়েছে বৈকি, তাহলে কি মাটির তলাতেই থাকত মানুষ! তাদেরই কেউ কি এখনো লুকিয়ে রয়েছে পাতালে৷ সেই বার্তা পাঠাচ্ছে ভূপৃষ্ঠের সেরা বাসিন্দাদের৷ এমনও প্রশ্ন উঠেছে অনেকের মনেই৷ কিন্তু কারও কাছে কোনও উত্তর নেই।
কেনো এমন হয়? অবিকল মানুষের মতো দেখতে শিকড়ের রহস্য সমাধান করে হয়ত মিলবে এমন সব তথ্য, যা দিয়ে লেখা হবে নতুন কিছু। যা মানুষের মনের সমস্ত কৌতুহল দূর করবে। সেই তথ্য খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা। হয়তো মিলতেও পারে সে উত্তর, হয়তোবা থেকে যেতে পারে তা অধরা।