মোবাইল ফোন বা মুঠোফোন। আমাদের প্রতিদিনের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এমনকি এরকম যদি হয় আমরা বাসা থেকে বের হয়ে দেখি যে সাথে মোবাইল ফোন নেই, আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। আচ্ছা, কখনো কি ভেবেছেন, যে জিনিসটি আপনি এত প্রিয় ভেবেছেন, সেটাই আপনার মৃত্যুর কারণ হত পারে? চলুন জানা যাক, সেসব মৃত্যুর ঘটনা যা ঘটেছিল মোবাইল ফোনের কারণে।
১। বেড়ি বাঁধ ও একটি মৃত্যু
রাস্তায় চলতে চলতে বা দোকানে বা লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে স্মার্টফোন চেক করা যদি অপরাধ হয়, তবে আমরা সবাই সে অপরাধে অপরাধী। জোশুয়া বারওয়েল আমাদের মতোই একজন, কিন্তু হয়তো বেশি দুর্ভাগ্যবান। ২০১৫ এর বড়দিন উৎসবের সময়। সান ডিয়েগোর সানসেট ক্লিফ, একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থানে বেড়াতে গিয়েছিলেন জোশুয়া। সূর্যাস্ত দেখার জন্য দারুন এ জায়গাটিতে বহু মানুষ বেড়াতে যায়, একটি সুন্দর ছবি তুলে ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করার জন্য। যত সুন্দর ছবি, তত বেশি লাইক। জোশুয়া নিজের ফোনে এত বেশি ব্যস্ত ছিলেন যে, কোন ফাঁকে বাঁধের কিনারায় চলে গিয়েছিলেন সে খেয়ালই ছিল না। ১৮ মিটার নিচে পড়ে যাবার সাথে একটা তীব্র চিৎকারে সবাই এগিয়ে আসে। জোশুয়া ঘটনাস্থলে নিহত হন।
২। ফোন ট্র্যাকিং এপস যখন মৃত্যুর কারণ
ফোন হারিয়ে গেলে মোবাইল ট্রেকিং এপস খুবই কার্যকর সেটি খুঁজে পেতে। কিন্তু এটা হতে পারে ভয়াবহ মৃতুর কারণ। ফেব্রুয়ারি, ২০১৬। এলাবামার বার্মিংহামের ২৩ বছর বয়সী এক ছেলের আইফোন চুরি হয়ে যায়। তার মনে পড়ে তার ফোন ট্র্যাকিং এপস চালু ছিল। সে দেখে যে তার ফোন তখনো সক্রিয় ও লোকেশন খুঁজে বের করে। সে দ্রুতবেগে সে জায়গার ছুটে যায় ও শহরতলীর এক ব্যাপ্টিস্ট চার্চের পারকিং লটে গিয়ে পৌঁছে। ট্রেকিং এপ ব্যবহার করে সে তার ফোনে কল দেয় ও তার ঠিক সামনের গাড়িতেই রিং টোন বেজে ওঠার শব্দ শুনতে পায়। সে গাড়ির কাছে যাওয়ামাত্রই একজন লোক তাকে গুলি করে ও ছেলেটি মারা যায়। পুলিশ চীফ লিওন ডেভিস বলেন, “যদি আপনার ফোন হারিয়ে যায়, তবে দ্রুত পুলিশকে জানান। নিজে কিছু করতে যাবেন না। এগুলোর পরিণতি অশুভ হতে পারে।”
৩। টেক্সট মেসেজিং ও ড্রাইভিং- কখনোই এক সাথে নয়
আপনার মনে হতেই পারে, গাড়ি ড্রাইভ করা অবস্থায় একটা মেসেজ লিখলে বা পড়লে কী ই বা এরকম ক্ষতি হবে? বিশ্বাস করুন, এতে আপনার জীবন চলে যেতে পারে। যখন আপনি ৯০ কিমি/ ঘন্টা বেগে গাড়ি চালাচ্ছেন, তখন যেকোন কিছুই ঘটে যেতে পারে। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট সকালে ১৯ বছর বয়সী মিসৌরির একজন ্তরুণ প্রতিদিন সকালের মতোই নিজের গাড়ি চালাচ্ছিলেন। হুট করেই তার পিক আপের সাথে সামনে থাকা সেমি ট্রাকের ধাক্কা লেগে গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। পেছন থেকে সজোরে এসে ধাক্কা মারে এক স্কুল বাস। সেই বাসকে ২য় আরেক স্কুল বাস এসে ধাক্কা মারে। পিক আপের চালক, একজন স্কুল শিক্ষার্থী নিহত হয়, আহত হয় ৩৮ জন। তদন্তে জানা যায়, পিক আপের চালক দুর্ঘটনার সময় নিজের ফোন থেকে অন্তত ৫ টি মেসেজ পাঠিয়েছিলেন।
৪। এপল আইফোন ৫ ও একটি মৃত্যু
২০১৩ সাল, চীন। মা আইলুন নামের ২৩ বছরের তরুণী তার এপল আইফোন ৫ চার্জে লাগিয়েই কথা বলছিলেন। এরকম এর আগেও তিনি বহুবার করেছিলেন বলে তার বোন জানিয়েছেন। কিন্তু সেদিন হুট করেই বৈদ্যুতিক শক লাগে, আইলুন মেঝেতে পড়ে যান এবং সাথে সাথে তার মৃত্যু ঘটে। এপলের প্রতিনিধিরা এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন ও দ্রুত তদন্ত শুরু করেন। আইলুন এপলের অরিজিনাল চার্জার ব্যবহার করছিলেন। সেই তদন্তের ফলাফল আর জানা যায় নি।
৫। মোবাইল ফোন বাঁচাতে গিয়ে অগ্নিকান্ডে মৃত্যু
অনেক সময় ঘরে আগুন লাগলে মানুষ বেঁচে গেলেও আবার আগুনে ঝাঁপ দেয় প্রিয় কাউকে বাঁচাতে, হতে পারে তা মানুষ বা পোষা প্রাণী। কিন্তু মোবাইল ফোন? হ্যাঁ, এরকম ঘটনাও আছে। ব্যারটনভিল, ইলনয়েস ওয়েন্ডি রিবোল্ডের বাড়িতে হুট করেই আগুন লেগে গেলে তিনি ও তার মেয়ে নিরাপদে বের হয়ে আসেন। তখনোই তার মনে পড়ে যে তার ফোন ঘরের ভেতরে রয়ে গেছে। দমকল কর্মীদের নিষেধ উপেক্ষা করে তিনি ঘরে ঢুকেন। এবার আর শেষ রক্ষা হয় নি। তিনি মারা যান
৬। সেলফি সাবধান!
কে জানতো স্মার্ট ফোনের ফ্রন্ট ক্যামেরা কারো মৃত্যুর কারণ হতে পারে? এরকম জায়গা এখন বিরল যেখানে আপনি কাউকে সেলফি তুলতে কাউকে দেখবেন না। রুমানিয়ার বুখারেস্টে এনা উরসু (১৮) ছিল সেরকমই একজন সেলফি আসক্ত তরুণী। সে ও তার বান্ধবী সিদ্ধান্ত নিল একটি ট্রেনের বগির উপর উঠে সেলফি তুলবে। যে কথা সেই কাজ। ট্রেনের ছাদে উঠে অসাবধানতাবশত এনা বগির ঠিক উপর দিয়েই যাওয়া বিদ্যুতের তারে স্পর্শ করে।ভাই-ভোল্টেজ তার সাথে সাথে মেয়েটিকে একদম পুড়িয়ে ফেলে।