কোক বা কোকাকোলা ফ্রেঞ্চ কেমিস্ট এঞ্জেলো মারিয়ানির ‘ভিন ম্যারিন’এর মত একটি ড্রিংক, যা পরবর্তীতে দুনিয়া কাঁপানো পানীয় হিসেবে পরিচিতি পায়। বর্তমানে কোকাকোলা বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত সফট ড্রিংক। আসুন জেনে নেই, কোকাকোলার পাঁচটি সিক্রেট ব্যাপার, যা শুনলে হয়ত পিলে চমকে যাবে আপনার। আসুন শুরু করা যাক।
কোকাকোলা ড্রিংস এর শুরু হয় আটলান্টায় পেমবারটন’স ফ্রেঞ্চ ওয়াইন কোকা (Pemberton’s French Wine Coca) নামক একটা অ্যালকোহলিক ড্রিংস হিসেবে, যেটি তৈরী করেছিলেন ড্রাগিস্ট জন স্টিঠ পেমবারটন। এটা তৈরী করা হয়েছিল কোকেইন আর অ্যালকোহলের মিশ্রনে ইউফোরিয়ার (Euphoria) নির্যাস দিয়ে, যার নাম কোকেথিলিন (Cocaethylene)। এটিকে তখন বলা হত “The most wonderful invigorator of sexual organs”। কিন্তু এর ক্ষতিকারক দিক বিবেচনায় এনে ১৮৮৫ সালে এটিকে খোদ আটলান্টাতেই নিষিদ্ধ করা হয়। চালাক পেমবারটন খুব তাড়াতাড়ি এটির ফর্মুলা পাল্টে দিয়ে ওয়াইনের স্থানে সুগার সিরাপ দিয়ে নতুন করে প্রোডাকশন শুরু করে ও ১৮৮৬ সালে নতুন আঙ্গিকে বাজারে ছাড়ে। তখন এটির নাম দেয়া হয়েছিল “Coca-Cola: The temperance drink”। ১৮৮৯ সালে এটির দাম কমিয়ে প্রতি বোতল মাত্র ১ নিকেলে নিয়ে আসা হয়। এত সুলভমূল্যে পাওয়ার দরুন তৎকালীন আফ্রিকান আমেরিকানরা কোকেনের বদলে নেশাদ্রব্য হিসেবে এটি ব্যাপকহারে সেবন করতে থাকে ও সমাজে অপরাধ প্রবণতা বিপদজনকভাবে বাড়তে থাকে। এতে শুধু আফ্রিকান আমেরিকানরা না, সাদা চামড়ার আমেরিকানরাও দারুণ ক্ষতিগ্রস্থের স্বীকার হয়। ফলে কোম্পানি ১৯০৩ সালে কোকেনের ব্যবহার কমিয়ে দিতে শুরু করে।
২. মার্চেন্ডাইজ নং ৫:
১৯২৯ সালে কোকাকোলা সম্পুর্ণরুপে কোকেন মুক্ত হয়। যদিও এখন পর্যন্ত এতে সামান্য পরিমানে কোকা-পাতার নির্যাস দেয়া থাকে। অবশ্য কোকেন সংশ্লেষিত পদার্থ অ্যালকালয়েড ইগোনাইন (Alkaloid Ecgonine) এতে আর দেয়া হয় না। এই কোকা-পাতার নির্যাস দেওয়ার সম্পুর্ণ প্রসেসিং করা হয় নিউ জার্সির স্টেপান (Stepan) নামক একটি কোম্পানির ক্যামিকেল ফ্যাসিলিটিতে। জেনে রাখা জরুরী সমগ্র আমেরিকায় এই মাত্র একটি কোম্পানিই কোকা-পাতার আমদানি ও প্রসেসিং এর লাইসেন্সপ্রাপ্ত। ২০০৩ সালে স্টেপান কোম্পানি কোকাকোলার জন্য ১,৭৫,০০০ (এক লক্ষ পচাত্তুর হাজার) কেজি কোকা-পাতা আমদানি করেছিল, যেটি দিয়ে খুব সহজেই ২০০ মিলিয়ন, অর্থ্যাৎ ২০ কোটি ডলার মূল্যের কোকেন তৈরী করা সম্ভব।
২০০১ সালে কলম্বিয়ান লেবার ইউনিয়ন, সিনাল্ট্রেইনাল (SINALTRAINAL) কোকাকোলা ও কোকাকোলার কলম্বিয়ান বোতল প্রস্তুতকারী পার্টনারদের বিরুদ্ধে ইউএস ডিস্ট্রিকট কোর্টে একটি মামলা দায়ের করে। এজহারে বলা হয়, কোকাকোলা ও কোকাকোলার কলম্বিয়ান বোতল প্রস্তুতকারী পার্টনারেরা লেবার ইউনিয়নের নেতাদের খুন, গুম ও টর্চার করতে প্যারামিলিটারি ডেথ স্কোয়াড ব্যাবহার করছে। কোর্টে এ্টা প্রমানিত হয় যে কোম্পানি ৯ জন ইউনিয়ন মেম্বারদের খুন করতে ইউনাইটেড সেলফ ডিফেন্স ফোর্সেস অফ কলম্বিয়া (AUC) এর কিছু লোক ভাড়া করেছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ২০০৫ সালে কোকা-কোলা কোম্পানির বিরুদ্ধে দাখিলকৃত চার্জ খালাস করে দেয়া হয়। কারন হিসেবে রিপোর্টে দেখানো হয় বোতল প্রস্তুতকারক কোম্পানি কোকা-কোলার নিজস্ব কোন কোম্পানি নয়, বরং একটি আলাদা কোম্পানি ও একইসাথে একটি মেক্সিকান কোম্পানির বিরুদ্ধে চার্জ দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়।
৪. ফান্টাঃ
১৯৩৯ সালে Coca-Cola Deutschland ছিল কোকাকোলার এক নম্বর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান, যারা সারা জার্মানিতে প্রায় ৪৩টি বোতল প্রস্তুতকারক প্ল্যান্ট স্থাপন করেছিল ও রেকর্ড পরিমানে বিক্রি করেছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সাথে সাথে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা ও যাতায়াত ব্যাবস্থার অপ্রতুলতার জন্য কোকা-কোলার প্রোডাকশন বন্ধের সম্মুখীন হয়ে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে কোকা-কোলা কোম্পানির জার্মান অপারেশন হেড ম্যাক্স কেইথ, তখন জার্মানিতে যেসব উপকরন পাওয়া যেত, তাই দিয়েই নতুন এক পানীয়ের প্রোডাকশন শুরু করেন। উপকরণের ভেতরে ছিল ঘোল ও পমেচ (খাবার পরে আপেলের যে তন্তুল অবশিষ্টাংশ থাকে)। নতুন এই পানীয়ের নাম দেয়া হয় Fanta, জার্মান ভাষায় যার মানে ফ্যান্টাসি বা কল্পনা। গুঁজব রটে নাজি বাহিনী এই অপারেশনের সাথে যুক্ত, যদিও কোন অফিশিয়াল ঘোষণা পাওয়া যায় নি। যুদ্ধাবস্থায় আবিষ্কৃত এই নতুন পানীয় ও লভ্যাংশ যুদ্ধ শেষে কোকা-কোলা কোম্পানিকে বুঝিয়ে দেয়া হয়।
অতিরিক্ত কোকাকোলা পান করার কারনে ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডে ৩১ বছর বয়সী নাতাসা হ্যারিসের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর রিপোর্টে কোকাকোলার বিরুদ্ধে লেখা হয়েছিল, “A substantial factor in her death… …” অর্থাৎ “তার মৃত্যুর জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কারন… …”। নাতাসা দিনে প্রায় ২.৬ গ্যালন বা প্রায় ১০ লিটার কোকা-কোলা পান করত যাতে সে দৈনিক প্রায় এক কেজির মত সুগার ও এক গ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহন করত। ফলে কার্ডিয়াক অ্যারিথমিয়াতে আক্রান্ত হয়ে নাতাসা মারা যায়। পরিবারের লোকজন জানায় সে কোকাকোলার প্রতি এতই আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিল যে প্রায় নেশার মত কোক পান করত। আর যদি কোন সময় হাতের কাছে কোকাকোলা না পেত তখন পাগলের মত হয়ে যেত। এতে করে তার লিভার বড় হয়ে গিয়েছিল ও রক্তে পটাসিয়ামের মাত্রা মারাত্মকভাবে কমে গিয়েছিল। ফলে তার কার্ডিয়াক ফাংশন ব্যাহত হয়েছিল। এই ঘটনার পরেও কোকাকোলা নির্লজ্জের মত দাবি করে যে তাদের প্রোডাক্ট যথেষ্ট নিরাপদ। তারা এমনও দাবি করে যে, শব-পরিক্ষক শুধু নাতাসার কোকাকোলা পানের উপরেই জোর দিয়ে ভুলে ভর্তি রিপোর্ট লিখেছেন।
লেখাটি যদি আপনার ভাল লেগে থাকে, তবে শেয়ার করুন, অন্যদেরও পড়তে উৎসাহিত করুন। কমেন্টে আপনার মুল্যবান মতামত দিন। আপনাদের প্রতিটি শেয়ার, প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নতুন লেখার প্রেরনা জোগায়।
সর্বদা নতুন নতুন কিছু জানতে বাংলাহাবের সাথেই থাকুন। আর বাংলাহাবের সকল আপডেট সবার আগে পেতে লাইক দিয়ে রাখুন বাংলাহাবের ফেইসবুক পেইজঃ বাংলাহাব – এবার পুরো পৃথিবী বাংলায়