জিরাপানিঃ গরমে শরীরে দেবে প্রশান্তি!

জিরাপানি (ছবি সংগৃহীত)

সফট ড্রিংকস হিসেবে জিরাপানি আমার বেশ ভাল লাগে। বোতলজাত জিরাপানি খেতে একটু বেশি স্বাদ হলেও স্বাস্থ্যের জন্য কিছুটা ক্ষতিকর। ঘরে বানিয়ে নিলে সে ভয় থাকে না আর বিভিন্ন ধরনেরও ফ্লেভারও পাওয়া যায়।

উপকরণঃ

১। পানি
২। জিরা গুড়া
৩। গুড় (পাটালি অথবা আখের)
৪। তেতুল
৫। লেবু
৬। লবন
৭। বিট লবণ
৮। কাঁচা মরিচ (ঐচ্ছিক)
৯। ধনে পাতা (ঐচ্ছিক)
১০। পুদিনা পাতা (ঐচ্ছিক)
১১। রুহ আফজা (ঐচ্ছিক)

প্রক্রিয়াঃ

১. প্রথমেই জিরার গুড়ার প্রসঙ্গে বলি। প্যাকেটজাত জিরাগুড়া ব্যবহার না করে বাজার থেকে জিরা কিনে ওভেনে অথবা চুলায় ভালভাবে গরম করে নিন। এরপর ব্লেন্ডার অথবা শিলপাটায় বেটে গুড়ো করে নিন। এভাবে করে নিলে জিরার ভাল ফ্লেভার পাওয়া যাবে।

২. দ্বিতীয়ত গুড়ের কথা বলতে হয়। বাজারে গুড় পাওয়া কঠিন। খেজুরের গুড় অথবা আখের গুড় দিয়ে জিরাপানি তৈরির আগে এক গ্লাস পানিতে কত চামচ গুড় দিলে আপনার মুখে মিষ্টি লাগে সেটা পরখ করে নিন। জিরাপানি তৈরি সময় পানিতে ঐ পরিমানে গুড় দেবেন।

৩. তেতুলের টক তৈরি করতে হবে। একগ্লাস পানিতে তেঁতুল গুলে নিন। বাজারের পাওয়া তেতুলগুলোতে অনেক সময় কালো পোকা থাকে। খেয়াল রাখবেন। আর গাছের তেতুল হলে একগ্লাস পানিতে দুই থেকে তিন ছড়া তেতুল ভিজিয়ে রেখে টক তৈরি করে নিন।

৪. ধরাযাক, ৬ গ্লাস জিরাপানি বানাতে চাই। যারা একটু স্পাইসি করতে চান তারা প্রথমে একটি কাঁচা মরিচ লম্বালম্বিভাবে কেটে দুইভাগ করে একভাগের বিচি ফেলে দিন। তারপর ব্লেন্ডারে অল্প একটু পানি দিয়ে ঐ একভাগ ব্লেন্ড করে করে নিন। তারপর ৫ গ্লাস পানি নিন ব্লেন্ডারে।

৫. যারা ঝাল কম পছন্দ করেন তারা সরাসরি ৬ গ্লাসের জন্য পরিমানমত গুড় ব্লেন্ডারের জগে নিন। তারপর ৫ গ্লাস পানি ঢালুন। এরপর তেতুলের টক ঢেলে নিন। অল্প বিট লবণ দিন। ১/২ বা ১/৩ চা-চামচ লবণ নিন।

৬। এই মিশ্রণকে ভালভাবে ব্লেন্ড করুন। ৩০-৪০ সেকেন্ড ব্লেন্ড করতে হতে পারে।

৭। এরপর দেড়-দুই লিটারের বোতলে ঢেলে নিয়ে ফ্রীজে রেখে দিন ঠান্ডা হবার জন্য।

পরিবেশনঃ

পরিবেশনের আগে আরেকটু পরীক্ষা করার দরকার আছে। ঠান্ডা হয়ে গেলে ফ্রীজে রাখা বোতলটি ঝাকিয়ে নিয়ে গ্লাসে ঢালুন। এরপর আধা চা-চামচ জিরাগুড়ো গুলে নিন। যদি তিতকুটে লাগে তাহলে কম ঢালবেন পরবর্তীতে আর যদি কম জিরার স্বাদ কম মনে হয় তাহলে আরেকটু বেশি করে ঢালবেন।

জিরাগুলে একটু লেবু চিপে দিতে পারেন। পুদিনা পাতা ডুবিয়ে দিতে পারেন চাইলে। হয়ে গেলে সাথে সাথে পরিবেশণ করুন। জিরাগুলার পর যত তাড়াতাড়ি পান করা হবে তত ভাল লাগবে খেতে।

টিপসঃ

১। গুড় যদি সাদা সাদা হয় তাহলে কালার আনতে দুই-তিন চা-চামচ রুহ আফজা দিতে পারেন।

২। কাচা মরিচের জায়গায় গোল মরিচের গুড়াও দিতে পারেন। পরিমানে খুবই সামান্য দিবেন।

৩। বাজারের জিরাপানির মত করতে চাইলে প্রতি ৩ গ্লাস পানির জন্য ১ গ্লাস সেভেন আপ যোগ করতে পারেন।

৪। ধনেপাতা, পুদিনা পাতা ইত্যাদি ব্লেন্ড করে রাখা যায় আগেই পানির সাথে। কিন্তু ধীরে ধীরে ফ্লেভার কমে যায়। কাজেই পরিবেশনের সময় দিলে টাটকা ফ্লেভারটা পাওয়া যাবে।

সতর্কতাঃ

১। গুড় যদি বেশি শক্ত হয় তাহলে সরাসরি ব্লেন্ডারে না দিয়ে গুলিয়ে নিলে ভাল হবে।

২। বিট লবন ভালভাবে গুড়ো করে নিতে হবে। নাহলে ব্লেন্ডারের ব্লেড ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।

৩। জিরাপানি বানানোর পর যদি বোতলে না ঢেলে জগসহ ফ্রীজে রেখে দেন তাহলে জগের গায়ে দাগ পড়ে যেতে পারে।

জিরাপানির উপকারীতাঃ

গরমের সময় জিরাপানিতে থাকা গুড় শরীরকে ঠান্ডা করবে। তেতুল পেট করবে পরিষ্কার। জিরা আয়রণের ঘাটতি কমাবে, ত্বক রাখবে সতেজ। এছাড়াও এসিডিটি, বমিবমিভাব দূর করতে জিরাপানি কাজ করবে।

কেমন লাগল জানাতে ভুলবেন না কিন্তু! 🙂