সকল বিলুপ্ত হোমিনিড প্রজাতির মধ্যে খুব সম্ভবত, নিয়ান্ডারথালরাই সবচেয়ে বেশি চিত্তাকর্ষক ও তাদের নিয়েই সবচেয়ে বেশি গবেষণা হয়েছে। তাদের এমন কিছু বিষয় ছিল যা তাদের প্রতি আমাদের আগ্রহকে ধরে রেখেছে এবং কৌতুহলকে জাগ্রত রেখেছে। মনুষ্য প্রজাতির নিকট এই আত্মীয় সম্পর্কে বিগত দশ বছরে এমন সব যুগান্তকারী তথ্য উদঘাটিত হয়েছে যে তাদেরকে দেখার আমাদের যে দৃষ্টিভঙ্গি তাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। বিজ্ঞানীরা ভাবতেন আধুনিক মানুষ আর নিয়ান্ডারথালদের মধ্যে কোন রকম প্রজননগত কোন সম্পর্ক ছিল না। ধন্যবাদ সেই সব মেধাবী গবেষকদের যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আজ আমরা জানি, এই দুই প্রজাতির অস্তিত্ব একই সময়ে বিদ্যমান ছিল এবং তারা পরষ্পর পরষ্পরের সংষ্পর্শে এসেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় জন্ম হয়েছিল চতুর এবং জ্ঞানদ্বীপ্ত সন্তান-সন্ততির।
১। তাদের হার্পিজ রোগ ছিল
জেনিটল হার্পিজ হল হার্পিজ সিমপ্লেক্স-১ এবং হার্পিজ সিমপ্লেক্স-২ টাইপ ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট এক ধরণের চর্ম রোগ যা প্রজনন অঙ্গের সংসঙ্গের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ বছর থেকে ৪৯ বছর বয়সী প্রতি ছয় জনে ১ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকে। অপরদিকে প্রচলিত বিশ্বাস হল, এটি কোন আধুনিক রোগ নয়। বরং এটি প্রাচীন রোগ যেটির ফলে মানবজাতি হাজার বছর ধরে জর্জরিত। নতুন গবেষনা জানায় যে নিয়ান্ডারথালরাও এই রোগে ভুগে থাকতে পারে এবং এটি তাদেরকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিয়ে থাকতে পারে।
সাইমন আন্ডারগ্রাউন ও সারলোট হোল্ডক্রফট যথাক্রমে অক্সফোর্ড ব্রোকস ইউনিভার্সিটি এবং ক্যামব্রীজ ইউনিভার্সিটির গবেষকদ্বয় প্যাথোজেন জিনোম ও ডি এন এ বিশ্লেষণ করে এই সিদ্বান্তে উপনীত হয়েছেন যে , নিয়ান্ডারথালরা জেনিটল হার্পিজ রোগে ভুগতেন। সেই সাথে এটিও বলেছেন, আধুনিক মানুষরাই এই মরণ রোগ তাদের দিয়ে ছিল।
১০০ হাজার বছর আগে আধুনিক মানুষ এবং নিয়ান্ডারথালরা মিথষ্ক্রিয়া শুরু করেছিল এবং প্রজনন সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। যার ফলে আমরা বর্তমানে শতকরা ২ থেকে ৫ ভাগ নিয়ান্ডারথালস ডি এন এ বহন করে বেড়াচ্ছি। জেনিটল হার্পিজ ছাড়াও আধুনিক মানুষ নিয়ান্ডারথালদের ফিতাকৃমি এবং পেটের পীড়া আলসারও দিয়েছিল।
২। বড় বড় চোখ তাদের বিলুপ্তির দিকে চালিত করেছিল
নিয়ানডারথালদের চোখ আধুনিক মানুষদের চেয়ে অনেক বড় ছিল। এই সত্যটির হাত ধরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলুন্ড পিয়ার্স বলেছেন, এই বৃহদায়তনের চোখ তাদের মরণের একটি কারণ হয়ে থাকতে পারে। পিয়ার্স বিশ্বাস করেন, বৃহৎ চোখের গঠনের ফলে তাদের মস্তিষ্কের একটি বিশাল অংশ শুধুমাত্র দেখা এবং শরীর নিয়ন্ত্রনের কাজে নিযুক্ত ছিল। অনান্য কাজ যেমন সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার কমই ছিল।
আমাদের এই বিলুপ্ত জ্ঞাতি যখন কোন সমস্যার যেমন জলবায়ু পরিবর্তন এবং সমসাময়িকদের সাথে প্রতিদ্বন্দীতামুলক কোন কিছুর সম্মুখীন হয়েছিল, সেক্ষেত্রে তারা খুবই অনগ্রসর ছিল। ধরে নেওয়া হলে, নিয়ান্ডারথাল জটিল সমাজ গঠণের সামর্থ্য অর্জন করে ছিল, তারা হয়তো আকস্মিক বিপর্যয় মোকাবেলা করতে পারতো। যেটি না থাকার কারণে তারা বিলুপ্ত পথে চলে গিয়েছিল।
সকল বিজ্ঞানী পিয়ার্সের থিউরির সাথে একমত হতে পারেননি এবং বিরুদ্ধ মতামত দিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াইজকনসন ম্যাডিসনের জন হ্যাকস তাঁর সহকারী নিয়ে ১৮টি জীবন্ত প্রাইমেটের উপর পরীক্ষা করে এবং উদঘাটন করে যে ” বড় বড় চোখ বড় সামাজিক দলের দিকে ইঙ্গিত প্রদান করে থাকে”। তিনি দৃঢভাবে বলেন চোখের আকৃতির সাথে সামাজিক যোগাযোগের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। উপরন্তু, তিনি বিশ্বাস করেন নিয়ান্ডারথালরা আমাদের প্রাচীন পূর্বপুরুষদের চাইতে একটু বৃহৎ আকৃতির ছিল এবং শরীর অনুপাতে তাই চোখও বড় হওয়া দরকার ছিল।
৩। তারা তৃণভোজী ছিল এবং তাদের ভাল মানের দাঁত ছিল
বিজ্ঞানীরা তাদের দাঁতের বদৌলতে তাদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে সক্ষম হন। বিশেষজ্ঞরা চিন্তা করতেন তারা প্রধানত মাংস খাদক ছিল। নতুন বিশ্লেষণে বেরিয়ে আসে যে তারা তরু লতা, গুল্ম খেয়ে থাকতো এবং ঔষধি জাতীয় গাছ-গাছড়া যেমনঃ ক্যামোমিল, ইয়েরো(উগ্রগন্ধের ফুল বিশেষ)ইত্যাদি খেয়ে নিজেদের চিকিৎসা করতো। যেখানে ক্যামোমিল পেটের পীড়াজনিত রোগের জন্য ঔষধি হিসেবে এবং ইয়েরো দাঁতের ব্যাথা উপশমকারী হিসেবে পরিচিত। এই আবিষ্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে , এটি মাধ্যমে জানা যায় নিয়ান্ডারথালরা তাদের পরিবেশ সম্পর্কে জানতো। তারা ধারণা তুলনায় অনেক বেশি জ্ঞানী ও বুদ্ধিদীপ্ত ছিল।
সম্প্রতি গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন যে, সে সমসাময়িক অনান্যদের তুলনায় তারা অনেক বেশি স্বাস্থ্য সম্মত দাঁতের অধিকারীও ছিল। একটি গবেষণায় ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক টিম ওয়েবার এবং ক্যাসেন্ড্রা গিল্মুর আধুনিক মানুষ, নিয়ান ডারথাল এবং অনান্য প্রাইমেট(বেবুন, ওরাংটন, শিমপাঞ্জি)দের দাঁতের তুলনামূলক বিচার করে দেখেন যে, সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে আধুনিক মানুষের দাঁত আর সবচেয়ে ভাল অবস্থানে আছে নিয়ান্ডারথাল। তাদের দাঁতে ক্যাভিটি যেমন কম ছিল, তেমনি দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বিদ্যমান ছিল।
৪। তারা টুথপিকের ব্যবহার জানতো
বিজ্ঞানীরা উদঘাটন করেছেন যে তারা জানতো কিভাবে টুথ পিক ব্যবহার করে দাঁত পরিষ্কার করতে হয়। স্পেনের সিড্রন গুহায় তেরটি নিয়ান্ডারথাল কঙ্কাল আবিষ্কারের পর ধারাবাহিকভাবে এই তথ্য সামনে আসে। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের প্রত্নতত্ত্ববিদ আনিতা রাধিনি এবং তার দল ঐ কঙ্কাল সমূহ পরীক্ষা করেন এবং তাদের কিছু দাঁতের (জীবাশ্ম ফলক) ভেতর আটকে থাকা মোচাকৃতি জাতীয় গাছের সন্ধান পান। যার মাধ্যমে এই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায় যে তারা দাঁত পরিষ্কার করতে এবং মাড়ির ব্যাথা উপশমে গাছের বাকল ব্যবহার করতো। সেই সাথে বলা যেতে পারে তারা দাঁতকে গাছের তৈরী কোন সরঞ্জাম ধরার ক্ষেত্রে ” তৃতীয় হাত” হিসেবে ব্যবহার করতো।
এই উদঘাটিত তথ্য সমূহ অনেক বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করতে পারেনি। কেননা পূর্বের কিছু গবেষণায় পাওয়া যায় যে তারা জানতো কিভাবে গাছ দিয়ে চারপাশে গ্যারাজের মত ঘেরা তৈরী করে, অগ্নিকুন্ড, বর্শাও তৈরী করতে জানতো।
৫। তারা আমাদের হৃদরোগ, নিকোটিন আসক্তি, হতাশা দিয়ে গেছে
আজ শারীরিক সে সমস্যা গুলোতে আমাদের সমাজে জর্জরিত তা হলো হতাশা, আসক্তি হৃদরোগ ইত্যাদি। যদিও এই শারীরিক সমস্যা সমূহ আধুনিক সময়ে এসে সমানে আসছে বেশি। তথাপি ভেন্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি এবং ওয়াসিংটন ইউনিভার্সিটি কর্তৃক পরিচালিত নতুন এক গবেষণা বলছে এই সব রোগ উৎপত্তিগতভাবে নিয়ান্ডারথালদের কাছে থেকে আসতে পারে।
গবেষক জসোয়া অ্যাকেই বলেন আমরা আমাদের এই সব অসুস্থতার জন্য তাদের হালকাভাবে দায় দিতে পারি । তবে পুরোপুরীভাবে দায়ী করতে পারি না। গবেষক অ্যাকেই এবং জন ক্যাপরা ২৮০০০হাজার মানুষের জিন ও মেডিকেল উপাত্ত পরীক্ষা করার পর এই তথ্য দেন। এর মাধ্যমে গবেষকদ্বয় পরীক্ষণপাত্রের শারীরিক অবস্থা জানতে যেমন সমর্থ্য হন । তেমনি বংশানুক্রমে কোন জিন গুলো নিয়ানডারথাল থেকে এসেছে সেটিও চিহ্নিত করতে সমর্থ্য হন। সেই সাথে এটি প্রমাণিত হয় যে নিয়ান্ডারথাল ডিএনএ(DNA)এর উপস্থিতি উল্লেখিত অসুস্থতার হারকে কিছুটা বাড়িয়ে দেয় বটে।
৬। তারা আমাদের দিয়েছে “ডায়াবেটিস”
হার্ভার্ডের প্রজনন শাস্ত্রবিদ ডেভিড আল্টসালার ও তার সহকর্মীরা বলেন ডায়াবেটিস এর পরিব্যক্তি নিয়ান্ডারথাল থেকে পেয়ে থাকতে পারে। এটি উদঘাটিত হয়ে ছিল Max Planck Institute for Evolutionary Anthropology পরিচালিত ফসিলের হতে প্রাপ্ত ডিএনএ ক্রম গবেষণার কয়েক বছর পর। গবেষকগণ নির্দেশ করেন, তাদের তথ্য গুলো এটি প্রমাণ করে না যে আমাদের বিলুপ্ত জ্ঞাতিদের ডায়াবেটিস ছিল। শুধুমাত্র এটি বুঝায় যে ল্যাটিন ও এশিয়ান শরীরে যে টাইপ-২ ডায়াবেটিস পাওয়া যায় তার জন্য দায়ী যে মিউট্যাশন সেটি নিয়ান্ডারথাল ভেতরে থেকে থাকতে পারে।
তাঁরা মেক্সিকো ও ল্যাটিন আমেরিকার আট হাজার বাসিন্দার ডিএনএ পরীক্ষা করে এই তথ্য দেয়। যারা সকলে নেটিভ আমেরিকান ও ইউরোপিয়ান বংশধর ছিল।
যদিও আধুনিক সময়ে ডায়াবেটিস এবং নিয়ান্ডারথালের সম্পর্কের বিষয়টি আকর্ষণীয়। গবেষকগণ জোর দিয়ে বলেছেন যে তাঁদের এই কাজের যে নির্যাস তার মাধ্যমে চিকিৎসার নতুন দ্বার খুলতে পারে। যেটির মাধ্যমে বিশ্বের স্বাস্থ্য সমস্যা দূর হতে পারে।
৭। তাদের অধিকাংশই ডান-হাতি ছিলেন
পৃথিবীতে বাম-হাতির চেয়ে ডান-হাতির সংখ্যা অতি মাত্রায় বেশি। যার শতকরা হার ৭০ থেকে ৯৫ ভাগ। গবেষণায় দেখা যায় যে নিয়ান্ডারথালরাও প্রধানত হয়তো ডান-হাতি ছিল। ১৯৫৭ সালে ফ্রান্সে “রিগৌডউ” নামক নিয়ান্ডারথালের একটি কঙ্কাল পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন সেটি ডান-হাতি ছিল কেননা ডান দিকটা বেশি পেশিবহুল পাওয়া যায়। সে সময় এমন কোন পদ্ধতি ছিল না যে যার সাহায্যে এটি প্রমাণ করা যেতো যে অনুমানটা সত্য।
২০১২ সালে গবেষকের একটি দল হাতের এই রহস্য উম্মোচনের জন্য নতুন একটি পন্থা নিয়ে হাজির হয়। ক্যান্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভিড ফ্রেয়ারের নেতৃত্বে বিজ্ঞানীরা ঐ কংকালের কাঁধ, বাহুর উপর একটি জটিল বিশ্লেষণ চালান এবং তার ফলাফলকে দাঁতে থাকা চিহ্ন সমূহের সাথে মিলিয়ে দেখেন। দেখা যায় যে প্রায় সব দাঁতে ডান হাতি ধরণের চিহ্ন রয়েছে। যেটি ইঙ্গিত করে যে “রিগৌডউ” ডান-হাতি ছিলেন। এতে প্রমাণ হয় যে অধিকাংশ নিয়ান্ডারথাল ডান-হাতি ছিল এবং ভাষার সামর্থ্যও তাদের ছিল।
৮। তারা মৃতদের সমাহিত করতো
প্রায় সময় তাদের পশুতুল্য, নির্বোধ, বন্য ভাবে ভাবা হয়। কিন্তু নতুন উম্মোচিত তথ্য হল তারা সে ভাবনার উর্দ্ধে অর্থাৎ বুদ্ধিমান ও বোধ সম্পন্ন ছিল। একটি গবেষণার মূল গবেষক উইলিয়াম রেন্ডো জানান ” এই আবিষ্কার তাদের সমাধির অস্তিত্বের বিষয়টি যেমন নিশ্চিত করে। সেই সাথে তারা যে সুক্ষ্ম বোধের অধিকারী ছিল সেটিও সামনে নিয়ে আসে”। তিনি আরো বলেন, নিয়ান্ডারথালদের এই সমাধির বিষয়টি আধুনিক মানুষ ইউরোপে পৌঁছানোর অনেক অনেক আগের ঘটনা।
১৯০৮ সালে ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তাদের কয়েকটি হাঁড় উদঘাটন করা হয়। যেগুলো এমন ভাবে সংরক্ষিত অবস্থায় ছিল যে , বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছেন এগুলো পরিকল্পিত বা ইচ্ছাকৃত ভাবেই সমাহিত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তপ্ত বিতর্ক তৈরী হয় । অপর বিশেষজ্ঞরা এটা মানতে নারাজ যে সমাধির ব্যাপারটি ইচ্ছাকৃত ছিল। তাদের মতে এটি ভুল ব্যাখ্যা ছাড়া কিছুই নয়।
১৯৯৯ সালে উইলিয়াম রেন্ডো ও তাঁর দল ঐ একই এলাকায় আরো সাতটি গুহা খনন করেন। তারা সেখানে দুটি শিশু ও একটি প্রাপ্ত বয়ষ্ক নিয়ান্ডারথাল কঙ্কালের পাশাপাশি হরিণ ও বন্য ষাঁড়ের কঙ্কালও আবিষ্কার করেন। গবেষকরা যেখানে কংকাল্গুলো পাওয়া যায় সেখানে বিষন্নতা বিশ্লেষণ করেন এবং অনুধাবন করেন যে গুহা তলটার(মেজে) বৈশিষ্ট্য প্রাকৃতিক ছিল না। যেটি ইঙ্গিত করে যে এটি খুড়া হয়েছিল অর্থাৎ পুরো বিষয়টি ইচ্ছাকৃত ছিল। তারা আরো যোগ করে বলেন কংকাল গুলোর আদি অকৃতিম অবস্থান এটিই ইঙ্গিত করে যে তাদেরকে মৃত্যুর সাথে সাথে কবর দেওয়া হয়েছিল।
৯। তারা আবার ফিরে আসবে
নিয়ান্ডারথালরা হাজার বছরের বিলুপ্ত হলেও আদূর ভবিষ্যতে তারা আবার ফিরে আসতে পারে এবং আমাদের সাথে সহ অবস্থান করতে পারে। প্রগতিবাদী এই ধারণা শুনতে বাতিকগ্রস্থ মনে হলেও ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে এটি সম্ভব। বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে গরু,শূকর,বিড়াল,ইদুর জাতীয় প্রজাতির ক্লোনিং করতে সক্ষম হয়েছেন। ২০০৩ সালে “পাইরিয়েন আইবেক্স” বিলুপ্ত এক ধরণের পর্বত অঞ্চলের বন্য ছাগলের ক্লোনিং তৈরী করে কৃতিত্বের স্মারক অর্জন করেন। দুর্ভাগ্যক্রমে সেটি ক্লোনিংয়ের কয়েক মিনিট পরে মারা যায়।
প্রাথমিকভাবে বিজ্ঞানীরা যে পদ্ধতিতে ক্লোনিং করতো সেটিকে বলা হয় “নিউক্লিয়ার ট্রান্সফার” এবং যে প্রাণীর ক্লোনিং করা হতো তার অক্ষত, তরতাজা কোষ (সেল) প্রয়োজন হতো। নিয়ান্ডারথাল দের ক্ষেত্রে যেহেতু সেই রকম কোষ পাওয়া সম্ভব না । সেহেতু কাজটি ৪০০০০হাজার বছর পুরুনো হাঁড় থেকে নির্যাস বের করে তাদের জিনকে উদ্ধার করতে হবে।
২০১২ সালে হার্ভাডের জর্জ চার্চ এমন একটি পদ্ধতির কথা বলেন যেখানে ক্লোনিংয়ের জন্য কোন তাজা সেলের প্রয়োজন হবে না। তিনি তার ” রিযেনিসিস” বইয়ে প্রস্তাব করেন যে এই কাজটি নিকট অন্য প্রজাতির স্বাস্থ্যবান সেল থেকেও সম্ভব। সেক্ষেত্রে নিয়ান্ডারথাল ক্লোনিং এ যে সেল দরকার হবে সেটি আধুনিক মানুষ থেকে পাওয়া যেতে পারে। একবার পাওয়া গেলে বিজ্ঞনীরা প্রজনতত্ত্বের সাহায্যে সেটির ডিএনএ কে নিয়ান্ডারথালদের জিন কোডের সাথে মিলিয়ে ক্লোনিং শুরু করতে পারে। যদিও নিয়ান্ডারথালদের পুনরুত্থান সম্ভব কিন্তু সেটি আগামী দশকে বা তার পরের সময়ে হয়তো হবে না। কেননা পুরো প্রক্রিয়াটি খুবই বিপদ জনক, ব্যয়বহুল এবং শ্রমসাধ্য।
১০। তারা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে জোরদার করেছে
অতি সম্প্রতি জানুয়ারী ২০১৬, Max Planck Institute for Evolutionary Anthropology এবং Institute Pasteur এর গবেষকগণ দুটি পৃথক গবেষণাকর্ম প্রকাশ করে। যেখানে উঠে আসে যে নিয়ান্ডারথালদের সাথে আধুনিক মানুষের প্রজনন সম্পর্কের ফলে আধুনিক মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। যখন আমাদের প্রাচীন পূর্বপুরূষরা আফ্রিকা থেকে ইউরোপে স্থানান্তরিত হয়েছিল, সেই সময় উভয়ই উভয়ের সাথে সংস্পর্শে এসেছিল। এর ফলে মানুষ-নিয়ান্ডারথাল মিলনে সংক্রমণ প্রতিরোধক হাইব্রীড জিন তৈরী হয়েছিল। এতে করে মাতা-পিতার চেয়ে তাদের সন্তানরা বেশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে।
গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে নিয়ান্ডারথাল ছাড়াও আধুনিক মানুষ ডেনিসোভানদের সাথেও মিলিত হয়েছিল। বিলুপ্ত এই ডেনিসোভানরাও হোমোনিড দলের অন্তরভুক্ত মানব শ্রেণীর প্রজাতি।
দুর্ভাগ্যক্রমে খুব কমই তাদের সম্পর্কে জানে। বিজ্ঞানীরা প্রথম তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পারে দক্ষিণ সার্ভিয়ার আলটাই মাউন্টটেইনের ডেনিসোভা গুহায় প্রাপ্ত একটি আঙ্গুলের হাড় এবং দুটি চর্বণদন্ত(দাঁত)খুজে পাওয়ার পর। নিয়ান্ডারথাল এবং ডেনিসোভনরা উৎসগতভাবে একই হলেও জিনগতভাবে তারা স্বতন্ত্র ছিল।
বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন আধুনিক মানুষের এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জনের পিছনে ডেনিসোভানদের সংস্পর্শও অবদান রেখেছে এবং আমাদের কেউ কেউ এলার্জি প্রবনও হয়েছে।
লেখিকা সম্পর্কেঃ এ্যানি মাসুদ। ভাল লাগে লেখালেখি, বই পড়া,কবিতা লেখা। এছাড়া নতুন এবং সিম্পল রান্না শিখতে এবং খাওয়াতে পছন্দ করি। ইউ এস এ বাংলা পত্রিকা “ঠিকানা”য় মুক্তাঙ্গনে নিয়মিত লিখা হয়। তাছাড়া অনলাইনে লেখালেখির সাথে জড়িত বছর খানেক ধরে। পরিবারকে সময় দিতে ভালোবাসি। কাজ করি কিন্তু চাকরি করি না।