পৃথিবীতে বৈচিত্র্যের শেষ নেই। এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ভিন্নতা। তিন কোটি দুই লক্ষাধিক বর্গকিলোমিটারের আয়তনে আফ্রিকাও তেমনি বিস্ময়ের অপর নাম।বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় এবং বর্ণমালার আবিষ্কারক এই মহাদেশকে বলা হয় সভ্যতার জননী। যাদের হাত ধরে সভ্যতার যাত্রা শুরু তাদের নিয়ে পৃথিবীর অন্য সবার কতই না বিস্ময়?!! এর মূল কারণ হয়তো তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে আফ্রিকাবাসীর কারও কারও ভিন্নধর্মী জীবনব্যবস্থা। মুরগি, ছাগল, গরু, কুকুরের বিনিময়ে বিয়েপ্রথা, নিজের ঠোঁট কেটে, দাঁত ভেঙে সুন্দরী হওয়ার প্রচেষ্টাই বা কম কিসে বিস্ময় জাগাতে?!! অনেকে জীবনে একবার মাত্র গোসল করে। বছরজুড়ে থাকে স্বল্পবসনে। আছে পৃথিবীর সেরা হিংস্র প্রাণীর বসবাস। এসবই জানতে আজকের এই আয়োজন।
১ঃ ৩৫ মোরগ ছাড়া হয় না বিয়ে
আফ্রিকার কঙ্গোতে লেম্বা উপজাতির বিয়েতে বৌয়ের মূল্য ধরা হয় ৮টা তামার ক্রশ, ৩৫টা মোরগ এবং ৪টা কুকুর। এই দেশের বান্ডা গোত্রের মেয়েরা একটি কাঁচা আস্ত মুরগির বাচ্চা খেয়ে বিয়ের যোগ্যতা দেখায়। সঠিক রীতি অনুযায়ী খেলে বিয়ের যোগ্য বলে গণ্য হয়। পরবর্তী এক বছর সেই কনেকে পরিবার অতি আদর যত্নে রাখে। ইথিওপিয়ায় কোনো মেয়েকে পছন্দ হলে প্রপোজ নয়, তুলে নিয়ে বিয়ে।
সেখানে প্রায় ৬৯ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় এভাবেই। রুয়ান্ডাতে ওয়াটুসি গোত্রের বিয়েতে বর-কনে সবার উপস্থিতিতে মুখোমুখি দাঁড়ায়। বর-কনে উভয়ে কুলির পানি একে অন্যের গায়ে ছিটিয়ে দিলে বিয়ে হয়ে গেল। রুয়ান্ডাতে আরেকটি সম্প্রদায়ে বর নিজ হাতে কনের মুখ চুন দিয়ে সাদা করলে বউ হয়ে যায়। ইথিওপিয়ার গাল্লা গোত্রে বিয়ের বর কনেকে কোলে তুলে পানি ভরা একটি বড় পাত্রের উপর ফেলে। জোরে আওয়াজ হলে বিয়ে পাকাপোক্ত।কি আশ্চর্য তাই না!?
২ঃ লেক রেটবা
স্থানীয় ভাষায় রেটবা (Retba) অর্থ গোলাপি।এ জন্য স্থানীয়রা এটিকে রোজ লেক নামেও ডাকে। গোলাপি রঙ ছাড়াও লেকটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর লবণাক্ততা। লেকটির কোথাও কোথাও লবণাক্ততার হার প্রায় ৪০ শতাংশ। শুষ্ক মৌসুমে লবণাক্ততার মাত্রা বেড়ে যায়।
সমুদ্রের একেবারে কাছে হওয়ায় করিডোরের মাটি চুইয়ে লবণ পানি হ্রদে আসে। অতিরিক্ত লবণের কারণে এ হ্রদে তেমন কোনো জলজ প্রাণী নেই।সেনেগালের রেতবা লেককে উপর থেকে দেখলে মনে হবে রঙিন কারুকাজ। অথচ কেপ ভার্ত উপদ্বীপে প্রকৃতির অপার সৃষ্টি হলো এই লেক। একে স্ট্রবেরি লেকও বলা হয়।
৩ঃ ঠোঁট কেটে, দাঁত ভেঙে সুন্দরী
আফ্রিকার ইথিওপিয়ান উপজাতি ‘সুরি’। কষ্টকর ধর্মীয় রীতিনীতি, মেয়েরা সুন্দরী হওয়ার জন্য ঠোঁট কেটে লিপপ্লেট বসান, কানেও বসিয়ে থাকে। বয়ঃসন্ধিতে তারা দাঁত ভেঙে বিশেষ আকৃতি দেন। এতে নাকি মোটা অংকের অর্থ মেলে তাদের। গবাদি পশু উৎসর্গ এবং ভয়াবহ মারামারি তাদের ধর্মচর্চার অংশ। গ্রামের সব সিদ্ধান্ত গ্রাম্য প্রধান ‘কোমুরু’ গ্রহণ করেন।
যখন কোনো সুরি একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হয় প্রথমেই জিজ্ঞেস করে, কার কয়টা গরু আছে? গরুর মাংসের পরিবর্তে সুরিদের কাছে রক্ত অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ওলানে দুধ না থাকলে গরুর ঘাড়ের অংশ ছিদ্র করে রক্ত বের করে নেওয়া হয়। তবে সুরিরা গবাদিপশু সচরাচর বিক্রি বা হত্যা করে না। প্রতিটি সুরির ৩০-৪০টি গরু আছে। বিয়ে করার সময় সুরি পুরুষকে স্ত্রীর পরিবারকে ৬০টি গরু দিতে হয়। গরু মারা গেলে ছয় দিন শোক প্রকাশ করে।
৪ঃ মানুষও খায়!
কিছু উপজাতির মাঝে এখনো মানুষখেকো প্রবণতা দেখা যায়। এই প্রবণতাকে কুরু ও স্ক্রেপি রোগের কারণ হিসেবে ধরা হয়। অনেক সময় মনোরোগের শিকার হয়ে মানুষ মানুষখেকো হয়ে ওঠে। কঙ্গো বেসিনের আশপাশে থাকা বেশ কিছু উপজাতির মাঝে এ প্রবণতা দেখা যায়। কঙ্গোর প্রধান নদীর উভয় পাশে প্রায় ৬০০ মাইলজুড়ে তাদের বসবাস। তাদের মধ্যে কেউ কেউ খুব বেশি মাত্রায় নরখাদকের অভ্যাস ধরে রেখেছে। এদের দেখে বাকিরাও উদ্বুদ্ধ হয় মানুষের মাংস খেতে। তারা সাধারণত মাংসটিকে পুড়িয়ে, সেদ্ধ করে অথবা রোস্ট করে খেতে পছন্দ করে।তাদের কাছে মানুষের মাংস খাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। বিশেষ করে শত্রু পক্ষের কাউকে ধরে খেয়ে ফেলতে পারলে তা আরও উপকারী মনে করা হয়। তাদের ধারণা, শত্রুর শক্তি তাদের মধ্যে জমা হয়।
৫ঃ জীবনে একবার গোসল
তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে আফ্রিকায় কিছু উপজাতি আছে যাদের মধ্যে এ পর্যন্ত সভ্যতার আলো পৌঁছেনি। যেমন ধরুন নামিবিয়ার হিম্বা। এদের মহিলারা জীবনে একবার গোসল করে, তাও বিয়ের আগে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তারা চুল ছাই দিয়ে ধুয়ে কাটিয়ে দেয়।রিফট ভ্যালিতে বাসরত মাসায়া জাতির জীবনযাপনের বড় অংশ হলো পশুপাখিদের মাধ্যমে চাষবাস করা। পুরোপুরি সভ্য না হলেও বর্তমানে শহর এলাকায় তাদের দুয়েকজনের দেখা যায়, তারা গৃহপালিত পশুর শরীর থেকে রক্ত এবং দুধ মিশিয়ে খেতে পছন্দ করে।
৬ঃ মাংসখেকো গাছ
বাস্তবে বিজ্ঞানীরা মানুষখেকো উদ্ভিদ বলে কোনো কিছুর সন্ধান পাননি। তবে বাস্তবে সত্যিই পৃথিবীতে রয়েছে মাংসখেকো গাছ। এসব গাছ ছোট ছোট পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে। আফ্রিকার জঙ্গলে পাওয়া যায় হাইডনোরা আফ্রিকানা এক ধরনের মাংসাশি গাছ। এ প্রজাতির কোনো ফুল সুগন্ধি, কোনোটি অত্যন্ত দুর্গন্ধময়। এ ফুল থেকে যে সুবাস বের হয় তা সবাইকে বিমোহিত করবে।
আকৃষ্ট করে কীটজাতীয় প্রাণীকেও। তাই তো ক্ষুদ্র কিছু প্রাণী ফুলের গন্ধে গাছটিতে গিয়ে বসে। কিন্তু বসার সঙ্গে সঙ্গেই গাছ থেকে নিঃসৃৃত এক ধরনের আঠালো পদার্থ কীটটি আটকে ফেলে। ক্রমেই তা গাছটির খাদ্যে পরিণত হয়। দুষ্ট ফুলের সুমিষ্ট বা কটু গন্ধ যে এক বিশাল মরণফাঁদ। এছাড়াও মাংসখেকো উদ্ভিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উদ্ভিদ হলো কলস উদ্ভিদ, ফ্লাইপেপার ট্র্যাপ, ব্লাডার ট্র্যাপ, লবস্টার-পট ট্র্যাপ, ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ ইত্যাদি।
সূত্রঃ উইকিপিডিয়া