বিয়ে করতে যাচ্ছেন? পড়ুন অন্য দেশগুলোর ৭ উদ্ভট রীতি

image source-listverse
image source-listverse

অনেক সমাজে বিয়ে খুব সহজসাধ্য কাজ নয়। এই পৃথিবীতে নানান বৈচিত্র্যময় সামাজিক আচার-আচরন বিদ্যমান। মেয়েদের বিবাহিত জীবনের শুরুতে অনেক ধরণের পরিপূর্ণতা থাকা লাগে। বেশিরভাগ প্রচেষ্টা থাকে নতুন স্বামী ও পরিবারের পছন্দ অনুযায়ী খুশি রাখতে। এখানে আমরা তুলে ধরব বিয়ের ৭টি অপ্রচলিত প্রথা।

 দ্য মোর, দ্য মেরিয়ার

মৌরিতানিয়ায় পুরুষরা বিয়ে করে মহিলাদের দৈহিক আকৃতি দেখে। তারা পছন্দ করে বিশালদেহের মহিলা। ঔপনিবেশিক শাসনের আগে তারা বাস করত মরুভুমির তাঁবুতে। ধনীরা তাদের ঘরের কাজ করার জন্য দাসী রাখত। মহিলারা তাঁবুতে বসে আরাম করত আর খাওয়া দাওয়া করত। ফলে তারা ভাল স্বাস্থ্যের অধিকারী হতো তুলনামুলকভাবে দাসীদের  থেকে। ফলে পুরুষরা মনে করত সুস্বাস্থ্যের অধিকারী স্ত্রী থাকা মানে তার অধিক খাদ্য ও দাস পালন করার ক্ষমতা আছে। এভাবেই ‘লেবলউ’ ধারণাটি আসে।

এই ধারণা এখন অনেক প্রত্যন্ত এলাকায় প্রচলিত আছে। যেখানে মেয়েরা অনেক চর্বিজাতীয় খাবার খায় মোটা হবার জন্য। তাদেরকে প্রচুর পরিমানে বিভিন্ন পশুর দুধ খাওয়ানো হয় ৮-১৪ বছর বয়সে, যাতে করে বিয়ের সময় উপযুক্ত স্বামী খুজে পায়। যদিও বর্তমান সময়ে শিশুরা খাবার নিয়ে অনীহা দেখায়। তাই অনেক মা তাদের মেয়েদেরকে একশ্রেণীর মহিলার কাছে পাঠায় যারা টাকার বিনিময়ে বাচ্চাদের জোর করে খাওয়ায়।

‘লেবলউ’ধারণাটি ‘আলমরাভিড’ রাজবংশের সময় জন্ম নেয় এবং দ্রুত বিভিন্ন অঞ্চলে ধারনাটি ছড়িয়ে পড়ে। এগুলো মালি, ক্যামেরুন, নাইজেরিয়ায় বেশি প্রচলিত ছিল। বর্তমানে এই ধারণার জনপ্রিয়তা কমে গেছে মেয়েদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কা্রণে। কিন্তু এখনো পুরুষরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী স্ত্রী খোঁজে।

জাঞ্জিবারের কনে

জাঞ্জিবারে বিয়ের দিন যেন কন্যাকে সুন্দরী রাজকন্যার মত লাগে সেভাবে প্রস্তুত করা হয় কয়েকটা ধাপে। প্রথমে তার জন্য  একটি আলাদা কুটির নির্মাণ করা হয় যেখানে অন্য পুরুষদের চোখের আড়ালে মাসখানেক রাখা হয়। তার সাথে অন্য একজন মহিলা থাকে। যিনি তাকে শিক্ষা দেয় নতুন স্বামী ও সংসার সম্পর্কে। বিয়ের ২ সপ্তাহ আগে তার বিভিন্ন রূপচর্চা করানো হয়। বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক উপাদান যেমন গোলাপ ও বিভিন্ন সুগন্ধিফুল,চন্দন,মধু,দুধ ইত্যাদি দিয়ে তার রূপচর্চা করে। এতে তাকে দেখতে সুন্দর,কমনীয়,উজ্জ্বল লাগে। তারপর তাকে নারকেল ও গোলাপ জল দিয়ে ম্যাসাজ করানো হয়। সুন্দর সুগন্ধ কুটিরে ছড়িয়ে পড়ে। বিয়ের দুইদিন আগে মেহেদির রঙে রাঙানো হয় তার হাত পা এবং শরীরের পিঠের বিভিন্ন অংশ। বিয়ের দিন রঙিন লেসো পরে বরের সামনে উপস্থিত হয়। বিয়ের অনুষ্ঠান সাধারণত সন্ধ্যায় অথবা রাতে হয়।অনুষ্ঠানে মেয়েদের উপস্থিতি বেশি থাকে।

ভালবাসা কুটির

কম্বোডিয়ার গ্রাম রতনকিরিতে মহিলাদের বিভিন্ন ক্ষমতা দিয়ে বিয়ের জন্য প্রস্তুত করা হয়। মেয়েদের নিজেদের মতামত প্রকাশের সুযোগ দেওয়া হয়। এটির কারণ হলো ক্রিয়ং পর্বত এর টাং ক্যামাল তার ১৩ বছরের মেয়ের জন্য একটি বিশেষ কুটির নির্মাণ করেছিল স্থানীয় সম্প্রদায়ের অনুমোদনে। এই ঘরকেই “ভালবাসা কুঠির” বলা হয়।

এখানে ১৩ বছরের মেয়েরা একা ঘুমায়। তাকে আরও উৎসাহিত করা হয় এই ঘরে বসে বিভিন্ন ছেলেদের আতিথ্য দেওয়ার কাজে। এই কুটির সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয় আর মেঝের মাদুর আরামদায়ক করে বানানো হয় যাতে যারা রাতের অন্ধকারে আসে তাদের সুবিধা হয়। সাধারণত তারা অতিথিদের সাথে আলাপচারিতা করলেও অনেক সময়  এর থেকেও গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এমনকি শারীরিক সম্পর্কও করে। মেয়েরাই নির্ধারণ করে কোন ছেলে আসবে আর কোন ছেলে আসবে না। এতে করে তার পছন্দের প্রাধান্য পায়। যখন সে বিয়ে করবে বলে প্রস্তুত হয় তখন সে তার পাত্র ঠিক করে। বিয়ের আগের সম্পর্ককে এই সমাজ খুবই মূল্যবান মনে করে তারা ভাবে এতে করে মেয়েরা মানসিকভাবে শক্তিশালী হয়। তবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেক পরিবার এই প্রথা মানছে না। এখন তারা অনেক বড় ঘর বানায় তার মধ্যেই মেয়ের জন্য আলাদা কক্ষ রাখে। মেয়েরা বিবাহ পূর্ব সম্পর্কে জড়িত থাকলে বাবা মা তাদের বিয়েতে মতামত দিচ্ছে।

বিবাহবিচ্ছেদ

বিবাহ খুব ক্ষুদ্র কোন ব্যাপার না। বিয়ে সফল করতে হলে অনেক ধৈর্য্য ও অধ্যবসায় এর দরকার। কিন্তু তারপর অনেক সময় তা দীর্ঘস্থায়ী হয় নাএবং দম্পতিরা তখন বিবাহ বিচ্ছেদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।

সাহারা মরুভূমিতে বসবাসরত সাহারাই উপজাতি বিবাহবিচ্ছেদকে হতাশা ও হৃদয়বিদারক হিসাবে দেখেনা। এই সমাজে বিবাহবিচ্ছেদের তিন মাস পর মেয়ের আত্মীয়রা ভোজনউৎসব এর আয়োজন করে।এখানে নাচ,গান আনন্দ করা হয়। এতে করে পুরুষদের বুঝানো হয় মহিলাটি পুনরায় বিয়ের জন্য প্রস্তুত। অনেক সময় এই অনুষ্ঠানেই তাদের পাত্র পাওয়া যায়। এই সমাজে বিবাহিত মহিলাদের মূল্যায়ণ বেশি। তাই বিবাহবিচ্ছেদ এর পর মহিলারা বেশিদিন একা থাকে না।

ঘোমটা

নতুন কনের বরের সামনে ঘোমটা দিয়ে আসার ধারণা নতুন নয়। ঘোমটা দেওয়া বিশেষ করে মুখমণ্ডল ঢাকা অনেক সমাজেই প্রচলিত আছে। অনেক সমাজে এই ঘোমটা দেওয়ার প্রথা বিশেষ  অর্থবোধকভাবে চিন্তা কর হয়। যখন কনেদের বরের হাতে তুলে দেওয়া হয় তখন তার পিতা মাতা পুরো শরীর ওড়না দিয়ে ডেকে দেয়। তারা মনে করেন এটা নতুন স্বামীর প্রতি স্ত্রীর যথাযথ সম্মান প্রদর্শন। জিম্বাবুয়ের কনে যখন সিদ্ধান্ত নেয় বরের বাড়ি যাবার (তারা বিয়ের পর পর বরের বাড়ি যায় না) তখন সে আপাদমস্তক সাদা কাপড়ে ঢাকা থাকে। তারা মনে করে এইভাবে গেলে কেও তাকে চিনতে পারবে না।ঐতিহ্যবাহি জাপানিবধুরা বিয়ের দিন সাদা রঙ দিয়ে আল্পনা করে এবং তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক সাদা কিমানো পরে সাথে থাকে সূঁচালো টুপি।

স্বাধীন মহিলা

মহিলাদের সাধারণত বিয়ের জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুত হতে হয় বিবাহিত জীবনের জন্য এবং তাদের মূল প্রচেষ্টা থাকে অন্যদের সন্তুষ্ট করা। কিন্তু অন্যদিকে চীনে একটি উপজাতি সমাজ আছে যারা বিয়ে করে না। এরা বাস করে হিমালয়ের। তাদের বলা হয় মসো। মসোদের  বলা হয় মহিলা সাম্রাজ্য। মহিলাদের শিখানো তারা পুরুষদের থেকে স্বাধীন। তাদের ঘরের কাজ সম্পাদন করে বয়স্ক মহিলাদ্বারা। প্রত্যেকে তার দরকার অনুযায়ী প্রতিদিনের কাজ নিজে করে থাকে। যখন মেয়েরা প্রাপ্ত বয়স্ক হয় তখন তারা আলাদা কক্ষে ঘুমায় এবং নিজেদের ইচ্ছামত যেকোনো পুরুষের সাথে রাত কাটায়। তাদের এক বা একাধিক সম্পর্ক থাকে এবং এসব সম্পর্ক স্বল্প অথবা দীর্ঘ মেয়াদি হয়। পুরুষরা মেয়েদের ঘরে আসে গোপনে রাতে আবার সূর্য উঠার আগে চলে যায়। যখন মেয়েরা গর্ভবতী হয় তখনো পুরুষরা বাচ্চার কোন কিছুর জন্য দায়ী না।যদি সে বাচ্চার জন্য কিছু করতে চায় তাহলে ঐ মহিলার পরিবারের সদস্যদের জন্য উপহার আনতে পারবে আর কিছু করতে পারবে না।বাচ্চারা বর হয় মায়ের আত্মীয়দের কাছে।

মসোরা যেখানে বসবাস করে সেটি বর্তমানে একটি বৃহৎ পর্যটন কেন্দ্র এবং মসো নারীরা এই সুবিধা পুরোপুরি লুফে নিয়েছে। অনেকে সফলতার সাথে হোটেল পরিচালনা টুরিস্ট গাইড হিসাবে কাজ করে যাচ্ছে।

 
গোল রুটি

ভারত ও তার পার্শ্ববর্তী দেশগুলো রুটির সাথে নিশ্চিতভাবে পরিচিত। এই রুটিগুলো তৈরি হয় গম, পানি সবজি অথবা চর্বি দিয়ে। এগুলো খুব পাতলা হয়। রুটি খাওয়া হয় সকালের নাস্তায় চা এবং তরকারি দিয়ে। হয়তো সবাই ভাবতে পারে রুটির সাথে কি সম্পর্ক কনে এবং বিয়ের কি সম্পর্ক।

প্রচলিত একটা কথা হলো ‘পুরুষের মন পাওয়া যায় তাকে খাইয়ে সন্তুষ্ট করতে পারলে’ ভারতে বিয়ের জন্য শুধু রান্না নয় ভাল রুটি বানানো জানতে হবে।রুটিকে একদম গোল আকারের হতে হবে।রুটি বানানোকে নিয়ে বিয়ে হওয়া অথবা ভেঙে যেতে পারে। এটা খুবই সাধারন ঘটনা। সঠিক আকৃতির রুটি না বানাতে পারার কারনে অনেক বিয়ে ভেঙ্গে গেছে। এজন্য মায়েদের অক্লান্ত চেষ্টা থাকে বিয়ের উপযুক্ত করার জন্য সঠিক আকৃতির রুটি তৈরি শিখানো।

লেখিকঃ ফাহমিদা নাসরিন। পেশায় শিক্ষক। ভাল লাগে বই পড়তে আর ঘুরে বেড়াতে।অবসর সময় কাটে ক্রাফটিং করে।