পৃথিবীতে বিভিন্ন সময়ে অনেক অজানা উড়ন্ত বস্তু দেখা গেছে, কিন্তু তাদের মধ্যে খুব কমই পুলিশ অথবা প্রতিরক্ষা বাহিনীর নজরে পড়েছিল। এখানে কিছু উল্লেখযোগ্য এবং উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনা দেয়া হলো যা মানুষ এবং ভিনগ্রহের প্রাণীর উপস্থিতিতে ঘটেছিল।
১। তেহরান এর ইউ এফ ও’র ঘটনা
১৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৬, ইরানের বিমান বাহিনীর কতিপয় কমান্ডার তেহরানে কাজ করছিলেন, যখন তারা বেসামরিক নাগরিকদের নিকট হতে তথ্য পান যে, শহরের আকাশে অদ্ভুত আলো দেখা গেছে। সে সময়ে কোন ইরানী বিমান উড়ছিল না। জেনারেল ইন কমান্ড ধারণা করেছিলেন যে, আলোকিত বস্তুটি ছিল একটি তারা। কিন্তু যখন তিনি তার কমান্ড পোষ্টের বাইরে গিয়ে এটি দেখতে পান, অবিলম্বে আদেশ দেন যুদ্ধবিমান প্রেরণ করে সেটির গতি রোধ করতে।
দুটি এফ-৪ ফ্যনটম যুদ্ধ বিমান প্রেরণ করা হয়েছিল। প্রথম বিমানটি শব্দের গতিতে বস্তুটির কাছাকাছি যাবার উদ্দেশ্যে ছুটেছিল, কিন্তু যতবারই এটি একটি নির্দিষ্ট দুরত্বে পৌছেছিল, উড়ন্ত বস্তুটি শুন্যের উপর লাফ দিয়ে অনেক দূরে চলে গিয়েছিল। এমনটা করতে করতে এক সময় বিমানের জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় অবশেষে বিমানটিকে অবতরণ করতে হলো। দ্বিতীয় বিমানটির চালক ছিল লেফটেন্যান্ট পারভেজ জাফরি। যখন বিমানটি বস্তুটির দৃষ্টিসীমার কাছাকাছি পৌঁছুল, যেটি ছিল একটি ঝলকানো আলোর বলের মতো, অপর একটি বস্তু এর থেকে পৃথক হয়ে বিমানটির চারদিকে চক্রাকারে ঘুরতে লাগল। জাফরি মিসাইল ছুড়ার চেষ্টা করলে বিমনের সকল বৈদ্যুতিক শক্তি বন্ধ হয়ে যায়, এমনকি জরুরি নির্গমন পথ পর্যন্ত। একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে পড়ে যাবার পর বিমানের বৈদ্যুতিক শক্তি ফিরে এলো এবং জাফরি নিরাপদ দূর থেকে বস্তুটিকে দেখছিল। অপর একটি বস্তু প্রথমটি থেকে পৃথক হয়ে মরুভুমিতে পড়েছিল কিন্তু পরের দিন সেখানে কিছুই পাওয়া যায়নি। তার কিছু সময় পর উড়ন্ত বস্তুটি শুণ্যে মিলিয়ে গিয়েছিল। বিমান পর্যবেক্ষণে জানা যায়, এতে কোন ত্রুটি পাওয়া যায়নি এবং বিশেষজ্ঞগণ অবাক হয়েছিলেন বিমানটির স্বয়ংক্রিয় সংশোধন দেখে।
২। ফুকুওকার ঘটনা
১৯৪৮ সাল ছিল সামরিক এবং ইউ এফ ও এর লড়াইয়ের উল্লেখযোগ্য বছর। রাডার সংযুক্ত শুরু হয়েছিল যুদ্ধবিমানে কিন্তু গুটিকয়েক। এফ-৬১ ব্ল্যাক উইডো যুদ্ধ বিমান, যেটিতে এই রাডার সংযুক্ত ছিল, যেটি জাপানের উপর টহল দিচ্ছিল এবং কাছাকাছি ইউ এফ ও দেখতে পেল। যখন যুদ্ধ বিমানটি এর গতিরোধের জন্য আরও কাছে পৌঁছালো, বস্তুটি ৩২০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা থেকে ১,৯০০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় গতি বাড়িয়েছিল। পুনরায় যখন এটি গতি কমিয়ে এপ-৬১ কে কাছে আসার সুযোগ দিল, এটি তাৎক্ষণিক বিমানের নিচে ডুব দিল। এফ-৬১ পাইলট এটিকে অনুসরণের চেষ্টা করলে দ্রুত দৃষ্টির অন্তরালে চলে গেল। আরও চারবার বস্তুটিকে বন্দুক পরিসীমায় আনার চেষ্টার পর এটিকে দেখতে সক্ষম হলো, যা ছিল ২০ থেকে ৩০ ফুট লম্বা, গুলির আকৃতির।
সম্ভবত এটিই প্রথমবার ছিল যথন বৈমানিক রাডার দ্বারা ইউ এফ ও সনাক্ত করা হয়েছিল। আশ্চর্যের বিষয় হলো, দশ মিনিটের এই মোকাবেলায়, ভুমিতে অবস্থিত রাডার এই বস্তুটিকে ধরতে পারেনি। বিমান আরোহীগণের বর্ণনা মতে, বস্তুটি দেখতে জার্মান এম ই-১৬৩ রকেট ফাইটারের মতো ছিল এবং আমেরিকান বিমান বাহিনী বস্তুটির ধারণকৃত ফুটেজ রেখেছিল।
৩। গরম্যান ডগফাইট
১৯৪৮ সালেও আমেরিকান বিমান বাহিনীর সাথে ইউ এফ ও এর মোকাবিলা হয়েছিল উত্তর ডাকোটার, ফারগোতে। ১লা অক্টোবর, অভিজ্ঞ পাইলট জর্জ গড়ম্যান রহস্যজনক কিছু দেখতে পেয়েছিলেন রাডারের মাধ্যমে। তার পি-৫১ যুদ্ধবিমান দিয়ে লক্ষ্যের কাছে এসে দেখতে পেলেন, এটি ছিল ক্ষণে ক্ষণে জ্বলন্ত বলের আলো। প্রস্তুত হয়ে গরম্যান লক্ষের পিছু ধাওয়া করলেন কিন্তু বস্তুটি তার চেয়েও দ্রুত গতিতে সরে যাচ্ছিল। লড়াইয়ের উদ্দেশ্যে গড়ম্যান পি-৫১ নিয়ে ছুটলে বস্তুটি তার দিকে দ্রুত ধেয়ে আসলো যার ফলে যুদ্ধবিমানটি গতির কারণে কেঁপে উঠেছিল। গ্ম্যারন বারবার লক্ষ্যে আঘাত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো এবং বুঝতে পারল যে, বস্তুটি অনেক উপড়ে উঠেছিল যা পি-৫১ দিয়ে ধরা অসম্ভব। নিকটেই ‘ফারগো’ নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার থেকে দূরবীক্ষণ দ্বারা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া দেখছিল কর্মীরা।
সে সময়ের জন্য গরম্যান ডগফাইট ছিল ইউ এফ ও অবলোকনের এর সর্বশ্রেষ্ট উদাহরণ। বিমান বাহিনী এই ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছিল এই বলে যে, তারা একটি আবহাওয়া গবেষণা বেলুন ছেড়েছিল কিন্তু তা যোগাযোগের বাইরে চলে যায়। কমপক্ষে তিনজন প্রত্যক্ষদর্শী এই ঘটনাটি দেখেছিল। অন্যান্যরা বিশ্বাস করে এই সামরিক মোকাবিলার বিষয়টি এখনো বর্ণনার জন্য উন্মুক্ত নয়।
৪। পোর্টেজ বিভাগের ইউ এফ ও এর পিছু ধাওয়া
১৯৬৬ সালে, ওহাইও’র পোর্টেজ বিভাগের দু’জন পুলিশ কর্মকর্তা আকাশে পিরিচের মতো গোলাকৃতি এবং প্রচন্ড আলোকিত বস্তু দেখতে পান। প্রকৃতপক্ষে তারা একটি পরিত্যক্ত গাড়ি অনুসন্ধানে বের হয়েছিলেন যখন তারা বস্তুটিকে একটি গাছের উপর দিয়ে তাদের দিকে আসতে দেখে। আতঙ্কে পাথর হয়ে যাওয়া দুজন দেখল, বস্তুটি তাদের ছাড়িয়ে কয়েকশ মিটার দূরে চলে গেছে।
অনতিবিলম্বে তারা বেতার মাধ্যমে বার্তাকক্ষে খবর পাঠালো। ইতিমধ্যে উড়ন্ত বস্তুটি আবারও চলতে শুরু করল। বার্তাকক্ষ থেকে তাদেরকে অনুমতি দেওয়া হলো রহস্যজনক বস্তুটির পিছু নেয়ার জন্য। অবশেষে তারা সীমানা অতিক্রম করে পেনসিলভানিয়াতে প্রবেশ করল এবং সেখানের পুলিশ তাদের সাথে যোগ দিল। প্রায় তিরিশ মিনিটের পিছু ধাওয়ার পর তারা দেখল যুদ্ধ বিমান বস্তুটির উপর দিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। যখন বিমানগুলো কাছাকাছি আসল, উড়ন্ত বস্তুটি হঠাৎ থেমে গেল এবং আকাশের দিকে ফাঁকা রশ্মি ছাড়ল।
বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাগণ জানিয়েছিলেন, বিষয়টি ছিল পর পর ঘটিত মহাকাশের দুটি অজানা ঘটনা। ওহাইওর পুলিশ কর্মকর্তা দুজন বলেছিল, তারা শুক্র গ্রহের পিছু নিয়েছিল পেনসিলভানিয়া পর্যন্ত। বিমান বাহিনী থেকেও যুদ্ধবিমান পাঠানোর বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছিল। যখন বিষয়টি কোন বর্ণনায় আনা যাচ্ছিল না, ইউ এফ ও বিশেষজ্ঞগণ এটিকে ধামাচাপা দিয়েছিলেন এই বলে যে, দুজন কর্মকর্তার একজন দুর্ঘটনা পরবর্তী বৈকল্যতায় ভুগছেন।
৫। ফেলিক্স এবং রবার্ট উইলসন এর নিখোঁজ হওয়া
২৩ নভেম্বর, ১৯৫৩, লেঃ ফেলিক্স এবং রবার্ট উইলসন কিনরস, বিমান বাহিনী ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করেছিলেন, উইসকনসিস-কানাডা সীমান্তে রহস্যজনক এক বস্তুকে অনুসরণ করে, যা রাডারে ধরা পরেছিল। দুজন বিমান চালক এফ-৮৯ স্করপিয়ন নিয়ে উড়েছিলেন, যা বিশেষভাবে তৈরী করা হয়েছিল রাডার সংযুক্ত করে এবং মিশনের উদ্দেশ্যে। যখন তারা লক্ষ্যের কাছে পৌঁছালো, উইলসন (রাডার অপারেটর) রাডারে সেই বস্তুটিকে শনাক্তকরনে বাধাগ্রস্থ হচ্ছিলেন, তাই ভূমি থেকে নির্দেশনা দিয়েছিল।
রাডার অপারেটর দেখেছিলেন যে, ফেলিক্স বস্তুটির কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন। হঠাৎ সেই রহস্যজনক বস্তু এবং এফ-৮৯ রাডারের মধ্যে একই জায়গায় দৃশ্যমান হয়েছিল। প্রায় সাথে সাথেই বস্তুটি একই দিতে যাচ্ছিল কিন্তু ফেলিক্স এবং উইলসন গায়েব হয়ে গিয়েছিল। অনুসন্ধান দল বের হয়েছিল বিমান চালকদের খুঁজে বের করতে কিন্তু আবহাওয়া তাদের পরিশ্রম ব্যর্থ করে দিয়েছিল। কিছুদিন পর দপ্তর থেকে দুজন চালককে মৃত ঘোষনা করা হয়েছিল। বিমান বাহিনীর অনুসন্ধানীগন এই ঘটনার যুক্ত হয়ে অতি সত্বর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল যে, রহস্যজনক বস্তুটি ছিল কানাডার বিমান এবং সেটি পালাতে সক্ষম হয়েছিল কিন্তু কানাডীয় বিমান সংস্থা এই প্রতিবেদনে অসম্মতি জানিয়েছিল। পরবর্তীতে গুজব উঠেছিল যে এফ-৮৯ বিমানটি ভূপাতিত হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে এর কোন ধংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এই কাহিনীটি ভিন্ন মোড় নিয়েছিল ২০০৬ সালে, দ্যা গ্রেট লেক ডাইভিং কোম্পানী নামে একটি ডুবুরী সংস্থা ঘোষণা করেছিল যে তারা এফ-৮৯ টি একটি লেক এ পেয়েছে। শুধু তা-ই নয়, তারা বলেছিল যে, তারা বিমানটির ধ্বংসাবশেষ পেয়েছে এবং তার থেকে ধ্বংসের সময়ের ছবিও উদ্ধার করতে পেরেছে, যার সবই ছিল লেক এর মধ্যে। যখন বিশেষজ্ঞরা বুঝতে পেরেছিল যে এগুলো সবই ভুয়া, ‘দ্যা গ্রেট লেক ডাইভিং কোম্পানী’ বিলিন হয়ে গিয়েছিল।
লেখক সম্পর্কেঃ শামসুদ্দীন ভুঁইয়া উজ্জ্বল। একটি ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত।