বিশ্বের কিছু আকর্ষণীয় জায়গা বা স্থান নিয়ে আমাদের আজকের এ লেখা। আকর্ষণীয় জায়গা তো অনেকই আছে কিন্তু পার্থক্য কোথায়? এটাই যে, এসব জায়গায় কোন মানুষই নেই। ফাঁকা পড়ে আছে জায়গাগুলো।
১। সানঝি ঘোস্ট টাউন (Sanzhi ghost town, Taiwan)
শহরের কিছু স্থানীয় ধনী ব্যক্তিদের জন্য একটি বিলাসবহুল সুমুদ্র রিসোর্ট তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল, কিন্তু যখন থেকে নির্মাণ কাজ শুরু হয়, তখন থেকে অস্বাভাবিকতা ও শুরু হয় । এমনকি কয়েক ডজন শ্রমিক উপর থেকে পড়ে (এমনকি নিরাপত্তা দড়ি দিয়ে) বা কপিকল ভেঙ্গে মারা যান। স্থানীয় শহরবাসীরা বিশ্বাস করেন যে ঐ স্থানে অশুভ আত্না বাস করে এবং তাদের দ্বারা ঐ শ্রমিকগুলো মারা গেছে এবং নির্মাণ কাজ বাধাগ্রস্থ হয়েছে। সেখানে জাপানি মৃত্যু ক্যাম্পের আতঙ্কজনক গল্প ছড়িয়ে পড়েছিল , যেটা অনেক দিন আগে এর কাছাকাছি কোথাও অবস্থিত ছিল । স্বাভাবিকভাবেই, ১৯৮০ সালের শেষের দিকে, এর নির্মাণ স্থগিত করা হয়। অ্যাপার্টমেন্ট খালি পড়ে ছিল। স্থানীয় সরকার এখন এই শহরটি রক্ষণাবেক্ষণ করেন কারণ স্থানীয় বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন যে এই শহর ভেঙ্গে পড়লে অশুভ আত্নারা ছড়িয়ে পড়বে।
২। বীলিতজ সামরিক হাসপাতাল , জার্মানি (Beelitz abandoned military hospital, Germany)
এটা হিটলারের হাসপাতাল নামে ও পরিচিত । এই হাসপাতালটি জার্মানির রাজধানী বার্লিন শহর থেকে মাত্র ২৫ মাইল (৪০ কিঃমিঃ) দূরে অবস্থিত । এটা প্রধানত যক্ষ্মা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়। কিন্তু ১ম বিশ্ব যুদ্ধের সময় সামরিক হাসপাতাল এখানে স্থানান্তরিত করা হয় এবং ১ম ও ২য় বিশ্ব যুদ্ধের সময় এটি সামরিক হাসপাতাল হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এমনকি ১৯১৬ সালে , এডলফ হিটলার নিজে এখানে চিকিৎসা নেন। ১৯৯৫ সালে যখন শহরবাসী এই শহর ছেড়ে যেতে শুরু করে তখন থেকে হাসপাতালটির অবনতি ঘটতে থাকে ।
৩। গানাকানজিমা দ্বীপ, জাপান (Gunkanjima Island, Japan)
এই দ্বীপের আসল নাম হাসিমা দ্বীপ , কিন্তু এই দ্বীপকে গানাকাঞ্জিমা নামে ডাকা হয় যার অর্থ হল রণতরী দ্বীপ । বিশ্বের ৫০৫ টি জনমানবহীন দ্বীপের মধ্য জাপানের গানাকানজিমা দ্বীপ অন্যতম। এটি নাগাসাকি থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১৮১০ সালে প্রথম এই দ্বীপে কয়লা পাওয়া যায় এবং পরবর্তী ৫০ বছরের মধ্যে গানাকাঞ্জিমা দ্বীপ হয়ে উঠে বিশ্বের সব চেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দ্বীপ । ১৯৫৯ সালে ১৬ একর আয়তনের দ্বীপটির জনসংখ্যা পৌঁছায় ৫৩০০ জনে। তবে ১৯৭৪ সালের দিকে কয়লা ও অন্যান্য জীবাশ্ম কমতে থাকে এবং মানুষ ধীরে ধীরে এই দ্বীপ ছেড়ে চলে যেতে থাকে এবং দ্বীপটি এক সময় জনমানব শূন্য হয়ে পড়ে । এই জন্য এই দ্বীপকে অনেকে ভূতুড়ে দ্বীপ ও বলে থাকে । এই দ্বীপে প্রবেশ অধিকার এখনও সীমিত । তবে স্থানীয়দের মধ্যে এই দ্বীপ সম্পর্কে অনেক ভূতুড়ে জনশ্রুতি আছে ।
৪। লিএর এর মানসিক স্বাস্থ্য পুনর্বাসন কেন্দ্র (Lier mental asylum, Norway)
নরওয়েজিয়ান এই মানসিক স্বাস্থ্য পুনর্বাসন কেন্দ্রটি নরওয়ের ছোট্ট শহর লিএর এ অবস্থিত, যা ওসলো থেকে গাড়িতে মাত্র আধা ঘণ্টার পথ। ১৯২৬ সালে ৬০০ রোগীর চিকিৎসার জন্য এই মানসিক হাসপাতালটি তৈরি করা হয় । এই হাসপাতালটির একটি অন্ধকার ইতিহাস আছে। জানা যায় যে ১৯৪৫ থেকে ১৯৭৪ সালের মধ্যবর্তী সময় এই হাসপাতালে রোগীদের উপর এলএসডি (Lysergic acid diethylamide ) , নতুন ওষুধের পরীক্ষা এবং তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের গবেষণা করা হয়, এমনকি কোন অ্যানাসথেসিয়া ছাড়া লোবটমি ( lobotomy) করা হত । ১৯৮৫ সালে কোন সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই চারটি ভবন বন্ধ করে দেয়া হয়। সকল সরঞ্জাম, বিছানা, এবং এমনকি হাসপাতালে লগ এবং বসবাসকারীদের ব্যক্তিগত অনেক জিনিসপত্রসহ ভবনগুলো পরিত্যক্ত হয় । তবে সবচেয়ে মজার বিষয় এই যে বাকি আটটি ভবন এখনও স্বাভাবিক ভাবে ব্যবহার করা হয়।
৫। হোটেল ডেল সালটো , কলম্বিয়া(Abandoned Hotel del Salto, Colombia)
১৯২৪ সালে , সান আন্তোনিও ডেল টিকিউয়েনডামা শহরে রেফুজিও এল সালটো (Refugio El Salto) নামে এই বিলাসবহুল হোটেলটি তৈরি করা হয়। কলোম্বিয়ায় অবস্থিত টিকিউয়েনডামা ফলস্ কিংবা স্প্যানিশ ভাষায় সালটো ডেল টিকিউয়েনডামাটি মূলত এমনই একটি স্থান, যেটি আসলে একটি অভিজাত হোটেল। এটি পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় একটি স্থান হিসেবেও বিবেচিত হত । এখানে যেমন আছে চমকপ্রদ ঝর্ণা, তেমনি আছে অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যা মানুষকে সহজেই আকৃষ্ট করবে । কিন্তু হোটেলে আসা অথিতিদের খুব ঘন ঘন আত্মহত্যার কারণে , হোটেলটি চালুর কয়েক দশক পরে, হোটেলটি বন্ধ করে দেয়া হয় । অনেকে বিশ্বাস করে যে , এটি রহস্য ঘেরা একটি ভূতুড়ে হোটেল ।
৬। কোলমানসকোপ ঘোস্ট টাউন, নামিবিয়া (Kolmanskop ghost town, Namibia)
কোলমানসকোপ ঘোস্ট টাউন, দক্ষিণ নামিবিয়ার লুদেরিটজ সমুদ্রবন্দর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১৯০৮ সালে এখানে হীরা পাওয়া যায়। এবং মাত্র দুই বছরের মধ্যে এই গ্রামীন এলাকাটি জাঁকজমকপূর্ণ দৃষ্টান্তমূলক জার্মান শহরে রুপান্তরিত হয় , এমন একটা শহর যেখানে ছিল ক্যাসিনো , স্কুল , হাসপাতাল , স্টেডিয়াম, সুন্দর ও বিলাসবহুল আবাসিক ভবন । সবাই এই হীরার উৎস সম্পর্কে উচ্চ সমৃদ্ধি ও দীর্ঘায়ু আশা করে ছিল, কিন্তু খুব শীঘ্রই হীরার উৎস হ্রাস পেতে থাকে এবং মানুষ এই শহর ছেড়ে যেতে শুরু করে। পানি ও বালুঝড়ের সমস্যার জন্য ও মানুষ এই শহর ছেড়ে চলে যায়। ১৯৫৪ সালের মধ্যে শহরটি পুরোপুরি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। এই শহরের অধিকাংশ বাড়ি ও ঘরই বালির তৈরি যা ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
৭। শি চেং এর ডুবো শহর, চীন (Shi Cheng underwater city, China)
শিং চেং সিটি বা লায়ন সিটি হল চীনের ১৩৪১ বছরের পুরনো একটি অবিশ্বাস্য শহর , যা কুইয়ান্ডাও লেকের তলদেশে অবস্থিত। শি চেং পূর্ব হান রাজবংশের সময় এই শহরটি নির্মিত হয়েছিল । ১৯৫৯ সালে একটি হাইড্রো পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণের সময় শহরটি প্লাবিত হয় এবং শহরটি সম্পূর্ণরূপে পানির নিচে নিমজ্জিত হয় । এটা এখন ১০৭৪ দ্বীপপুঞ্জের মনুষ্যসৃষ্ট হ্রদ দ্বারা বেষ্টিত। ১৯৯৪ সালে তিন ছিনতাইকারী একটি পর্যটক পূর্ণ নৌকায় আক্রমণ করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়, নৌকার ৩২ জন যাত্রী সবাই মারা যায়। যার জন্য অনেকে দাবি করে এটা ৩২ ভুতের হ্রদ ।
৮। রাইপিয়াট , ইউক্রেন (Pripyat, Ukraine)
রাইপিয়াট হল উত্তর ইউক্রেনের একটি পরিত্যক্ত শহর যাকে বলা হয় জোন অব এলিয়েন । পরিত্যক্ত শহরটি চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দুই মাইল দূরে অবস্থিত । ১৯৮৬ সালে চেরনোবিল পারমাণবিক প্ল্যান্টের দুর্যোগের পর শহরটি পরিত্যক্ত হয়। এই শহরটিকে দেখলে পারমাণবিক শক্তির ভয়ঙ্কর ক্ষমতার একটি চিত্র ফুটে ওঠে। এখনও প্রতি বছর এই শহরটিকে নিয়ে নতুন নতুন ভূতুড়ে গল্পের উৎপত্তি হয় ।
৯। মিশিগান সেন্ট্রাল স্টেশন, ইউএসএ (Michigan Central Station, USA )
মিশিগান সেন্ট্রাল স্টেশন ১৯১৩ সালে নির্মাণ করা হয় । এটি ছিল একটি বৃহৎ রেলওয়ে পার্ক কিন্তু ৫ জানুয়ারি ১৯৮৮ সালে সর্বশেষ কোন ট্রেন এই স্টেশন ছেড়ে যায়। এর পরেদিন স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়া হয় এবং ভবনটি ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় ।
১০। নারা ড্রিমল্যান্ড থিম পার্ক, জাপান (Nara Dreamland theme park, Japan )
১৯৬১ সালে নারা ড্রিমল্যান্ড থিম পার্কটি প্রতিষ্ঠিত হয় কিন্তু তহবিল অপর্যাপ্ততার কারণে ১৯৯০ সালের দিকে পার্কটি বন্ধ করে দেয়া হয় । একটা টিপিক্যাল চিত্তবিনোদন পার্কের যে সব বৈশিষ্ট্য ও সরঞ্জামদি থাকা দরকার এই পার্কের সবই ছিল যেমন- একটি রোলার কোস্টার , ক্যারোসেলে, দুর্গ এবং আরও অনেক কিছু । এখনও এটা পরিষ্কার এবং শান্ত, এমনকি দেয়ালে কোন আঁচড়ের দাগও নেই । এখনও ভবনের সকল সরঞ্জাম ও সুযোগ-সুবিধা আছে ।
লেখিকা সম্পর্কেঃ মাহাবুবা শিরিন সুইটি । ভাল লাগে বই পড়তে, সিনামা দেখতে, নতুন নতুন খাবার খেতে, ঘুরে বেড়াতে এবং বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। আমি তেমন লিখতে পারি না ।