অন্বেষা দত্ত কে চিনি আরোও তিন বছর আগে থেকে। তখন চমৎকার লিখতো মেয়েটা। আমার মনে আছে, কোনো এক মধ্যরাতে ওর ফেসবুক একাউন্টে ঢুকে রাত পার করে দিয়েছিলাম ওর লেখা পোস্টগুলো পড়তে পড়তে। সেই সময়ে লেখালেখির পাশাপাশি আঁকা আঁকিও করতো মেয়েটা। চমৎকার আঁকার হাত। হ্যারি পটারের ছবি এঁকেছিল, দেখে একদম মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম গোল চশমা পরিহিত হ্যারির দিকে। এতোটা হুবহু আদল বুঝি আঁকিয়ে হাতের আঁচড়ে ফুটে ওঠে? তার কিছুদিন পর আমার আইডি নষ্ট হয়ে গেলো, ওর সাথে যোগাযোগের পথ বন্ধ হয়ে গেল।
তারপর একদিন হুট করে আবারো খুঁজে পেলাম ওকে। তবে এবারে আর ওর নামে খুঁজে পাইনি। পেয়েছি ওর সৃষ্টি, “ত্রিনিত্রি“র মাধ্যমে। লেখালেখি একদম ছেড়ে দিয়ে ত্রিনিত্রিতেই ডুবে আছে তখন। জিজ্ঞেস করেছিলাম, লেখালেখি করছে না কেন? উত্তরে বললো, “লেখালিখি তো টুকটাক করতাম। আর আর্ট টা ছোটবেলা থেকেই নেশা। তাই নেশাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি। আর্ট আর ক্রাফটের মধ্যে থাকলে মনে হয় বেঁচে আছি।”
ত্রিনিত্রির সূচনা হলো কীভাবে? ক্রিয়েটরের ভাষ্যেই শুনুন, “ত্রিনিত্রির সূচনা আর্টের প্রতি ভালবাসা আর আগ্রহ থেকেই। যাতে কখনো এই ভালবাসা কমে না যায় বা ফিকে না হয়ে যায় তাই কিছু একটার মাধ্যমে সেটাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা।”
মেয়েটা সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে আঁকতে। বিশেষ করে, ফেলে দেওয়া জিনিসের রিসাইকেলিং করতে খুব ভালো লাগে তার। আর্ট আর ক্রাফটের প্রতি ভালোবাসাকে পুঁজি করে একপ্রকার জেদ করেই ত্রিনিত্রির যাত্রা শুরু করেছিল সে। নিজের ভালোবাসা, সখ, স্বপ্নকে এভাবে একক প্রচেষ্টায় পেশায় রূপ দিতে পারে কয়জন? কাঠের গয়না, কাপড়ের জামা-পাঞ্জাবির উপর তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা অবয়ব, ফুল-পাখি গুলো যেন একেকটা স্বপ্ন। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়। একেকটা কাজ এতোই নান্দনিক যে, শুধু তাকিয়ে থাকলেও যেন অদ্ভুত তৃপ্তি পাওয়া যায়।
চিটাগাংয়ের বাসিন্দা হওয়ায় ত্রিনিত্রির কেনাবেচা পুরোটাই চলে অনলাইনের উপর। দাম “রিজনেবল” হওয়া সত্ত্বেও অনেকে প্রোডাক্ট পছন্দ করেও কিনতে পারে না, বাড়তি কুরিয়ার খরচের কারণে। ত্রিনিত্রিকে অফলাইনে আনার চিন্তা আছে কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে অন্বেষা বলেন-“হ্যাঁ, ইচ্ছা আছে মেলা করার। ভাল ভাল মেলাগুলো সব ঢাকায় হয় এইজন্য করা হয়ে উঠে না। ত্রিনিত্রিকে অনেক বড় করার প্ল্যান আছে। ইচ্ছা আছে একটা ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত করার।”
আজ ত্রিনিত্রির বয়স চৌদ্দ মাস। এই সময়টুকু পেরিয়ে আসতে কম ঝক্কি পোহাতে হয়নি অন্বেষাকে। শুরুতেই অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরুতে হয়েছে। আর্ট নিয়ে কিছু করার ব্যাপারে প্রথমে তার পরিবারের সমর্থন ছিল না মোটেও। তারা চাইতো মেয়ে যেন শুধু পড়াশোনাতেই মনোযোগ দেয়। কেউ হয়তো ভাবেনি তখন, এ রকম উদ্যোগ নেওয়াটা ভালো কিছু। সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে নিজের নেশাকে পেশা বানানোর যাত্রা শুরু করে অন্বেষা।
এছাড়াও এখন আরোও অনেক প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে হয় মেয়েটাকে। নিজের মেধা, শ্রম, সময় দিয়ে বানানো একেকটা আইডিয়া চুরি হয়ে যায় ছবি পোষ্ট করার পর পরই। একজন রূপকারের জন্য এরচেয়ে কষ্টের ব্যাপার আর কী হতে পারে?
আবার গহনা বা পোষাক বানানোর পর পাঠাতে হয় কুরিয়ার সার্ভিসে। কুরিয়ারের লোকদের সঠিক সময়ে সার্ভিস না দেওয়ায় ক্রেতাদের অসন্তোষের তীরটা আসে মেয়েটার দিকেই। অথচ সে তো তার নিজের কাজটুকু নিপুণ হাতে, যত্ন নিয়ে সম্পন্ন করেই পাঠায়।
কুরিয়ারের বাঁধা, নিজের ডিজাইন চুরি সত্ত্বে থেমে নেই ত্রিনিত্রি। এগিয়ে যাচ্ছে দূর্বার গতিতে…
সমস্ত বাঁধা পেরিয়ে ত্রিনিত্রি এগিয়ে যাক, অন্বেষার মতো সাহসী সৃজনশীল মেয়েরা আরোও বহু দূর পর্যন্ত এগিয়ে যাক।
ত্রিনিত্রি থেকে আপনার পছন্দের হ্যান্ডিক্রাফটি কিনতে মেসেজ করতে পারেন ত্রিনিত্রি’র ফেসবুক পেইজে- ত্রিনিত্রি- Trinitri
বিশেষ কৃতজ্ঞতায়- ফরহাদ আহমদ নিলয়