এস্কিমোদের অনেক নামে পরিচিতি রয়েছে যেমনঃ “Eskimos” “Eskimaux” “Inuit–Yupik” “Inupiat–Yupik”। সবাই জানে সাহসী, সিল মাছের চামড়ায় আবৃত কাঠের নৌকায় বৈঠা চালানো উত্তরের এই মানুষগুলো কঠিন অবস্থায় বসবাসকারী।
আমরা কি আসলে তাদের সম্পর্কে জানি? গম্বুজ আকারের কু্টির, কোঁচ জাতীয় অস্ত্র, আর পশুরলোমে তৈরী পোশাকে আবৃত জামা ছাড়া এই ঐতিহাসিক শিকারী-সংগ্রাহক এবং তাদের আধুনিক জ্ঞাতি সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি।
১। নাম
“ইন্ডিয়ান” পদটি যেভাবে নেটিভ আমেরিকানদের জন্য অপমানজনক মনে করা হয়, তেমনি ”এস্কিমো” পদটিকেও বর্ণবাদী মনে করা হয় যদিও এটা নিরপেক্ষ প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত হতে পারে বা হয়ে থাকে।
যাই হোক এটি বহুল ব্যবহৃত, ব্যাকরণ গতভাবে গ্রহণযোগ্য, বৈজ্ঞানিক পদ হিসেবে বিবেচিত হয়। যদিও পুরনো আল্গোঙ্কুইয়ান “askimo” পদ ভিত্তিক “eskimo” পদটিকে হয় ডেনিশ অথবা ফ্রেঞ্চ মনে করা হয়। এটি বলতে আসলে কি বুঝায় “meat eater” নাকি “snow-shoe netter” সে বিষয়ে গবেষকদের একমত নন।
এখনো এস্কিমোদের অনেকে এই নিজেদের জন্য অপমানজনক মনে করে, তাই তাদের সম্মানার্থে পরবর্তীতে এই পদের ব্যবহার এড়িয়ে যাবো যখনি সম্ভব হয় । সার্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য, রাজনৈতিকভাবে সংশোধিত (এবং তারা নিজেরা নিজেদের জন্য ব্যবহৃত নাম)নাম হচ্ছে ইনুইট। এটি অনেকটা “ছাতা নাম” বিশেষ অর্থাৎ ইনুইটরা ইনুপিয়াট ও ইউপিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত,যাদের আরো বিভাগ আছে অনেকটা ছাতার মত।
ইনুইট পদটি যখন ব্যবহার করা হয় তখন অনেকে জানে না এটি একটি বহুবচন। ইনুইট গোত্রের প্রতিটি সদস্যদের আলাদাভাবে বুঝাতে বলা হয় “ইনুক”।
২। দ্য এস্কিমো কিস
এস্কিমোদের চুম্বন বলতে প্রেম, অনুরাগ, স্নেহের প্রতীক স্বরূপ দুজন মানুষের পরস্পরের নাক ঘর্ষণ করাকে বুঝায়। ইনুইটরা সচরাচর চুম্বনের স্থলে এই নাকের সাথে নাকের অর্থবোধক অঙ্গভঙ্গি, ইশারাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে । কেননা সচরাচর নিয়মে ঠোঁটের সাথে ঠোঁটের স্পর্শ হতে গেলে তাদের মুখের লালা বা থুথু ঠান্ডায় জমে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি হতে পারে।
এস্কিমোদের এই বিশেষ ধরণের আদরকে বলা হয় “kunik” , যেখানে চুমু বলতে এক সাথে নাক ঘষা ছাড়া তেমন কিছুই থাকে না। মূলত এটি এক ধরণের আন্তরিকতার প্রকাশ বা অভিবাদন যার চর্চা মাতা-পিতা আর সন্তান এবং দম্পতি বা জু্টিদের মধ্যে দেখা যায়। অভ্যর্থনার এই প্রক্রিয়াটি আপাতভাবে নাকের স্পর্শ মনে হলেও তারা মূলত পরস্পরের চুলের আর গালের ঘ্রাণটাই(মানুষের গালে অনেক গুলো সুগন্ধিযুক্ত গ্রন্থি থাকে) নিয়ে থাকে। এই কৌশলে দুজন ব্যক্তি একে অপরকে না দেখে থাকলেও এই ঘ্রাণের ব্যাপারটি দিয়ে একে অপরকে অনান্য মানুষ এবং তাদের ঘ্রাণ সম্পর্কে মনে করিয়ে দিতে পারে।
যদিও “kunik” এর সাথে চুম্বনের বিষয়টি যায় না, তবে সাধারণভাবে এটাকে ঘনিষ্ঠ, অন্তরঙ্গ ইশারা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যা জন সম্মুখে বলতে গেলে হয় না।
৩। খাদ্য
যদিও পাশ্চাত্য খাবার ও দোকানে প্রবেশাধিকারের সুযোগে তাদের খাদ্য তালিকা পাশ্চাত্য ঘরানার দিকে ধাবিত হলেও, তাদের ঐতিহ্যগত খাবার তালিকা বেশ চমকপ্রদ। একজন নিরামিষ ভোজনকারী ব্যক্তির পক্ষে এই ইনুইট গোত্রের এমন ঐতিহ্যগত খাদ্যের পরিবেশে বসবাস করা কঠিন হবে। কারণ তারা অনুর্বর আর ঠান্ডা পরিবেশে বসবাস করে, তাদের খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরণের মাংস এবং মাঝে মাঝে বেরি ফল (জামের মত রসালো ফল)আর সামুদ্রিক উদ্ভিদ থাকে।
এমনকি আধুনিক সময়েও ফলমূল আর সবজি খুবই দুর্লভ এবং আমদানি করা বেশ ব্যয়সাধ্য। তাই তারা এখনো নিজেদের জমির উপরই নির্ভর করে থাকে।
ইনুইটরা বরারই শিকারী হিসেবে সুদক্ষ, সবকিছুই যেন তাদের হস্তগত। তাদের মাংসের তালিকায় থাকে তিমি, বলগা হরিণ, সিন্ধুঘোটক(সামুদ্রিক প্রাণী),সীল মাছ এবং পাখি। এমন কি মাঝে মাঝে সাদা ভাল্লুকও থাকে। খাবারের প্রস্তুত প্রণালী আছে অনেক ধরণের যেমন- শুকানো, সীলের তেলে রান্না করা, পুঁতে রেখে ফাঁপানো ইত্যাদি। কিছু খাবার কখনো রান্না করা হয় না। কিছু খাবার আবার হিমায়িত ভাবে খাওয়া হয়, কাঁচা হোয়াইট ফিশ এক্ষেত্রে রুচিকর খাবার।
এটা ভাবা খুব স্বাভাবিক, খাবার তালিকায় মাংসের প্রাধান্যতা বেশি থাকলে তা চরম অসুস্থতার দিকে ঠেলে দিবে। এক্ষেত্রে এই তালিকার অনুসারী ইনুইটরা পৃথিবীর সবচেয়ে স্বাস্থ্যবান মানুষ। আর এই “Inuit Paradox” অনেক দিন ধরে বৈজ্ঞানিক আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে।
৪। ইগলো
ইগলো হচ্ছে ইনুইটের প্রতিভাশালী আবাসস্থল। গম্বুজাকারের তাদের এই নিজস্ব স্থাপনা বরফ আর তুষারের ব্লকে তৈরী হয় শীতকালীন শিকার সংগ্রহের অস্থায়ী ঘর হিসেবে। অর্থাৎ ইগলো, শিল্পকৌশল পূর্ণ এমন একটি আশ্রয়স্থল যা তুষার আন্তরিক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ (চরম ঠান্ডা থেকে রক্ষা করে)এবং প্রয়োজনীয় সকল কিছু দিয়ে শিকারকালীন বসবাসকে আরামদায়ক করতে এটি তৈরী হয়ে থাকে।
যদিও বেশিরভাগ মানুষের ছবিতে ইগলো ছোটখাট গম্বুজ আকৃতির তুষার ঘর মনে হলেও, এটি সুবৃহৎ পরিসরের, আকার-আকৃতিবং উপাদান সমন্বয়ের হয়ে থাকে। তবে ইনুইটরা ইগলো বলতে কেবল মাত্র একটি ঘর বা দালান যেখানে লোকজন থাকে এমন কিছুই বুঝিয়ে থাকেন। অর্থাৎ ছোট-বড় নির্বিশেষে যেকোন আকার আকৃতির আবাস। তার অর্থ এই যে এই মুহুর্তে (সম্ভবত) এই লিখাটি আপনি তেমন কোন “ইগলো”র ভেতরে অবস্থান করে পড়ছেন।
৫। দৈত্য-দানব
প্রতিটি সংস্কৃতিতে দৈত্য-দানবের মত রুপকথার অস্বাভাবিক জীবের অস্তিত্ব আছে, এমন কি যে সব সমাজে সত্যিকার অর্থে অস্বাভাবিক প্রাণী রয়েছে তাদেরও। ইনুইটরা বিপদজনক বরফের আবরণ, ভারী দেহের সিন্ধুঘোটক আর হিংস্র শ্বেত ভাল্লুক শিকার করে দিন অতিবাহিত করে থাকতো। তাই বুগিম্যনের গল্পে ইনুইট শিশুরা ভয় পেতো না। তারা খুব ভালো ভাবে জানতো প্রায় প্রতিটা কোণায় সত্যিকার দাঁত আর নখর লুকিয়ে আছে। তারপরও এমন কিছু ছিল যা তারা ভয় করতো।
আর তাদের সেই ভয়ের নাম ছিল “Qallupilluk” যা বলতে মূলত অস্বাভাবিক কোন প্রাণীকেই বুঝিয়ে থাকে। এটি ছিল তাদের রুপকথার বুগিম্যান। পৌরণিক কাহিনী অনুসারে এটি ছিল মনুষ্য সদৃশ্য বিকৃত স্বভাবের, যা অমনযোগী মানুষদের বরফে ঢাকা গভীর সমুদ্রে টেনে নামিয়ে ফেলতে পানির নিচে অপেক্ষা করে থাকে । এটি ছিল সুমেরু সমাজের একটি প্রাকৃতিক এবং সতেজ ভয় যেখানে পানির নিচে যাওয়া অর্থই ছিল মৃত্যু।
৫। স্বর্ণকেশী
১৯১২ সালে স্টিফ্যান্সন নামের একজন অনুসন্ধানকারী সম্পূর্ণ অন্যরকম এক ইনুইট উপজাতি খুঁজে পেয়েছিলেন, যারা ছিল লম্বা, স্বর্ণকেশী এবং স্ক্যান্ডিন্যাভিয়ানদের মত দেখতে। এই বিষয়টি তাদের প্রকৃতি নিয়ে ঝলকানির মত উত্তপ্ত আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। ধারাবাহিকভাবে অধিকাংশ মানুষ একমত হয়েছিল যে কানাডার সুমেরু অঞ্চলের এই ইনুইটরা ছিল ভাইকিং অনুসন্ধানকারীদের উত্তর পুরুষ যারা শত বছর আগে সেখানে স্থায়ী হয়েছিল।
যেহেতু পরবর্তীতে তাদেরকে আর দেখা যায় নি, ভাইকিং তত্ত্বের উপর সন্দেহ দীর্ঘায়িত হয়। সেই সাথে ২০০৩ সালের একটি ডি এন এ গবেষণা “সত্য বলে ধরে নেওয়া” বিষয়টিকে আরো অনাবৃত করে। এমনকি এখনো যেসব বিজ্ঞানী স্টিফ্যান্সনকে ভুল প্রমাণ করতে চান তারাও এমন তত্ত্ব খুজে পান, যা জোর দেয় যে এর পিছনে কিছু একটা আছে। তাদের মতানুসারে আর্কটিকদের নিয়ে বিস্তৃত এই স্বর্ণকেশী রুপকথা সত্যেরই একটা আভাস হয়তো হতে পারে, এমনকি স্টিফ্যানসনের তথ্য পুরোপুরিভাবে সঠিক না হলেও।
৬। তুষারের শব্দ ভান্ডার
“এস্কিমো” শব্দটি শোনার সাথে সাথে প্রত্যেকের মনে প্রথমেই যে বিষয়টি আসে তা হল, তুষারপাত বুঝানোর জন্য তাদের নিজস্ব শব্দ সংখ্যা যেমন বেশি তেমনি খুবই অদ্ভুত। যা কার কাছে এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছে সেটির উপর নির্ভর করে, তবে তারা ৫০ থেকে ৪০০ শব্দের মাধ্যমে তুষারপাতকে বর্ণনা করতে ও বুঝাতে পারে। যার প্রতিটি শব্দ ভিন্ন এবং গল্পের মত করে তুষারপাতের বা হিমায়িত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও ধরণ বর্ণনা করে থাকে।
যাই হোক এটি পুরোপুরি সত্য নয়। তুষারপাতের অবস্থার বিপরীতে এতো শব্দের সংখ্যাধিক্য অনেকটা অনিচ্ছাকৃতভাবে ১৯ শতকে নৃবিজ্ঞানী ফ্রাঞ্জ বোয়াসের হাতে সৃষ্টি হয়েছিল, তিনি ইনুইটদের সাথে বসবাস করেছিলেন এবং তাদের নিয়ে গবেষণা করে ছিলেন। হিমায়িত ভূখন্ডের অবস্থা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইনুইটদের ব্যবহৃত বিশদ পদ সমূহ তাঁকে অভিভূত করে ছিল। যেমনঃ Aqilokoq বলতে তারা “softly falling snow” বুঝাতো এবং “piegnartoq” বলতে “the snow that’s good for sledge driving” বুঝাতো এবং এমন আরো অনেক। তিনি বলতে ভুলে গিয়েছেন, ইনুইটদের ভাষার কাঠামোর ধরণ মালা গাঁথুনির মত অর্থাৎ কয়েকটি শব্দ সমষ্টিকে একটি শব্দে দাঁড় করাতো।
বাস্তবে, তুষারের জন্য ইনুইটদের ততটাই শব্দ ছিল যতটা ইংরেজী ভাষীদের। মূলত তাদের ভাষা সেসব শব্দকেই নিজের আঙ্গিকে বিশেষ সূত্রে গেঁথেছে। আপাত দৃষ্টিতে একক শব্দ দিয়ে “yeah, that’s snow all right” থেকে শুরু করে “that snow that looks suspiciously yellow now and totally didn’t yesterday.” পর্যন্ত যে কোন কিছু বুঝানো যায় ।
৭। রক্ষাকবচ
প্রয়োজনীয়তার কারণেই, ইনুইটরা গরম, টেকসই কাপড় বুনতে খুবই সুদক্ষ। অতীতে তারা যখন বেঁচে থাকার জন্য শুধুমাত্র শিকারের উপর নির্ভর করতো তখনো তারা শিকারের জন্য তৈরী বিশেষ বর্ম-আবরণের কারিগর হিসেবেও প্রতিভাবান ছিল। মোটের উপর, তাদের অধিকাংশ শিকারী প্রাণী খুব বিপদজনক হতো এবং কোন রকম প্রতিরোধ ব্যবস্থা ছাড়া সেই বিপদের মুখোমুখি হতে কেউ চাইতো না।
ইনুইটদের ঐতিহ্যগত শিকারী সাঁজোয়া বা রক্ষাকবচ ছিল পাতলা আবরণ বিশেষ যা কাঁচা চামড়া এবং হাড়, সিন্ধুঘোটকের দাঁত বিশেষ করে গজদাঁতের সমন্বয়ে সংগঠিত হতো। কৌতুহলি ব্যাপার হলো, তাদের এই রক্ষাকবচের নকশার প্রাচীন জাপানিজ যোদ্ধাদের ব্যবহৃত বর্ম-আবরণের সাথে সাদৃশ্য পাওয়া যায়। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে তারা তাদের সহজ সরল এবং বেঁচে থাকা জন্য নিজেদের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে, তাদের শিকারকৃত প্রাণীর একটা অংশকে ব্যবহার করে অত্যন্ত কার্যকরী এই রক্ষাকবচের কথা সেই সময়ে তারা চিন্তা করতে পেরেছে এবং শিকারে সমর্থ হয়েছে।
৯। অস্ত্রশস্ত্র
যদিও অন্যান্য সংষ্কৃতির সংস্পর্শ ইনুইটদের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্রের সুযোগ করে দিয়েছে, যেখানে তাদের ঐতিহ্যগত অস্ত্রসমূহ ছিল হত্যাকৃত প্রাণীর বিশেষ অঙ্গ, গাছ ও পাথরের তৈরী। বড় পরিসরে তাপে ধাতু পিটিয়ে তৈরী করার কোন কিছু তাদের ছিল না, তাই তাদের অস্ত্রসম্ভারের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল হাড়, মুগুর, বল্লম, বর্শা, হাড় ছুরি, টেটা ইত্যাদি তাদের সাধারণ অস্ত্র। ধনুক এবং বোলাস (বিশেষ ধরণের অস্ত্র যেখানে দড়ির শেষপ্রান্তে ভারী কিছু যেমনঃপাথর চামড়ায় মুড়ানো থাকে)চামড়া, হাড়, পেশীতন্তু দিয়ে তৈরী করা হতো।
ইনুইট মহিলাদের ব্যবহৃত হিমায়িত মাংস কাটার জন্য বিশেষভাবে তৈরী বড় এবং বাঁকা ছুরিকে বলা হয় “ulu”।
কিন্তু সেটি প্রয়োজন অনুসারে আবার ছিদ্রযুক্তভাবেও তৈরী হতো। পুরুষরা kakivak নামক বর্শী ব্যবহার করতো যা তিনটি বল্লম সংযোগে গঠিত ছিল, যেখানে একটি শিকারকে বিদ্ধ করতো, অপর দুটি দুইপার্শ্ব থেকে শিকার যাতে পালিয়ে যেতে না পারে তা নিশ্চিত করতো ।
যেহেতু ইনুইটদের অধিকাংশ অস্ত্রশস্ত্র সমূহ প্রধানত শিকার এবং জবাইয়ের কাজে ব্যবহৃত হতো, সেহেতু সেগুলো সর্বাধিঙ্কার্যকর করার লক্ষ্যেই বিশেষভাবে তৈরী হতো। ছুরিগুলো খুব ধারালো এবং খাঁজকাটা হতো । সেই সাথে নকশা হতো পরিছন্ন কাঁটাখুটি, টুকরা করার চেয়ে থেতলানো, ছিন্ন করার উপযোগী। একই অস্ত্র আবার পরিস্থিতি ভেদে যুদ্ধের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করতো। যার ফলে শত্রুদের কাছে ইনুইট যুদ্ধারা ছিল ভয়ানক এক মূর্তি।
১০। দারিদ্র্য
অগ্রসমান আধুনিক জীবন এবং প্রণীত আইনের ফলে ইনুইটরাও অষ্ট্রেলিয়ান “Abogirinals” এর মত আধা-যাযাবর গোষ্ঠীর অনুরূপ ভাগ্যের সম্মুখীন হয়েছে। জীবনের ” আধুনিকীকরণ” এর ফলে তাদের দারিদ্র্যতা ও বেকারত্ব দেখতে হয়েছে এবং তা পশ্চিমা বিশ্বের অনান্য অংশের চেয়ে বেশি। সেই সাথে বৈষম্য এবং সংষ্কৃতি হিসেবে আমলা কর্তৃক উপেক্ষার (বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে) শিকার হওয়ায় তাদের মধ্যে সামাজিক নানা সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে যেমনঃ মদের আসক্তি।
পশ্চিমা ডায়েট এবং কম শ্রমশক্তি সম্পন্ন জীবন প্রবাহ তাদের ভেতর নানা ধরণের শারীরিক সমস্যার জন্ম দিয়েছে।
এটা এখন দেখার বিষয়, তারা কিভাবে বেঁচে থাকে। একটি সম্ভাবনা হচ্ছে উত্তরের সুদের বড় ব্যবসা এবং অঢেল প্রাকৃতিক সম্পদ। ইনুইটরা এই এলাকা সম্পর্কে জানে এবং প্রবাহমান কর্মীসংখ্যাও অনেক । তাই অন্ততপক্ষে তাদের আর্থিক ভবিষ্যত উজ্জ্বল হতে পারে।
লেখিকা সম্পর্কেঃ এ্যানি মাসুদ। ভাল লাগে লেখালেখি, বই পড়া,কবিতা লেখা। এছাড়া নতুন এবং সিম্পল রান্না শিখতে এবং খাওয়াতে পছন্দ করি। ইউ এস এ বাংলা পত্রিকা “ঠিকানা”য় মুক্তাঙ্গনে নিয়মিত লিখা হয়। তাছাড়া অনলাইনে লেখালেখির সাথে জড়িত বছর খানেক ধরে। পরিবারকে সময় দিতে ভালোবাসি। কাজ করি কিন্তু চাকরি করি না।