স্মার্ট বলতে আমরা কী বুঝি? করিৎকর্মা, চটপটে, বুদ্ধিমান, তীক্ষ্মধী বা বিচক্ষণ, তাই নয় কি? আমাদের প্রত্যেকেরই ইচ্ছা থাকে, নিজেকে সবার সামনে স্মার্ট ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরার। কিন্তু সবাই তো আর সহজাতভাবে একইরকম স্মার্টনেসের অধিকারী হন না। স্মার্টনেসের কিছুটা হয় সহজাত, আর কিছুটা অর্জিত। স্মার্টনেস অর্জন করা ব্যক্তির নিজের প্রচেষ্টার ওপর নির্ভর করে। মূলত নিজেকে স্মার্ট দেখানোর সহজ কিছু কৌশল নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।
মনের ভাব স্পষ্টভাবে প্রকাশ করুন:
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কগনিটিভ সাইকোলজির অধ্যাপক ড্যানিয়েল ওপেনহেমারের মতে, “স্মার্ট মানুষদের শব্দসম্ভার বেশ সমৃদ্ধ হয়”। অনেকেই কথা বলার সময় এই তত্ত্ব কাজে লাগিয়ে নিজেকে অন্যের কাছে স্মার্ট হিসেবে তুলে ধরতে চেষ্টা করেন।
কিন্তু ওপেনহেমারের গবেষণা অনুযায়ী, লেখকদের মধ্যে যাঁদের লেখা সহজবোধ্য হয়, তাঁদেরকেই বেশি স্মার্ট ভাবা হয়। পাঠকদেরকে মুগ্ধ করার জন্যে লেখকেরা বড়বড়, দুর্বোধ্য সব শব্দের ব্যবহার করলে বরং তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মানুষ মূলত মনের ভাব স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারাটাকেই বুদ্ধিমত্তার নিদর্শন হিসেবে ধরে নেয়। আর তাই স্মার্ট লেখকেরা তাঁদের লেখায় ভিন্ন ধাঁচের শব্দ ব্যবহার করলেও তাতে লেখার প্রকৃত অর্থ বুঝতে তেমন অসুবিধা হয় না।
রসবোধসম্পন্ন আচরণ:
সাইকোলজিক্যাল রিপোর্টস জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, বৈষয়িক ব্যাপারে আলাপ আলোচনারত নয়, বরং মজাদার কৌতুকে মেতে থাকা পুরুষদেরকেই মহিলারা বেশি আকর্ষণীয় এবং স্মার্ট বলে মনে করেন। তাঁদের এমন ধারণা একেবারে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেয়াও যায় না কারণ, স্বতঃস্ফূর্তভাবে ক্রমাগত রসাত্মক মন্তব্য করতে হলে কিছুটা তো বোধবুদ্ধি থাকতেই হয়। তাছাড়া রসিকতার সময় ভদ্রতার সীমা লংঘন করা, স্থূল ও অপমানজনক রসিকতা করা কখনোই কাম্য নয়। একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তিই এসব দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে নিজের পরিমিত রসবোধ দিয়ে অপরের চোখে আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারেন।
আপনার হাসিটি যেন হয় বিশ্বাসযোগ্য:
জার্নাল অব ননভার্বাল বিহেভিয়ার এর এক গবেষণা অনুসারে, “যাদের হাসি বিশ্বাসযোগ্য হয়, হাসলে চোখের চারপাশের চামড়ায় ভাঁজ তৈরি হয়, তাদেরকে মেকি হাসি হাসা লোকদের তুলনায় বেশি বুদ্ধিমান হিসেবে ধরা হয়।“ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হাসির সঙ্গে স্মার্টনেসের সরাসরি কোন যোগসূত্র নেই। পুরো ব্যাপারটাই ঘটে “হ্যালো ইফেক্ট”-এর কারণে। একজন মানুষ যখন আমাদের দিকে তাকিয়ে আন্তরিক হাসি দেন, তখন তাঁর এই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের কারণে তিনি আমাদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেন। ফলে আমরা তাঁর অন্যান্য ইতিবাচক দিক, যেমন বুদ্ধিমত্তার বিষয়টির দিকেও বিশেষভাবে নজর দিই, ফলে উক্ত ব্যক্তিকে আমাদের কাছে স্মার্ট বলে মনে হয়।
Source: cf.ltkcdn.net
বই পড়া:
বই পড়া একটি চমৎকার অভ্যাস। এটি জ্ঞানের পরিধি তো বৃদ্ধি করেই, মানুষকে সুন্দর, স্বচ্ছ ও গভীরভাবে যেকোন বিষয় ভাবতে এবং নিজের সুস্পষ্ট মতামত তৈরিতেও ভূমিকা রাখে। আর নিঃসন্দেহে এসব বৈশিষ্ট্য একজন মানুষের স্মার্টনেস অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়।
কিন্তু সঙ্গে এটাও মনে রাখা দরকার, সত্যিকার অর্থেই বই পড়ার অভ্যাস না থাকলে হয়তো হাতে একটি ক্লাসিক বই তুলে নিয়ে পড়ার ভান করে সাময়িকভাবে কারো কাছে স্মার্টনেস জাহির করা যেতে পারে, কিন্তু নিয়মিত, দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে এই কৌশল তেমন কার্যকরী নয়।
Source: www.rd.com
চশমা পরলে স্মার্ট ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে:
ইউ.কে. বেইজড কলেজ অব অপ্টোমেট্রিস্টের চালানো এক জরিপ অনুসারে “৪৩ শতাংশ লোক মনে করেন চশমা পরলে মানুষকে বেশি স্মার্ট দেখায়”। কোন বাড়তি প্রচেষ্টা ছাড়াই সবার নজর কাড়তে সাহায্য করে চশমা। তাছাড়া সমাজের উচ্চপদস্থ জ্ঞানী ব্যক্তিদের অধিকাংশেরই চোখে চশমা থাকতে দেখা যায়। তাই উচ্চস্তরের জ্ঞান সংশ্লিষ্ট যে কোন জিনিস, যেমন- পুরু বই, চশমা, স্পষ্ট বাচনভঙ্গী, এমনকি ধূসর চুলও একজন ব্যক্তির স্মার্টনেসের পরিচয় বহন করে।
চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা:
কারো সঙ্গে কথোপকথনের সময় যখন আমরা দেখি যে তিনি আমাদের চোখের দিকে তাকিয়ে আমাদের কথা শুনছেন, তখন আমরা মনে করি যে, তিনি আমাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন এবং যা বলা হচ্ছে তা বুঝতে পারছেন। এর বিপরীত ঘটনা ঘটলে আমরা অপরপক্ষকে বোকা, স্থূলবুদ্ধিসম্পন্ন ও নিষ্প্রভ বলে ধরে নিই। সুতরাং চোখে চোখ রেখে কথা বলা এবং শোনাও এক ধরণের স্মার্টনেস।
আপনি স্মার্ট হয়ে উঠতে পারেন, সে বিশ্বাস রাখুন:
আপনি শুধু দেখতে স্মার্ট নয়, বরং আদতেই স্মার্ট হয়ে উঠতে পারেন, সে বিশ্বাস রাখুন। নিজে যখন মনের মধ্যে এ বিশ্বাস গড়ে তুলবেন, তখন এমনিতেই আপনার স্মার্ট হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। আপনার মস্তিষ্ক তখন বুঝবে যে, এর ধারণক্ষমতা সীমিত নয় এবং তা শেষ হয়েও যায়নি। ফলে আপনার মস্তিষ্ক নতুন নতুন বিষয় শিখতে ও জানতে উৎসাহী হবে। এভাবে আপনি নিজের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে শিখবেন এবং সত্যিকার অর্থেই স্মার্ট হয়ে উঠবেন।
অন্যের কাছে নিজেকে স্মার্ট ও বুদ্ধিমান হিসেবে তুলে ধরতে পারলে আমাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। কিন্তু আমাদের আশেপাশের মানুষজন কাউকে পছন্দ করার ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে তার আন্তরিকতা ও দয়ালু স্বভাবকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, বুদ্ধিমত্তাকে নয়। তবে এটাও সত্য, কারো পছন্দের সাথেসাথে তার সম্মানও অর্জন করতে হলে সেখানে বুদ্ধিমত্তা অবশ্যই দরকার। তাই বলা যেতে পারে, কেবল অন্যের পছন্দের পাত্র হতে হলে তার প্রতি সহানুভূতিশীল হোন, আর সম্মান অর্জন করতে হলে নিজেকে বুদ্ধিমান হিসেবে তুলে ধরুন সবার সামনে।