ঘোরাঘুরি করতে কার না ভাল লাগে ? ছোট বড় নির্বিশেষে সবাই ঘুরতে যেতে পছন্দ করে । তবে ছোটদের ঘুরতে যাওয়ার পছন্দের জায়গা এবং বড়দের ঘুরতে যাওয়ার পছন্দের জায়গার মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে । মূল পার্থক্য হচ্ছে ছোটরা ঘুরতে গিয়ে লাফালাফি, দৌড়াদৌড়ি করতে পছন্দ করে অথবা বিভিন্ন ধরনের রাইডে চড়তে পছন্দ করে অথবা অনেক শিশুদের মধ্যে থাকতে পছন্দ করে । মোটামুটি আমাদের সবার বাসাতেই ছোট্ট শিশু আছে এবং মাঝে মাঝেই তারা বাইরে ঘুরতে যাবার বায়না করে । কিন্তু কোথায় ঘুরতে নিয়ে যাওয়া যায় অনেক সময় তা আমরা বুঝতে পারি না বা জানিনা আমাদের কাঙ্ক্ষিত ঘুরতে যাওয়ার জায়গাটিতে কিভাবে যাব বা ওখানে প্রবেশ টিকেট কত বা অন্যান্য আর কোন খরচ আছে কিনা । যারা এরকম দ্বিধা দন্দে আছেন বা তাদের বাসার শিশুদের নিয়ে বাইরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন তাদের জন্য আজকের এই ভ্রমন সহায়িকা । আশাকরি উপকৃত হবেন ।
১। ঢাকা শিশু পার্ক
এটি ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত । ঢাকা শিশু পার্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৭৯ সালে ১৫ একর জমি নিয়ে এবং বাংলাদেশে এটিই শিশুদের জন্য প্রথম বিনোদন পার্ক । এটি একটি খোলামেলা পার্ক যেখানে রয়েছে ১২ টি ভিন্ন ভিন্ন রাইড । যেমন- খেলনা ট্রেন, মেরি গো রাউন্ড,দোলনা, নাগরদোলাসহ আরও আকর্ষণীয় এবং নিরাপদ রাইড । তাছাড়াও বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এখানে শিশু পার্ককে একটি যুদ্ধ বিমান দান করেছে যা সবার দেখার জন্য উন্মুক্ত । এখানে প্রতিদিন ৬০০০ দর্শনার্থী পার্কে বিনোদন নেয়ার জন্য পরিদর্শন করে । চারিদিকে সবুজে ঘেরা পার্কটিতে রয়েছে প্রকৃতির ছোঁয়া । খোলামেলা জায়গা রয়েছে প্রচুর যেখানে শিশুরা দৌড়াদৌড়ি করতে পারে, খেলতে পারে অন্য শিশুদের সাথেও ।
প্রবেশ মূল্য :
টিকেট ৮ টাকা জনপ্রতি । প্রতিটা রাইডে উঠার মূল্য ৬ টাকা (জনপ্রতি) ।
কবে যাবেন না :
রবিবার শিশু পার্ক বন্ধ থাকে । বুধবার পার্কটি শুধুমাত্র পথশিশুদের জন্য উন্মুক্ত থাকে ।
কবে যাবেন এবং কখন যাবেন :
অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত পার্কটি সপ্তাহের প্রতি সোম থেকে শনিবার দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত খোলা থাকে । আর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রতি সোমবার থেকে শনিবার দুপুর ৩ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত । শুক্রবার দুপুর ২ ৩০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৭ ৩০ মিনিট পর্যন্ত খোলা থাকে ।
কিভাবে যাবেন :
ঢাকার যেকোন স্থান থেকে শিশু পার্কে আসতে হলে প্রথমে ঢাকা শাহবাগে আসতে হবে । শাহবাগ গোল চত্বরে নেমে পূর্ব দিকে কিছুক্ষন হাটলেই ঢাকা শিশু পার্ক লেখা বিশাল একটি গেট চোখে পড়বে । গেটে গিয়ে টিকেট কেটে ভেতরে প্রবেশ করা যাবে
সতর্কতা :
এখানে প্রতিদিন অনেক মানুষ ঘুরতে আসে তাই শিশুদের একা একা ছেড়ে দেয়া বিপদজনক । শিশুদের সবসময় চোখে চোখে এবং নিজের সাথে রাখুন । এখানকার খাবার খুব স্বাস্থ্যসম্মত নাও হতে পারে সেজন্য শিশুর জন্য বাসা থেকে খাবার এবং নিরাপদ পানি সাথে নিয়ে নিন ।
২। শিশুমেলা
ঢাকা শিশু পার্কের পরেই শিশুদের জন্য জনপ্রিয় পার্কটি হচ্ছে শিশুমেলা । এটি ঢাকার শ্যামলীতে অবস্থিত । পার্কটি ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত । পার্কটি খুব বেশী বড় না হলেও এখানে রয়েছে অনেক আকর্ষণীয় রাইড । এখানে রয়েছে থিম পার্ক, গার্ডেন পার্ক এবং কিছু জায়ান্ট রাইড । রয়েছে নাগরদোলা, বাম্পার কার, দোলনাসহ আরও অনেক রাইড ।
প্রবেশ মূল্য এবং রাইড মূল্য :
প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা ( জনপ্রতি) , প্রতি রাইডে উঠার মূল্য ২৫ টাকা (জনপ্রতি) ।
কখন যাবেন না :
পার্কটির কোন সাপ্তাহিক ছুটি নেই তাই যেকোন দিন যেতে পারেন এখানে ।
কবে এবং কখন যাবেন :
পার্কটি সপ্তাহের ৭ দিনই খোলা থাকে । দুপুর ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত । শুধু শুক্রবারে দুপুর ৩ টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে ।
কিভাবে যাবেন :
ঢাকার যেকোন জায়গা থেকে শ্যামলী আসতে হবে । শ্যামলী নেমে পূর্ব দিকে ঢাকা শিশু হাসপাতালের দিকে অগ্রসর হলেই হাতের ডানপাশে শিশুমেলার বিশাল গেট চোখে পড়বে । যারা নিউমার্কেট এর রাস্তা দিয়ে আসবেন তাদের শিশু হাসপাতালের দিকে না আসলেও চলবে কারন নিউমার্কেট থেকে শ্যামলী আসার একটু আগেই শিশুমেলায় ঢোকার আরেকটি গেট আছে । সেখান দিয়েও প্রবেশ করতে পারবেন ।
শিশু যেহেতু সাথে থাকবে সাথে বিশুদ্ধ পানি এবং শিশুর খাবার রাখুন ।এখানে যদিও রাস্তার পাশে অনেক খাবারের দোকান আছে কিন্তু সেগুলো শিশুদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে ।
৩। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর
এটি বাংলাদেশ বিমান বাহিনী পরিচালিত একটি বিমান জাদুঘর । এটি খুব সম্প্রতি চালু হয়েছে । এটি পুরাতন এয়ারপোর্টের একটি অংশে গড়ে উঠেছে । এখানে বিভিন্ন ধরনের সত্যিকারের অব্যবহৃত বিমান এবং হেলিকপ্টার আছে । পরিদর্শকরা চাইলে বিমানে উঠে বিমানের ভেতরে দেখতে পারে । মিছেমিছি প্লেন ও চালাতে পারেন প্লেনের ড্রাইভিং হুইল ধরে । তবে সব বিমানে উঠা যাবে না । দুটো বিমানে উঠার অনুমতি আছে । এছাড়াও শিশুদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রাইড এবং লেকে নৌকায় চড়ার সুযোগ । রয়েছে অদ্ভুত সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ । চারপাশে সবুজ বিশাল প্রান্তর আর উপরে বিশাল নীল আকাশ । আর কাঁটাতারের বেড়ার ওপাশ দিয়ে এয়ারপোর্টের খোলা বিস্তৃত অংশ দেখার সুযোগও মেলে এখানে গেলে ।
প্রবেশমূল্য :
পার্কের প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা (জনপ্রতি) ।
রাইড মূল্য :
বলাকা প্লেনসহ অন্যান্য রাইডে চড়তে লাগবে ৩০ টাকা (জনপ্রতি) করে প্রতি রাইডের জন্য । এবং বোটে ভ্রমন করতে লাগবে ৫০ টাকা (জনপ্রতি) ।
কবে যাবেন না :
এই বিমান জাদুঘরটি রবিবার বন্ধ থাকে ।
কবে এবং কখন যাবেন :
প্রতি শুক্রবার এবং শনিবার সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এটি উন্মুক্ত থাকে । আর প্রতি সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকে ।
শিশু যেহেতু সাথে থাকবে সাথে বিশুদ্ধ পানি এবং খাবার রাখুন । এখানে একটি আকর্ষণীয় রেস্তরাও আছে । চাইলে সেখানেও খেতে পারেন । গেটের সাথেই আছে রকমারী পন্যের একটি ছোট দোকান,সেখান থেকে চাইলে আপনার পছন্দের জিনিসটি ক্রয় করতে পারেন ।
৪। ওয়ান্ডারল্যান্ড
ঢাকার গুলশানে ওয়ান্ডারল্যান্ড অবস্থিত । এটিও শিশুদের ভ্রমন উপযোগী একটি পার্ক । এখানেও রয়েছে উন্মুক্ত জায়গা এবং অনেক রাইড যা শিশুদের উপযোগী । পার্কটি আয়তনে মোটামুটি বড় । পার্কটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ১২ জন নিরাপত্তা কর্মী আছে । রয়েছে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা আলাদা টয়লেট এর ব্যবস্থা । এখানে পার্কের দক্ষিন পূর্ব দিকে জুরাসিক পার্ক নামে একটি অংশ রয়েছে যেখানে অনেকগুলো একুরিয়াম আছে । এই একুরিয়ামগুলোতে অনেক আকর্ষণীয় মাছের সমাহার আছে ।
এখানে প্রায় ২০ টি রাইড আছে । যেমন – সুপার চেয়ার, মেরি, ওয়েস্টার্ন ট্রেন, ব্যালন রাইড, এডভেঞ্চার ওয়ার্ল্ড, থ্রি ডি মুভি, থ্রি ডি এডভেঞ্চার ইত্যাদি । এখানে হোন্ডা স্ট্যান্টও দেখান হয় একটি বিশাল গোল কাঠের তৈরি মঞ্চের মধ্যে । পার্কটি শিশুদের পাশাপাশি বড়দের ঘোরার জন্যও উপযোগী ।
প্রবেশ মূল্য :
টিকেট মূল্য ১০০ টাকা (জনপ্রতি) । ২ বছরের শিশুদের টিকেটের প্রয়োজন নেই তবে ২ বছরের পর থেকে সবার টিকেট প্রয়োজন ।
রাইড মূল্য :
পার্কে প্রতি রাইড এর মূল্য ৩০ টাকা করে (জনপ্রতি) ।
কবে যাবেন না :
এই পার্কটি সপ্তাহের সাত দিনই খোলা থাকে । এখানে কোন সাপ্তাহিক ছুটি নেই তাই সবসময়ই এখানে যেতে পারবেন ।
কবে এবং কখন যাবেন :
পার্কটি সকাল ১০ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকে পার্ক দর্শনার্থীদের জন্য ।
কিভাবে যাবেন :
দর্শনার্থীরা ঢাকার যেখান থেকেই ওয়ান্ডার ল্যান্ডে আসতে চান না কেন তাকে গুলশান ২ নম্বর আসতে হবে । তারপর গুলশান ২ নম্বর গোলচত্ত্বর থেকে গুলশান ১ নম্বর এর দিকে যেতে হাতের বামে পার্কটির অবস্থান । গুলশান ২ গোলচত্ত্বর থেকে ওয়ান্ডারল্যান্ডে পৌঁছতে পায়ে হেটে ২ থেকে ৩ মিনিট সময় লাগবে ।
সতর্কতা :
পার্কে যেহেতু অনেক মানুষের সমাগম হয় এবং অনেক শিশু থাকে সুতরাং সবসময় নিজের শিশুদের চোখে চোখে রাখুন । শিশুদের জন্য বিশুদ্ধ পানি এবং খাবার সাথে রাখুন কারন পার্কের ভেতরে খাবার নাও পেতে পারেন আর পেলেও তা শিশু স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নাও হতে পারে ।
লেখিকাঃ শারমীন আক্তার সেতু। আমি পেশায় একজন মনোবিজ্ঞানী । কবিতা লিখতে এবং পড়তে পছন্দ করি । মনোবৈজ্ঞানিক ফিচার লেখার সাথে যুক্ত আছি। তাছাড়াও অন্যান্য বিষয়েও লিখতে এবং জানতে পছন্দ করি । আমি এর আগে পরামর্শ .কম এ লেখার সাথে যুক্ত ছিলাম । এখন কিছু ইংরেজি সাইটে অনুবাদের কাজ করছি । আমার শখ ভ্রমণ এবং গান গাওয়া । বাগান করতে পছন্দ করি এবং বিভিন্ন গাছ,ফুল্,ফল এবং নতুন নতুন জায়গার সাথে পরিচিত হতে ভাল লাগে।