ব্যক্তিত্বের যে ৯ টি দিক দেখে মানুষের ব্যাপারে ধারণা নেয়া যায়

গুরুজনরা বলে থাকেন, একটি বইয়ের কভার দেখে বইটির ব্যাপারে ধারণা করা উচিৎ নয়। বইটি পড়ে আপনি মজা পাবেন কিনা, সেটা শুধুমাত্র কভার দেখেই বলে দেয়া যায় না। তবে এখনকার মানুষ পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপারে আরও সচেতন। আমাদের এত সময় কোথায়,  একটা মানুষ নিয়ে গবেষণা করে জীবন পার করার! তাহলে মানুষ চিনবেন কি করে? কিভাবে জানবেন,  আপনি যে মানুষটির সাথে একটু আগেই পরিচিত হলেন, সে ভালো নাকি খারাপ? তবে দারুণ ব্যাপার হলো, একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব থেকেই তার ব্যাপারে প্রাথমিক ধারণা লাভ করা যায়! কি সেই ব্যক্তিত্বের অংশগুলো? চলুন একে-একে জেনে নেয়া যাক।

১. একজন মানুষ কতটা পজিটিভঃ ব্যক্তিজীবনে একজন পজিটিভ মানুষের প্রয়োজনীয়তা অনেক। মানব মস্তিষ্ক সবসময়ই পজিটিভ থাকতে চায়। কিন্তু চারপাশে অন্য মানুষগুলো প্রতিনিয়ত আপনাকে যখন নেগেটিভিটির দিকে ঠেলে দিবে, তখন পজিটিভ থাকা সত্যিই কষ্টসাধ্য। এখন বুঝবেন কিভাবে,  আপনি যে মানুষটির সাথে মিশতে শুরু করেছেন, সে কতটুকু পজিটিভ? গবেষকরা অবশ্য একটি উপায় বের করেছেন।

২০১৫ সালে চালানো এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যেসব মানুষ ‘সেলফি’ তোলার সময় বেশি এক্সপ্রেশন দেন, তারা ব্যক্তিজীবনে যথেষ্ট পজিটিভ। এই দলের মানুষগুলোর সাথে অন্যান্য মানুষের সম্পর্কও তুলনামূলক ভালো। বলার অপেক্ষা রাখে না, তারা নিত্যনতুন পরিকল্পনা এবং নতুন পরিস্থিতির সাথে সহজেই নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারেন। এই ধাঁচের মানুষগুলো যথেষ্ট খোলামেলা মনেরও বটে। তাই পজিটিভ মানুষ খুঁজে পেতে তাদের সেলফি’র উপর নজরদারি বাড়াতে পারেন!
                      
২. সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশনঃ একজন মানুষের ‘যৌন চাহিদার ঝোঁক’ কোন দিকে সেটা জানা বর্তমান সময়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। দেখা গেলো আপনি কোন মেয়েকে পছন্দ করে বসলেন। একটা পর্যায়ে গিয়ে জানতে পারলেন, মেয়েটি আসলে পুরুষদের প্রতি আকর্ষণবোধ করে না। কিংবা আপনি যদি নারী হয়ে থাকেন, তবে যে পুরুষটিকে পছন্দ করেন, তার নারীদের প্রতি আকর্ষণ নেই! কিন্তু আগে থেকেই যদি বুঝতে পারেন, আপনার পাশের মানুষটির ‘ঝোঁক’ কোনদিকে, তাহলে সেটা দু’জনের জন্যই ভালো হয়। এ ব্যাপারটি নিয়ে অনেকগুলো গবেষণাও হয়েছে।

গবেষকদের মতে,  একজন ব্যক্তির ‘তাকানোর ধরণ’ থেকে তার সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন সম্পর্কে আপনি ধারণা পেতে পারেন। ব্যক্তিটির বডি ল্যাঙ্গুয়েজও এখানে দারুণ ভূমিকা পালন করে।
তাহলে এখনই সময়, আপনার কাছের মানুষটির উপর ছোট একটি গবেষণা করে ফেলার!

৩.একজন মানুষ কতটা স্মার্টঃ গোপনীয়তার সাথে স্মার্টনেসের একটা গোপন যোগসূত্র আছে! আমরা সাধারণভাবে কাউকে দেখেই বলে দিতে পারি, সে স্মার্ট কিনা। কিন্তু কখনো কি পরিমাপ করে দেখেছেন,  যাকে স্মার্ট বলছেন সে কতটা স্মার্ট? এখন হয়তো একটু ভাবতে বসবেন।

একজন মানুষের স্মার্টনেস জানাটা যেমন জরুরি, তেমনি সে কতটুকু স্মার্ট সেটা জানাও জরুরি। এটা আপনাকে তার সাথে মিশতে সাহায্য করবে। আরও সাহায্য করবে মানুষটিকে আপনি কতটুকু গুরুত্ব দিবেন,  সেটা নির্ধারণ করতে।

তাহলে জেনে রাখুন,  স্মার্ট মানুষরা নিজেদের ব্যাপারে অন্য মানুষকে খুব কমই জানান। তাদের ব্যক্তিগত তথ্য কিংবা ভালোলাগার ব্যাপারগুলো সবাই জানতে পারে না। বলা যায়,  এটা তাদের আচরণেরই একটা অংশ।  আমরা যাকে ‘ভাব মারা’ বলে থাকি,  এটাই আসলে স্মার্টনেসকে আরও বাড়িয়ে তুলে!

৪.  এগ্রেসিভনেসঃ ২০০৯ সালের কানাডিয়ান এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নারীরা পুরুষদের ব্যাপারে খুব ভালোভাবে ধারণা নিতে পারেন। একজন পুরুষ কতটুকু রাগী হবেন,  সেটা তার চেহারায় ফুটে ওঠে। আর নারীরা সহজেই ব্যাপারটি বুঝতে পারেন। যেসব পুরুষের মুখের আকৃতি তুলনামূলক বড়, তারা অন্যান্য পুরুষ থেকে একটু বেশিই রাগী হন। তাছাড়া সেসব পুরুষের চোখের আকৃতিও সামান্য বড়।

৫. নেতৃত্বঃ একবার একটি কোম্পানীতে কর্মীদের সবাইকে এক জায়গায় জড়ো করা হলো। তারপর সেই কোম্পানীর বড় কর্মকর্তাদেরকে কর্মীদের সামনে দাঁঁড়াতে বলা হলো। এবার কর্মীদের বলা হলো,  সামনের কর্মকর্তাদের ভেতর কে বেশি নেতৃত্বের জন্য উপযোগী সেটা বের করতে।

দারুণ ব্যাপার হলো, বেশিরভাগ কর্মীই যাকে তাদের লিডার হিসেবে বেছে নিয়েছিল,  তিনিই ছিলেন কোম্পানীটির সবচেয়ে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা!

পরবর্তীতে কর্মীরা জানান, যাকে তারা লিডার হিসেবে বেছে নিয়েছেন তার ভেতর আত্নবিশ্বাসের একটা ব্যাপার ছিল।সেইসাথে তাকে দেখতেও বুদ্ধিদীপ্ত লাগছিল। যেটা অন্যান্য কর্মকর্তার চেয়ে ওই নির্দিষ্ট কর্মকর্তার বেশি ছিল। এটাই মূলত পার্থক্য গড়ে দিয়েছিল কর্মীদের চোখে। 
            

৬. অন্তর্মুখী নাকি বহির্মুখীঃ বহির্মুখী মানুষগুলো যেকোন পরিস্থিতিতে নিজের হাসিমুখটা ধরে রাখতে পারে। তাদের হাসিটাও হয় প্রাণখোলা। অন্যদিকে অন্তর্মুখী মানুষগুলো খুব একটা হাসেন না। কোন সামাজিক পরিবেশে থাকলে হয়তো জোর করে একটু হাসতে পারেন। তবে সেটাও একেবারে মাপা।

তবে মানুষ বহির্মুখী হোক কিংবা অন্তর্মুখী,  কোনটাই তেমন নেগেটিভ না। সব ধরণের মানুষই নিজের আশপাশের মানুষদের সাথে নিজের মত করে সম্পর্ক বজায় রাখেন। একজন অন্তর্মুখী মানুষ যেমন সমাজে ভালো-খারাপ দু’ধরণের প্রভাবই রাখতে পারেন, তেমনি একজন বহির্মুখী মানুষের ব্যাপারেও একই কথাটি বলা যায়।

৭. দূর্বল চিত্তের মানুষঃ একজন অসাধারণ মানুষ চাইলে খুব কম সময়েই অন্য একজন মানুষের দূর্বলতা খুঁজে বের করতে পারেন। এটা নির্ভর করে আপনি একজন মানুষকে কতটুকু ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছেন তার উপর। অবশ্য একজন সাধারণ মানুষের কাছে অন্য একজন মানুষের দূর্বল দিক খুঁজে বের করা সময়ের অপচয় ছাড়া কিছুই না।
যদি না তার চেয়েও দূর্বল কোন মানুষকে নিয়ে সে মজা করতে না চায়। আপনার চারপাশে প্রচুর মানুষ পাবেন, যারা মানুষের দূর্বলতা খুঁজে বেড়ান!

ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো, কোন মানুষ দূর্বল চিত্তের কিনা সেটা ক্রিমিনাল এবং সাইকোপ্যাথরা ভালোই আন্দাজ করতে পারেন! আপনার মনবল এবং কাজের ধরণ,  একজন ক্রিমিনালকে আপনাকে নিয়ে ভাবাবে।

৮. কতটা ধার্মিকঃ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, সুন্দর-পরিপাটি জামা পরা, এবং শরীরের প্রতি যত্ন নেয়া মানুষদেরকে সবাই বিনা দ্বিধায় ভালো চোখে দেখে। নিজেকে সবসময় গুছিয়ে রাখলে, অন্যরা আপনার ব্যাপারে পজিটিভ ধারণা পোষণ করবে। আর এরকম অভ্যাসগুলো  ধর্মের সাথেও খুব যায়। স্বভাবতই মানুষ আপনাকে একজন ধার্মিকের নজরে দেখবে!

আপনি মানুষকে নিজের ব্যাপারে কতটুকু পরিচ্ছন্ন আর স্বচ্ছ ধারণা দিচ্ছেন, সেটার উপর ভিত্তি করে মানুষ আপনার সাথে মিশবে। আর ধার্মিক মানুষ মাত্রই কোমল মনের অধিকারী বলে সবার বিশ্বাস।

৯. আত্নকেন্দ্রিকঃ আত্নকেন্দ্রিক মানুষ স্বাভাবিকভাবেই যে কারও অপছন্দের তালিকায়। মজার ব্যাপার হলো, একজন আত্নকেন্দ্রিক মানুষ নিজেও চায় না, আপনি তাকে অবহেলা করেন! এটা পরস্পরবিরোধী একটা চরিত্র।

এই ধরণের মানুষ সবসময়ই নিজেকে নিয়ে থাকতে পছন্দ করে! নিজের স্বার্থের সঙ্গে মানানসই না হলে, যে কাউকেই বাতিলের খাতায় ফেলে দেন এরা!

চিনবেন কিভাবে এ ধরণের মানুষগুলোকে? একেবারেই সোজা একটি ব্যাপার। এ ধরণের মানুষ প্রায়ই নিজের সুবিধাজনক অবস্থান তৈরির জন্য এমন কাজও করে বসবে, যেটা কিনা আপনার জন্য বিরক্তিকর কিংবা  আপনারই অসুবিধা তৈরি করবে। নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে আপনাকে নিচে নামাতেও তারা দ্বিতীয়বার ভাববে না। বিশ্বাস করুন, এই ধরণের মানুষের হাত থেকে বাঁচার জন্য আপনি হাসফাঁস করতে থাকবেন।

এটা ঠিক যে, প্রাথমিক কিছু দেখে সেটা থেকে সামান্যই ধারণা পাওয়া যায়। এটা ফার্স্ট ইম্প্রেশনের একটা অংশ। আপনার তড়িৎ পর্যবেক্ষণ কখনো একজন মানুষের ব্যাপারে সম্পূর্ণ ধারণা তৈরি করতে যথেষ্ট নয়।

কারও সঙ্গে নিয়মিত মেশার পর, তার ব্যাপারে আপনার পূর্বের ধারণা পাল্টে যেতে পারে। হতে পারে মানুষটি আপনার ধারণার চেয়েও বেশি বাজে। এমনও হতে পারে, আপনি তার ব্যাপারে যা ভেবেছেন সব ভুল! তাই একজন মানুষকে যাছাই করুন সময় নিয়ে।