চারুকলা অনুষদে পড়তে চাও যারা

একসময় চারুকলার নাম শুনলেই মানুষ নাক সিঁটকাতো। বিরক্ত কন্ঠে অনেকেই বলতো – ” এসব ফালতু সাবজেক্টে আবার মানুষ পড়ে নাকি! ছি! কোন ফিউচার নাই এসবের! গাধা স্টুডেন্টরাই এসব নিয়ে পড়ে।”

কিন্তু এখন আর সে দিন নেই। সৃষ্টিশীল এ যুগে বর্তমানে চারুকলার দাম বেড়ে গেছে অনেকটাই। মানুষ ক্যারিয়ার হিসেবে লুফে নিচ্ছে একসময়ের অবহেলিত এ বিষয়টিকে। অনেকেই এখন ঢাবির চারুকলাতে পড়ার স্বপ্ন দেখে। এখানে পুঁথিগত বিদ্যার তুলনায় নিজের সৃষ্টিশীলতাকেই বেশী প্রাধান্য দেয়া হয়। জাগিয়ে তোলা হয় একজন মানুষের শিল্পীমনকে।

কি করা যায় এ বিষয় পড়ে?

বর্তমানে চারুকলায় পড়ালেখা করে বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন,এমন কাউকে হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। অনেকেই জড়িত আছেন ব্যবসার সাথে। অনেকে সফলতার সাথে পরিচালনা করছেন অ্যাড ফার্ম। তাছাড়া বাইরের দেশগুলোতে চারুকলার ব্যাপক চাহিদা থাকার কারনে বৃত্তি নিয়ে ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনারও সুযোগ রয়েছে প্রচুর। এছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা, টেলিভিশন চ্যানেলে সেট ডিজাইনার, প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন কোম্পানিগুলোতে ডিজাইনার হিসেবে কাজ করছে। অনেকে হয়ে যাচ্ছে ফ্যাশন ডিজাইনার।

তাছাড়া সংবাদপত্র, ফ্যাশন হাউজ, অ্যানিমেশন ও গেম তৈরীর প্রতিষ্ঠান, ডিজাইন, সিরামিক শিল্প সব ক্ষেত্রেই রয়েছে চারুকলার শিক্ষার্থীদের সমান চাহিদা। ইচ্ছে করলে এ বিষয় পড়ে ফ্রিল্যান্সিংও করে ফেলা যায়!

ঢাবির চারুকলায় ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা

চারুকলা বা “চ” ইউনিটে পড়তে চাইলে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ এর যোগফল ৬.৫০ ( চতুর্থ বিষয় ছাড়া) বা তার বেশী হতে হবে। তাহলেই ভর্তির জন্য আবেদন করা যাবে।

বিভাগ পরিচিতি 
মোট ৮ টি বিভাগ আছে ” চ” ইউনিটে। ৮ টি বিভাগের জন্য রয়েছে ১৩৫ টি সিট। আর বিভাগগুলো হলো :
১. ড্রয়িং অ্যান্ড পেইনটিং
২. গ্রাফিক্স ডিজাইন
৩.প্রিন্ট মেকিং
৪.প্রাচ্যকলা
৫.ভাষ্কর্য
৬.সিরামিক শিল্প
৭. কারুশিল্প
৮.শিল্পকলার ইতিহাস

পরীক্ষা পদ্ধতি 

ভর্তি পরীক্ষা হয় মোট ১২০ নম্বর এর। সেই সাথে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলের জন্য থাকে ৮০ নম্বর। সব মিলিয়ে মোট ২০০.

১২০ নম্বরের পরীক্ষাতে ৬০ নম্বর এর এমসিকিউ থাকে। আর বাকি ৬০ নম্বর থাকে অঙ্কনের জন্য। প্রতিটি বিষয়ে আলাদাভাবে উত্তীর্ন হতে হয়।

এমসিকিউতে সাধারনত যে বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন বেশী হয় – বাজেট, মুক্তিযুদ্ধ , প্রাচীন নাম, খেলা, সাম্প্রতিক ঘটনা, রাজনীতি,বিজ্ঞান,সঙ্গীত, ভাষ্কর্য, নাট্যকলা, চারুকলার ইতিহাস, শিল্পকলার ইতিহাস, সভ্যতা, বাংলাদেশের স্থাপত্যকলা, সাহিত্য, বাংলাদেশের শিল্পকলা ইত্যাদি। এছাড়া বাংলা ও ইংরেজী ব্যাকরনের উপর ও কিছু প্রশ্ন করা হয়।

চারুকলাতে অঙ্কনের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত নম্বরটিকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। তাই অঙ্কনের ক্ষেত্রে থাকতে হবে বিশেষ দক্ষতা। অঙ্কন পরীক্ষায় উত্তীর্ন হতে হলে তুলি কিংবা প্যাস্টেলে আঁকার অভিজ্ঞতা নয়, বরং দরকার রেখা ও ড্রইং এর দৃঢ়তা।যে রেখাটি আঁকতে চাচ্ছো তুমি,তার উপর তোমার নিয়ন্ত্রণ কতটুকু,তার উপরই নির্ভর করে চারুকলায় ভর্তির সম্ভাবনা। আর ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুত করে তুলতে প্রতিবছরই ঢাবির চারুকলা অনুষদে প্রশিক্ষন কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

অতি প্রয়োজনীয় এ অঙ্কন পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে তোমার যে বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে,তা হলো :

১. পেন্সিলে রেখার মান
২. আলো ছায়া
৩. পরিপ্রেক্ষিত
৪. কম্পোজিশন ও অনুপাত

সাধারনত এ বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করে অঙ্কনের মান যাচাই এর মাধ্যমে নম্বর দেয়া হয়। এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারনা থাকা ছাড়া অঙ্কন পরীক্ষায় ভালো করা সম্ভব নয় কিছুতেই।

এছাড়াও ডিজাইনের বিভিন্ন ফর্ম ( ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বৃত্ত) , আকার আকৃতি ও রেখার মাধ্যমে সাদা কালোতে নির্দিষ্ট মাপে নকশা এসব সম্পর্কে ভালো ধারনা থাকতে হয়। ফুল, লতা – পাতা, পাখি, রেখা ইত্যাদির সমন্বয়ে ডিজাইন করতে হয়। পেন্সিলের মাধ্যমে সামনে রাখা মডেলটির অবয়ব ফুটিয়ে তুলতে হয়। তাছাড়া পরীক্ষায় কম্পোজিশন বা বিন্যাস যেনো কাগজের তুলনায় খুব বেশী ছোট বা বড় না হয় – সেদিকে বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

আর হ্যাঁ,পরীক্ষার সময় কিন্তু পেন্সিল,ক্লিপবোর্ড, ইরেজার, কলম,ইত্যাদি ঠিক ঠাকমতো নিয়ে যেতে হবে। কারন পরীক্ষার সময় কেবল কাগজটাই সরবরাহ করা হবে!