রাতের নক্ষত্রসজ্জিত আকাশ সবসময়ই মানুষের কাছে রহস্যময় সৌন্দর্য্যের এক আধার হয়ে থেকেছে। কর্মব্যস্ত জীবনের একটু অবসরে অনেকেই প্রকৃতির কোলে হারিয়ে যেতে পছন্দ করেন, স্বস্তি খুঁজে পেতে চান অনন্ত নক্ষত্ররাজির সমারোহে। কেমন হয় পাঠক, যদি লম্বা ছুটির এই মৌসুমে একদম অকৃত্রিম, প্রাকৃতিক পরিবেশে বসে মহাকাশের রহস্য উদঘাটনের সুযোগ পেয়ে যান? নক্ষত্রপ্রেমীদের জন্যে এমনই এক ঠিকানা গড়ে উঠেছে ভারতে, যার নাম “অ্যাস্ট্রোপোর্ট সারিসকা”। দিল্লি থেকে পাঁচ ঘণ্টার দূরত্বে রাজস্থানের আলওয়ার জেলায় সারিসকা টাইগার রিজার্ভের ঠিক পাশেই রয়েছে অ্যাস্ট্রোপোর্ট সারিসকা। অন্ধকার আকাশে নক্ষত্র পর্যবেক্ষণের জন্যে এটি ভারতের অন্যতম সেরা জায়গা। অ্যাস্ট্রোপোর্টের ফেইসবুক পেইজে দেওয়া তথ্য অনুসারে, এটিই মহাকাশ ও জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ের ওপর নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম রিসোর্ট।
এর প্রতিষ্ঠাতা শচীন বামবা একজন উৎসুক জ্যোতির্বিজ্ঞানী। বন্য প্রাণীর ব্যাপারেও তাঁর ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। প্রকৃতি ও নক্ষত্রপ্রেমীদের জন্যে নিজেদের ক্যাম্প আয়োজনের ঝুটঝামেলা ছাড়াই প্রাকৃতিক শোভা উপভোগের চমৎকার ব্যবস্থা রয়েছে পরিবেশবান্ধব এই রিসোর্টে। পুরো রিসোর্টটিই সৌরশক্তি চালিত। এর মূল আকর্ষণ হচ্ছে সন্ধ্যা ও রাতের আকাশে নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ। কাছ থেকে নক্ষত্র পর্যবেক্ষণের জন্যে আছে বিশেষ দূরবীন, টেলিস্কোপ সহ বিশেষায়িত সব সরঞ্জাম। সাথে থাকবেন প্রশিক্ষিত নির্দেশক, যিনি মহাজাগতিক বিভিন্ন বস্তুর সঙ্গে আপনাকে পরিচিত করে তুলবেন। রিসোর্টের আশেপাশের এলাকা বলতে রয়েছে কেবল টাইগার রিজার্ভ ও ন্যাশনাল পার্ক। তাই নিরিবিলি পরিবেশ আর নিকষ কালো আঁধারে নক্ষত্রের রাজ্যে আপনার বিচরণ হয়ে উঠবে আরও উপভোগ্য।
অ্যাস্ট্রোপোর্টে শুধু যে মহাকাশই দেখবেন, তা কিন্তু নয়! নিজে নিজে সূর্যঘড়ি, রকেট তৈরি করতে শেখা বা বিভিন্ন নক্ষত্রপুঞ্জ চেনার মত মজার মজার সব আয়োজন রয়েছে এখানে।
নক্ষত্র দেখার এই আয়োজন চলবে সন্ধ্যা আর রাতে। ওদিকে দিনের সময়টা কাটানোর জন্যে রয়েছে পাহাড়ে চড়া, গ্রাম বা জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো, উট ও ঘোড়ার পিঠে চড়ে ভ্রমণ, মৃৎশিল্প, পাখি ও অর্গানিক খামার পরিদর্শন, যোগব্যায়াম ও অ্যারোবিক শরীরচর্চার সুব্যবস্থা। তাছাড়া অ্যাস্ট্রোপোর্টের খুব কাছেই সারিসকা ন্যাশনাল পার্ক অবস্থিত। সেখানে গেলে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতাবাঘ, চার শিংওয়ালা অ্যান্টিলোপসহ বৈচিত্র্যময় সব প্রাণী আর উদ্ভিদের দেখা মিলবে।
রাতে রিসোর্টে থাকতে চাইলে তার জন্যে রয়েছে “গ্যালাক্সিয়া” ও “নেবুলা”। গ্যালাক্সিয়াতে ছয়জন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন দু’টি কিং সাইজের খাট রয়েছে। এখানে থাকতে হলে খাবার খরচ সহ এক রাতের জন্যে গুণতে হবে ১৩ হাজার ভারতীয় রূপী। আর নেবুলাতে ১০ জন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন আটটি কুইন সাইজের খাট রয়েছে। এখানে থাকতে চাইলে খাবার খরচ সহ এক রাতের খরচ পড়বে ২২ হাজার ভারতীয় রূপী। এছাড়া অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী পর্যটকদের জন্যে সুইস টেন্টে রাত কাটানোরও সুযোগ রয়েছে।
অ্যাস্ট্রোপোর্টে বেড়াতে যাওয়ার আদর্শ সময় হচ্ছে সেপ্টেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত, কারণ এ সময় আকাশ সাধারণত মেঘমুক্ত থাকে। তাছাড়া বর্ষায় ন্যাশনাল পার্ক বন্ধ থাকে বিধায় ঐ এলাকায় যানবাহন ও লোকসমাগম কম থাকে। ফলে সেসময় রিসোর্টেও বেশ নিরিবিলি পরিবেশ পাওয়া যায়।
অ্যাস্ট্রোপোর্টের লক্ষ্য জ্যোতির্বিদ্যাকে আরও এগিয়ে নেওয়া। আগামীতে জ্যোতির্বিদ্যা বিভাগে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং উদ্যোক্তা তৈরি করার উদ্দেশ্যে তাঁরা কাজ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এ ধরণের প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্যে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও তাঁদের রয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষণার্থীদেরকে সনদ প্রদান করা হবে, যা তাঁদের কর্মজীবনে কাজে লাগবে।
তো পাঠক, আর দেরি নয়। শহুরে নিয়ন আলোর ঝলকানি আর অবিরাম কোলাহল থেকে সাময়িক স্বস্তি পেতে ঘুরে আসুন অ্যাস্ট্রোপোর্ট সারিসকায়। মহাকাশ আবিস্কারের নেশায় হারিয়ে যান শান্ত প্রকৃতির মাঝে।