সময়ের চাকা আর স্বার্থবন্দী আমরা

24cc6c8.jpgব্যস্তশহর, ব্যস্তসময়। “কাক ডাকা ভোর” এই কথাটি যেন আজকাল কেবল বইয়ের পাতাতে-ই মানয়। সূর্যযেন এটা বলেই উঠে , “হে যান্ত্রিক মানবগণ, আমি এসে গেছি,  তোমরা তোমাদের যন্ত্র চালু করে কাজে নেমে পড়  ” । এই যান্ত্রিকতার আড়ালে আমরা কি নিজেদের হারিয়ে ফেলছিনা? পার্থিব সুখের পেছনে ছুটতে গিয়ে অন্তরের সুখটাকি ক্ষীণ করে ফেলছিনা ?

সকাল আটটার মধ্যে নাতি-নাতনি দুটোকে স্কুলে পাঠিয়ে ছেলে আর বউমা রওয়ানা দেয় অফিসের উদ্দেশ্যে । আর ঘরে থাকা বৃদ্ধা মাকে তার বয়সের চেয়েও বেশি গ্রাস করে নেয় একাকিত্ব। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ছেলে আর স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বাইর থেকে বেড়িয়ে আসে, খেয়ে আসে কোন চাইনিজ রেঁস্তোরা থেকে। আর বৃদ্ধা মায়ের পুরো দুনিয়াটা যেন বন্দী হয়ে পরে চার দেওয়ালের মাঝখানে। যান্ত্রিকতার এই রুটিনটি ছিঁড়ে সেই বৃদ্ধা মাকে কি বলা যায় না , “ মা, আজ যে তোমার বিবাহ বার্ষিকী , সত্যি, কত বুড়ো হয়ে গেছ তুমি। সবকিছু ভুলে যাও। আজ আমরা সবাই মিলে বাইরে খেতে যাব । ঠিক আছে মা? “ । সন্তানের এই অল্প সময়টুকু মা-বাবার সব একাকিত্ব দূর করে দিতে পারে, কিন্তু আমরা তা করবো কেন , আমরা তো রোবট মানব । সংসারে গৃহকত্রী ‘, আমাদের সকলের আবদার পূরণের জাদুর মেশিন । যতদিন যায় এই মেশিনের দায়িত্ব ততই বেড়ে যায় । কত নিঁখুতভাবে তিনি তার কার্য সম্পাদন করছেন আমরা শুধু তার বিচার করতে ব্যস্ত থাকি । তার চোখের নিচের কালো দাগ, উঁশক-রুক্ষ চুল, নিষ্প্রাণ ত্বক ভুল করেও যেন আমাদের চোখে পড়তে চায় না । সপ্তাহের একটা দিন কি তার সামনে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে এসে বলতে পারি না “মা আজ তোমার ছুটি”।

সারা বছর ধরে-ই তো উৎসব আসে । উৎসব মানেই কেনাকাটা । “আমার পুরান শার্টটা আছে তো একটু ধুয়ে নিলে-ই হবে । নতুন একটা কেনাত কোন দরকার নেই, তোরা নিজেদের জন্য কিনে নেই । ” এই ত্যাগী মানুষটি আর কেউ নয়। তিনিই “বাবা” । ইন্টারনেটের দুনিয়াতে একটু কম সময় অপচয় করে বলা কি যায় না , “বাবা, তুমি দুপুরে খেয়ে বিশ্রাম কর , আজ আমি একটু চেক করে দেখি তুমি কেমন ব্যবসা করো”।

সুখের খোঁজে খুব বেশি টাকা পয়সার দরকার হয়না। শুধু দরকার হয় নিজের স্বার্থের গন্ডিটা থেকে বের হওয়া। একদিন দামী রেষ্টুরেন্টে না খেয়ে কিছু পথ-শিশুর মাঝখানে খাবার বিলিয়ে যেই শান্তিটা পাওয়া যাবে সেটা নিশ্চয় কোটি টাকা দিয়ে কিনতে পাওয়া যাবে না । নিজের জন্মদিনের পার্টির টাকাটা দিয়ে যদি একটি অনাথ শিশুকে কিছু জামাকাপড় কিনে দেয়া যায় , তাতে পার্থিব সুখ পাওয়া যাবেনা কিন্তু অন্তরের সুখের অভাব হবে না ।