লো ভলিউমে রাগ ভূপালীর বিলম্বিত একতালের বন্দিশ শুনছিল ধারা………..
” জব হো জানম জানম জানোগী জগমে জব মিলে গো
মোহে প্যারা এরি জব জানম ৷৷ “…………
রাত বারটা এক মিনিট…………
হঠাৎ মোবাইলের স্ক্রীনে আলো জ্বলে উঠল,ম্যাসেজ এসেছে ৷৷
“শুভ আগমন দিবস,পুচকু ৷৷………….
আগামীকাল ঠিক সকাল নয়টায় শাড়ি পরে আমার সামনে উপস্থিত থাকবি,আমি তোর বাসার সামনে থাকবো”……….
রুদ্র এমনই,প্রতি বছর এই দিনটায় ও যেখানেই থাকুক না কেনো,ঠিক সকাল নয়টায় ধারার জন্য উদ্ভট গিফট নিয়ে হাজির হবে ৷ আর ধারাও প্রতিবছর এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকে ৷ ছেলেটাকে পাগলের মতো ভালবাসে ধারা,কিন্তু সাহস করে কখনো বলতে পারেনি ৷৷
পরদিন সকাল নয়টা………….
রুদ্র ধারার বাসার সামনে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৷ পুচকু নামছে না কেনো?
ঠিক এক মিনিট পর ধারা নিচে নেমে এলো,পরনে হালকা কমলা পাড়ের সাদা শাড়ি ৷ রুদ্র হা করে ধারার দিকে তাকিয়ে আছে,মনে হচ্ছে শরতের শিউলিটা যেনো টুপ করে গাছ থেকে ধরায় নেমে এলো,কিন্তু মাটিতে পরার আগেই তা ধরে ফেলতে হবে ৷৷
লম্বু….এই….কিরে,……….ধারার ডাকে ধ্যানভঙ্গ হয় রুদ্রর ৷
পুচকু,এক মিনিট লেট ৷ ব্যাপার না,এই নে,তোর জন্য……..খুলে দেখ……..
একটা মাঝারি সাইজের বাক্স ধারার দিকে এগিয়ে দেয় রুদ্র ৷ বাক্স খুলে হা করে তাকিয়ে থাকে ধারা,বাক্সের ভিতর একটা হেলমেট আর হেলমেটের ভিতরে দুটা বেলি ফুলের মালা ৷৷ হেলমেটের কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পায়না ধারা ৷
“আজ সারাদিন আমরা বাইকে করে পুরো ঢাকা টো টো করে ঘুরে বেড়াবো আর তুই আমার সাথে হেলমেট পরে ঘুরবি,আর হাতে মালা পেঁচিয়ে রাখবি”…………লক্ষ্মী মেয়ের মতো ধারা রুদ্রর এই পাগলামিতে সায় দেয় ৷
সারাদিন রুদ্র ধারা পুরো ঢাকা বাইকে করে ঘুরে বেড়ায়,পুরো ঢাকা যেন তাদের কাছে সীমাহীন বিস্তৃত আকাশ,আর তারা দুজন সে আকাশে উড়ে বেড়ানো এক জোড়া শালিক ৷৷
বিকাল পাঁচটা………….
রুদ্র ধারাকে বাদামের খোসা ছাড়িয়ে দিচ্ছে, আর ধারা পার্কের বেঞ্চে বসে পা দোলাচ্ছে আর বাদাম খাচ্ছে, মজার ব্যাপার হলো,ধারা কিন্তু একটা বারের জন্য মাথা থেকে রুদ্রর দেয়া হেলমেটটা খুলেনি,সবাই খুব অবাক হয়ে তাকাচ্ছিল কিন্তু কিছুই করার ছিলো না ধারার ৷
পুচকু,তোকে কিছু ইমপর্টেন্ট কথা বলবো,মন দিয়ে শুনবি,কেমন?…….
হুম,….বল,….শুনছি……
তোকে কেন হেলমেট দিয়েছি,জানিস?……
কেনো?……..
কারণ,সারাজীবন যেনো তুই এভাবে আমার পাশে হেলমেট পরে ঘুরতে পারিস……
ধারা এক দৃষ্টিতে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে থাকে,কি বলছে ছেলেটা এসব?…………হাত পা কাঁপছে ধারার ৷
ঠিক সেই মুহূর্তে রুদ্র হাঁটু গেড়ে ধারার সামনে বসে,আর ধারা বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়ায়,কি হচ্ছে এসব?………
আমি সারা জীবন তোকে এভাবে বাদামের খোসা ছাড়িয়ে দিতে চাই,……..আমি তোর স্পেশাল কুক হতে চাই, আমাদের রান্নাঘরে তোর জন্য একটা ছোট বসার জায়গা থাকবে,তোর কিছুই করতে হবেনা তুই শুধু ওখানটায় বসে পা দুলাবি আর আমার সাথে গল্প করবি,আমায় গান শুনাবি,পারবি না?তবে মাঝে মাঝে তুই আমায় হেল্প করতে চাইলে,আই ডোন্ট মাইন্ড ৷………আর আমি যখন অফিসে যাবো,তখন ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আমায় বিদায় দিস,কেমন ৷৷ আবার দিন শেষে ফিরে এলে তোর বাঁকা দাঁতের টোল পরা হাসি দিয়ে দরজা খুলে দিবি,যেনো আমার সকল ক্লান্তি মুহূর্তেই দূর হয়ে যায় ৷ আর তোকে এক জোড়া নুপুর কিনে দিবো,যেনো আমি দূর থেকে বুঝতে পারি, তুই কোথায় আছিস ৷৷ কথা দিচ্ছি, প্রতিরাতে আমি তোকে কবিতা শুনিয়ে ঘুম পাড়াবো আর মাঝরাতে তোর ঠোঁটের কণায় লেগে থাকা আইসক্রিম মুছে দেবার একান্ত অংশীদার আমি হতে চাই ৷৷………
Finally And Officially, I Would Like To Say You That,Will You Be My Only Angel,My Singing Bird And My One N Only Best Friend Forever???
ধারা কিছু বলতে পারেনা,অঝোর ধারায় ভেউ ভেউ করে কাঁদতে থাকে,এদিনটির জন্যই তো এতদিন অপেক্ষা করে ছিলো ধারা ৷৷
আর রুদ্র ধারার এমন ভেউ ভেউ কান্না দেখে উঠে দাঁড়ায়,এই মুহূর্তে নিজেকে খুব বোকা বোকা লাগছে রুদ্রর ৷ আশেপাশে লোকজন জড়ো হয়ে যাচ্ছে….কি আশ্চর্য!!!পুচকুটা এভাবে কাঁদছে কেনো,…….বিরক্ত লাগছেনা রুদ্রর বরং ভেউ ভেউ করেও যে এতো সুন্দর করে কাঁদা যায় আজই প্রথম জানলো রুদ্র ৷
পুচকুরে,….তুই পুচকুই রয়ে গেলি,……..সারাটা জীবন আমার কাছে এমনই থাকিস ৷………ধীর পায়ে রুদ্র ধারার দিকে এগোতে থাকে,মেয়েটার কান্নাটা থামানো দরকার ৷৷
আর গল্পের শুরুটা এখান থেকেই……….
লেখিকাঃ শবনম মোশফিকা অনি