এই লেখাটি পড়ার সময় না থাকলে, শুনতে পারেন এর অডিও ভার্সন। ক্লিক করুন নিচের প্লে-বাটনে। ভয়েস- সাগরিকা বড়ুয়া
জীবনে ভাল থাকার জন্য জরুরি বোধহয় খুশি থাকা। সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিস, কাজের চাপ, ফিরে ক্লান্তি, হাজারটা কাজের স্ট্রেস, টেনসন, সব মিলিয়ে কিভাবে একেকটা দিন কেটে যায় বোঝাই যায় না। দিনের শেষে ঘরে ফিরে রাজ্যের হতাশা ভর করে। নিজেকে সময় দিতে না পারা, জীবনে পজিটিভিটি, এনার্জির অভাব। প্রতিদিনকার জীবনে গুচ্ছ গুচ্ছ জটিলতা আর খুশি থাকতে দিচ্ছে কি? এর থেকে মুক্তির উপায় বা কি? মনোবিদরা জানাচ্ছেন,নিজেকে ভাল ও খুশি রাখার জন্য প্রতি দিন এমন কিছু কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখুন যা আপনাকে জীবনকে পজিটিভ, খুশি রাখবে সারাদিন। নিজেকে আনন্দে রাখার জন্য ঠিক এমনই ২০টি সহজ কাজ করে করে ফেলুন তো চটজলদি।
(১) হাঁটা:
হাঁটা যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ভাল তেমনি মনে প্রসন্নতাও আনে। প্রতি দিন সময় করে ২০ মিনিট হাঁটুন। খুব ধীরেও নয়, খুব তাড়াতাড়িও নয়, মাঝারি গতিতে হাঁটুন। এতে আপনার শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি ক্ষয় হওয়ার সাথে সাথে মনের স্ট্রেসও কমে যাবে।
(২) সিম্পল থাকুন
সাধারণ, সিম্পল জীবন নিজেকে খুশি রাখার সেরা উপায়। বস্তুকেন্দ্রীক চাহিদায় লাগাম দিন। অকারণ জটিলতার পিছনে ছুটবেন না। দেখবেন, খুশি আপনার জন্য অপেক্ষা করেই আছে। মনে রাখবেন আপনি যেটুকু পাচ্ছেন এ দেশের বেশির ভাগ মানুষ তার সিকিটুকুও পান না। নিজেকে আত্মজিজ্ঞাসা করুন, আপনার আসলে কী কী ভাল লাগে আর আপনি কী করছেন। নিজের বেঁচে থাকার ছোট ছোট স্বপ্ন গুলো ভুলে যাবেন না। ভাবুন আপনার কী কী ভাল লাগে। সময় পেলেই সেগুলো করুন।
(৩) কৃতজ্ঞতা:
আমরা বেশির ভাগ সময়ই জীবনে কি পেলাম না, কোনটা হল না তা নিয়ে ভেবে, চিন্তা করে নেতিবাচক হয়ে পড়ি। জীবনে কী পেয়েছেন তার জন্য কৃতজ্ঞ থাকুন। নিজের গ্র্যাটিটিউড জানান রোজ।
(৪) লক্ষ্য:
কথায় আছে লক্ষ্য না ঠিক করলে তা শুধুই ইচ্ছা থেকে যায়। তাই নিজের লক্ষ্য লিখে ঘরের এমন জায়গায় রাখুন যাতে ঘুম থেকে উঠেই আপনার চোখে পড়ে। এতে উদ্দীপনা বাড়বে জীবনে।
(৫) ডায়েরি:
প্রতি দিন ডায়েরি লেখার অভ্যাস করুন। সারা দিনের ভাল লাগা, খারাপ লাগা ডায়েরিতে লিখে ফেললে নিজেকে অনেক মুক্ত যেমন রাখা যায়, তেমনই নিজেকে বিশ্লেষণ করা এবং নিজের কাজ যাচাই করতেও সুবিধা হয়।
(৬) কাজের ডেস্কও প্রতিদিনের তালিকা:
বাড়ির কাজের ডেস্ক বা পড়াশোনার করার ডেস্ক অনেকেরই একগাদা কাগজ পত্রে অগোছালো হয়ে থাকে। প্রতি দিন আপনার কাজের ডেস্কটি গুছিয়ে রাখুন। এতে কাজের ইচ্ছা ও কাজ করার এনার্জিও বাড়বে। এছাড়া প্রতিদিন চেষ্টা করুন সারা দিন কী কী কাজ করবেন তার একটা তালিকা তৈরি করার। দিনের শুরুতে প্ল্যান করলে সারাদিন কাজ সুষ্ঠভাবে এগোবে। দিনের শেষে পজিটিভ থাকবেন।
(৭) মিউজিক:
আমরা সকলেই কম বেশী গান শুনতে পছন্দ করি। জীবনের সুখে, দুঃখে, আনন্দে যে কোনও অনুভূতিতে হৃদয় হতে উৎসারিত হয় এই গান। জানেন কি মিউজিক দারুণ থেরাপির কাজ করে? প্রতি দিন সময় করে নিজের পছন্দের গান শুনুন।
(৮) স্ট্রেসের কাজ:
অনেক কাজ আছে যা করতেই হবে অথচ স্ট্রেসড লাগে বলে আমরা না করে ফেলে রাখি। এমন কোনও কাজ সেরে ফেলার চেষ্টা করুন। এক দিনে না হলেও রোজ ২০ মিনিট করে সময় দিয়ে ধীরে ধীরে সেরে ফেলতে পারেন। এতে চাপও পড়বে না, স্ট্রেসও কমবে।
(৯) হাসি খুশি থাকা
চেষ্টা করুন নিজেকে সব পরিস্থিতিতে হাসি খুশি রাখা। হাসি-খুশি লোকজনের আশেপাশে থাকুন- গোমড়া থেরিয়াম নয়, হাসি-খুশি দিল দরিয়া লোকজনের সঙ্গেই বন্ধুত্ব করুন। এতে খুশি থাকতে নিজেকে বেশি এফর্ট দিতে হবে না।
(১০) প্রিয়জনকে ফোন:
সারা দিনই আমরা ফোনে হাজারটা কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখি। অথচ সময় করে কাছের মানুষটিকে, ভালবাসার মানুষদের কত বার কল করি বলুন তো? প্রতি দিন অন্তত এক বার কোনও না কোন কাছের মানুষকে কল করে কিছুটা সময় দিন। এত যেমন সামাজিক যোগাযোগটা অক্ষুন্ন থাকবে, তেমনি সবার মাথে সুসম্পর্কও বজায় থাকবে।
(১১) ঘর পরিষ্কার:
প্রতিদিন বেরনোর আগে ঘর পরিষ্কার করে ফেলুন। প্রতি দিন ঘর পরিষ্কার করলে বেশি নোংরাও হবে না। এতে মনও ভাল থাকবে। বাইরের হাজার কাজের পর ঘরে ফিরে এসে মেনে প্রশান্তি জাগবে।
(১২) মেডিটেশন
স্ট্রেস কাটাতেই হোক, ইনটিউশন বাড়াতে বা মনসংযোগ তৈরি করতে মেডিটেশন খুবই সাহায্য করে। সুযোগ পেলেই মেডিটেশন করুন রোজ। মন, শরীর দুই ভাল থাকবে। এনার্জি বাড়বে, খুশি থাকবে আপনার শরীর ও মন দুইই।
(১৩) ডিপ ব্রিদিং:
প্রতি দিন অন্তত ১০ বার গভীর ভাবে শ্বাস নিন। কিছুক্ষণ শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ রেখে শ্বাস ছাড়ুন। এতে মস্তিষ্কে অক্সিজেন বাড়বে। মনের অস্থিরতাও কমবে। স্ট্রেস কমে আপনাকে ফ্রেশ লাগবে অনেকখানি।
(১৪) হট বাথ:
গরম জলে গোসল আপনার সারা দিনের ক্লান্তি, স্ট্রেস কাটাতে সাহায্য করে। হট বাথের সাথে হালকা মিউজিক চালিয়ে, সুগন্ধি মোম জ্বালিয়ে স্পা-এফেক্ট ও নিতে পারেন।
(১৫) পাওয়ার ন্যাপ ও পরিপূর্ণ ঘুম:
কিছুক্ষণ কাজে সাময়িক বিরতির জন্য এবং সারাদিনের নানা স্ট্রেস মুহূর্ত কাটাতে যখনই সময় পাবেন নিয়ে নিন ছোট পাওয়ার ন্যাপ। এছাড়া সারাদিনের নানা স্ট্রেস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনার দরকার পরিপূর্ণ ঘুম। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা ঘুম যাওয়া আবশ্যক। এতে যেমন আপনার শরীরের ক্লান্তি দূর হবে তেমনি মনে আসবে প্রশান্তি।
(১৬) পরিষ্কার পরিছন্ন ও বিভিন্ন রঙের ড্রেস:
নিজেকে সবসময় পরিষ্কার পরিছন্ন রাখা, পরিষ্কার জামাকাপড় পড়া মনকে স্বতস্ফুর্ত রাখার প্রধান উপাদান। রঙ মানুষের মনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। প্রতিদিন চেষ্টা করুন বিভিন্ন রঙের ড্রেসে নিজেকে সজ্জিত করার। এতে আপনার মন সবসময়ের জন্য উৎফুল্ল থাকতে আপনাকে সাহায্য করবে ।
(১৭) উপভোগ্য খাবার
যেখাবার আপনার পছন্দ তা না খাওয়ায় ভালো। এত খাবারের উপর বিরূপ ভাব চলে আসে। সবসময় পছন্দের খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। তবে তা যেন হাই ক্যালরি বা হাই কোলেস্টরেল খাবার না হয়। তন্তু ও শাক জাতীয় খাদ্য রোজ খাওয়া উচিত। প্রতি দিন মাল্টি ভিটামিন খাওয়া প্রয়োজন। এতে মুড ভাল থাকে যার প্রভাব স্বাস্থ্যে প্রতিফলিত হয়। স্বাস্থ্যকর স্মুদির সঙ্গে মাল্টি ভিটামিন মিশিয়ে খান। প্রতিদিন চেষ্টা করুন শশা বা জল রয়েছে এমন ফল খাদ্য তালিকায় রাখা, যেমন তরমুজ, ফুটি খান রোজ। রোজ বড় বড় দু’গ্লাস জল অবশ্যই খান। নিজের জন্য বানান স্বাস্থ্যকর সালাড। খাওয়ার সময় উপভোগ করুন।
(১৮) হালকা ব্যায়াম
প্রতিদিন চেষ্টা করুন হালকা কয়েক রকম ব্যায়াম করার। এত আপনার শরীরের এবং মনের স্ট্রেস কমে যাবে অনেকাংশে। কিছু ব্যায়াম যেমন: কোমর থেকে নীচু হয়ে পায়ের পাতা ছোঁয়া, সোজা হয়ে যতটা সম্ভব উপরে আকাশের দিকে হাত তোলা, ইত্যাদি। এসব ব্যায়াম আপনার শরীরের নমনীয়তা বাড়াবে। আপনার পজিটিভিটি বাড়াতে সাহায্য করবে।
(১৯) নিজের মতো থাকুন ও পজিটিভ চিন্তা করুন
আমরা সবাই গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসাতে অভ্যস্ত। তার এই আছে, আমারও তা থাকতে হবে। এসব অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে যতটুকু সম্ভব নিজেকে দূরে রাখুন। ঝাঁকের কই হওয়াটা কাজের কথা নয়। আশে পাশের সবাইকে দেখে প্রভাবিত হবেন না। নকল করার কম্পিটিশনে নিজের অস্তিত্বকে হারিয়ে ফেলবেন না। অন্য কে অনুকরণ করে কিছুদিন ভাল থাকা যায় মাত্র। কিন্তু লংটার্ম খুশি থাকতে গেলে নিজের মত থাকাই বেস্ট অপশন। নিজেকে নিয়ে খুশি থাকুন।
সব কিছুতেই হবে না, পারব না, এসব ভাবনা ছাড়ুন। ভাবনার শুরুটা ‘হ্যাঁ’ থেকে না হলে সে ভাবনা কখনই বাস্তবের মাটি ছোঁয়ে না। পজিটিভ চিন্তা ভাবনা করুন। পজিটিভ ভাবনা খুশি থাকার অন্যতম উপাদান।
(২০) ভালো বই পড়া , মুভি দেখা বা আড্ডা দেয়া
প্রতিদিনের হাজারো কাজের পর পরিবারের সবাইকে নিয়ে কোনো আনন্দময় মুভি দেখা কিংবা প্রিয়জনের দৈনন্দিন জীবনের বাইরে নির্ভেজাল আড্ডিা দেয়া বা একাকী কোন গল্পের বই খুলে পড়তে থাকা- এসব আপনার দিনের ক্লান্তিকর তিক্ত মুহূর্তগুলো ভুলে যেতে সাহায্য করবে। আপনার দেহে ও মনে সতেজতা ফিরিয়ে আনবে।