বছর ঘুরে পবিত্র রামাদান আবার আমাদের দোরগোড়ায়। এই পুরো মাসটি জুড়ে বাজারে এবং আমাদের খাদ্যতালিকায় যে ফলটির চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকবে, তা হচ্ছে খেজুর। কিন্তু এটি কি শুধুই রোজাদারদের জন্যে, শুধুই রামাদানের জন্যে? না, খেজুরে রয়েছে এমন সব পুষ্টি উপাদান, যার জন্যে এটি শুধু রামাদান নয়, সারাবছরই সকলের খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত।
খেজুরের পুষ্টিগুণ:
১) শর্করা: গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, সুক্রোজ।
২) দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় আঁশ।
৩) অামিষ।
৪) স্নেহপদার্থ।
৫) মিনারেলস: ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক প্রভৃতি।
৫) ভাইটামিনস: থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নায়াসিন, ফোলেইট, ভাইটামিন এ, ভাইটামিন কে।
সারাদিন রোজা শেষে খেজুর খেয়ে ইফতার শুরু করার ঐতিহ্য বহু পুরনো। আর এই চর্চাটির স্বাস্থ্যগত উপকারিতা-ও অনেক। ইফতারের শুরুতে খেজুর খেলে আপনার শরীর খেজুরের পুষ্টি উপাদানগুলোকে শোষণ করে নেওয়ার কাজে লেগে যায়। এতে তীব্র ক্ষুধার অনুভূতি কিছুটা প্রশমিত হয়। পাশাপাশি এটি ইফতারের সময়ে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলা-ও প্রতিহত করে। সারাদিনের উপবাসের ফলে যে ক্লান্তি আসে খেজুর তা কাটিয়ে উঠে দ্রুত কর্মোদ্যম ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
এছাড়াও আমাদের শরীরের ওপর খেজুরের আরো বহুবিধ স্বাস্থ্যকর ভূমিকা রয়েছে। যেমন-
● খেজুরে রয়েছে উচ্চমাত্রার দ্রবণীয় আঁশ, যা অন্ত্রের মধ্য দিয়ে খাবারের চলাচলকে সহজ করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্ত থাকা যায়। তবে অতিরিক্ত খেয়ে ফেললে পেটে গ্যাস তৈরি হতে পারে।
● এর দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় আঁশ এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড খাদ্য হজম প্রক্রিয়াকে উদ্দীপ্ত করে, খাদ্য পরিশোষণে সাহায্য করে। ফলে খাদ্যের পুষ্টিউপাদানসমূহ ভালভাবে রক্তে মিশে শরীরের বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হতে পারে।
● নিয়মিত খেজুর খেলে অন্ত্রের রোগসৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয় এবং,উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
● মডার্ন মেডিকেল রিসার্চে দেখা গেছে যে, খেজুর অন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব প্রশমনেও কার্যকর।
● রক্তের ক্ষতিকর চর্বি (LDL) কমাতে সাহায্য করে খেজুর। ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও বিভিন্ন হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। তবে হৃদরোগীদের খেজুর খাওয়ার পূর্বে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া দরকার।
● খেজুরে আছে লৌহ, যা রক্তের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই অ্যানিমিয়া রোগীদের জন্যে এটি খুবই উপকারী।
● খেজুর একটি খনিজসমৃদ্ধ ফল। এতে উপস্থিত ক্যালসিয়াম, সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কপার ও ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের গঠন ও শক্তি অটুট রাখতে এবং অস্টিওপোরোসিসের মত পীড়াদায়ক অসুখকে রুখতে সাহায্য করে।
● প্রতিদিন অন্তত একটি খেজুর খাওয়ার অভ্যাস চোখের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটির রাতকানা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও রয়েছে।
● খেজুরে থাকা পটাসিয়াম স্নায়ুর সুস্বাস্থ্য রক্ষা করে, স্নায়ুর কর্মক্ষমতা বাড়ায়। বয়সজনিত স্নায়বিক ক্ষতি এড়াতে খেজুর খাওয়া ভাল।
● পুরুষের যৌন দুর্বলতায় খেজুর কার্যকরী। এতে বিদ্যমান এস্ট্রাডিওল ও ফ্ল্যাভোনয়েড শুক্রাণুর পরিমাণ ও চলনক্ষমতা বাড়াতে এবং শুক্রাশয়ের আকার ও ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
● খেজুরে আছে সালফার, যা খুব কম খাবারেই পাওয়া যায়। এই সালফার বিভিন্ন মৌসুমী অ্যালার্জির সমস্যা প্রতিরোধে সহায়ক।
● খেজুরের প্রাকৃতিক চিনি (গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, সুক্রোজ) শরীরে দ্রুত এনার্জির যোগান দেয়। খাওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যেই শরীরে এনার্জি পাওয়া যায়। তবে এর উচ্চমাত্রার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ডায়বেটিক রোগীদের জন্যে ক্ষতিকারক।
যেহেতু খেজুর একটি আঠালো প্রকৃতির ফল, তাই এতে ধূলাবালি ও রোগজীবাণু আটকে থাকার সম্ভাবনা বেশি। সুতরাং খাওয়ার আগে খেজুর অবশ্যই পরিস্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে।
গোটা একটি ফল হিসেবে প্রতিদিন খেজুর খাওয়া অনেকের কাছেই একঘেয়ে মনে হতে পারে। তাঁরা খেজুর দিয়ে কেইক, মিল্কসেইক, আচার, ডেজার্ট তৈরি করে খেতে পারেন। এমনকি মিষ্টি সমুচা বা টিকিয়া’র পুর হিসেবে খেজুর ব্যবহার করেও স্বাদে ভিন্নতা আনা যায়।
সুস্থ ব্যক্তিদের পরিমিত পরিমাণে খেজুর খেতে কোনো বাধা নেই। তবে অতিরিক্ত খেলে শারীরিক বিভিন্ন উপসর্গ যেমন- পেটে গ্যাস তৈরি, পেট ফাঁপা বা কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। আর যাঁদের ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, হৃদরোগ এবং ফ্রুক্টোজ ইনটলারেন্স আছে, তাঁদের চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া খেজুর খাওয়া উচিত হবে না।
স্বাদ ও পুষ্টিতে ভরপুর খেজুর একদিকে যেমন বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে, তেমনি দৈনন্দিন সুস্থতা বজায় রাখতেও এর ভূমিকা অনন্য। তাই খেজুর হোক আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকার অংশ।