কাঁচা হলুদ: স্বাস্থ্যজ্জ্বল ত্বক এবং সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি!

হলুদ একটি জাদুকরী ভেষজ উপাদান তাৎক্ষণিক এবং স্থায়ী সৌন্দর্যের মূলমন্ত্র হল হলুদ। প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের দেশে এবং ভারতবর্ষেও হলুদের গুরুত্ব অপরিসীম। হলুদ শুধু রান্নায় ব্যবহার করা হয়না, সুন্দর নিখুঁত ত্বকের যত্নেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে সৌন্দর্য সচেতন নারীদের রুপচর্চায়। এখনও অনেকেই রুপচর্চার আভিজাত্য হিসেবে হলুদকেই প্রাধান্য দেয়।

চলুন, হলুদের ব্যবহার এবং উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই।

তাবাসসুম আজিজ বলেন, ‘কারকিউমিনের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিবায়োটিক গুণ। এটি রং ফর্সা করে, ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে, ব্রণ প্রতিরোধ করে, বার্ধক্যের ছাপ প্রতিরোধ করে। কারকিউমিন ত্বককে পাতলা করতে কাজ করে। ব্যাকটেরিয়া দূর করে; হোয়াইট হেড, ব্ল্যাক হেড দূর করে। ভেতর থেকে উজ্জ্বলতা বাড়ায়।’

হলুদ ত্বকের বাইরে থেকে মাখলে যে উপকার পাওয়া যায়, খেলেও প্রায় একই রকম উপকার পাওয়া যায় জানিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, ‘হলুদ খেলে শরীরের ভেতর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর হয়। হলুদ খেলে ত্বক ফর্সা হয়।

** সৌন্দর্য চর্চায় হলুদের ব্যবহার এবং কার্যকারিতা :-

* দুধ তিন টেবিল চামচ, লেবুর রস এক টেবিল চামচ, হলুদ গুড়ো এক চা চামচ। একসাথে পেস্ট করে ত্বকে লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ১২ ঘন্টা রোদে যাবেননা। চমকটা নিজেই আবিষ্কার করবেন।
* কাঁচা হলুদ, দুধের সর, মসুর ডাল বেটে বা পেস্ট করে শরীরে ম্যাসেজ করে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটা ত্বক পরিষ্কারসহ উজ্জ্বল এবং মসৃণ করে।
* হলুদের গুড়োও ত্বক পরিচর্যায় ভালো ফল দেয়। বেসন, হলুদ গুড়ো এবং লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে কিছু সময় রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি প্রাকৃতিক ব্লিচের কাজ করবে।
* গৃহিনীদের হাতে কালচে দাগ, হাতের ত্বকের রুক্ষতা দূর করে হাত সুন্দর রাখতে কাজের শেষে হলুদ গুড়ো এবং লেবু রস হাতে লাগান। কিছুক্ষণ পরে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল পাবেন।
* কাঁচা হলুদ, কাঁচা দুধ এবং মসুর ডাল পেস্ট করে ত্বকে লাগান সপ্তাহে তিন/চারদিন। উজ্জ্বল ফর্সা ত্বকের জন্য।

** সুস্থ শরীর এবং বয়স, তারুণ্য ধরে রাখতে হলুদের জাদুকরী গুণ এবং কার্যকারিতা :-

* হলুদ গ্যাস-অম্বল থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। কাঁচা হলুদে গ্যাস-নিরোধক উপাদান থাকায় নিয়মতি কাঁচা হলুদ খেলে সহজে গ্যাস-অম্বলের সমস্যা দেখা দেবে না। দেখা গিয়েছে, গ্যাস-অম্বল সারাতে বাজারে যে সব ওষুধ পাওয়া যায়, তার সমান অথবা অনেক সময় তার চেয়েও বেশি অম্বল নিরোধক উপাদান রয়েছে কাঁচা হলুদে।
* কাঁচা হলুদ মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেলে অ্যালঝাইমার্স, ডিমেনশিয়া সহ মস্তিষ্কের বেশ কিছু সমস্যা শতহাত দূরে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে মানুষের মস্তিষ্কে যে সমস্যা দেখা দেয়, তাকে দূরে সরিয়ে মস্তিষ্ককে আরও সজাগ করে তোলে কাঁচা হলুদ।
* এমনকি ক্যানসার নিরোধক হিসেবেও কাজ করে কাঁচা হলুদ। রোজ সকালে খালি পেটে এক টুকরো কাঁচা হলুদ খেলে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
* হার্টকে ভালো রাখতেও সাহায্য করে কাঁচা হলুদ। নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেলে হার্টের অনেক সমস্যাই দূরে থাকে।
* আর্থারাইটিসের সমস্যাকেও ভালো করে কাঁচা হলুদ। অনেক গবেষণায় এটা প্রমাণিত নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেলে আর্থারাইটিসের সমস্যা অনেকাংশেই ভালো হয়ে যায়।
* সকালবেলা খালি পেটে নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেলে আপনি সহজে বুড়িয়ে যাবেন না। বয়সজনিত নানা সমস্যাকে দূরে রাখে কাঁচা হলুদ।
* রোজ সকালে এক টুকরো কাঁচা হলুদ খেলে নানা উপকার পাওয়া যায়।
* হলুদ যেকোন কাটা ছেঁড়া বা ক্ষতস্থানের জন্যও উপকারী।
* হলুদ রক্ত পরিষ্কার করে।

এমনি কাঁচা হলুদ চিবিয়ে খেতে যদি না পারেন তবে তাজা ফলের রস, স্যুপ এর সাথে এক চামচ কাঁচা হলুদ মিশিয়ে নিতে পারেন। ত্বকের যত্নে এবং শরীরের বিভিন্ন রোগ, অসুস্থতা থেকে নিরাপদ থাকবেন।

blank

** কীভাবে খাবেন:-

এমনি কাঁচা হলুদ চিবিয়ে খেতে যদি না পারেন তবে নিম্নোক্ত উপায়ে খেতে পারেন।

* তাজা ফলের রস, স্যুপ এর সাথে এক চামচ কাঁচা হলুদ মিশিয়ে নিতে পারেন। ত্বকের যত্নে এবং শরীরের বিভিন্ন রোগ, অসুস্থতা থেকে নিরাপদ থাকবেন।

* এক ইঞ্চি সমান কাঁচা হলুদ দুধের মধ্যে নিয়ে ১৫ মিনিট ফুটাতে হবে। এর পর হলুদটি তুলে ফেলে কেবল দুধ পান করতে হবে। ননিহীন দুধ হলে ভালো হয়।

* দুই কাপ দুধে আধা চা চামচ হলুদ গুঁড়া মেশান। এর পর গরম করুন। ঠান্ডা হওয়ার পর পান করুন।
দুধ ঠান্ডা হওয়ার পরই পান করবেন। নয়তো হজমে সমস্যা হতে পারে।
হলুদের গুণ যতই বলা হোক কমই বলা হবে কারণ এর গুণগান বলে শেষ করা যাবেনা। সবাই খুব সুন্দর এবং সুস্থ থাকুন।