“হাসন রাজায় কয়, আমি কেহ নয় রে আমি কেহ নয়
অন্তরে বাহিরে দেখি কেবল দয়াময়”
“হাসন রাজা”, নামে রাজা হলেও তিনি ছিলেন একজন সাধক, একজন শিল্পী। বাবা এবং বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর অতি অল্পবয়সে অগাধ সম্পত্তি এবং পরিবারের দায়িত্ব এসে পরে হাসন রাজার ওপর।তবে মৃত্যুর আগে তিনি তার বিশাল বিত্তবৈভবের প্রায় সবটাই দান করে গেছেন জনসাধারণের কল্যাণে।আজ ২১শে ডিসেম্বর, হাসন রাজার জন্মদিন। এই দিনে ১৮৫৪ সনে সিলেটের সুনামগঞ্জের লক্ষ্মণশ্রীতে দেওয়ান আলী রাজা এবং তার পঞ্চম স্ত্রী হুরমুত জাহান বিবির ঘরে হাসন রাজা জন্ম গ্রহণ করেন।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিশাল পরিমাণে ধনদৌলত হাতে পেয়ে তিনি আমোদে বিলাসীতায় গা ভাসিয়ে দেন। তরুণ বয়সে তিনি প্রমোদে জীবন কাটালেও, পরিণত বয়সে তার চরিত্রে আমূল পরিবর্তন আসে। তিনি আধ্যাত্মিক বিষয়ে ঝুঁকে পরেন। তিনি মানুষের উপকারে নিজের প্রাণ নিবেদন করে দেন। তিনি বহু পাঠশালা, মাদ্রাসা, মন্দির, মসজিদ নির্মাণ করেছেন। তিনি পশুপাখি খুব ভালোবাসতেন। শুধু মানুষের জন্য নয়, পশুপাখির কল্যাণের জন্যও তিনি ব্যয় করেছেন সম্পদ ও সময়। ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে ব্রহ্মপুত্র নদের আশেপাশের এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হলে হাসন রাজা এগিয়ে আসেন সাহায্যের জন্য। তিনি তার সম্পদ দু হাতে বিলিয়ে দেন জনসাধারণের কল্যাণে।
“আমি না লইলাম আল্লাজির নাম।
না কইলাম তার কাম।
বৃথা কাজে হাছন রাজায় দিন গুয়াইলাম।
ভবের কাজে মত্ত হইয়া দিন গেল গইয়া
আপন কার্য না করিলাম, রহিলাম ভুলিয়া।”
তার রচিত গান মানুষের মাঝে আজও খুব জনপ্রিয়। বলা হয়, তিনি হাজারের ও বেশি গান রচনা করেছিলেন। তবে মাত্র ৬০০ গান সংরক্ষিত আছে। সাধারণ সাদাসিধে কথা কিন্তু প্রচন্ড গভীরতা আছে তাতে। অসাধারণ মর্মস্পর্শী সব গান, নেশা লাগিলো রে, সোনাবন্ধে আমারে পাগল করিলো, মাটিরো পিঞ্জিরার মাঝে, লোকে বলে ও বলেরে, রঙ্গিয়া রঙ্গে আমারে, কানাই তুমি খেল খেলাও কেনে আরো শত শত গান আজো আমাদের মনে গভীরভাবে গেঁথে আছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ছিলেন হাসন রাজার গুণমুগ্ধ ভক্ত। ১৯৩০ সালে তিনি ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচার দেয়ার সময় হাসন রাজার কথা উল্লেখ করেন।
সাধক হাসন রাজা শেষ জীবনে অত্যন্ত দরিদ্রভাবে দিন কাটাতেন। তিনি সৃষ্টিকর্তাকে তার জীবন নিবেদন করেছিলেন। কেউ তার বাড়িঘরের ঠিকানা জানতে চাইলে আঙ্গুল উঠিয়ে দেখিয়ে দিতেন কবর। ১৯২২ সালে তিনি এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। রেখে যান তার অসামান্য সৃষ্টি আর লক্ষকোটি গুণমুগ্ধ ভক্ত। তার স্মৃতিতে সিলেটের জিন্দাবাজারে নির্মিত হয়েছে একটি যাদুঘর। যেখানে সংরক্ষিত আছে তার ব্যবহৃত নানান জিনিসপত্র।
“জানত যদি হাসন রাজা
বাঁচব কতদিন
বানাইত দালান–কোঠা
করিয়া রঙিন।লোকে বলে বলেরে
ঘর–বাড়ি ভালা নাই আমার
কি ঘর বানাইমু আমি শূণ্যেরও মাঝার।”
লেখকঃ তাসনিয়া আজমী। শখ বই পড়া, বই সংগ্রহ করা। লেখালেখি শুরু করেছি বেশীদিন হয়নি, কিন্তু এরই মধ্যে লেখালেখি ভালবেসে ফেলেছি। ইচ্ছে ছিল সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ার, বিভিন্ন কারণে হয়নি। ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে নিজের বই নিজের বুকশেলফে তুলে রাখার। ইচ্ছে আছে লেখিকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার।