গল্পটা একজন মেয়ের, একটা ডাক্তারের, একজন সিংগেল মায়ের, একটা স্ট্রাগলারের। আর মম নামের মেয়েটিই হচ্ছে সেই স্ট্রাগলার। যিনি সমাজ-পরিবেশের সাথে ,আশেপাশের মানুষগুলোর সাথে, এমন কি নিজের সাথেও বারংবার যুদ্ধ করে এগিয়ে নিয়ে গেছে গল্পটা, হ্যাঁ নিজের গল্পটা।
জীবনের প্রথম বিশটা বছর বেশ ভালই কেটেছে মমর, একেবারে স্বপ্নের মত। খুব গোছানো সে জীবন, সেই জীবনে ছিল যত্নশীল বাবা মায়ের আদর ও শাসনের মিশ্রণে এক নিশ্চিত জীবন। কিন্তু হঠাৎ করেই এমন কেন হল? বাস্তব পৃথিবীর এক অন্ধকারের ছায়ায় কেনই বা সে আবিষ্ট হয়ে গেল? সে তো এমনটা চায়নি? মাঝে মাঝে খুব রাগ লাগে তার। একবার তো সুইসাইডও করতে চেয়েছিল। বেশ ভাল একটা সুইসাইড নোটও লিখতে পারতো অনায়াসেই। একবার ভেবেও ছিল, কিন্তু এত সহজে হেরে যাবে সে? তা কি করে হয়! তার তো দোষ নেই! তবে কেনই বা নিজে হেরে যাবে? এর চেয়ে বরং ঘুরে দাঁড়িয়ে সমাজ কে দেখিয়ে দিক হ্যাঁ তোমরা যাদের দুর্বল ভাবো , তারাও পারে। অবশ্যই পারে।
গল্পে তাইতো মমর কাজের মেয়ে একসময় বলেছিল-
“শিক্ষিত মাইয়্যা গো মুখে একটা তেজ থাকে। ঐডা দেখতে বড়ই সুন্দর”
হতাশা না , শিক্ষিত মেয়ের সেই তেজকে কাজে লাগিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পটাই তবে সমাজের সেইসব লোককে চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিক, যারা মেয়েদের তুচ্ছ মনে করে, অহংকার আর দাম্ভিকতা দিয়ে নারীদের “দাসী” করে রাখতে চায়। উপন্যাসে সেটাই করেছে মম, হ্যাঁ ডাঃ মম।
উপন্যাসে বেশ কিছু শিক্ষণীয় বিষয় আছে, যা নারীদের জন্য না হলেও পুরুষদের জানা অতি অবশ্যই উচিৎ। শুধু ভালোবাসি বলার চেয়ে, তাদের অন্তর্নিহিত কষ্ট গুলো উপলব্ধি করার ক্ষমতাটা খুব বেশি প্রয়োজন। নারী স্বাস্থ্য নিয়েও বেশ আলোচনা করেছেন লেখিকা তার উপন্যাসে। উপন্যাস পড়ে সাময়িক আনন্দের সাথে যদি কিছু শেখাও যায় ,তাতে মন্দ কি।
উপন্যাসে লেখিকা খুব মুন্সীয়ানার সাথে একজন সিংগেল মাদারের জীবনের গল্প তুলে ধরেছেন। আর মম ও তার ছেলে অনুর কথোপকথন গুলো ছিল অতিমাত্রায় ভালোবাসা আর শিক্ষায় ভরপুর এক “কিউট প্যাকেজ”!
যেখানে যত্নের সাথে টিন এ্যাজের নানা দিক গুলো খুব সুক্ষ্যভাবে আলোচনা করেছেন লেখিকা।
একসাথে মেডিকেল প্রোফেশন, ঘরসংসার সন্তান এবং ভুল কিছুর জন্য একেবারে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া ৭ টি বছরে ঘুরে দাঁড়িয়ে মাথা উঁচু করে টিকে থাকার লড়াই এর গল্পটাই এই উপন্যাসের প্রধান বিষয়বস্তু ।
কিন্তু কি সেই ভুল? কেনইবা সিংগেল প্যারেন্ট ,একজন ডিভোর্সি হয়ে সমাজের সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছে তাকে? সেটা জানতে পড়তে হবে “আনটোল্ড স্টোরি ফ্রম অ্যা স্ট্রাগলার” উপন্যাসটি।
পরিশেষে বলতে চাই, কেউ যদি আপনাকে বলে “ তোমার জীবনের গল্পটা শুনতে চাই” তবে সেটা হতাশা র গল্প না হয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প হয়ে উঠুক। আর এটাই করতে চেয়েছেন এই উপন্যাসের লেখিকা।
বই এর নামঃ আনটোল্ড স্টোরি ফ্রম অ্যা স্ট্রাগলার
প্রকাশনীঃ শব্দভূমি প্রকাশনা
প্রাপ্তিস্থান প্রিয়মুখ প্রকাশনী
স্টল নংঃ ৩৩২-৩৩৩