আই কিউ বা বুদ্ধিমত্তা নির্ণয়ের সাধারণ নিয়মটি হচ্ছে- আপনাকে নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে ৪০টি স্ট্যান্ডার্ড প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। আপনার দেয়া উত্তরই বলে দেবে আপনার আই কিউ কত! তবে এটা ছাড়াও আরো বেশ কিছু নিয়মে বুদ্ধিমত্তা পরিমাপ করা যায়।
বাংলাহাব আপনাদের সামনে সাতটি ধাঁধা রাখবে, বুদ্ধি খাটিয়ে যেগুলোর উত্তর বের করতে হবে। চলুন দেখা যাক আপনি কতটা বুদ্ধিমান!
ধাঁধা নং – ০১ : পালানো
ধরুন, আপনাকে একটা ঘরে একা বন্দি করে রাখা হল। ঘরের মেঝে কাঁচা মাটির এবং ঘরে কেবল একটাই জানালা আছে। সে জানালাটিও আবার আপনার ধরা-ছোঁয়ার অনেক উপরে। আপনাকে একটা ভেলচা আর দুই দিন সময় দেয়া হল। বলা হল- এই দুই দিন আপনাকে কোন ধরনের খাবার কিংবা পানি দেয়া হবে না। দুই দিনের মাঝেই আপনাকে ঘর থেকে পালাতে হবে। যদি পালাতে না পারেন তবে আপনাকে মেরে ফেলা হবে। বলুন তো আপনি কিভাবে পালাবেন?
যদি সিঁধ কাটার কথা মাথায় আসে তবে তা এখনই ঝেড়ে ফেলুন। আপনাকে এমনই একটা ঘরে রাখা হয়েছে যেটা থেকে দুই দিনে সিঁধ কেটে বের হওয়া সম্ভব নয়। বাঁচতে হলে অন্য কোন উপায় ভাবুন!
ধাঁধা নং – ০২ : নেকলেস চোর
মিসেস রহমান থানায় এসে অভিযোগ করলেন যে, গতরাতে তিনি স্বামীসহ একটা পার্টিতে ছিলেন। বাসা পুরোপুরি খালি ছিল। বাসায় আসার পর তিনি দেখেন তার শোবার ঘরের আলমিরা খোলা এবং সেখান থেকে তার ১০ লাখ টাকা দামের হীরার নেকলেসটি খোয়া গেছে। পুলিশ কর্তৃপক্ষ তার অভিযোগটি খুব গুরত্বের সাথে নিলেন এবং সাথে সাথেই একটা প্রি-ইনভেস্টিগেটিং টিম পাঠিয়ে দিলেন। ইনভেস্টিগেটিং টিম এসে বাড়িতে ডাকাতির কোন চিহ্ন খুঁজে পেল না। শুধু শোবার ঘরের জানালাটা ভাঙ্গা ছিল। পুরো ঘরের অবস্থা ছিল লন্ডভন্ড আর মেঝেতে ছিল নোংরা পায়ের ছাপ। রিপোর্ট নিয়ে ইনভেস্টিগেটিং টিম সেদিন চলে গেলেও পরদিন এসে তারা মিসেস রহমানকে জালিয়তির অভিযোগে গ্রেফতার করলো।
বলতে হবে, পুলিশ কিভাবে বুঝতে পারলো যে নেকলেস খোয়া যাবার অভিযোগটি ভুয়া?
ধাঁধা নং- ০৩ : খুনী
নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনেই কলেজিয়েট স্কুল এন্ড কলেজের ভুগোলের শিক্ষক তার নিজের রুমে খুন হলেন। প্রাথমিক তদন্ত শেষে পুলিশ এই ৪ জনকে সন্দেহভাজন হিসাবে চিহ্নিত করল- বাগানের মালী, গণিতের শিক্ষক, ফুটবল দলের কোচ আর প্রিন্সিপাল। কিন্তু সন্দেহভাজনদের সবাই তাদের অ্যালিবাই উপস্থাপন করল-
- মালী বাগানে আগাছা পরিষ্কার করছিল।
- গণিতের শিক্ষক মিডটার্ম পরীক্ষার হলে গার্ড ছিলেন।
- ফুটবল দলের কোচ আসন্ন টুর্ণামেন্টের গেম প্লান নিয়ে ছাত্রদের সাথে আলোচনা করছিলেন।
- প্রিন্সিপাল তার নিজের অফিস রুমে ছিলেন।
সব অ্যালিবাই যাচাই বাছাই করে পুলিশ সেদিনই খুনীকে গ্রেফতার করে। বলতে হবে আসল খুনী কে?
ধাঁধা নং ৪ : একাকী বৃদ্ধ
শহরের শেষ প্রান্তের এক বাড়িতে এক বৃদ্ধ একাকী বাস করত। বাড়ির বাইরে সে খুব একটা বের টের হত না। এক গ্রীষ্মের ঘটনা- এক শুক্রবারে হকার তার পত্রিকার বিল নিতে এসে অনেকক্ষণ ডেকেও বৃদ্ধের কোন সাড়া শব্দ পেল না। পরে পাশের জানালা দিকে ভেতরে উঁকি দিতেই সে মেঝেতে জমাট বাঁধা রক্তের ধারা দেখতে পেল। সাথে সাথেই সে পুলিশকে খবর দিল। পুলিশ এসে বসার ঘর থেকে বৃদ্ধের লাশ আবিষ্কার করল। সেই সাথে দরজার পাশে মঙ্গলবারের পত্রিকা, দুই বোতল বাসি এবং এক বোতল তাজা দুধ পেল।
পরদিনই পুলিশ খুনীকে গ্রেফতার করে। বলতে হবে খুনী কে এবং পুলিশ কিভাবে বুঝতে পারল যে সে-ই খুনী?
ধাঁধা নং- ০৫ : সিরিয়াল কিলার
রসু খাঁ একজন সিরিয়াল কিলার। মানুষের অসহায়ত্ব নিয়ে খেলতে খুব পছন্দ করে সে। টার্গেটকে খুন করার আগে একটু বাজিয়ে নেয়াটা তার নেশা।
কাউকে খুন করার সময় ভিক্টিমের সাথে সে একটা মাইন্ড গেম খেলে। ভিক্টিমের সামনে দুটো বড়ি রাখে সে। বলে- দুটো বড়ির যেকোন একটা বিষমাখানো অন্যটা সাধারণ। ভিক্টিম যদি বিষমাখানো বড়িটা নেয়, তাহলে পাঁচ সেকেন্ডের মাঝে সে মারা যাবে, আর সাধারণ বড়িটা বেছে নিতে পারলে সে বেঁচে যাবে। খেলাটাকে আরেকটু মজাদার বানানোর জন্য শেষে সে আরেকটা অদ্ভুত শর্ত যোগ করে- ভিক্টিম যে বড়িটাই বেছে নিক না কেন, অপর বড়িটা রসু নিজে খাবে।
প্রত্যেকবারই দেখা যেত, কোন এক অজ্ঞাত কারণে ভিক্টিম মারা পড়ত, আর রসু খাঁ নতুন শিকারের খোঁজে বেরিয়ে পড়ত। বলতে হবে প্রতিবারই রসু খাঁ-র বেঁচে যাবার পেছনে রহস্য কি?
ধাঁধা – ৬ : বরফ শীতল জানালা
গত শীতের কথা। জন তার প্রিয় বন্ধুকে নিজ বাড়িতে মৃত অবস্থায় আবিষ্কার করল। সাথে সাথেই সে পুলিশকে খবর দিল। পুলিশ আসার পর সে তার উইটনেস স্টেটমেন্টে বলল- সে এইদিক দিয়ে যাচ্ছিল। অনেকদিন দেখা-সাক্ষাত হয় না, তাই ভাবল যাবার আগে বন্ধুর বাড়ি থেকে একটু ঢুঁ মেরে যাবে। বেশ কয়েকবার কলিংবেল বাজানোর পরেও ভেতর থেকে কোন সাড়া না পাওয়ায় সে চলে যাবে ভাবছিল, এমন সময় বরফ ঢাকা জানালার মধ্য দিয়ে সে ভেতরে লাইট জ্বলতে দেখল। কাছে এসে জানালা পরিষ্কার করে সে তার বন্ধুকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে, এরপরই সে পুলিশকে খবর দেয়।
স্টেটমেন্টে গরমিল থাকায় পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে জনকে প্রধান সন্দেহভাজন হিসাবে আটক করে। বলতে হবে গরমিলটা ছিল কোন জায়গায়?
ধাঁধা ৭ : রসায়ন
এক রসায়নবিদকে তার নিজের ল্যাবে মৃত অবস্থায় আবিষ্কার করা হল। খুনী খুব নিখুঁত পরিকল্পনা করে কাজটা করে। খুনের কোন আলামত সংগ্রহ করা যায় নি, শুধু কয়েকটা রাসায়নিক পদার্থের নাম লেখা কয়েকটা কাগজ এলোমেলো ভাবে ঘরে ছড়ানো ছিল। যেদিন তার খুন হয় সেদিন তার ল্যাবে ৩ জন দর্শনার্থী ছিল- তার স্ত্রী ম্যারি, তার ভাইপো নিকোলাস আর তার বন্ধু জোনাথন।
খুনী কে তা খুঁজে পেতে পুলিশের খুব একটা দেরী হয়নি। বলতে হবে পুলিশ কিভাবে বুঝতে পারলো যে আসল খুনী কে?
উত্তর
ধাঁধা – ০১
ভেলচা দিয়ে মাটি খুঁড়ে জানালা বরাবর দেয়াল ঘেঁষে ফেলবেন, মাটির ঢিবির মত বানাবেন। তারপর ঢিবি যথেষ্ট উঁচু হলে তা বেয়ে জানালা দিয়ে নেমে আসবেন।
ধাঁধা – ০২
যদি ঘরের বাইরে থেকে জানালা ভাঙ্গা হত তাহলে ভাঙ্গা কাচগুলো ভেতরেই পড়ত। কিন্তু ঘরে কোন ভাঙ্গা কাচ ছিল না। তাই পুলিশের বুঝে নিতে অসুবিধা হয়নি যে পুরো ব্যাপারটাই মিসেস রহমানের সাজানো নাটক।
ধাঁধা – ০৩
গণিতের শিক্ষক। তার অ্যালিবাই খেয়াল করুন- মিডটার্ম পরীক্ষার হলে গার্ড ছিলেন। কিন্তু শুরুতেই বলা আছে খুনটি হয় নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে। তাহলে মিডটার্ম পরীক্ষা আসবে কোত্থেকে?
ধাঁধা – ০৪
হকার। কারণ একমাত্র সে-ই জানত যে পত্রিকা পড়ার জন্য এই বাড়িতে আর কেউ বেঁচে নেই, তাই সে ডেলিভারি বন্ধ করে দিয়েছিল।
ধাঁধা – ০৫
আসলে দুটো বড়ির কোনটাই বিষ মাখানো ছিল না। বিষটা থাকত ভিক্টিমকে দেয়া পানির গ্লাসে। এজন্যই রসু খাঁ বরাবরই বেঁচে যেত।
ধাঁধা – ০৬
জন বাইরে থেকে ভেতরের আলো দেখতে পাবার কথা না। কারণ কাচের জানালার একপাশে বরফ জমলে অন্যপাশেও ঝাপসা হয়ে আসে। পুলিশের তাই বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে জন মিথ্যা বলছে।
ধাঁধা – ০৭
নিকোলাস। রাসায়নিক পদার্থের নাম লেখা কাগজগুলোতেই খুনীর ক্লু দেয়া ছিল। মৌলগুলোর সংকেতকে ক্রমানুযায়ী সাজান- Ni-C-O-La-S।
সূত্রঃ ইন্টারনেট।