সারা পৃথিবীতে ভৌতিক বা অভিশপ্ত কত কিছুই তো আছে। বাড়ি, কবর, আসবাবপত্র, গাড়ি এমনকি শহর ও রয়েছে। তেমনি রয়েছে কিছু সেতু। যেগুলো পার হওয়ার সময় অনেকেই অনেক অতিপ্রাকৃত ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন। কেউ বলে চোখের ভুল, কেউ বা বলে সত্য। চলুন দেখে নেই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত এমনই তিনটি রহস্যময় সেতু।
১। দ্যা ওল্ড আল্টন ব্রিজ, টেক্সাস
এই ব্রিজ টি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ডেন্টন এবং কপার কেনিয়ন শহরের কাছাকাছি অবস্থিত। এই সেতুটির কিংবদন্তী বেশ পুরনো। এই ব্রিজটি নির্মাণ করেছিল “কিং আয়রন ব্রিজ ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি”। এটি সাধারণত ব্যবহার করা হতো মানুষ এবং পশুর পাল আসা যাওয়ার জন্য। এই সেতুটি নামকরণ করা হয়েছিল আলটন গ্রামের নামে যা ডেন্টনের একটি পরিত্যক্ত গ্রাম। ২০০১ সালের পর এই ব্রিজে জনসাধারণের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। বর্তমানে এটি “গোটম্যান ব্রিজ” নামে পরিচিত।
কথিত আছে, অস্কার ওয়াশবার্ন নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ পশুপালক এই ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তে বাস করতো। তার ছিল বিশাল ছাগলের খামার। সে রোজ তার ছাগলের পাল চড়িয়ে ব্রিজের একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে যেত। পশুপালক এবং ব্যবসায়ী হিসেবে সে ছিল খুবই সফল। সকলে তাকে “গোটম্যান” নামে ডাকতো। সে একসময় ব্রিজের এক প্রান্তে বিশাল এক দিক নির্দেশক ফলক লাগালো। যাতে লেখা ছিল “এই পথে গোটম্যানের বাড়ি”। এবং একটি তীর তার বাড়ির রাস্তা নির্দেশ করতো।
একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যবসায়ীর সাফল্য গ্রামের মানুষ মেনে নিতে পারলো না। তাই ১৯৩৮ সালের আগস্টের এক রাতে তারা গোটম্যানকে অপহরণ করলো। একটি দড়িতে ফাঁস লাগিয়ে তারা গোটম্যানকে ব্রিজের উপর থেকে নিচে ঝুলিয়ে দিল যাতে সে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়। কিন্তু তারা যখন গোটম্যানের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য নিচে ঝুঁকে তার মৃতদেহ দেখতে চাইলো, তারা দেখলো ফাঁসির দড়িতে গোটম্যানের দেহ নেই। ভয়ে সকলে আবার গ্রামে গিয়ে গোটম্যানের স্ত্রী সন্তানদের নৃশংসভাবে হত্যা করলো।
সেইদিনের পর থেকে আজও “গোটম্যান ব্রিজ” অভিশপ্ত। বলা হয় যে, কোন গাড়ি যদি হেডলাইট ছাড়া সেই ব্রিজ দিয়ে যাতায়াত করে তাহলে তারা গোটম্যানের জ্বলন্ত দুটি চোখ দেখতে পায়। এর প্রমাণ বহুবার পাওয়া গেছে। তাছাড়া হ্যালোইনের রাতে যদি কোন গাড়ি হেডলাইট নিভিয়ে গোটম্যান ব্রিজে দু বার হর্ণ বাজায়, তাহলে সামনে প্রকট হবে গোটম্যানের আত্মা। এই গোটম্যান ব্রিজ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক জায়গাগুলোর মাঝে অন্যতম।
২। হেল’স ব্রিজ, মিশিগান
এটি যুক্তরাষ্ট্র অবস্থিত একটি কুখ্যাত সেতু। তবে এটি শুধু মাত্র একটি সরু লোহার তৈরী পায়ে চলার ব্রিজ যা রোউগ নদীর পাশ দিয়ে গেছে। এই ব্রিজটি অর্ধনির্মিত তবে অভিশপ্ত হিসেবে এই সেতুটির খ্যাতি কম নয়!
কিংবদন্তী আছে যে, উনিশ শতকের দিকে মিশিগানের রোউগ নদীর তীরে এ্যলগোমা বর্তমানে রকফোর্ড গ্রামে হঠাৎ করে শিশুরা উধাও হতে শুরু করে। গ্রামবাসীরা এতে অস্থির হয়ে পরে। কিন্তু তাদের চোখের সামনে দিয়ে একের পর এক শিশু গায়েব হয়ে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত তারা শরণাপন্ন হয় তাদের গ্রামে এক বৃদ্ধ মিষ্টভাষী ধর্মপ্রাণ লোকের যার নাম এলিয়াস ফ্রিস্ক। এলিয়াস শিশুদের খুবই ভালবাসতো। সে তাদের এলাকার গীর্জায় সকলকে সমবেত করলো এবং বললো এটি শয়তানের কাজ। শয়তান কিছু দানবের দ্বারা নিজের তুষ্টির জন্য এসব করছে। তার কথায় গ্রামবাসী সকলে মিলে খুঁজতে বের হলো হারানো শিশুদের ও অপহরণকারীকে। তারা বাকি শিশুদের রেখে গেল ফ্রিস্কের জিম্মায়। এটাই ছিল সবচেয়ে বড় ভুল।
ভোরবেলায় যখন সবাই ফিরে এলো, দেখলো যে ফ্রিস্ক বা শিশুরা, কেউই নেই। তারা বুঝে গেল ফ্রিস্কই হত্যাকারী। ফ্রিস্ককে খুঁজে পেল তারা রোউগ নদীর ধারে জঙ্গলে। সেখানে পাওয়া গেল সকল হারানো শিশুর লাশ। রাগে দুঃখে তারা ফ্রিস্ক কে হত্যা করতে উদ্যত হলো। যদিও ফ্রিস্ক বারবার বলছিলো যে এসব শয়তানের কারসাজী। কিন্তু ক্রুদ্ধ গ্রামবাসী তাকে টেনে হিঁচড়ে ব্রিজের ওপর নিয়ে যায়। এবং সেই ব্রিজের উপর থাকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে এবং তার মৃতদেহ ভাসিয়ে দেয় নদীতে।
সেই ঘটনার পর থেকে আজ পর্যন্ত রহস্যময় ভৌতিক ঘটনা ঘটে চলেছে চলেছে এই হেল’স ব্রিজে। রাতে শোনা যায় শিশুদের কান্না, মাঝে মাঝে উদয় হয় ফ্রিস্কের ছায়ামূর্তি। একবার এক ভিডিওতে ধরা পরেছিলো হাওয়ায় ভাসতে থাক ফাঁস। সত্যিই, ভয়ঙ্কর বটে!
৩। দ্যা ডাঙ্কি লেডি ব্রিজ, টেক্সাস
এই ছোট্ট সেতুটি অবস্থিত টেক্সাসের স্যান আ্যন্তোনিয়োতে। এটি এলম ক্রিক নামক এলাকায় রয়েছে। এই ব্রিজকে ঘিরে যে কিংবদন্তী রয়েছে তা উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রচলিত।
বলা হয় যে, এই ব্রিজটির উপর দিয়ে এক বৃদ্ধা রোজ তার পোষা গাধাকে নিয়ে বেড়াতে যেত। এই গাধাটাই ছিল তার একমাত্র সম্বল। গাধাটাকে মাঝে মাঝে ভাড়া খাটিয়ে যা পেত, তাই দিয়ে মহিলা দিনযাপন করতো। গাধাটি ছিল তার খুবই আদরের। একদিন এক দুষ্ট ছেলে বৃদ্ধা মহিলা ও তার গাধাকে নানান কটু কথা বলে ক্ষ্যাপাতে লাগলো। এতে বৃদ্ধা রেগে গিয়ে ছেলেটাকে ধমকালো এবং ছেলেটা বললো এর প্রতিশোধ নিবে।
ছেলেটা বাড়িতে গিয়ে তার বাবাকে মিথ্যা কথা বললো। বললো যে বুড়ি আর আর গাধা তাকে মেরেছে। এই কথা শুনে ছেলের বাবা আর চাচা গেল বুড়িকে শাস্তি দিতে। রোজকার মতো বুড়ি বিকেলে গাধাকে নিয়ে ব্রিজের উপর দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সেই দুষ্ট ছেলেটার চাচা আর বাবা বৃদ্ধার গাধার লাগাম বৃদ্ধার হাত থেকে নিতে গেল, বৃদ্ধা বাধা দিলেন। ধস্তাধস্তিতে গাধাটি ব্রিজের নিচে খরস্রোতা নদীতে পড়ে ডুবে গেল। গাধাটি ডুবে যাওয়াতে খুশি হয়ে লোক দুটি পেছন ফিরে বুড়িলে ফেলে হাঁটা শুরু করলো। রাগান্বিত বৃদ্ধা তাদের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারলেন এতে ছেলেটার বাবা আঘাত পেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল। এই দেখে ছেলেটার চাচা রেগে ছুটে এসে বৃদ্ধাকে ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দিল। বৃদ্ধা দেখতে দেখতে নদীতে তলিয়ে গেলেন।
এরপর থেকেই ব্রিজটি অভিশপ্ত হয়ে যায়। দেখা যেতে থাকে অর্ধেক মানুষ আর অর্ধেক গাধারূপী এক রহস্যময় ছায়ামূর্তি। হয়তোবা মৃত্যুর পর বৃদ্ধা একত্রিত হয়েছেন তার প্রিয় পোষা গাধাটির সাথে। তাদেত অতৃপ্ত আত্মা আজও ঘুরে বেড়াচ্ছে এলম ক্রিকের ব্রিজে যা আজ পরিচিত “দ্যা ডাঙ্কি লেডি ব্রিজ” নামে। বলা হয় যে এই ডাঙ্কি লেডি আবির্ভূত হন রক্তাক্ত কাপড় পরনে, চুল থেকে টপটপ করে পানি পরছে, কোমরের নিচ থেকে তার আকৃতি গাধার মতো, এবং ভয়ঙ্কর তার চিৎকার। কেউ বলে এই কিংবদন্তীটি বাস্তব কে বলে নিছক কল্পনা। তবে ভৌতিক ব্রিজগুলোর মধ্যে দ্যা ডাঙ্কি লেডি ব্রিজ সত্যিই বেশ বিখ্যাত!
লেখিকা সম্পর্কেঃ তাসনিয়া আজমী। শখ বই পড়া, বই সংগ্রহ করা। লেখালেখি শুরু করেছি বেশীদিন হয়নি, কিন্তু এরই মধ্যে লেখালেখি ভালবেসে ফেলেছি। ইচ্ছে ছিল সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ার, বিভিন্ন কারণে হয়নি। ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে নিজের বই নিজের বুকশেলফে তুলে রাখার। ইচ্ছে আছে লেখিকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার।