আগের পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অনেকেরই জ্বীন-ভুত-পরী নিয়ে অনেক মাথা ব্যথা। তারা কি সত্য, নাকি মিথ্যা, তারা শুধুই কি মিথ, পুরোটাই গুজব নাকি আসলেই ফ্যাক্ট? না, আমি কোন জ্বীন-ভুত বিশারদ নই। তবে ডেমন নিয়ে মনের কোনে একটু তরল জায়গা বরাবরই ছিল, আম্মু-আব্বু, দাদী-নানীদের মুখে সেই ছোটবেলা থেকেই ভূতের গল্প শুনে ঘুমিয়েছি কি না তাই। সেই তরল জায়গায় কবে কবে যে শ্যাওলা জমে গেছে জানিনা। সেখান থেকেই এদের উপরে একটু পড়াশুনা করতে শুরু করেছিলাম আর কি। আর যেহেতু, বাংলাহাবের মত ওয়াইড প্ল্যাটফর্মের সাথে যুক্ত যখন হয়েই গেছি, ভাবলাম যা পড়ছি, সবার সাথে শেয়ার করলে দোষ কোথায়। তাই সিরিজ আকারে শুরু করলাম ডেমনলজি। সাথে থাকুন, আশা করি খারাপ লাগবে না। আর সিরিজটি পছন্দ হোক বা না হোক, নিচে কমেন্টে আপনার অনুভূতি জানাতে ভুলবেন না। আর শেয়ার করাটা কিন্তু বাঞ্ছনীয়।
যেহেতু পঞ্চম পর্ব শেষ করেছিলাম সেভেন ডেডলি সিন দিয়ে তাই আজ সিরিজের ষষ্ঠ পর্বে লিখতে চেষ্টা করলাম সেভেন ডেডলি সিন সম্পর্কে কিছু কথা।
খ্রিস্টান ধর্মানুসারে সেভেন ডেডলি সিন বা সাতটি মহাপাপ হচ্ছে এমন সাতটি অপরাধ বা অপুণ্যের কাজ যা একটি আত্মাকে সরাসরি দোজখে নিয়ে গিয়ে ফেলে। এই সাতটি মহাপাপের পিছে সাতটি ডেমন বা শয়তানের রাজত্ব আছে, যারা নিরবচ্ছিন্নভাবে মানুষকে এসব কাজগুলো করতে প্ররোচনা দেয়।
বাইবেলে এই সাতটি মহাপাপকে একজায়গায় গ্রুপ করে বলা হয় নি, বরং বিভিন্ন প্যাসেজে সময় অনুযায়ী আলাদাভাবে আলোচনা করা হয়েছে। যখন বাইবেলকে অনুদিত করা হয় তখন এদেরকে এক জায়গায় করা হয়েছে। অনুবাদকের কলমের জোরে মহাপাপের ডজন খানেক গ্রুপিং পাওয়া যায়। চতুর্থ শতাব্দীতে জন ক্যাসিয়ান নামের একজন ফাদার এইট ডেডলি সিনস বা আটটি মহাপাপ নামে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। তার মতে আটটি মহাপাপ হচ্ছেঃ
অতিভোজন (Gluttony); ব্যাভিচার (Fornication); লালসা (Covetousness/Avarice); রাগ (Anger); নৈরাশা/বিষণ্ণতা (Dejection); অন্তরের ক্লান্তি/গ্লানি (Accidie); বোকামি/গোঁড়ামি (Kenodocila) ও আত্মগৌরব (Pride)
ষষ্ঠ শতাব্দীতে এসে সেন্ট গ্রেগরী দ্য গ্রেট এটিকে ছয়টি মহাপাপে পরিমার্জিত করেন। তেরশত শতাব্দীতে সেন্ট থমাস অ্যাকুইনাস “Summa Theologica” নামক একটি বইতে এই ব্যাপারে আরো বিস্তারিত লিখেছিলেন। অ্যাকুইনাস ‘Sin’ বা পাপকে ‘Appetite’ বা প্রবৃত্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
১৫৮৯ সালে ডেমনলজিস্ট ও ডাকিনী-শিকারি (Witch hunter) পিটার বিন্সফেল্ড সাতটি মহাপাপ ও তাদের ডেমনদের একটা লিস্ট প্রকাশ করেন। ক্যাথোলিক চার্চ অনুমোদিত সেই লিস্ট, প্রত্যেক পাপের ডেমন ও তাদের বিপরীত শক্তি নিয়েই আজ লিখছি।
সাতটি মহাপাপের লিস্টখানা একটি অর্ডার বা নিয়ম ফলো করে। এদের ভেতরে পাঁচটি আত্মাকেন্দ্রিক ও দুইটি শরীরকেন্দ্রিক। এদের প্রত্যেকটিই অন্যান্য অসংখ্য পাপের হোতা। এদের প্রত্যেকটির বিপরীত শক্তি বা মহাপুণ্য আছে ও প্রতিটির একটি করে সিম্বোলিক পশুরুপ আছে। নিচে সেই সাতটি মহাপাপ ও তাদের বর্ননা দেয়া হলঃ
১. আত্মগৌরব (Pride)
ডেমনঃ লুসিফার (Lucifer)
আত্মগৌরব বা আত্মগরিমার কারনেই লুসিফার (অনেকে স্যাটান বা ইবলিশের ইকুইভ্যালেন্ট বলে থাকে) ও তার মতাদর্শীরা বেহেশত থেকে বিতাড়িত হয়েছিল। পরবর্তিতে তারা সবাই ডেমনের রুপ ধারন করে। আত্মগৌরব দাম্ভিকতার পথে নিয়ে যায়। দাম্ভিকতা ইশ্বরের দয়া থেকে দূরে সরিয়ে দেয় ও সকল পুণ্য ধ্বংস করে।
আত্মগৌরবকে সিংহের সাথে তুলনা করা হয় ও এর বিপরীত শক্তি হচ্ছে নম্রতা (Humility)।
সকল বিজয়ের ক্রেডিট ইশ্বরকে প্রদানের মাধ্যমে এই মহাপাপ থেকে দূরে থাকা যায়।
২. লালসা (Avarice)
ডেমনঃ ম্যামন (Mammon)
ধন-সম্পদের লালসা লোভী লোকদের চোখ অন্ধ করে দেয়। তারা কোন অবস্থাতেই কোন কিছুতেই সন্তুষ্ট হতে পারে না। লালসা মানুষকে ছলনা, প্রতারনা, চুরি, খুন ও কৃপণতার দিকে নিয়ে যায়। অ্যাকুইনাস ম্যামনকে ‘The devil who is Lord of Money’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
লালসাকে উলফ বা নেকড়ের সাথে তুলনা করা হয়। পর্যাপ্ততা (Sufficiency) এর বিপরীত শক্তি।
৩. কামলালসা (Lust)
ডেমনঃ অ্যাসমোডিয়াস (Asmodeus)
কামলালসা হচ্ছে প্রথম দৈহিক মহাপাপ যেটা নাস্তিকতা, প্রতারণা, বিশ্বাসঘাতকতা ও অশুচিতার পথে নিয়ে যায়। অ্যাসমোডিয়াস এর নামে অনেক বড়বড় পজেশনের দুর্নাম রয়েছে এবং এর অনেকগুলোই অতিমাত্রায় Incest সেক্সুয়াল।
কামলালসাকে রামছাগলের সাথে তুলনা করা হয়। সতীত্ব ও শুদ্ধতা এর বিপরীত শক্তি।
৪. পরশ্রীকাতরতা (Envy)
ডেমনঃ লেভিয়েটান (Leviathan)
দশটি দৈব-আদেশের মধ্যে ‘Thou shalt not covet’ বা ‘তুমি লোভ করবে না’ কেই পরশ্রীকাতরতার প্রভেদ হিসাবে ‘Sin of the devil’ ধরা হয়। পরশ্রীকাতরতা ও হিংসাকে সেন্ট পল সকল পাপের উৎস বলেছেন। কেননা যারাই সবার সাথে নিজের তুলনা মাপে ও হিংসা করে, তারাই শয়তানের ফাঁদে পড়ে। সমাজের একেবারে নিচু থেকে উচু পর্যন্ত সবাই যেকোন অবস্থানে এই পাপে জর্জরিত হতে পারে।
লেভিয়েটান হচ্ছে একটি মনস্টার, যে তার ভিকটিমকে ভিতর থেকে কুরে কুরে খায়। পরশ্রীকাতরতাকে কুকুরের সাথে তুলনা করা হয়। চ্যারিটি বা দান-খয়রাত এর বিপরীত শক্তি।
৫. অতিভোজন (Gluttony)
ডেমনঃ বেলজেবুব (Beelzebub)
খাদ্য ও পানীয় সম্পর্কিত এই মহাপাপটি বুঝায় খাবারের প্রতি অতিরিক্ত লোভ-লালসা, সারাদিন মনের মধ্যে খাইখাই করা, কোন কিছুতেই পরিতৃপ্ত না হওয়া ইত্যাদি। বেলজেবুব এই মহাপাপের ডেমন। এই পাপে পাপিস্টদের দোজখে জোর করে ব্যাঙ ও পুঁজ খাওয়ানো হবে।
অতিভোজন সামাজিক কামুকতা (Wantonness) বৃদ্ধি করে। এ থেকে মুক্তির উপায় উপোস ও প্রার্থনা।
সংযম এর বিপরীত শক্তি।
৬. রাগ (Anger)
ডেমনঃ স্যাটান (Satan)
রাগ মানুষকে উন্মাদনা, প্রতিহিংসা, যুদ্ধ, রক্তক্ষয়, হিংস্রতা, নিষ্ঠুরতা, অযৌক্তিকতা সহ যাবতীয় খারাপ পাপের পথে নিয়ে যায়। রাগের আগুন মনে ফট করে ধরে যায় আর স্যাটান সেই আগুনে ফুঁ দিতে ওস্তাদ। অনিয়ন্ত্রিত রাগ মানুষের সম্পত্তি, দৈহিক, মানুষিক ও আত্মিক ক্ষতি করে থাকে। রাগকে চিতাবাঘ বা বন্য শুকরের সাথে তুলনা করা হয়।
ধৈর্য্য রাগের বিপরীত শক্তি।
৭. আলস্য (Sloth)
ডেমনঃ বেলফেগোর (Belphegor)
দ্বিতীয় দৈহিক মহাপাপ হচ্ছে আলস্য যা নিস্ক্রিয়তা, অমনোযোগিতা, ঔদাসীন্যতা ও গাফেলতির পথে নিয়ে যায়। পায়খানায় বসে থাকা ডেমন বেলফেগোর এই মহাপাপের রাজ্য শাসন করে।
একে গাধার সাথে তুলনা করা হয়। অধ্যাবসায় ও পরিশ্রম এর বিপরীত শক্তি।
ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আপনারা শেয়ার করলে বারবার লিখতে আগ্রহ বাড়ে। আর সর্বদা নতুন কিছু জানতে বাংলা হাবের সাথেই থাকুন। অসংখ্য ধন্যবাদ।
(ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ও প্রতীকী)