মাশরাফিকে নিয়ে ১৪ টি তথ্য, জানতেন কি?

mashrafe_fb_cover

mashrafe_fb_cover_by_rhs02-d9n1pjsমাসরাফি বিন মর্তুজা। একটি নাম, একজন বোলিং অলরাউন্ডার, অগণিত ভক্ত, আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা। বর্তমান বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের ODI ক্যাপ্টেন। যাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার সাহস বা ক্ষমতা কোনটাই আমার নেই। আসুন জেনে নেই তার ব্যাপারে ১৪টি মজার তথ্য।

. ছেলেবেলার শখ:  ৫ই অক্টোবর, ১৯৮৩ তে জন্ম নেয়া মাসরাফির ছেলেবেলায় ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবল, ব্যাডমিন্টন খেলতে পছন্দ করতেন। এছাড়া তিনি সাতার কাটতে ও মোটরসাইকেল চালাতেও খুব পছন্দ করেন। যদিও তিনি বর্তমানে বল হাতে যুদ্ধে নেমে পড়েন, কিন্তু ছোটবেলায় কিন্তু বলিং এর চেয়ে ব্যাটিং এর প্রতিই তার ঝোক ছিল বেশী।

. আগমন: ওয়েস্ট ইন্ডীজের বিখ্যাত বোলার ও তৎকালীন বাংলাদেশ টিমের খন্ডকালীন বোলিং কোচ অ্যান্ডি ররার্টসের আন্ডারে বোলিং ক্যাম্পে ডাক পেয়েছিলেন মাশরাফি। সেই ক্যাম্পেই তার বোলিং এর ধাঁর ও পেস-এ সন্তুষ্ট হয়ে রবার্টই বাংলাদেশ-এ দলের জন্য তাকে সুপারিশ করেন। পরবর্তিতে ইন্ডিয়া ট্যুরে বাংলাদেশ-এ দলের হয়ে তার পার্ফরমেন্সেই তিনি জাতীয় দলে ডাক পান।

.  ইন্টারন্যাশনাল ডেব্যু: ইন্ডিয়া ট্যুরে বাংলাদেশ-এ এর হয়ে ৪ ম্যাচে ৮ উইকেট ও অ্যাগ্রেসিভ বোলিং এর সুবাদে বাংলাদেশ জাতীয় দলে ডাক পান এবং ইন্ডিয়া ট্যুরে শেষ না করেই মাত্র ১৮ বছর বয়সে জাতীয় দলের হয়ে জিম্বাবুয়ে যাবার নিমন্ত্রন পান। তার ডেব্যু ম্যাচের করা 8.2-3-26-2 ইনিংসে যদিও বাংলাদেশ দলের পরাজয় ফেরানো যায় নি, তবুও স্পটলাইটে চলে আসেন তিনি।

.  টেস্ট ও ফার্স্ট ক্লাস ডেব্যু:  মজার ব্যাপার হচ্ছে মাশরাফির টেস্ট ডেব্যু ছিল একইসাথে তার ফার্স্ট-ক্লাস ডেব্যু। এভাবে দেখতে গেলে, তিনি বিশ্বের ৩১তম খেলোয়াড় এবং ১৮৯৯ সালের পরে ৩য় জন, যিনি কোন ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট না খেলে সরাসরি জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন।

. ঈনজুরি: মাশরাফির সবথেকে বড় শত্রু হল তার ইনজুরি। মাত্র চারটি টেস্ট খেলেই তিনি জানুয়ারি ২০০২ এ পাকিস্তানের বিপক্ষে পিঠের ইনজুরির কারনে সিরিজ থেকে ছিটকে যান। পিঠের ইনজুরি সারতে না সারতেই তিনি আবার হাটুর ইনজুরিতে পড়েন, যার কারণে আবার ৮ মাস মাঠের বাইরে থাকতে হয়। তিনি তার ইন্টারন্যাশনাল ক্যারিয়ারের প্রথম তিন বছরে মোটে ১২টি টেস্ট খেলেছিলেন। তার পায়ে, গোড়ালি, হাটুতে ছয়টিরও বেশী গুরুতর অপারেশন করা হয়েছে।

.  সাফল্য: ২০০৪ এ মাসরাফির দারুন প্লেইং স্কিলের সুবাদে বাংলাদেশ দল ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম জয় তুলে নিতে সক্ষম হয়। তিনে সে ম্যাচে ৩১ নট আউট ও ভিরেন্দার শেহবাগ ও এমএস ধোনির গুরুত্বপুর্ণ উইকেট তুলে নিয়ে ১৫ রানে দলীয় বিজয় তুলে নিয়ে আসেন। সে ম্যাচে তিনি ম্যান অফ দ্য ম্যাচও হয়েছিলেন।

২০০৭ সালের ওয়ার্ল্ড কাপে ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক সেই ম্যাচেও তিনি ৩৮ রানে ৪ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। সেই ম্যাচের পর তিনি বাংলাদেশে ফিরে দলের ভাইস-ক্যাপ্টেনের দায়িত্বও দেয়া হয়।

.  ক্যাপ্টেন্সি: ক্যাপ্টেন হিসেবে মাশরাফি তার প্রথম ট্যুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে গিয়ে আবার ইনজুরিতে পড়েন ও সাকিব-আল-হাসানের হাতে ক্যাপটেন্সি দিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হন।

.  বীরের ফিরে আসা: বারবার ইনজুরিতে পড়ার কারনে টেস্ট ক্রিকেটকে ছিকেয় তুলে আবার ক্রিকেটে ফিরে আসেন এই বীর।

.  ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (IPL): ২০০৯ সালে তিনি $৬০০,০০০ এর বিনিময়ে কোলকাতা নাইট রাইডার্স তাকে কিনে নেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, কিংস XI পাঞ্জাবের মালিক বলিউড ডিভা প্রীতি জিনতা ও জুহি চাওলা এবং কেকেআর এর মাঝে তাকে ঘিরে ইলেকট্রিক আধা ঘণ্টার বিডিং হয়, যা আইপিএল এর ইতিহাসে সবথেকে দীর্ঘ বিডিং। বেজ প্রাইস $৫০,০০০ থেকে শুরু করে ৮৩ বিডিং এর পরে কেকেআর তাকে কিনে নেন। যদিও তাকে এক ম্যাচের বেশী খেলানো হয় নি।

১০. বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (BPL): বিপিএল এর ফার্স্ট ও সেকেন্ড উভয় সিজনেই গুরু ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের হয়ে কাপ জেতেন। থার্ড সিজনে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে কাপ জয় করেন। এই বিপিএল এই তাকে ম্যাচ ফিক্সিং এর অফার দেয়া হয় বলে বোর্ডকে জানান তিনি। 

১১. ব্রেন্ডন টেইলর ঝড়: ২০০৫ এর ২ই আগস্ট, হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে এক ওডিআই তে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাটিং করে সংগ্রহ করে ২৩৬ রান। পরবর্তিতে জিম্বাবুয়ে ৪৯তম ওভারে ২২০ রান করতে সমর্থ হয়। ফাইনাল ওভারে মাসরাফির বলে ব্রেন্ডন টেইলরের কাছে দুই ছক্কা ও এক চার মেরে ম্যাচ জিতিয়ে নেন।

১২. ২০১৫ এর ওয়ার্ল্ড কাপ ও পরবর্তি: তার ক্যাপ্টেনসিতে বাংলাদেশ ২০১৫ ওয়ার্ল্ড কাপে কোয়ার্টার ফাইনালে ইন্ডিয়ার কাছে হেরে যায়। সেই ম্যাচেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আম্পায়ারের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত বিতর্কের সৃস্টি করে। ওয়ার্ল্ড কাপের পরে তার নেতৃত্বে নতুন এক বাংলাদেশ পরপর পাকিস্তান, ইন্ডিয়া ও সাউথ আফ্রিকার মতন টিমের বিরুদ্ধে সিরিজ জয় করে।

১৩.  ডাক নাম: তাকে সবাই ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ ডাকে একনামে চেনে। তবে ‘ম্যাস’, ‘প্রিন্স অফ হার্ট’ ইত্যাদি নামও তারই।

১৪.  নীতিবান: মাসরাফি মর্তুজা তার টিম মেটদের জন্য যেকোনো কিছু করতে পারেন। তিনি এখন অবধি মাঞ্জারুল রানার বাড়িতে ইদের পোশাক নিয়ে যান, সেই পরিবারকে সাহায্য করেন। নাসির হোসেনের বোনের সাথে ছবি নিয়ে ঘটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রতিবাদে তিনি নিজের ফেইসবুক পেজ ডি-অ্যাক্টিভেট করে দিয়েছিলেন।