আজ আমি যে গল্প বলবো সত্যি কোন গল্প না,
পুরো গল্পের বেশির ভাগই নিছক আমার কল্পনা।
আইডিয়া সব সত্যি তাই এর গুরুত্বটা অল্প না !!!
পিথাগোরাস মহামুনি,
চলো তার গল্পটা শুনি ।
আড়াই হাজার বছর আগে,
সামোস দ্বীপের মধ্যভাগে।
জন্ম নেন এই মহান লোক,
ছিল সংখ্যা তে খুব ঝোঁক ।
স্বর্গ, মর্ত্য, আত্মাও নাকি সংখ্যা মেনে চলে,
শুনে অবাক লোকেরা যোগ দিলো তার দলে।
জ্ঞানের প্রেমিক তিনি নিজেকে বলেন,
জ্ঞান সন্ধানে কত দেশ পাড়ি দেন।
জ্ঞান পিপাসা নিয়ে
বুকেতে আশা নিয়ে
সাগর পাড়ি দিয়ে
চলে যান মিশরে।
কোথায় কি জ্ঞান আছে
কোথায় wise man আছে
ছুতে যান তার কাছে
শেখেন প্রাণ ভরে।
তো একদিন রাতে, মিশরীয়দের সাথে,
কি করলেন গুরু??
গল্পের তো সেখানেই শুরু!!
সরো তোমরা সরো, তোমরা কিযে করো ??
শুধু জন্মাও আর মর, বলি কিছুতো একটা ধরো।
তোমরা সংখ্যা বোঝনা,
তোমরা সত্য খোঁজনা,
নেই জ্যামিতির জ্ঞান,
শুধু করো প্যাঁন প্যাঁন।
আর করো কুটনামি,
না বুঝেই পাকনামি,
উফফ… বোর হয়ে গেলাম আমি,
আমি বলতে পারি আরও,
তার আগে বলো, লম্ব আঁকতে পারো??
সেই কথা শুনে একজন মিটিমিটি হাঁসে,
সেও যে লম্ব আঁকতে বড় বেশি ভালবাসে!!
পিথাগোরাস সাহেব!!!
আমরা গরীব হতে পারি কিন্তু জ্ঞান শুন্য নই !
লম্ব ক্যামনে আঁকতে হয় দেখিয়ে দেবই !
আমাদের আঁকার পথ বড়ই অদ্ভুত!!
বারো গিটের দড়ি দিয়ে আঁকবো নিখুঁত।
অ্যাঁ!!!!!
বারো গিটের দড়ি দিয়ে লম্ব ক্যামনে আঁকো ?
এতো কিছু জানি আর এটা জানি নাকো ??
দেখাওতো দেখি কোথায় দিচ্ছো গোঁজামিল,
ভুল জ্ঞান দেয়া কিন্তু পাপের শামিল।
না না গুরু ভয় নেই শেখাবোনা ভুল,
বারো গিটের এ নিয়ম বড় beautiful !
একখানা দড়ি নিয়ে সমান সমান দূরে,
বারো খানি গিট দিয়ে আসবেন ঘুরে ঘুরে
দুই মাথা বন্ধ, জোড়া দিয়ে রাখা,
যন্ত্র এবার প্রস্তুত রইল বাকি আঁকা।
এমনভাবে এবার টেনে ধরুন দড়িটাকে
একপাশে চারখানা গিট যেন থাকে
অন্যপাশে পাঁচখানা আর একপাশে ছয়
পুরোটা দেখতে যেন ত্রিভুজের মতো হয় !!
দাড়াও দাড়াও দাড়াও!!!
চার পাঁচ ছয় মিলে পনেরোতো হয়
বারোর হিসাবটাতো মিলবার নয়!!!
না না গুরু ঠিকই আছে দেখুন ভাল করে
কোণার গুলো দুই বাহুতে কমন কিন্তু পড়ে !!
এরই মধ্যে লম্ব কিন্তু আঁকা হয়ে আছে
চার গিট আর পাঁচ গিটের দুই বাহুর মাঝে !
তাইতো দেখি আজব ব্যাপার ,দেখিনিতো আগে !!
এমন কেন হলো মনে বড় প্রশ্ন জাগে!
সেই প্রশ্নের উত্তরটাই খুজতে হয়তো গিয়ে ,
পিথাগোরাস হয়তো সেই উপপাদ্য গেলেন পেয়ে!!
সত্যি আজব, সত্যি আজব এই পৃথিবী নানান রঙ্গের খেলা,
তুচ্ছ প্রেমে কিচ্ছুটিকে করা যায়না অবহেলা।
বারো গিটের দড়ি দিয়ে লম্ব আঁকা এই পদ্ধতিটা আসলেই অনেক সুন্দর। এবং এই পদ্ধতি টা পিথাগোরাসের উপপাদ্য আবিষ্কৃত হবার বহু বছর আগে থেকেই মানুষ জানতো। হয়তো পিথাগোরাস সেখান থেকেই তার উপপাদ্যের আইডিয়া পেয়েও পেয়ে থাকতে পারেন। আমরা নিশ্চিত করে আসলে বলতে পারছিনা। তো এই পিথাগোরাস যখন এরকম জিনিষটা দেখেছেন , হয়তো তার মাথায় প্রশ্ন এসেছিলো যে ,কেন একপাশে চার গিট একপাশে পাঁচ গিট আর একপাশে ছয় গিট থাকলে আসলে কি হয়??
আমরা নরমালি লক্ষ্য করি যে, একপাশে যদি চার গিট থাকে তার মানে আসলে মাঝখানে দূরত্ব আছে কিন্তু তিন একক ।দুই গিটের মাঝখানের দূরত্বটাকে এক একক চিন্তা করি, তারপর এক একক ,এক একক। তাহলে এপাশে তিন একক। ঠিক একি ভাবে এদিকে দূরত্ব আছে চার একক, আর একপাশে পাঁচ একক। এখন তিন চার পাঁচ এরকম দূরত্ব বিশিষ্ট বাহুগুলো নিয়ে আমরা যদি একটি ত্রিভুজ বানাই তাহলে তা একটি সমকোণী ত্রিভুজ হচ্ছে। এটাই আগে থেকে মানুষজন জানতো। তো পিথাগোরাস হয়তো এখান থেকে ভাবার চেষ্টা করলেন, কেন তিন চার পাঁচ থাকলে ,তিন চার পাঁচ এর মাঝে সম্পর্কটা কোথায় আসলে ??
এরকম কি পর পর তিনটা সংখ্যা নিলেই হবে?? তাহলে দেখিতো পাঁচ ছয় সাত নিয়ে। না, তাতো মেলে না। তাহলে তিন চার পাঁচ ের মাঝে আর কি সম্পর্ক আছে? হয়তো তিনি দেখেছিলেন তিন স্কয়ার হয় নয়, এবং চার স্কয়ার হয় ষোল , আর এদুটো যোগ করলে পাওয়া যায় পঁচিশ। তার মানে পাঁচ স্কয়ার । তার মানে দুটোর স্কয়ার যোগ করে আর একটি স্কয়ার এর সমান। এরকম আর কি আছে??
এরকম আছে পাঁচ বারো তেরো ।পাঁচ স্কয়ার মানে পঁচিশ, তার সঙ্গে বারো স্কয়ার যোগ করলে হয় ১৪৪। ২৫ এবং ১৪৪ যোগ করলে হয় ১৬৯। মানে ১৩ স্কয়ার। ৫ স্কয়ার যোগ ১২ স্কয়ার সমান ১৩ স্কয়ার।
এখন তিনি এক বাহু ৫, এক বাহু ১২ এবং এক বাহু ১৩ নেন তখনও তিনি দেখতে পেলেন যে, হ্যাঁ, এটি একটি লম্ব হচ্ছে। তখন হয়তো তিনি বলে উঠেছিলেন, ও ও ও এই কথা?? দুইটার বর্গের যোগ করে যদি আর একটি বর্গের সমান হয় তাহলে সেতি সমকোণী ত্রিভুজ হয়।আর এটাকেই আমি নাম দিতে চাই পিথাগোরাসের উপপাদ্য।
আসলে ঘটনাটা ঠিক এমন নয়, সমস্ত ইতিহাসবিদ রা নিশ্চিত পিথাগোরাস হয়তো এই প্রমান টা নিজে করেননি । পিথাগোরাস তার নিজের চিন্তা ভাবনা গুলোকে নিয়ে একটা স্কুল খুলেছিলেন, যেখানে তার অনেক ছাত্র ছিল অথবা তার অনেক মতাদর্শী ছিল যারা পিথাগোরাসের চারপাশে থাকতো এবং তার কাছ থেকে জ্ঞান নেয়ার চেষ্টা করতো। এবং তারা নিজেরাও গবেষণা করতো। তাদের মধ্যে হয়তো কোন একজন গবেষণা করে এই উপপাদ্য টা বের করেছিলো। যেটাকে এখন আমরা পিথাগোরাসের উপপাদ্য বলি। তাদের এই উপপাদ্যের ব্যাখ্যা টা একটি গ্রহণযোগ্য নমন সংখ্যা দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়।
সেই সময়টাতে তার ছাত্ররা Figurative Number নিয়ে খুব চিন্তা করতেন। Figurative Number এর মানে হচ্ছে, যেসব নাম্বার কে ছবির মতো করে দেখা যায়। কিরকম?? যেমন ত্রিভুজ সংখ্যা। যেগুলোকে ত্রিভুজে সাজানো যায়। যেমন, ১,৩,৬,১০…… এরকম সংখ্যা গুলো কে ত্রিভুজে সাজানো যায়। আর এজন্য এরা হচ্ছে ত্রিভুজ সংখ্যা
আবার কিছু সংখ্যা কে তারা বলতো বর্গ সংখ্যা। যেমন, ১,৪,৯,১৬…… আর এগুলোকে সুন্দর করে বর্গের মতো করে সাজানো যায়। এর পাশাপাশি ছিল নমন (GNOMON) সংখা। নমন সংখা কি??
একটি বর্গক্ষেত্র নিয়ে চিন্তা করুন। এই বর্গক্ষেত্র থেকে যদি আর একটি বর্গক্ষেত্র কেটে বাদ দিয়ে দেই , উপরে যে L এর মতো অংশ থাকবে ওটাকে বলে নমন । আর এই এল এর মতো অংশে যত গুলো সংখ্যা থাকবে তাদের কে নমন সংখ্যা বলে।
লেখাটি চমক হাসান ভাইয়ের গনিতের রঙ্গে ৯ – ডিজে পিথাগোরাস ইউটিউব ভিডিও থেকে সংগৃহীত।ধন্যবাদ।